প্রত্যাবর্তন।
হ্যালো বন্ধুরা।
আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই অনেক ভালো আছেন। সবাই ভালো থাকার চেষ্টা করুন আপনি নিজের জন্য কিছু না করতে পারলে কেউ আপনাকে ভালো রাখার দায়িত্ব নেবে না। যাইহোক, আজ আমি আপনাদের সাথে একটা গল্প শেয়ার করব। গল্পটি কাল্পনিক নয়, আমার পরিচিত একজনের ঘটনা।
ছেলেটির নাম আবির। বাবা প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক। হাই স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে পলিটেকনিক্যালে চান্স হয় ছেলেটির। গায়ের রং ফর্সা, চিকন করে বেশ লম্বা। কলেজে ভর্তি হয়েই আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা। প্রথমে নিজের ক্লাসের সবাইকে নিজের দলে কব্জা করে নেওয়া এরপর ক্যাম্পাসের অন্যান্য স্টুডেন্টদের উপর আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা। তার চাচা ছিল জেলা যুবলীগের যুগ্ন আহবায়ক। তার ব্যাকগ্রাউন্ডে রাজনৈতিক পাওয়ার থাকায় তার চলাফেরা ছিল একটু উশৃংখল টাইপের।
আবিরের ক্লাসে তার সহপাঠী যারা ছিল তাদের মধ্যে কয়েকজন ছিল নেশাখোর। বিভিন্ন ধরনের নেশার সাথে তারা জড়িত ছিল। আর সব নেশাখোরদের বস ছিল আবির। গুরু মানতো তাকে সবাই। ছেলেটির সাথে আমার পরিচয় ক্যাম্পাস থেকেই। অসম্ভব ভালো একটা সম্পর্ক হয়ে যায় ওর সাথে, পরে ভালো বন্ধুত্ব। আমাদের বন্ধুত্বটা এমন পর্যায়ে যায় যে আমরা বেস্ট ফ্রেন্ড দাবি করতাম দুজন দুজনকে। তবে এখানে একটা মজার বিষয় হচ্ছে ও সব নেশাখোরদের গুরু হলেও আমাকে কখনোই কোনো ধরনের নেশা করার জন্য উৎসাহ দিত না। বরং কোন রাজনৈতিক মিটিং মিছিল থেকে আমাকে ও দূরে রাখত।
আমাদের বন্ধুত্বটা খুবই গভীর পর্যায়ে পৌঁছায়। প্রত্যেকদিন দেখা, একসাথে আড্ডা দেওয়া, ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়ানো সবই ছিল প্রত্যেকদিন এর রুটিন। ও এমন একজন ছেলে ছিল যার চোখের দিকে তাকিয়ে সহজে কেউ কথা বলতে পারতো না। একমাত্র আমি আর আমার বন্ধু আলামিন প্রতিনিয়তই আবিরকে ব্যঙ্গ করতাম। কলেজ লাইফে আমাদের অনেক স্মৃতি আছে। আমরা খুবই আনন্দ করেছি কলেজ লাইফে। ট্যুরে যখন যেতাম আমরা একসাথে না ঘুরলে ট্যুরের মজাটাই যেন পেতাম না। একবার ওকে ছাড়াই ট্যুরে গিয়েছিলাম। সে ট্যুর মোটেও ভালো কাটেনি। সবসময়ই ওকে মিস করতাম। এখনও কলেজ লাইফের কথা মনে পড়লেই ওর সাথে কাটানো মুহূর্তগুলোর স্মৃতি মাথায় ঘুরপাক খায়।
আমি আর বন্ধু আলামিন অনেক চেষ্টা করতাম ওকে নেশা থেকে দূরে রাখতে আর ভালো হয়ে যাওয়ার জন্য। ও উৎশৃংখল লাইফ লিড করতে বেশি পছন্দ করত। সম্ভবত ষষ্ঠ সেমিস্টার এর ফাইনাল পরীক্ষার রেজাল্ট আসলো আমরা সবাই পাস করেছি, কিন্তু আবির ৪ টা সাবজেক্টে ফেল করেছে অর্থাৎ ও ড্রপ-আউট গিয়েছে। ওকে আরো এক বছর ওই সেমিস্টারেই থাকতে হবে। খুবই কষ্ট পেয়েছিলাম আমরা। আমরা তখন উপরে উঠে চলে গেলাম আর আবির নিচের ক্লাসে পড়ে থাকলো। ওর একেবারে মন বসতো না আমাদের ছাড়া ক্লাস করতে। ক্যাম্পাসে আমরা সবসময় একসাথেই থাকতাম কিন্তু ক্লাসটা ছিলো ভিন্ন। এভাবে আরো এক বছর কেটে গেল৷ এরপর আবির ফাইনাল পরীক্ষা দিল। কিন্তু দুঃখের বিষয় সেই ইয়ারেও ড্রপ আউট গেল। দুইটা বছর লস গেল ওর। আর এদিকে আমরা প্রায় শেষ করে ফেললাম।
আবির মানসিকভাবে খুবই ভেঙে পড়েছিল। এরপর আমরা ইন্টার্নি করতে ঢাকা চলে এসেছিলাম। আর ও কলেজে ছিল। ওর জন্য খুবই খারাপ লাগত। এদিকে ওর সব বন্ধু যাদের সাথে এতো স্মৃতি তারা সবাই দূরে দূরে চলে গেছে কিন্তু ও এখনও ক্যাম্পাসেই বসে আছে। এই মুহূর্তেই আবিরের জীবনের সবচেয়ে বড় পরিবর্তনটা আসে। আবির পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কালাম শুরু করে আর মাদক একেবারেই ত্যাগ করে। সম্পূর্ণ ধার্মিক হয়ে যায়। নামাজ-কালাম, লেখাপড়া বাদে ওর মাথায় আর তখন কিছুই ছিল না। আমরা সবাই এতটা অবাক হয়েছিলাম তা বলার মতন না। ছোট ভাই যারা ছিল ক্যাম্পাসে তারা পর্যন্ত সবাই অবাক ওর ফেসবুকের প্রোফাইল দেখে। একটা মানুষ এতটা পরিবর্তন কিভাবে হতে পারে। কিন্তু আবির সেটা করে দেখিয়েছিল।
এরপর সবচেয়ে বড় চমক দেখায় আবির। দুই বছর অনেক কষ্টে ডিপ্লোমা শেষ করে এরপর ডুয়েটের জন্য এডমিশন নিতে গাজীপুরে যায়। অনেক ভালো ভালো স্টুডেন্ট প্রথম বছর চান্স না পেয়ে পরের বছরগুলোতে আবার চেষ্টা করে কিন্তু আবির প্রথমবার ৩ থেকে ৪ মাসের প্রিপারেশনে ডুয়েটে চান্স নিয়ে ফেলে। এই নিউজ টা যেই শুনেছে সেই প্রথমে বিশ্বাস করতে পারেনি। আমাকে যখন আবির ফোন দিয়ে জানিয়েছিল প্রথম তখন অবশ্য আমি অনেক খুশি হয়েছিলাম নিউজ টা শুনে। বন্ধু আমার করে দেখিয়েছে। ও জলজ্যান্ত একটি উদাহরণ, যে মানুষ চাইলে সবকিছু করতে পারে। শুধুমাত্র প্রবল ইচ্ছা শক্তি থাকতে হবে চেষ্টা করতে হবে আর সৃষ্টিকর্তার কাছে চাইতে হবে তাহলেই সম্ভব।
আমার বন্ধুর এই পরিবর্তনটা অনেকের জন্যই শিক্ষা হয়ে থাকবে। বন্ধুর জন্য সবসময় শুভকামনা থাকবে । যাহোক আজকে এখানেই বিদায় নিচ্ছি। দেখা হবে পরবর্তী কোন পোস্টে ইনশা আল্লাহ্। আল্লাহ্ হাফেজ।
image source & credit: copyright & royalty free PIXABAY
VOTE @bangla.witness as witness

OR
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |

মানুষ এই জন্য পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ ৷ কারন মানুষের মধ্যে জ্ঞান বিবেক বুদ্ধি মেধা সবই আছে ৷ কিন্তু তা সবাই প্রয়োগ করে না ৷ আর যার করনে মানুষ বিভিন্ন জন বিভিন্ন ধরনের ৷
তবে এটা বিশ্বাস করতে হবে যে মানুষ পরিবর্তনশীল মানুষ সবকিছু করতে পারে ৷
তবে ভাইয়া আমাদের সমাজে আজও আমরা দেখতে পাই যার বাবার টাকা ধন সম্পদ বা তার পরিবার রাজনীতি বিষয়ে জড়িত ৷ সেই পরিবারের সন্তান প্রায় ওই পথে থাকে ৷
যা হোক দিনশেষে আবির যে তার ভুল বুঝতে পেরেছে ৷সত্যি তা প্রসংশার দাবিদার ৷
জি ভাইয়া আবির ভাইয়ের পরিবর্তনটা সত্যি ই অনেক ভালো লেগেছে। অনেক আগে থেকেই তো তাকে চিনি তার পরিবর্তনের ধারাটা বেশ ভালো ছিল। মানুষ চাইলে অনেক গভীর থেকেও ফিরে আসতে পারে।
আসলে ভাই আজকে আপনার পোস্টটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো। মানুষ চাইলে সবকিছু করতে পারে। সেটি প্রমাণ আপনার বন্ধু আবির। মানুষ বছরের-পর-বছর চেষ্টা করেও পায়না আর আবির ভাই মাত্র তিন থেকে চার মাস প্রিপারেশনেই সে ডুয়েটে চান্স পেয়ে গেছে। সত্যি তার কপাল ভালো এবং তার ইচ্ছা শক্তি ছিল খুবই ভালো লাগলো।
আসলে ভাইয়া সামান্য এইটুকু জীবনে অনেক প্রত্যাবর্তন দেখেছি। যেগুলো আমাদের জীবনের শিক্ষণীয়। ভাইয়া আপনার প্রত্যাবর্তনের গল্প পড়ে আমার বন্ধু কথা মনে পড়ে গেল। আমার বন্ধু ছিল অশিক্ষিত নেশাখোর এমন কোন নেশা নেই করত না। এলাকার মধ্যে কাউকে দাম দিত না, সম্মান কি জিনিস সে জানতোই না খুবই উশৃংখল ছিল। কিন্তু বর্তমানে সেই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে। আর অনেক বড় একজন সফল ব্যবসায়ী। সতী মানুষেরই প্রত্যাবর্তন গুলো অবাক করে দিয়ে থাকে এবং কি আমাদেরকে শিক্ষা দিয়ে থাকে। আপনার প্রত্যাবর্তন গল্পটি পড়ে খুবই ভালো লেগেছে এবং আপনার বন্ধুর ডুয়েটে চান্স পাওয়ার বিষয়টা সত্যি অবাক করার মত ছিল। শুভকামনা রইল আপনার জন্য, এত সুন্দর একটি গল্প উপহার দেওয়ার জন্য।
আল্লাহ চাইলে কিনা সম্ভব। আল্লাহ চেয়েছেন জন্যই আপনার বন্ধু খারাপ রাস্তা থেকে ভালো রাস্তায় ফিরে এসেছে এবং পড়ালেখা আগে থেকে অনেক ভালো করছে। আল্লাহ কখন কার দিকে মুখ তুলে তাকান তা আল্লাহই জানে। আশা করি আমাদের সকলের প্রতি আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক।
আপনার বন্ধু আবির নিজের জীবনকে পরিবর্তন করে নিয়েছেন জেনে সত্যি অনেক ভালো লাগলো। আসলে এরকমটা সচরাচর হয় না। যখন কেউ মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে তখন সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারে না। তিনি নেশার জগত থেকে এবং রাজনৈতিক জগত থেকে বেরিয়ে এসে ধার্মিক হয়েছেন এবং ডুয়েটে চান্স পেয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছেন জেনে সত্যি অনেক খুশি হলাম। আসলে এরকমটা কল্পনাতেই হয়। বাস্তবে যে কখনো এটা হতে পারে তা ভাবতেই পারিনি। সত্যি অনেক ভালো লাগলো। এই লেখাগুলোর মাধ্যমে সবাই উৎসাহ পাবে। আসলে নিরাশ হওয়ার মাধ্যমে কখনো কোন কিছু অর্জন করা যায় না। আমরা যদি নিরাশ হওয়া থেকে দূরে থেকে নিজের লক্ষ্যে ফিরে যাই তাহলে অবশ্যই সফল হতে পারব।
আসলে আপনার বন্ধু আবিরের মত এইরকম অনেককে দেখেছি। কিন্তু আবির যে নিজেকে পরিবর্তন করতে পেরেছে এটা দেখে সব থেকে বেশি ভালো লাগে। আসলে খারাপ হতে বেশি সময় লাগে না। কিন্তু খারাপ থেকে ভালোর দিকে আসাটা অনেক কঠিন কাজ। কিন্তু আপনার বন্ধু যে এই বিষয়টা কাটিয়ে উঠতে পেরেছে এটাই তো সব থেকে ভালো কাজ। আর আমি মনে করি নিজে চেষ্টা করলে সব কিছুই করা সম্ভব। ভালো খারাপটা নিজের কাছেই সীমাবদ্ধ।
আসলে ভালো থেকে খারাপ হওয়ার সহজ কিন্তু খারাপ থেকে ভালো হয়া অনেক কঠিন। আপনার বন্ধু আবির চেষ্টার মাধ্যমে সে পেরেছে। সে মাত্র তিন-চার মাস প্রিপারেশন নিয়ে ডুয়েটে চান্স পেয়েছে। সত্যিই বিষয়টি আমাকে অনেক উৎসাহ দিয়েছে। কারণ মানুষ অনেক বছরের চেষ্টা করে পায় না। আসলে চেষ্টা করলে যে সফলতা আসে সেটা তার প্রমাণ।
আবির ভাইয়ের গল্প আপনার কাছ থেকে অনেকবার শুনেছি ভাই। আসলে মানুষের কখন পরিবর্তন হবে সেটা বোঝাই মুশকিল। আরেকটি কথা চেষ্টা কখনো বিফলে যায় না। চেষ্টা জীবনের সফলতা এনে দেবেই যেটা আবির ভাইয়ের জীবনের বাস্তব উদাহরণ। তার জীবনের সাথে জড়িত আপনার জীবনের অনেক গল্প এই পোষ্টের মাধ্যমে জানতে পারলাম। তার জীবনের সফলতা অনেকের জন্য শিক্ষা অনেক ব্যর্থতার পরেও ঘুরে দাঁড়ানো যায় যেটা আবির ভাই প্রমাণ করেছে।
ভাইয়া আমি গল্পের প্রথমে বেভেছিলাম আবির ভাই মনে হয় অধপতনে গেছে। কিন্তুু গল্পের লাষ্টে একটি চমক দিয়ে দিলেন। মানুষ ইচ্ছা করলে অসাধ্যকে সাধন করতে পারে । ধন্যবাদ ভাইয়া।