"রাত্রির শেষে দেখি এখনো আঁধার, আলোর নিশানা আমি খুঁজি বারবার" (Light! where is light?)

image source: Copyright Free Image from Pixabay.Com || image credit: rottonara
বাপ্পি লাহিড়ীর সেই বিখ্যাত গানটির লাইনদু'টি দিয়েই আজকের লেখা শুরু করলাম ।"করোনা", আতঙ্কের অপর নাম । শব্দটির সাথে পরিচয় নেই এমন মানুষ এখন সারা বিশ্বে খুঁজেও কাউকে পাওয়া যাবে না । মানব জাতির বিগত ১০০০ বছরের ইতিহাসে সর্বাধিক বিপর্যয়ের কারণ "করোনা"। এই পৃথিবী এখন মৃত্যু উপত্যকা (death valley) ছাড়া আর কিছুই না । অবিরত মৃত্যু মিছিল, অবিরাম রক্ত ক্ষরণ আজ আজ ধরিত্রীর বুকে ।মানুষ আজ আতঙ্কের চরম শিখরে ।
শুধু স্বাস্থ্যগত সমস্যাই নয়, আর্থিক, মানসিক, সামাজিক সর্বস্তরের সমস্যায় জর্জরিত আজ মনুষ্য সমাজ, শুধুমাত্র আণুবীক্ষণিক এই জীবাণুর কারণে । গত দুই বছরে সমগ্র পৃথিবীর মানুষ চরম বিপদের মধ্যে দিন অতিবাহিত করেছে, এখনো করছে । খোলা হাওয়ায় বুক ভরে নিঃশ্বাষ নেওয়া এখন সুদূর কল্পনাহত । মাস্ক ছাড়া বাইরে বেরোনো মানেই জীবনকে হাতের মুঠোয় করে বেরোনো । সবুজ মাঠে বাচ্চাদের খেলা শেষে কলকাকলি শুনতে পাওয়া এখন স্বপ্নাতীত । জীবন এখন খাঁচায় বন্দী । গৃহবন্দী মানুষের জীবন এখন চিড়িয়াখানায় বন্ধ পশুপাখিদের জীবনের ন্যায় ।
এই আঁধারের শেষ কোথায় ? যতবড় অন্ধকার নেমে আসুক না কেন আঁধার তো একদিন কেটে যাওয়ারই কথা ।অথচ, কই এখনো তো আলোর দিশা খুঁজে পাওয়া গেলো না ।তবে কি মানব জাতি আজ নির্মূলের পথে? আমি মনে করি "অবশ্যই না" । মানবজাতির লক্ষ বছরের ইতিহাসে এমন বিপর্যয় বহু এসেছে, কত জীবাণু সংক্রমণ, যুদ্ধ-বিগ্রহ, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হয়েছে মানব জাতিকে তার কোনো ইয়ত্তা নেই ।
বিধ্বংসী ভূমিকম্প, খরা, বন্যা, জলোচ্ছাস-এ বহু জাতি, বহু সভ্যতা পৃথিবী থেকে মুছে গেছে। যেমন - আজটেক সভ্যতা, মায়ান সভ্যতা, মহেঞ্জোদারো-হরপ্পা সভ্যতা (Indus valley civilization) । আবার মারাত্মক যুদ্ধ-বিগ্রহে বহু জাতি হয়েছে পদানত, বহু জাতির অস্তিত্ব আজ বিলুপ্ত - যেমন : প্রাচীন মেসোপটেমিয়ান সভ্যতা, ঈজিপসিও সভ্যতা (egyptian civilization) ও ইনকা সভ্যতার বিলুপ্তি, তৈমুর লঙ্গের আর চেঙ্গিস খানের অজস্র সামরিক অভিযান, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-এ অজস্র নিরীহ মানুষের প্রাণহানি, বিশেষ করে ইহুদি জাতির বিশাল গণবিলুপ্তি ।
এর পরে আছে জীবাণু সংক্রমণ । প্লেগ (plague), শিহরন জাগানো একটি শব্দ । ত্রয়োদশ শতকের মাঝামাঝি সময় সমগ্র ইউরোপ জুড়ে প্লেগের ভয়াল কালো মৃত্যুর ছায়া বিস্তার লাভ করে । মাত্র ৭ বছরে ১৩৪৬ থেকে ১৩৫৩ প্রায় ২০ কোটি মানুষের জীবন কেড়ে নেয় এই ভয়ঙ্কর জীবাণু ।সেই সময়কার সমগ্র ইউরোপের অর্ধেক জনসংখ্যা প্লেগে সাফ হয়ে যায় । গা শিউরে উঠছে না শুনে ? তবুও শেষমেশ কিন্তু আঁধার কেটেই গেছিলো, মানব জাতি আবার জয় করতে পেরেছিলো প্লেগকে । প্লেগের পরেই যেটার নাম করতে হয় সেটা হলো "স্প্যানিশ ফ্লু (Spanish flu)", ইনফ্লুয়েঞ্জার একটি ভ্যারিয়েন্ট । ১৯১৮ থেকে ১৯২০ মাত্র দুটি বছরে তখনকার সমগ্র পৃথিবীর এক তৃতীয়াংশ মানুষের মৃত্যু ঘটে এই স্প্যানিশ ফ্লু'তে । ভাবতে পারেন এর ভয়বহতা ? আজকের covid-১৯ হলো সেই স্প্যানিশ ফ্লু'রই একটা মোডিফাইড ভার্সন। ল্যাবরেটরিতে সার্স ভাইরাস এর জিনোম সিকোয়েন্সে মডারেশন করে কোরোনার সৃষ্টি । এর পর নাম করতে হয় ম্যালেরিয়ার (malaria), মশাবাহিত জীবাণুঘটিত এই রোগটি হলো মানবজাতির সর্বকালের সবচাইতে বড় শত্রু ।এর কারণে এক সময় সারা পৃথিবীজুড়ে মৃত্যু মিছিল, আর্থিক মন্দা, যুদ্ধ-বিগ্রহ, সাম্রাজ্য বিস্তার, ঔপনিবেশিকতা (colonialism) বিস্তার সব কিছুরই সৃষ্টি ।এখনো প্রতিবছর প্রায় ৫ লক্ষ মানুষের মৃত্যুর কারণ ম্যালেরিয়া । এ ছাড়াও অতীতে আরো অনেক ভয়াল রোগ মানব জাতির উপরে খড়গাঘাত করেছে - কালা জ্বর, পীত জ্বর, গুটি বসন্ত, কলেরা সব গুলিই অত্যন্ত বিধ্বংসী ক্ষমতা সম্পন্ন । তারপরেও মানব জাতি মাথা উঁচু করে আজো বেঁচে আছে।
তাই, আলোর নিশানা আমরা ঠিকই খুঁজে পাবো , দুর্যোগের এই রাত কেটে নবসূর্যের আলোয় চারিদিকে উদ্ভাসিত হয়ে উঠবেই, উঠবে ।
আপনি অনেক সুন্দর লিখেছেন। আমাদের অবশ্যই স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে হবে এবং সর্বদা মুখোশ পরতে হবে যাতে এই করোনার প্রাদুর্ভাব দ্রুত শেষ হয়ে যায়। আপনার জন্য শুভকামনা রইলো দাদা 🥀
নিজেদের অনেক অনেক বেশি সচেতন ভাবে লড়াই করতে হবে করোনা নামক এই অদৃশ্য দুশমনের সাথে, তবেই বিজয় পাবো :)
সত্যিই দাদা আপনি ঠিক বলেছেন আমাদের লড়াই করতেই হবে। আপনার জন্য শুভকামনা রইলো দাদা
জীবন মানেই একটা যুদ্ধ ক্ষেত্র। জীবনে সকল পরিস্থিতির মাঝে নিজেকে বাচিয়ে রাকার নামই সফলতা। আজ সারা বিশ্ব "করোনা" নামক অদৃশ্য শক্তির কবলে পড়ে আছে। মানব জীবনে নেমে এসেছে কষ্ট আর দূর দশা। যানি সৃষ্টিকর্তা কবে আমাদের জীবন থেকে এই অভিশাপটা কাটিয়ে দিবেন। কবে আমরা আবার নব সূর্যের হাসি দেখতে পাব। কবে শিশুরা মন খুলে হাসতে পারবে, মাঠে দৌরাতে পারবে, নিজের মতো চলতে পারবে। এটা আমরা কেউই হয়ত বলতে পারব না।
কিন্তু পৃথিবীতে এর আগেও আরও অনেক দূর্যোগ এসেছে। মানুষ সেগুলোকে কাটিয়ে আবার নতুন পথ চলা শুরু করেছে। আমরাও একদিন এই মহামারি কাটিয়ে নতুন করে পথ চলা শুরু করতে পারবে। তবে এর জন্য আমাদেরকে সবাইকে সকল নিয়ম মেনে চলতে হবে। পরিবেশকে রক্ষা করতে হবে । বেশি বেশি গাছ লাগাতে হবে। এই মহামারির সময় চেষ্টটা করতে হবে অন্যকে যতটা সম্ভব সাহায্য করার।
অসাধারণ বিষয় নিয়ে লিখেছেন দাদা। অনেক সুন্দর লিখনি আপনার। আশা করি সামনের আরও আমরা আপনার এতো সুন্দর পোষ্ট দেখতে পারব। আপনার জন্য অবিরাম ভালোবাসা আর শুভ কামনা। ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।
ধন্যবাদ:)
খুব সুন্দর করে বুঝিয়েছেন গোটা ব্যাপারটা, খুবই ভালো এ+ মানের কমেন্ট করেছেন আপনি । নিজেদের স্বাস্থ্যসচেতনা বাড়ানোর পাশাপাশি প্রকৃতিকে আরো বেশি সুরক্ষিত রাখতে হবে, কারণ প্রকৃতির প্রতিশোধ যে কি নির্মম হতে পারে তা আমরা এই শতকে ভালো ভাবেই প্রত্যক্ষ করছি ।
ধন্যবাদ দাদা আপনার এতো সুন্দর একটা মতামত দেওয়ার মাধ্যমে আমার উৎসাহটাকে আরও বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য। আপনার জন্য ভালোবাসা এবং শুভ কামনা।❤️
খুব সুন্দর একটি পোস্ট করেছেন দাদা,ইনশাআল্লাহ একদিন আমরা নতুন সূর্যের দেখা পাবো।
অবশ্যই , "We shall overcome, oneday "
Of course,why not dada.
সময়ের স্রোতে হারিয়ে যায় অনেক কিছু, সময়ের সাথে সাথে পাল্টে যায় অনেক কিছু, মাঝে মাঝে অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যায় সব এবং মাঝে মাঝে আলোকিত উজ্জ্বল হয়ে উঠে চারপাশ কিন্তু তবুও মানুষ প্রত্যাশা করে এগিয়ে যাওয়ার সংগ্রাম ও লড়াইয়ের মাধ্যমে। এই ক্ষেত্রেও আমরা বিজয়ী হবো হয়তো সময় একটু বেশী লাগবে, হয়তো ত্যাগ একটু বেশী করা লাগবে কিন্তু বিজয় ঠিক আসবে।
দারুন লিখেছেন দাদা, আপনি লেখায় আকর্ষন রয়েছে, আমরা এই রকম আরো লেখা প্রত্যাশা করছি আপনার নিকট হতে। ধন্যবাদ
আপনি তো আমাকেই টেক্কা দিলেন, কমেন্টটা এতটা সাহিত্যমন্ডিত হয়েছে যে কি বলবো ! অসাধারণ :)
অনেক সুন্দর বিষয়টি উপস্থাপন করেছেন দাদা। আমাদের সবাইকে এখন থেকেই সচেতন অবস্থা থাকতে হবে শুধুমাত্র করোনা মহামারী একমাত্র চিন্তার কারণ নয়। পৃথিবীর গড় উষ্ণতা বেড়ে চলেছে। এই দিকে অনেক ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিভিন্ন স্থানে দেখা দিচ্ছে যা প্রতি বছর বছর রেকর্ড করা হচ্ছে। পৃথিবীর ফুসফুস আমাজন বন সেটিও খুব দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় দাবানল দেখা দিয়েছে এবং বিভিন্ন জায়গায় বন্যা, সুনামি ইত্যাদি লেগেই রয়েছে। আমাদের সবার উচিত এখন পরিবেশে দিকে নজর রাখা। বেশি করে গাছ লাগানো।
পৃথিবী আসলেই রুগ্ন এখন, তার জন্য দায়ী তার সর্বশেষ্ঠ সন্তান "মনুষ্যগণ" ।আমরা এটা বুঝতে ব্যর্থ যে প্রকৃতির বিরুদ্ধাচারণ করলে প্রকৃতি তাকে কখনোই ক্ষমা করে না । আর প্রকৃতির প্রতিশোধ যে কি ভয়ানক হতে পারে তা তো আমি প্রত্যক্ষ করছি, কিন্তু এ থেকে কোনো শিক্ষা গ্রহণ করছি কি ?
@rme
পৃথিবীতে আসা দূর্যোগ্যের মধ্যে করোনা মহামারি অন্যতম। তবে বিভিন্ন দূর্যোগ বন্যা ঘূর্ণিঝড় ভূমিকম্প এসব দূর্যোগের পর মানবজাতি ঠিকই আবার দাঁড়িয়ে গেছে। কিন্তু করোনা মহামারীর দ্বারা মানবজাতি যে ক্ষতির সম্মূখিন হয়েছে এখান থেকে আবার স্বাভাবিক হতে অনেক সময়ের প্রয়োজন।
মানবজাতি হলো ধরিত্রীর সব চাইতে সংগ্রামমুখর সন্তান । সেই জন্য তারা সব বিপদ আপদ থেকে ঠিকই রক্ষা পেয়ে যায় ।
😮😮😮😮
করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে পৃথিবীর গতি অনেকটা রোধ হয়ে গেছে। সময় যেমন ছুটে চলেছে তেমনিভাবে মানুষের জীবন যাত্রা মানের গতি চলছে না।মানুষ দিন দিন হয়ে যাচ্ছে স্থবির ও ধৈর্য্যশীল হয়ে উঠছে। আশাকরি পৃথিবীর সবকিছু সময়ের সাথে সাথে আপন গতিতে ছুটে চলবে। দাদার এই পোস্ট শিক্ষামুলক অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই আপনাকে।
"করোনা" হলো ভয়াল কালো অভিশাপ সমগ্র মানবজাতির জন্য। এর থেকে পরিত্রান পেতে হলে আমাদেরকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করতে হবে । তবেই সাফল্য আসবে এর অভিশাপ থেকে পরিত্রানের ।
আমাদের অবশ্যই আমাদের স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে হবে এবং সর্বদা মুখোশ পরতে হবে যাতে এই করোনার প্রাদুর্ভাব দ্রুত শেষ হয়ে যায়।
👍
আপনি ঠিকই বলেছেন মুকসাল, স্বাস্থ্যসচেতনা আরো বাড়ানো প্রয়োজনীয়, বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের জনসাধারণের :)
আলোর নিশানা হয়তো আমরা ঠিকই খুঁজে পাবো। কিন্তু এরই মধ্যে আমরা হারিয়ে ফেলবো আমাদের অনেক প্রিয়জনকে। দুর্যোগের এই রাত হয়তো কেটে যাবে। কিন্তু তার গভীর ক্ষত পেছনে ফেলে যাবে। এখন ইতিবাচক চিন্তাই যে একমাত্র সম্বল আমাদের।
একদম ঠিক বলেছেন আপনি । কিন্তু, এটা তো এখন একটা যুদ্ধক্ষেত্র (battle field), শহীদ তো অনেক হবেনই , কিন্তু প্রিয়জনের বিচ্ছেদ বেদনায় এখন চোখে অশ্রু আসার সময় নেই । কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আপ্রাণ লড়াই জারি থাকবে "কোরোনার বিরুদ্ধে" ।
ইনশাআল্লাহ আমরা করবো জয়, ভাল সময় যেমন বেশিক্ষণ থাকেনা তেমনি খারাপ সময়ও চিরকাল থাকবে না! ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করাই ভাল!
আমিও আপনার সাথে এই ব্যাপারে পূর্ণ সহমত ব্যক্ত করছি ।