"জীবন বড়ই বৈচিত্র্যময়"। একজন মানুষকে উপর থেকে বোঝা যায় না আসলে সে কতটুকু কষ্টে আছেন কিংবা বুকের মাঝে তীব্র যন্ত্রনা লালন পালন করছেন। তেমনি এক বাস্তব জীবনের গল্প আপনাদের সাথে ভাগ করে নেবো। আশাকরি ধৈর্য ধরে শুনবেন, হয়ত আপনার মনের চোখ খুলে যেতে পারে। |
আমার বাসার একটু সামনেই পিঠার দোকান দিয়ে বসেছেন এক প্রবীণ দম্পতি। সবাই বেশ মজা করে পিঠা খাচ্ছে। আমি @limon88 কে নিয়ে চিন্তা করলাম পিঠা খাবো। তাই ওকে ডেকে পাঠালাম। সে যথারিতী হাজির। আমি পিঠার অর্ডার দিলাম। পিঠা খেতে খেতে আমার একটা উপলব্ধি এলো। দুজন বেশ প্রবীন মানুষ সবার বেশ মন জুগিয়ে পিঠা তৈরি করছেন। একজন পিঠা তৈরি করছেন আর একজন ভর্তা দিয়ে কাগজে মুড়িয়ে পরিবেশন করছেন। যদি পার্সেল থাকে তাও করে দিচ্ছেন। প্রবীন নানাকে দেখে মনে হচ্ছে বয়সের ভারে পিঠ অনেকটাই কুঁজো হয়ে গেছে আর নানি কিছুক্ষণ পর পর তার নিজের হাত চাপ দিয়ে বলছেন কইগো আর তো পারছিনা। আমি ব্যাপারটা লক্ষ্য করলাম আর মনের মধ্যে কেমন যেন একটা মোচড় খেলাম। লিমনকে বললাম তার হাতে সময় আছে কিনা। সে বললো স্যার অফুরন্ত সময় আপনার জন্য। ওকে বললাম আজ এই দম্পতির সাথে আমরা একটু লম্বা সময় কাটাবো। ও বললো ওকে স্যার আমি আছি। |
| |
|
নানার বয়স জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলতে পারলেন না। শুধু বললেন যুদ্ধ তিনি স্বচক্ষে দেখেছেন এবং অংশগ্রহণ করেছিলেন পরোক্ষ ভাবে তাই তার নাম নেই কোথাও। তার বাড়ি শেরপুর। যুবক বয়স যখন ছিল তখন তিনি অত্র এলাকায় আসেন এবং ব্যাবসা শুরু করেন। প্রথমে তিনি কলার ব্যাবসা করতেন তার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সাথে। তার বন্ধুকে তিনি অনেক বিশ্বাস করলেও সে তখনকার দিনে প্রায় অনেকগুলো টাকা মেরে দেয়। তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েন। অতঃপর নানিকে তিনি বিয়ে করেন কিছুটা আর্থিক সহায়তার উদ্দেশ্যে। নতুন করে তারা জীবন যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। তারা দুজনে বিভিন্ন ব্যাবসা করতে থাকেন ছায়ার মতো। তাদের কোল আলো করে আসে তিন ছেলে আর এক মেয়ে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস কোন কাজেই খুব বেশি সফলতা আসলো না। কোন রকম নুন আনতে পান্তা ফুরায় এই অবস্থায় দিনযাপন করছিলেন তারা। সন্তানদের তেমন শিক্ষা-দীক্ষা করাতে পারলেন না, অভাবের তাড়নায়। ছেলে মেয়ে এভাবেই বড় হতে থাকে আর তাদের চাহিদাও বাড়তে থাকে কিন্তু আয় বাড়ছিলো না। সন্তানদের মধ্যে তীব্র অশান্তি দেখা যেতো এবং তারা একেকজন একেক দিকে কর্মসংস্থানের জন্য ছুটতে থাকলো। শুধু মাত্র মেয়েটি রইলো তাদের কাছে। |
নানা সারাজীবন যথেষ্ট যুদ্ধ করেছেন তার সন্তানদের মুখে দুবেলা দুমুঠো খাবার তুলে দেয়ার জন্য। কিন্তু শেষ বয়সে এসে সন্তানদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য পান। ছেলেরা তাদের স্ত্রী সন্তান নিয়ে আলাদা হয়ে যায় কারন হিসেবে তারা তাদের সংসারের অভাব অনটনের দোহাই দেয়। নানা এতোটাই মনের দিক থেকে শক্তিশালী যে তার অসুস্থ স্ত্রীকে সাথে নিয়ে স্বল্প পুঁজির এই ব্যাবসা শুরু করেন এবং জীবন যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। যখন এই ব্যাবসা চলে না তখন তিনি আবার তার পুরনো সেই কলার ব্যাবসা করেন। এভাবেই চলছে তাদের দিন। যখন শুনছিলাম নানার গল্প প্রায় আমার চোখ ছলছল করছিল। নিজেকে কিছুটা সামলিয়ে নিয়ে পরিবেশটা একটু পরিবর্তন করার চেষ্টা করলাম। |
হঠাৎ খারাপ লাগছিল এই পৃথিবীর স্বার্থপরতা দেখে। তিনটি ছেলে মিলে বাবা-মায়ের দায়িত্ব নিতে পারলো না। আমি সমীকরণ মেলাতে পারলাম না। আমি পরিবেশটা হালকা করতে পিঠা অর্ডার দিলাম। পিঠা তৈরি করে নানা কালোজিরা আর শুঁটকি ভর্তা দিয়ে আমাদের পরিবেশন করলেন। আমি আর লিমন কয়েকটা খেলাম। মনে মনে চিন্তা করলাম নানাকে আমার সাধ্য অনুযায়ী কিছু টাকা বেশি দিয়ে দেবো। কিন্তু জীবন যুদ্ধে জয়ী এই সৈনিক একটি টাকা বেশি নিতে রাজি নন। অবশেষে পিঠে হাত বুলিয়ে একসাথে ছবি তুলে তার হাতে কিছু টাকা গুঁজে দিয়ে বিদায় নিলাম। কিন্তু ভেতরে তীব্র একটা কষ্টের অনুভূতি নিয়ে ফিরে এলাম আর নিয়ে এলাম কিছু করতে না পারার ব্যর্থতা। |
"প্রশ্নটা সবার উদ্দেশ্যে রইল ❓"
বিষয়বস্তু | জীবনের গল্প |
ছবি তোলার যন্ত্র | রিয়েলমি সি-২৫ |
ছবির কারিগর | @emranhasan |
ছবির অবস্থান | সংযুক্তি |
আমি মো: ইমরান হাসান। একজন যন্ত্র প্রকৌশলী (মেকানিক্যাল ইন্জিনিয়ার), যন্ত্র নিয়ে আমার পেশা আর ব্লগিং হলো আমার নেশা। খুব বেশি পছন্দ করি ভ্রমন করতে, নতুন মানুষদের সাথে পরিচিত হতে আর নতুন নতুন গল্প লিখতে। আমি একজন স্বাধীন ব্লগার।
"হতে চাই মানবতার
করি মানবতার জয় জয়কার"
Support
@heroism Initiative by Delegating your Steem Power
ভাইয়া লেখাটি পড়ে খুবই খারাপ লাগছে। বাবা মা জীবন যুদ্ধ করে তাদের সন্তান দের মানুষ করেন। বাবা মা মিলে ৩ জন সন্তানের দায়িত্ব নিতে পারলে ৩ জন কেন এই ২ জনের দায়িত্ব নিতে পারে না। এসব অনেক জীবনের কাহিনীর আমাদের অনেক বৃদ্ধাশ্রম গুলোতে রয়েছে। এই প্রবীণ দের জীবন যুদ্ধ তে তার সন্তান রা অভাবের দোহায় দিয়েছে কিন্তু বৃদ্ধাশ্রম গুলোতে অনেক উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানরাও তাদের মা বাবাকে এভাবে অবহেলা করে। এখনো এমন অনেক মানুষ রয়েছেন যারা আমাদের যুদ্ধে অংশ নিয়েও তাদের কোনো মূল্য পাচ্ছেন না। এই বিষয়টা অনেক খারাপ লাগছে। তবে একটি প্রমাণ পেলাম সেটা হলো হয়তো তাদের অর্থের অভাব কিন্তু তারা অন্যের সাহায্য এর উপর নির্ভর করতে চায় না। খুব সুন্দর করে তাদের গল্পটি উপস্হাপন করেছেন।
অনেক ধন্যবাদ আপু সুন্দর মন্তব্যের জন্য 🥀
দয়াকরে পিতা মাতার প্রতি যত্নবান হবেন🙏
হ্যাঁ ভাই আপনি এবং লিমন ভাই দুইজনেই একসাথে পিঠা খেয়েছেন। এবং আমি যতোটুকু জানি আপনারা দুজন ছাত্র শিক্ষক সম্পর্ক। এবং দুইজন প্রবীণ মানুষের গল্প খুব সুন্দর করে লিখেছেন। কিন্তু আপনার গল্প শুনে ভেতরটা একটু কেঁপে উঠল। চোখে জল চলে আসলো। খুবই নির্মম, আপনি যুদ্ধের কথা বললেন একজন সৈনিক দু'মুঠো খেতে পারে না। অথচ আমাদের সমাজের রাক্ষসরা লুটেপুটে খাচ্ছে। আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে তার তিনটি ছেলে সন্তান থাকতেও তার দু'মুঠো খাবার জুটে না বিধায় আজ তারা পথে পিঠা বিক্রি করতে বসতে হলো। আপনি অনেক সুন্দর করে গুছিয়ে লিখেছেন এবং কি আপনি প্রবীণ লোকটিকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছেন। আমাদের সমাজে হাজারো মানুষ এভাবে জীবন যাপন করছে যা আমরা কখনো বুঝিনাই বোঝার চেষ্টাও করি না। আপনি অনেক সুন্দর করে আপনার গল্পটি আমাদের মাঝে শেয়ার করে নিয়েছেন। আপনার জন্য শুভকামনা রইল ভাই।
অনেক ধন্যবাদ ভাই ♥️।
প্রথমত বলতেই পারেন লিমনের সাথে ছাত্র শিক্ষক সম্পর্ক, আমার হাত ধরেই তার স্টীমিটে পথ চলা।
ভাই পিতা মাতার প্রতি যত্নবান হবেন আশাকরি 🙏
আসলে স্যার নানা নানীর জীবন যুদ্ধে গল্প শুনে আমার মনের ভিতরটা নাড়া দিয়ে উঠেছিলো। পৃথিবীতে যারা এত কষ্ট করে ছেলে সন্তান মানুষ করলো বিনময়ে তারা অবহেলা পেলো। বাবা মা শুধু চায় শেষ বয়সে সন্তানের কাছে আশ্রয় কিন্তু এখন তা উল্টো হয়ে গেছে। ছেলে সন্তানরা তাদের বৌ নিয়ে আলাদা থাকে তবুও বাবার মায়ের খবর নেওয়ার গুরুত্ব মনে করে না। এমন বিবেক হীন মানুষদের কারনে সমাজ এখন উল্টাপাল্টা হয়ে গেছে। নানা নানী এখনও তাদের মন সক্ত করে দুজনে অনেক হাসি মুখে তাদের জীবীকা নির্বাহ করছেন। নানা নানীর জন্য দোয়া রইলো 🙏 বাকি দিন গুলোও যেনো তাড়া একসাথে ভালো ভাবে কাটাতে পারে।
লিমন আসলে সময়টা খুব বেশি অনুভব করেছিলাম। যাক আমারা তার জন্য দোয়া করবো।
তোমার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।