একটি শোকের রাত

in Incredible India21 days ago

আসসালামু আলাইকুম
প্রিয় বন্ধুরা কেমন আছেন সবাই আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমি সচরাচর এত রাতে গল্প কখনো লিখি না কিন্তু আজ আমার মনে হলো যে আজ এই মুহূর্তটা আপনাদের সাথে শেয়ার করা আমার খুব প্রয়োজন। চলুন তাহলে এক অদ্ভুত গল্প শোনায় আপনাদের সত্যি বলতে আমাদের জীবনটাই একটা গল্প। প্রত্যেকটা সময় প্রত্যেকটা মুহূর্ত এক একটা গল্প হয়ে রয়ে যায় স্মৃতির পাতায়।

IMG_20250125_050018.jpg

রাত তখন দুইটা। ঘরের ভেতর নিস্তব্ধতা, আমার মেয়ে গভীর ঘুমে। আমিও প্রায় অচেতন, কিন্তু হঠাৎ করেই কলিংবেলের শব্দে ঘুম ভেঙে গেল। আমি কিছুটা বিভ্রান্ত হয়ে উঠে বসলাম। আমার স্বামী তাড়াতাড়ি দরজা খুলতে ছুটল। দরজা খুলতেই করবি আমিন ভাবিকে দেখলাম। আপনারা সবাই করবি আমিন ভাবি কে চেনেন। তার চোখ ভেজা, মুখে শোকের গভীর ছাপ। তিনি ভাঙা কণ্ঠে বললেন, ভাই, ভাবি, আমার শ্বশুরমশাই আর নেই। হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন।

শুনে যেন স্তব্ধ হয়ে গেলাম। উনি ছিলেন পরিবারের মূল ভরসা। গতকালই তো হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন হৃদরোগ হসপিটাল এ। তখনো ভাবিনি এত দ্রুত এমন একটা দুঃসংবাদ শুনতে হবে। করবি ভাবি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলছিলেন, করবি ভাই গেটের কাছে আসছে, কিন্তু এত রাতে একা কীভাবে যাব? তার অসহায়ত্ব আর কষ্টে মনটা ভেঙে যাচ্ছিল।

IMG_20250125_050030.jpg

নিজেকে সামলে নিয়ে আমি ভাবির পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। তাকে শক্ত থাকার কথা বললাম। বললাম, আল্লাহ ভরসা। তিনি জানেন আপনার কষ্ট। আপনি দোয়া করুন, আল্লাহ যেনও আপনার শশুড়কে জান্নাতে শান্তি দান করেন। কিন্তু সেই মুহূর্তে এই কথাগুলোও যেন তার শোক হালকা করতে পারছিল না। আমি তাড়াতাড়ি তার জন্য যা যা প্রয়োজন, গুছিয়ে দিলাম।

তবে সমস্যা ছিল তার যাত্রার। আমি আমার স্বামীকে বললাম, তুমি ভাবিকে গেট পর্যন্ত এগিয়ে দাও। করবি ভাই ওখানে এসে নিয়ে যাবে।স্বামী মাথা নাড়লেন, আর ভাবিকে প্রস্তুত করলেন। গভীর রাতে এভাবে তাকে একা যেতে দিতে মন চাইছিল না। ভাবি কাঁদতে কাঁদতে বললেন, আপনাদের বিরক্ত করলাম, ক্ষমা করবেন। আমি বললাম, এই মুহূর্তে এসব ভাববেন না। আমরা আছি আপনার পাশে।

IMG_20250125_050044.jpg

আমার স্বামী তাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন। আমি জানালার পাশে দাঁড়িয়ে রইলাম। রাত সাড়ে চারটা বাজে তখন। ভাবির যাওয়ার দৃশ্য দেখে মনে হলো, জীবনের এই অধ্যায়গুলোই মানুষকে শেখায় শক্ত থাকতে। শ্বশুরমশাই ছিলেন একজন দয়ালু মানুষ। তিনি শুধু পরিবারের নয়, সবার প্রিয় ছিলেন। তার মৃত্যুতে যে শূন্যতা তৈরি হলো, তা সহজে পূরণ হবে না।আপনাদের সাথে কথা গুলো লিখতে লিখতেই আমার স্বামী ফিরে এসে বললেন, ভাবিকে ঠিকঠাক রেখে আসলাম। করবি ভাই তাকে নিয়ে যাবেন। আমি আল্লাহর কাছে হাত তুলে দোয়া করলাম, হে আল্লাহ, তাকে জান্নাতের সর্বোচ্চ স্তরে রাখুন। তার পরিবারের সবাইকে এই শোক সইবার শক্তি দিন।গভীর রাতে এই ঘটনার মধ্যে জীবনের অনিশ্চয়তার কথা বারবার মনে হচ্ছিল।

মানুষের জীবন কতটা ক্ষণস্থায়ী। এই পৃথিবীর সব কিছুই একদিন শেষ হয়ে যায়। আমি ভাবতে লাগলাম, আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত কীভাবে আরও অর্থবহ করা যায়। ভাবির মুখে শোনা তার শ্বশুরমশাই যেভাবে সবার পাশে ছিলেন, আমাদেরও সেভাবে জীবনটা কাটানো উচিত।রাতের অন্ধকার ধীরে ধীরে ফিকে হতে শুরু করল। ভোরের আলো আসার সাথে সাথে মনে হলো, শোকের কালো মেঘও হয়তো একদিন কেটে যাবে। আল্লাহ আমাদের জীবনের সব শোক সামলে উঠার শক্তি দিন।
সবাই ভাল থাকেন সুস্থ থাকেন কামনাই করি আল্লাহ হাফেজ।

Sort:  
 20 days ago 

যিনি মারা গেছে😢, উনাকে আল্লাহ তাআলা জান্নাতবাসী করুক, বিপদের সময় মানুষ খুব অসহায় হয়ে পড়ে। একজন মানুষ যখন অসহায় ব্যক্তির পাশে দাঁড়ায় ওই ব্যক্তিটা একটু শক্তি পাই।

মানুষের জীবন খুবই অল্প ক্ষণস্থায়ী। কখন কার মৃত্যু হয় এটা সৃষ্টি করতে ছাড়া কেউ জানে না।

আল্লাহর কাছে দোয়া করি এই শোক সামলে উঠতে পারে।

Loading...
 20 days ago 

আপনার লেখাটি পড়ে মনটা খারাপ হলো। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি করবী দিদির শশুরমশাইকে তিনি স্বর্গবাসী করুন। সত্যি কথা বলতে এমন মুহুর্ত আমাদের সকলের জীবনে আসে। কারোর জীবনে এই সময় পার হয়েছে, আবার কারোর জীবনে আসতে চলেছে। তবে এই সময়টিকে আমরা কেউই এড়িয়ে চলতে পারবো না, এটাই বাস্তব। তবে হ্যাঁ যত সহজে আমি কথাগুলো লিখছি, যাদের জীবনে এমনটা ঘটে, বিষয়টি তাদের জন্যে আরও অনেক বেশি কঠিন। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি ঈশ্বর ওনাদের পরিবারকে সহ্যশক্তি দান করুক। আপনি যেভাবে ওনার পাশে ছিলেন এমনটাই বোধহয় সকল প্রতিবেশীর করা উচিৎ। তবে এমন মানবতা আজকাল প্রায় বিলীন। ভালো থাকবেন।

 20 days ago 

করবি আপুর পোস্টে ওনার শ্বশুরের অনেক প্রশংসা শুনেছি আর উনার পোস্ট থেকে এতোটুকু বুঝতে পেরেছি অনার শ্বশুর অত্যন্ত ভালো একজন মানুষ।।

কালকে হঠাৎ করে উনি আমাদের কমেন্ট দিতে বলেন আমার শ্বশুর হৃদরোগে আক্রান্ত শুনে তখনই খারাপ লাগতেছিলল।। কিন্তু কি করার সৃষ্টিকর্তা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন আবার তাকে নিয়ে যাবেন এটাই নিয়ম।।

সত্যি অনেক বেশি কষ্ট হচ্ছে করবি আপুর জন্য ।।।এটা একদম সত্যি বলেছেন ওনার শূন্যতা হয়তো আর পূরণ হবে না কিন্তু মেনে নিতে হবে।।

 20 days ago 

জ্বী ভাইয়া আপনি একদম ঠিক বলেছেন করবীভাবির মুখে আমি অনেকবার তার শ্বশুরের কথা শুনেছি। তিনি শ্বশুরবাড়িতে তার সাপোর্ট অনেক পেয়েছে। যাইহোক আমরা সবাই দোয়া করি তার শশুর যেন জান্নাত বাসী হন।

 20 days ago 

আপনার পোস্টটি পড়ে মনটা বেশ খারাপ হয়ে গেল। মানুষ সারাজীবন বেঁচে থাকে না। এই নির্মম সত্য আমাদের সবার মেনে নিতে হবে। সকলের জীবন নিয়ে এমন একটি নির্মম মুহূর্ত আশে। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি করবী দিদি শ্বশুরমশাই যেন স্বর্গবাসী হন। এই নির্মল সত্যতা থেকে আমরা কখনই বের হতে পারব না। কখনো না কখনো আমাদের সবার এরকম একটা সময় আসবে যে আমাদের প্রিয় মানুষটিকে হারাতে হবে।

ভালো থাকবেন দিদি।

 20 days ago 

রাতের বেলায় হঠাৎ এরকম খবর পেলে খুবই খারাপ লাগে। আসলে যারা হৃদ রোগে ভোগেন তাদের হঠাৎ করে এরকম হয়। তবে এই রকম দুঃখের দিনগুলো পার করা সত্যিই খুব কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। পরিবারের গুরুজন এইভাবে চলে গেলে নিজেদের খুবই অসহায় লাগে। যিনি চলে গেছেন উনার আত্মার শান্তি কামনা করি।

 16 days ago 

আমাদের জীবনটা সত্যিই অনিশ্চিত কখন কি হয়ে যায় সেটা আমরা কেউ জানিনা একদিন আমাদেরকেও এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে তবে প্রিয় মানুষকে হারানোর যন্ত্রণা কতটুকু সেটা আমি একটু হলে অনুভব করতে পারি ওই মানুষটা করবি আমিন আপুর অনেক বেশি ভালোবাসতো যতটুকু উনার পোষ্টের মাধ্যমে দেখেছি।

হঠাৎ করে রাতে এই ধরনের শব্দ শুনলে বা কথা শুনলে এমনিতেই তো শরীর কাপা শুরু হয়ে যায় তারপরেও আপনি উনাকে যথেষ্ট পরিমাণে সাহায্য করেছেন তবে উনার যাওয়া নিয়ে একটু সমস্যা আসলে উনার যে সমস্যাটা এই সময় একা থাকাটাও খুব ভয়ের একটা ব্যাপার যাই হোক অসংখ্য ধন্যবাদ আপনি ওনাকে সাহায্য করেছেন জানতে পেরে ভালো লাগলো।

 16 days ago 

আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আপু এত সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.23
JST 0.033
BTC 96957.04
ETH 2738.04
SBD 0.43