রহস্যগল্প 'মাশরুম" - পর্ব ০৩ [শেষ পর্ব]
copyright free image source pixabay
দ্বিতীয় পর্বের পর
মনস্থির করে ফেললেন মি: বালাপোরিয়া । দেখতেই হবে ব্যাপারটা । অবিশ্বাস্য জিনিষটা চাক্ষুস করার তীব্র ইচ্ছে কিছুতেই দমন করতে পারলেন না উনি । দ্রুত পোশাক পাল্টে নিলেন । ড্রেসিং গাউন চেঞ্জ করে পাতলা একটা টি শার্ট পরে নিলেন, প্যান্ট ছেড়ে শর্টস পরে জুতোর বদলে ডাবল মোজা পরে নিলেন; তার পর রাবারের চপ্পল । রাবারের চপ্পল পরলেন এই কারণে যাতে নি:শব্দে চলাচল করা যায় । দরজা খুলে নিচে নেমে মেইন গেটের সামনে এসে দাঁড়ালেন । স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন যখন দেখলেন গেট লকড নয় । অতি সন্তর্পণে ধীরে ধীরে হ্যাশ বোল্ট টানতে লাগলেন । মৃদু কর্কশ শব্দে অবশেষে গেট খুলে গেলো ।
গেট খোলা রেখেই বাইরে পা রাখলেন মি: বালাপোরিয়া । আকাশে আজ পূর্ণিমার চাঁদ । জোৎস্নায় ভেসে যাচ্ছে চরাচর । ধূসর পর্দা টানা চারিদিক । যদিও ফাগুন মাস তবুও শেষ রাতের দিকে হিম পড়ে এখনো । পাতলা টি শার্ট পরা, একটু শীত শীত করছে বালাপোরিয়াজীর । ধীরে ধীরে এগিয়ে চললেন তিনি "মাশরুম ঘরের" দিকে ।
মাশরুম ঘর । রাত আড়াইটে । প্লাস্টিকের পাতলা চাদর ঠেলে অতি সন্তর্পণে ভিতরে প্রবেশ করলেন মি: বালাপোরিয়া । অন্ধকার নয় ঘর । তবে উজ্জ্বল আলো নেই । ঘরের দুই প্রান্তে দুটি অনুজ্জ্বল আলো জ্বলছে । ধীরে ধীরে বালাপোরিয়া এসে দাঁড়ালেন সেই পেতলের গামলার কাছে । অতি তীব্র মিষ্টি গন্ধ চারিদিক । সকালে যেমন গন্ধটা পেয়েছিলেন তার চাইতে অনেক বেশি তীব্র এখন । আর হ্যাঁ, কোনো সন্দেহ নেই গন্ধের উৎস সেই পেতলের গামলা ।
ধীরে ধীরে গামলার দিকে ঝুঁকলেন । রাতেও দেখতে পেলেন গামলা শূন্য । কোনো মাশরুম নেই । তবে কি আগে ছিল ? এখন নেই ?
কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কীসব চিন্তা করলেন বালাপোরিয়াজী । তারপর ঘুরে পর্দার দিকে ফিরলেন । দেখতেই হবে পর্দার পিছনে কি আছে ? অবশ্য তিনি এখন কিছুটা অনুমান করতে পারছেন পর্দার আড়ালে কি থাকতে পারে ! লঘু পদক্ষেপে পর্দার কাছে গিয়ে পর্দা ওঠালেন । ভিতরে ঢুকে মোবাইলের টর্চ জ্বাললেন, কারণ ভেতরটা ছিল নিকষ কালো অন্ধকার ।
পরপর অনেকগুলি খাঁচা সাজানো রয়েছে দেখতে পেলেন । প্রত্যেকটি খাঁচায় রয়েছে বেশ কিছু গিনিপিগ । আর একটা ট্রেতে রয়েছে কয়েকটা মরা গিনিপিগ । ভুরু কুঁচকে কিছুক্ষণ সেদিকে চেয়ে রইলেন মি: বালাপোরিয়া । ব্যাপারটা এখন বেশ বোধগম্য হচ্ছে তাঁর কাছে । এটা সত্যিই অবিশ্বাস্য ।
ধীরে ধীরে আবার পর্দা ঠেলে সেই পেতলের গামলার কাছে এসে দাঁড়ালেন তিনি । কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন গামলার কালো মাটির দিকে । কয়েকটি সাদা-কালো-বাদামি রঙের গিনিপিগের লোম দেখতে পেলেন তিনি মাটিতে । কি মনে করে একটা আঙ্গুল ছোঁয়ালেন সেই লোমের উপর । সেই মুহূর্তে মি: বালাপোরিয়া তাঁর সারা জীবনের সবচাইতে মারাত্মক ভুলটি করে বসলেন ।
কিছু বুঝে ওঠার আগেই তিনি সবিস্ময়ে লক্ষ করলেন কালো মাটির বুকের অসংখ্য ছিদ্র দিয়ে কুচকুচে কালো রঙের শত শত পিনের একটা কুশন যেন উপরের দিকে ঠেলে উঠলো নিমেষের মধ্যে । ভালো করে তাকাতেই টের পেলেন সেগুলো মাশরুম । শত শত আলপিন আকৃতির নিকষ কালো মাশরুম । হাতটা উপুড় করে তিনি মাশরুমগুলির মাথার উপরিভাগ স্পর্শ করলেন । প্রায় সাথে সাথে সুঁচ ফোটানোর মত একটা তীব্র ব্যাথা তাঁকে ক্ষনিকের জন্য সেন্সলেস করে দিলো । মাথাটা ঝিম ঝিম করতে লাগলো । মিষ্টি গন্ধের তীব্রতা যেন শতগুনে বাড়িয়ে তুললো ।
দু'মিনিট পর । এখন আর তাঁর ব্যাথার কোনো অনুভূতি নেই । আছে ভালো লাগার একটা অসম্বব আমেজ । ঘুমিয়ে পড়তে ইচ্ছে করছে তাঁর । হাত টা তুলতে গেলেন তিনি । পারলেন না, হাতে কোনোরকমের কোনো সাড় নেই । কাঁধ পর্যন্ত অবশ ।
পাঁচ মিনিট পর । আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছেন না মি: বালাপোরিয়া । ধীরে ধীরে হাঁটু ভেঙে বসে পড়লেন গামলাটা যে কাঠের স্ট্যান্ডের উপরে রাখা তার পাশে । বাঁ হাতটা এখনো পুরো অবশ রয়েছে । নাড়াতে পারছেন না । আটকে রয়েছে গামলার ভিতরে মাশরুমগুলোর মাথার উপরে টাচ করা অবস্থায় । শুধু বড় বড় চোখ মেলে অসহায়ের মত চেয়ে রইলেন গামলার মাশরুমগুলোর দিকে । মাথার ভিতর ঝিম ঝিমানি আরো বেড়েছে । দ্রুত দেহের শক্তি হ্রাস পাচ্ছে । মাথা উঁচু রাখাটাই কষ্টের মনে হচ্ছে ।
দশ মিনিট পর । মি: বালাপোরিয়ার সমস্ত শরীর এখন অবশ, প্যারালাইজড । কী ঘটতে যাচ্ছে বুঝতে পারছেন । কিন্তু দারুন অসহায় তিনি । চিৎকার করে সাহায্য চাইবেন সে শক্তিও নেই তাঁর শরীরে বিন্দুমাত্র এখন ।
তিরিশ মিনিট পর । মৃত্যুর ঠিক আগে মি: বালাপোরিয়া বিস্ফারিত চোখে দেখতে পেলেন নিকষ কালো মাশরুমগুলি রক্তবর্ণ ধারণ করছে, টকটকে লাল রঙ; ঠিক তাঁরই শিরায় প্রবাহিত রক্তের মতো রাঙা । অস্ফুট স্বরে শুধু শেষ বারের মতো বলতে পারলেন "a genetically modified new species of carnivorous toxic mushroom, the masterpiece!"
.......[সমাপ্ত ]
মাশরুমটি কে ড: সোম মাস্টারপিস বললেও মাসরুম টি অত্যন্ত ভয়ানক এবং বিপদজনক। যেহেতু শিকার দেখলেই এটি মাটির ছিদ্র থেকে বেড়িয়ে আসে এবং সবসময় উপরে অবস্থান করে না, তাই এটি যেকোন হিংস্র প্রাণী থেকে কোন অংশেই কম নয়। আর কৌতুহল ভাল কিন্তু বেশি কৌতুহল ভাল নয়। অধিক কৌতুহলী হয়েই মি: বালাপোরিয়া নিজের মৃত্যুর দিকে হাত বাড়িয়েছে। মৃত গিনিপিগ গুলো দেখেই মি: বালাপোরিয়ার সতর্ক হয়ে যাওয়া উচিত ছিল। কারণ মাটিতে গিনিপিগের লোম এবং মৃত গিনিপিগ গুলো দেখেই তার বুঝে যাওয়া উচিত ছিল এখানে বিষ জাতীয় বা বিষাক্ত কোন পদার্থ থাকতে পারে। কোন রকম সতর্কতা অবলম্বন না করে সম্পূর্ণ অচেনা এবং অজানা একটি মাশরুমে হাত দেওয়াই তার জন্য কাল হয়ে দাড়ালো। প্রোফেসর সোম এর কড়া বাড়ণ এবং মৃত গিনিপিগ গুলোই নিশ্চিত করছিলো এখানে বিপদজনক কোন ব্যপার আছে। মি: বালাপোরিয়ার উচিত ছিল হাত না দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা। আর এই ভয়ংকর মাশরুমের ক্ষমতা হচ্ছে সুন্দর মিষ্টি গন্ধের মাধ্যমে শিকার কে আকৃষ্ট করা এবং বিষাক্ত সুচ দিয়ে আক্রমণ করে রক্ত শুষে নেওয়া। যার কারণে এই কারনিভোরাস বা মাংসাশী মাশরুম টিকে আমার অত্যন্ত অদ্ভ্যুত এবং ভয়ানক লেগেছে। জিন পরিবর্তন করে ড: সোম অত্যন্ত মারাত্মক একটি মাশরুম তৈরি করে ফেলেছে।
গল্প টি এক কথায় অসাধারণ ছিল দাদা। সায়েন্স ফিকশন থ্রিলার টি পড়ে অনেক ভাল লেগেছে।❤
অনেক মানুষ হয়তো জানেনই না আদপেই কার্নিভোরাস মাশরুম পৃথিবীতে বর্তমান। ওয়েস্টার মাশরুম। যার বিষ প্যারালাইস করে দেবার ক্ষমতা রাখে।
থ্রিলার আমার দারুন লাগে। তবে শেষটা মারাত্মক ভালো ছিলো। টানটান গল্পের সমাপ্তি হলো। ❤️
দাদা প্রথমে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই, এত সুন্দর বিজ্ঞানসম্মত কল্পকাহিনী আমাদের মাঝে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন।
আমি আপনার তিনটি পর্ব পড়ে এই বিজ্ঞানসম্মত কল্পকাহিনীর সারমর্ম তুলে ধরলাম:
১. ডক্টর সোম আমেরিকা ফেরত জীনতত্ত্ব বিষয়ক বিজ্ঞানী। তিনি আমেরিকা থেকে ফিরে এসে মাশরুমের জিন নিয়ে গবেষণা করবেন। মাশরুমের জিন নিয়ে গবেষণা করে এমন একটি মাশরুম তৈরি করবেন, সেই মাশরুম টি টক্সিক বা বিষাক্ত যা জীবের পান নিতে পারে। এমন বিষাক্ত মাশরুমের গবেষণা সাধারণ জায়গায় সম্ভব নয় কারণ মানুষের উপদ্রব আছে, তাই মানুষজন ভুলক্রমে যদি মাশরুমের গায়ে হাত দিয়ে ফেলে তাহলে মৃত্যু হতে পারে জেনে জঙ্গলে মাশরুমের গবেষণা শুরু করে।
২. সরকারের নিকট হতে মিস্টার বালা পরিয়া কে পাঠানো হয়, ডক্টর সোমের নিকট যে ঠিকঠাক মত গবেষণা কার্য চালানো হচ্ছে কিনা।
৩. মি: বালাপরিয়া , ডক্টর সোমের নিষেধাজ্ঞা না মেনে কৌতুহলী হয়ে উঠেছিলেন। এমনকি ডক্টর সোমের ব্যক্তিগত ডাইরিটি পড়ে তিনি বিশ্বাস করতে পারেননি যে এমনটি হওয়া সম্ভব। পরবর্তীতে মি: বালা পরিয়া গিনিপিগ গুলো দেখে বুঝতে পারছিলেন যে, ডক্টর সোম গিনিপিগ জীবের মাধ্যমেই পরীক্ষা করেন যে মাশরুম টাচ করলেই জীবের মৃত্যু সম্ভব। কিন্তু তারপরেও মি: বালা পরিয়া বিশ্বাস করেন নাই, অতি কৌতূহলবশত হয়ে মাশরুমের গায়ে টাচ করেন এবং তার জীবনটা অবিশ্বাস , কৌতুহল ও নিষেধাজ্ঞা না মানার কারণে শেষ হয়ে যায়।
সারাংশ:
১. অবিশ্বাস (ডক্টর সোমের মাশরুম দিয়ে জীবিত গিনিপিগ কে পরীক্ষা করে দেখে যে গিনিপিগ মারা যায় কিনা)
২. নিষেধ অমান্য করা.
৩. জিনোম সম্পর্কে অজ্ঞতা.
৪. অতিরিক্ত কৌতুহলী.
৬/০৯/২০২১(সোমবার)
সময়: ১১:৩৭, রাত্রে
এইসময় এরপর যদি কেউ আমার লেখা পড়ে , কপি করে কমেন্ট করে তাহলে সেই ক্রেডিট আমার।
ধন্যবাদ দাদা,
আর সব ছোট গল্পের মতোই যেন খুব তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল। আমি ভেবেছিলাম আরো অনেক কিছু হতে চলেছে বিশেষ করে গত পর্বের লেখাটি পড়ার পরেও। বর্তমান সময়ে অনেক জেনেটিক্যালি মডিফাইড খাবার এবং গবেষণা হচ্ছে। অনেক সময় উপযোগী লেখা ছিল। দাদা আপনার লেখার হাত অনেক ভালো এবং পাঠক কে ধরে রাখতে পারবেন।
এই অংশটি পড়ে মনে হচ্ছিল যেন সমরেশ, শীর্ষেন্দুর কোন উপন্যাস পড়ছি। অনেক সাহিত্যিক ভাবগম্ভীরতা নিয়ে লিখেছেন এবং চমৎকার হয়েছে আসলে।
দাদা এই গল্পটি পড়ে আমি অনেক কিছু জানতে পারলাম শিখতে পারলাম এবং বুঝতেও পারলাম। এজন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এরকম একটি কল্পকাহিনীমূলক বৈজ্ঞানিক গল্পের জন্য। এই গল্পটি পড়ে আমি যেটি বুঝতে পারলাম সেটি হল ডাক্তার সোম একজন জীনতত্ত্ববিদ বৈজ্ঞানিক তিনি মাশরুমের জিনোম সিকোয়েন্স পরিবর্তনের মাধ্যমে ভয়ঙ্কর রক্তখেকো মাশরুম আবিষ্কার করেছিলেন।যেটিকে সরাসরি দেখা যায় না। এই ভয়ঙ্কর মাশরুম টির অদ্ভুত ব্যাপার ছিল সেটি হল একটি সুন্দর মিষ্টি গন্ধের মাধ্যমে তার শিকারকে আকৃষ্ট করে। এখানে ডাক্তার সোম এই মাশরুমটিকেই মাস্টারপিস হিসেবে অভিহিত করেছেন। মধ্যপ্রাচ্য সরকার মিস্টার বালপোরিয়াকে ডাক্তার সোমের মাশরুম গবেষণা কেন্দ্র পরিদর্শন জন্য পাঠিয়ে ছিলেন কিন্তু তিনি ডাক্তার সোমের এই অতি আশ্চর্য জনক আবিষ্কারের উপর অতি উৎসাহিত হয়ে ডাক্তার সোমের বার বার বারণ করা সত্ত্বেও এই মাশরুমটিকে স্পর্শ করেছিলেন। আর এতেই মিস্টার বালপোরিয়ার জীবনের অবসান ঘটল।
এর মাধ্যমে আমরা আরও যেটা বুঝতে পারলাম যে কোন জিনিসের জন্য উৎসাহ ভালো কিন্তু অতি উৎসাহ ভালো নয়।
@rme দাদা,গল্পটি আমি অনেকবার পড়লাম এবং পড়ার পর বুঝতে পারলাম গল্পের সারমর্মটি হলোঃসবকিছু জানার পরেও অবিশ্বাস এবং নিছক সন্দেহ ই একটি মানুষের জীবনে কাল হয়ে দাঁড়ায়।
কারণসহ ব্যাখাঃ
গল্পের দ্বিতীয় পর্বের শেষ অংশটিই ছিল গল্পটির আসল টুইস্ট।যেখানে দাদার বর্ণনামতে–"বালাপোরিজি ড.সোমের মাস্টারপিস অংশটা পড়ার সময় প্রচন্ড রকমের ভয় পেয়েছিলেন এবং তিনি বলেছিলের এও কি সম্ভব!"
কারণ ড.সোমের ডাইরির মাস্টারপিস অংশটা সংক্ষিপ্ত হলেও ওখানে গবেষণার প্রধান বিষয়গুলোয় লেখা ছিল।আপনারা হয়তো ভাবতে পারেন আমি এতসব কিভাবে জানলাম।আসলে দাদার গল্পের তৃতীয় পর্বের একটা অংশে বালাপোরিয়াজি যখন মৃত গিনিপিগ গুলো দেখলেন তখন তিনি একটি মন্তব্য করেছিলেন আর তা হলো-
ব্যাপারটা বেশ বোধগম্য মনে হচ্ছে এখন তার(বালাপোরিয়ার)কাছে
অর্থাৎ ডাইরিটা তে সে এক্সাক্টলি এই বিষয়গুলো পড়েছিলেন আর বর্তমানে সে বিষয়টির চাক্ষুস প্রমাণ।সে বুঝতে পারলো গিনিপিগগুলো দিয়ে ড. সোম সেই বিষাক্ত মাংসাশী মাশরুমের উপরই পরীক্ষা চালিয়েছিল।এরপরেও বালাপোরিয়াজির মনে সন্দেহ থাকে এবং সে সেই মারাত্মক ভুল কাজটিই করে ফেলে আর তার শেষ পরিণতি হয় গিনিপিগুলোর মতো মৃত্যু।এর জন্য আমি গল্পের সারমর্ম টাতেও একই কথা লিখেছি কারণ সে ডাইরির মাস্টারপিস অংশটা পড়েই সবকিছু বুঝতে পেরেছিলেন এবং আমার বিশ্বাস তিনি মৃত্যুর আগে মাসরুমটির যে নাম বলেছিলেন সেটাও ওই ডাইরিতেই লেখা ছিল।আশা করি ব্যাপারটি বোঝাতে পেরেছি।
আসলে আপনার লেখার হাতে জাদু আছে দাদা।আপনি গল্পের তৃতীয় পর্বেই কিছু উক্তির মাধ্যমে সবকিছু পরিষ্কার করে দিয়েছেন।এক কথায় অসাধারণ একটি থ্রিলার সাইন্স-ফিকশন গল্প দাদা।গল্পটিবঅনেক উপভোগ করেছি।ধন্যবাদ সবাইকে
দাদা আপনার গল্পের প্রথম দুই পর্ব পড়ে আমার মনে হয়েছিলো এটি একটি থ্রিলার ঘরানার গল্প। কিন্তু শেষ পর্ব পড়ার পর বুঝতে পারলাম এটি সায়েন্স ফিকশন। ১৯৮০ সালে বিজ্ঞানী প্রথম আবিষ্কার করেন কার্নিভোরাস টক্সিক মাশরুম বা ওয়েস্টার মাশরুম। এই ধরনের মাশরুম মুহূর্তের ভেতর মানুষকে এর বিষ দারা প্যারালাইসড করে ফেলে কিছু বুঝে উঠার আগেই। ডঃ সোম এই মাশরুম এর জিন পরিবর্তন এর মাধ্যমে অদৃশ্য একটি ভয়ঙ্কর রূপ দিয়েছে। যেটা মিঃ বালাপোরিয়া বুঝতে পারেনি। তার সতর্কতা বিহীন অযাচিত কৌতুহল তাকে মৃত্যুর পথে ঠেলে দিলো। তার অবশ্যই মরা গিনিপিগ দেখে বিপদটা আঁচ করা উচিৎ ছিলো।
ধন্যবাদ দাদা এরকম একটি কল্পকাহিনী আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য। আপনার এই কল্পকাহিনী থেকে আমি যেটা বুঝতে পেরেছি সেটি হল ডাক্তার সোম এখানে অতিসংবেদনশীল ভয়ঙ্কর রক্তখেকো মাসুরুমকে মাস্টারপিস বলে অভিহিত করেছেন। ভয়ানক মাশরুম টি তার শিকারকে সুন্দর মিষ্টি গন্ধ দ্বারা আকৃষ্ট করে কাছে ডেকে আনে আর তারই শিকার হয়েছিলেন মিস্টার বালাপোরিয়া।
এখানে আমি আরো যেটা বুঝতে পেরেছি তা হলো ডাক্তার সোম একজন আমেরিকা ফেরত বৈজ্ঞানিক তিনি মাশরুমের জীনতত্ত্ব নিয়ে কাজ করছেন। তিনি বিভিন্ন রকম মাশরুমের জিনোম সিকোয়েন্স চেঞ্জ করে এই মাস্টারপিস মাশরুম কে আবিষ্কার করেন যা অত্যন্ত ভয়ানক ছিল। মধ্যপ্রদেশের সরকারের প্রতিনিধি মিস্টার বালাপোরিয়া ভিজিট করতে এসে ডাক্তার সোমের বার বার বারণ করা সত্ত্বেও অতি উৎসাহিত হয়ে তিনি এই ভয়ানক মাশরুমটির মধ্যে পড়ে থাকা গিনিপিগ এর লোম স্পর্শ করেছিলেন বলেই তিনি তার মৃত্যুকে ডেকে এনেছিলেন। যদিও তিনি বারবার এটি ভালো করে দেখার চেষ্টা করেছিলেন এবং এর রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা করেছিলেন। তবে এখানে অতি আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে মিস্টার বালাপোরিয়া অতি উৎসাহিত হয়ে এই মাশরুম টিকে স্পর্শ করায় তার মৃত্যুর কারণে আমরাও এই ভয়ানক মাশরুম টির সম্পর্কে জানতে পারলাম। যেটা গল্পের কোথাও ডাক্তার সোম উল্লেখ করেন নাই।
গল্পটি পড়ে আমি বিভিন্ন ভাবে গবেষণা করে আমি যতটুকু বুঝতে সক্ষম হয়েছি সেটা তুলে ধরা হলো।
প্রথম পর্বে আমি একটি কথা পেয়েছিলাম যেটার নাম জিনোম সিকোয়েন্স:
জিনোম সিকুয়েন্স সম্পর্কে আমি এটা জানতে পেরেছি যে, জিনোম সিকোয়েন্স হলো ডি এন এ আর ক্রম বিন্যাস।এর সাহায্যে খুব নিপুণ ভাবে কোন জীবের জিনেটিক কোডকে আলাদা করা হয়।
তারপরে পোস্টটিতে বলেছেন যে মাশরুম চাষ করা হবে সেটা টক্সিক! অর্থাৎ চাষকৃত মাশরুম টি হবে বিষাক্ত।যেটা খাওয়া যাবে না।
তারপর আমি গল্পে পেয়েছিলাম ড: সোম আমেরিকা থেকে গিয়ে এসে একটি পান্ডব বর্জিত জঙ্গলে একটি গবেষণাগার তৈরি করেছিলেন।এখানে পান্ডব বর্জিত জঙ্গল বলতে আমি পাহাড় এবং জঙ্গল কে বুঝেছি।আমি মনে করি তার গবেষণাগার কোন পাহাড়ে ছিল যেটা জঙ্গলে পরিপূর্ন।যেই গবেষণাগারে মধ্যপ্রদেশের সরকার একজন পরিদর্শককে পাঠায় যার নাম ছিল বালাপরিয়া।
ডা: সোম যে মাশরুম গুলো নিয়ে গবেষণা করেন মাশরুম গুলো ব্রাজিলিয়ান মাশরুম ছিল। কিন্তু পরিদর্শক হিসেবে মি: বালাপোরিয়া সেখানে গিয়ে তার গবেষণাগারে কোন মাশরুম পায়নি। উত্তরে ডা: সোম বলেছিলেন যে তার গবেষণা মূলত জিন নিয়ে। থেকে আমি পরিষ্কার হয়েছি যে গল্পটি জিন নিয়ে। মি: বালাপোরিয়া যখন মাশরুমের কথা বলে তখন ডা: সোম তাকে একটি লম্বা প্লাস্টিকের সেড লক্ষ্য করতে বলেন।সেখানে যাওয়ার জন্য বালাপোরিয়া বেশ আগ্রহ পোষণ করে থাকে।কিন্তু সেখানে সবাইকে যেতে নিষেধ করে থাকে ডা: সোম।কেননা সেট একটু বিপদজনক জায়গা।
কিন্তু সেখানে মি:বালাপোরিয়া যাওয়ার জন্য এক পায়ে খাড়া, তাই ডা: সোম তাকে মাশরুম টাচ না করার শর্তে সেখানে নিয়ে যায়।মাশরুম ঘরে মাশরুম গুলো প্লাস্টিকের চাঁদর দিয়ে ঘেরা ছিল।
সেখানে মি:বালাপোরিয়া একটি মিষ্টি গন্ধ পেয়েছিল যেটা একটি পিতলের গামলা থেকে এসেছিল।পিতলের হামলার কাছে যাওয়া মাত্র ডা:সোম তাকে কর্কশ ভাবে সরে যেয়ে বলেন।
তারপর রাতের খাবার শেষে বালাপোরিয়া শোয়ার ঘরে গিয়ে জানালা খুলে গভীর রাতে ডা:সোম কে মাশরুম ঘরে যেতে দেখেন।
যখন বালাপোরিয়া ডা: সোম এর ডাইরির পাতা উল্টাচ্ছিল এমন সময় মাস্টারপিস নামের লেখাটা তার চোখে লাগে এবং পিতলের গামলা এবং নীল রঙের ঘেরা পর্দার ভেতরে কি আছে সেটা সম্পর্কে জানার জন্য কৌতুহল হয়ে পরেন।
পরে বালাপোরিয়া রুম থেকে একটা পাতলা টি শার্ট এবং চপ্পল পড়ে গেটের বাহিরে যায়।তারপর ধীরে ধীরে বালাপোরিয়া মাশরুম ঘরে প্রবেশ করেন এবং পিতলের গামলার কাছে যায়।অতি মিষ্টি গন্ধটা যেন আরো বেশি তীব্র ছিল।গামলার দিকে ঝুঁকে বালাপোরিয়া নিজেকে প্রশ্ন করেন গামলাতে এখনও কোন মাশরুম নেই তবে মাশরুম কি আগে ছিল?এখন নেই?
তারপর বালাপোরিয়া নীল পর্দার পেছনে কি রয়েছে সেটা দেখার জন্য গেলেন এবং নিকষ কালো অন্ধকার দেখতে পায়।তখন তার মোবাইলের টর্চ জ্বালিয়ে নেয়।সেখানে বালাপোরিয়া দেখতে পায় কিছু গিনিপিগ (দেখতে খরগোশের মত)সেখানে মরা গিনিপিগ ও ছিল।
তারপর সে পুনরায় পিতলের গামলার কাছে এসে দাঁড়ায় এবং কালো মাটি গুলো লক্ষ্য করে এবং গিনিপিগের কয়েকটি লোম দেখতে পায়।তারপর বালাপোরিয়া একটি মারত্মক ভুল করে লোম গুলো টাচ করে।
টাচ করা মাত্র লক্ষ্য করেন শত শত মাশরুম।সেগুলো দেখতে নিকষ কালো আলপিনের মতো ছিল।বালাপোরিয়া মাশরুম গুলো উপরিভাগ স্পর্ষ করা মাত্র ক্ষণিকের জন্য সেন্সলেস হয়ে পড়েন।তিন মিনিট পর সে বুঝতে পারে তার হাত কাদ পর্যন্ত অবস হয়ে গেছে।ক্রমান্বয়ে তার শরীর একদম নাজুক অবস্থা হয়ে পড়ে।পরবর্তীতে সে লক্ষ্য মাশরুম গুলো লাল বর্ণ ধারণ করেছে।যেটা আমার কাছে মনে হচ্ছে রক্ত।আমি মনে করি মি: বালাপোরিয়া নিস্তেজ হয়ে যাওয়ার কারণটা ছিল তার শরীর থেকে মাশরুম রক্ত শুষে নিয়েছিল।
গল্পটি পড়ে আমি বুঝতে আরো ভালো করে বুঝতে পারলাম মি: বালাপোরিয়া একজন নির্বোধ লোক।এখানে এসে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিতে পারেনি।সে একজন সরকারি প্রতিনিধি সেটা ছিল তার গৌরব।ডা:সোম এর নিষেধ করা সত্ত্বেও গামলার ভেতরে থাকা মাশরুম স্পর্শ করা ছিল তার জন্য একটি বড় ভুল।তাছাড়া আমি এই গল্পের মাধ্যমে জানতে পারলাম একটি মাংসাশী মাশরুম সম্পর্কে।
গল্পটির তিনটি পর্ব পড়ে আমি এই বিষয় গুলো উপলব্ধি করতে পেরেছি।জানি না কতটুকু সফল হবে।
শুভেচ্ছায় @sabbirrr