ভরসা বিক্রিত নয়, উপার্জিত। We can't buy trust, it only can be earned!
![]() |
---|
ঘড়ির কাঁটায় ভারতীয় সময় রাত একটা বেজে পঞ্চান্ন মিনিট, একবার মনে হলো সকালে লিখবো, কারণ শরীর সারাদিনের ঘরের কাজ পাশাপশি কমিউনিটির বেশ কিছু কাজ সাথে ডিসকর্ড সব মিলিয়ে আমি এক্ প্রকার বিদ্ধস্ত!
তবে, বিছানায় শুয়ে পড়লেও ঘুম আসবে না, কারণ আগামী কালের কাজের তালিকা তৈরি করার পর, সময় কতটা পাবো সেটা ভেবেই লেখা শুরু করলাম।
অন্যের ভরসা রাখার চাইতে, নিজের কাজের ক্ষেত্রে ভরসার জায়গা ক্ষুণ্ন করতে বিবেকে বাঁধলো!
এর চাইতে অনেক বেশি প্রতিকূলতা নিয়েও লিখেছি, কাজেই নিজেকে খানিক উদ্বুদ্ধ করেই লিখতে বসে গেলাম।
আজকের শীর্ষক নির্বাচনের অন্তরালে রয়েছে সেই অভিজ্ঞতা যেটা সময় সময় নানা জনের কর্মকাণ্ড দেখে নির্বাচিত!
ভরসা, বিশ্বাস আমরা দৈনন্দিন জীবনে মুষ্টিমেয় দ্রব্য এবং মানুষের ক্ষেত্রে করে থাকি, আর এই দুটি বিষয় সৃষ্টি করতে যতখানি সময় অতিবাহিত হয়, ততটাই কম সময়ে প্রয়োজন ভঙ্গ হতে!
যদি কখনো নিজেদের ঘরের দিকে তাকানো যায়, দেখবেন কিছু দ্রব্যের কখনও সচরাচর পরিবর্তন আমরা করি না, একই কোম্পানির জিনিষ আমরা ব্যবহার করি কারণ সেগুলোর প্রতি আমাদের ভরসা এবং বিশ্বাস তৈরি হয়ে যায় সময়ের সাথে সাথে।
ঠিক তেমনি, সম্পর্ক, কাজ এবং কিছু মানুষের ক্ষেত্রেও বিষয়গুলো প্রযোজ্য।
বিষয়গুলো কিন্তু আজও বিক্রিত নয়, অর্জিত।
কিছু মানুষের সাথে বড় হয়ে উঠলেও সময়ের সাথে সাথে অনেক নতুন মানুষের সংস্পর্শে আমরা আসি, যাদের প্রতি একটা অব্যাক্ত বিশ্বাস এবং ভরসা তৈরি হয়ে যায়।
কখনো কখনো এমন হয়, পরিচিত মানুষের চাইতে এই মানুষগুলো আপন হয়ে যায়, আর সেই আপন মানুষগুলো কখনোই ভরসা ভঙ্গ করবে না, এই বিশ্বাস সময়ের সাথে তৈরি হয়।
তবে, আমার আজকাল মনে হতে শুরু করেছে, কাজের জায়গায়, কাজের বাইরে বিশেষ কিছু আশা না করা শ্রেয়।
![]() |
---|
![]() |
---|
(নিজের ঘরকে সুগন্ধিত করার পূর্বে মনকে ভরসা এবং বিশ্বাসের সুগন্ধে সুগিন্ধিত করার সমান প্রয়োজনীয়তা আছে।) |
---|
এই জায়গায় মনের পরিবর্তে মাথা দিয়ে যারা কাজ করেন, তাদের কখনও কোনো আঘাতের সম্মুখীন হতে হয় না।
সবসময় নিজের লক্ষ প্রয়োজনকে অগ্রাহ্য করে, অন্যের প্রয়োজনকে, অন্যের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে ভরসা ভেঙেছে বারংবার।
যখনই মনে হয়েছে এই মানুষটি আলাদা, কিছুদিন বাদে দেখেছি, সেই মানুষটি সর্বাগ্রে ভরসা আর বিশ্বাসে আঘাত হেনেছে!
নিজের ক্ষমতার উর্ধ্বে গিয়ে, হাজার বিরোধিতা করে যাদের পাশে দাঁড়িয়েছি, সময় অতিবাহিত হবার সঙ্গে সঙ্গে তারা উধাও হয়ে গেছে, নিজের নিজের প্রয়োজন মিটে গেলে।
একটা পরিবার সেটা ব্যাক্তি জীবন তথা কর্ম জীবন দু'ক্ষেত্রেই গঠিত হয় ভরসা তথা বিশ্বাসকে কেন্দ্র করে।
তবে, মানসিকতার বৈষম্যের কারণে, অধিক মানুষ যখন ভরসা এবং বিশ্বাসকে নিজের নিজের প্রয়োজন হিসেবে ব্যবহার করে, সেটাকে না পরিবার বলে গণ্য করা যায়, আর না সেই সদস্যদের ভরসার জায়গা নড়ে গেলে সেটা আর জোড়া লাগে।
![]() |
---|
(গোলাপের সাথে কাটা থাকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে, এবার সেটা নিজের জন্য প্রয়োগ করবো সিদ্ধান্ত নিয়েছি) |
---|
চলার পথে বহু মানুষের দেখা;
কিছুদূর গিয়ে পিছু ফিরে দেখি
রয়ে গেছি সেই একা!
ভরসা আর বিশ্বাস আজ সমাজে শূন্য;
জয়ী ভাবে নিজেদের করে এগুলো ক্ষুণ্ন।
প্রতিনিয়ত চলছে অভিনয়ের খেলা;
নকল চেহারার ভিড়ে অমানুষের মেলা!
পিছিয়ে আছি আজও চতুরতায়;
ভুলে যাই আজও তাই, অতি সহজ কথায়!
জীবনচক্রে দেওয়া নেওয়ার হিসেব করে যারা সারাক্ষণ অঙ্ক কষে, একদিন সেই অঙ্ক মেলাতে সেই মানুষগুলোকে চোখের জল ফেলতে হবে, আর এটাই জীবন।
মতানৈক্য, মতভেদ অপরাধ নয়, কাউকে পছন্দ হলো কি না হলো সেটাও ক্ষতিকারক নয়, তবে কারোর বিশ্বাস এবং ভরসায় আঘাত হানার পূর্বে একবার ভাবার প্রয়োজন আছে, নিজে যেদিন একই অবস্থার সম্মুখীন হবে, সেদিন নিজেকে সামলাতে পারবে তো?
যেখানে থেকে শুরু শেষটাও সেখানেই, বহু বছর আগেই কলম্বাস প্রমাণিত করে গেছেন।
পরিশেষে, তাই না বললেই নয়, অর্থ সাথে যাবে না, শরীর শেষে যেটা পৃথিবীতে আমাদের বাঁচিয়ে রাখে সেটা এই বিশ্বাস আর ভরসা, কাজেই অর্থের পাশাপশি এগুলো উপার্জন মনোনিবেশের সমান প্রয়োজনীয়তা আছে বলে আমি মনে করি।


আমার বিশ্বাস এমন ভাবনা যে শুধু আজকাল মনে আসছে এমন নয়, আরও বেশ কিছু বছর আগে থেকে একই ভাবনা চলে আপনার মনে। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমরা কেউ বেশিদিন আমাদের স্বভাব বহির্ভূত কাজ করতে পারি না। ফলতো অন্যকে বিশ্বাস করাটা যেমন আপনার স্বভাব, আপনি অনায়াসেই কখন, কিভাবে, সেটা করে ফেলেন হয়তো নিজেও বুঝতে পারেন না।
প্রতিবার কষ্ট পেলে মনে হয় আর নয়, এবারই শেষ। এখন থেকে আর কাউকে বিশ্বাস করা যাবে না, কাজের বাইরে আর অন্য কিছু আশা করা যাবে না ,কিন্তু ওই যে বললাম স্বভাব। সেটাকে কিভাবে বদলাবেন?
একই সমস্যা আমার ক্ষেত্রেও। তবে হ্যাঁ ক্ষনিকের জন্য খারাপ লাগলেও, কখনো কখনো এটা ভাবতে ভালো লাগে মানুষকে বিশ্বাস করতে পারার মতো একটি গুণ আছে আমাদের মধ্যে। এমনকি বিশ্বাস রাখতে পারার মতোনও। এই দুটি গুনের সমন্বয় একটি মানুষের মধ্যে খুব কম লক্ষ্যিত হয়। তাই খারাপ লাগাটুকু উপেক্ষা করে, এটা ভাবতে ভালোই লাগে, অনেকে আমাদের বিশ্বাস ভাঙলেও,অন্ততপক্ষে আমরা কারোর বিশ্বাস ভঙ্গ করিনি কখনো। আর এই কারণে বোধহয় সৃষ্টিকর্তা আমাদেরকে খুব বেশি অপছন্দ করবেন না ☺ কি বলো?
হয়তো আমাদের জীবনে বিশ্বস্ত মানুষের সংখ্যা কম। তবে যারা থাকে তারা আজীবনের। ঠিক যেমন আমার জীবনে আপনি, আর আপনার জীবনে আমি। এই বা কম কিসের?
মা মেয়ে মিলে একে অপরের বিশ্বাসই নয় আগলে রাখবো সারাজীবন। ভালো থেকো।
@sampabiswas শিক্ষার তারতম্য এখানেই। আসলে, উপরিউক্ত লেখায় যে শুধু নিজের কথাই লিখেছি তাই নয়, এমনটা যেমন তোর সাথেও হয়েছে, তবে কিছু ঘটনা আমাকে আজকাল ভীষণ বিরক্তিকর জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে দিনকে দিন!
মাছেদের চোখের পাতা নেই, তাই তারা চোখ খুলে ঘুমায়, কিন্তু মানুষের চোখের পাতা থাকা সত্ত্বেও লজ্জার মাথা খেয়ে, মান সম্মানের বিষয়গুলো বেমালুম ভুলে, যখন বেহিসাবি আচরণ করে, তখন আমার প্রচণ্ড বিরক্ত সাথে তিক্ততায় মন ভরে যায়।
তোর সাথে আমার কিছুক্ষেত্রে মিল থাকলেও একটা বিষয়ে বিস্তর পার্থক্য আর সেটা হলো, আমি প্রথমে ধৈর্য্য ধরে অনেকখানি নিয়ে নি, কিন্তু তারপর যদি মুখ ঘুরিয়ে ফেলি, লক্ষ প্রচেষ্টায় অথবা কোটিবারেও সেই মুখ আর ওইদিকে ঘোরাই না।
আমার এই জেদের বিষয়টি আত্মীয় দের অনেকেই জানে বলে বেশি কিছু বলার সাহস পায় না।
তোকে বলেছিলাম, আমার মাসতুতো দিদি যখন আমাকে ওর বাড়িতে যেতে বলেছিল কি উত্তর দিয়েছিলাম।
পরিস্থিতির শিক্ষাকে কাজে আমি প্রতিনিয়ত প্রয়োগ করি বিশেষ করে অনেক ছ্যাঁকা খাবার পরে।
মানুষের ভান, নকল ব্যবহার, মিথ্যে আমার সবচাইতে অসহ্যের জায়গা, আর আমি সত্যি বলতে নিজের অভিব্যক্তি লুকোতে পারিনা একেবারেই।
সময় আসলে সকল প্রশ্নের উত্তর বিয়ে নিয়ে আসে, যার যেটা প্রাপ্য সেটাই পাবে, তাই মন খারাপ হলেও আজকাল আর বেশিদিন সেটা স্থায়ী হয়না।
এক্ জায়গায় আঘাত পেতে পেতে যেমন সেই জায়গা অবশ হয়ে যায় ঠিক তেমনি।
বরাবরের মত বলবো আপনার লেখার মাধুর্য এবং গভীরতার তুলনা হয় না। কিছু কিছু লেখা পড়তে সময় লাগলেও বুঝতে অসুবিধা হলেও কেন যেন পড়তে ভালই লাগে। কেননা অতিরিক্ত জ্ঞানী মানুষের ভাষা গুলো একটু কঠিন হয়। ভাষা বলতে বোঝাতে চেয়েছি শব্দ চয়ন।
আমার ব্যক্তিগত মত অনুযায়ী মানুষের জীবন অনেকটাই নদীর মতো , নদীর যেমন এককুল ভাঙ্গে তেমনি আরেক কুল গড়ে। তেমনি যে মানুষের সাথে আপনার এখন খুব ভালো সম্পর্ক রয়েছে কিছুদিন পরে সে সম্পর্কে ফাটল ধরতে পারে। বিশ্বাস দুজনের মধ্য দিয়েই গড়ে ওঠে তবে তৃতীয় পক্ষ সেখানে এসে গেলে সেই সম্পর্ক আর আগের জায়গায় ফিরে যায় না।
প্রকৃতপক্ষে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হলে দুজনের ইচ্ছাশক্তি খুবই প্রয়োজন। একজন যদি অনিহার চোখে দেখে আর একজন যদি সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করে তাহলে সেই সম্পর্ক আর জোড়া লাগবে না ।
এটা আমিও দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি প্রতিটা সম্পর্কই গড়ে ওঠে ভরসা এবং বিশ্বাকে ভর করে। যতদিন তার প্রতি আপনার বিশ্বাস থাকতে সেই ব্যক্তিটা ভরসা পাবে । তার প্রতি আপনার বিশ্বাস উঠে গেলে সে ভরসার জায়গা হারিয়ে ফেলবে।
দিদি আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ খুব সুন্দর একটি আর্টিকেল আমাদের মাঝে উপস্থাপনা করার জন্য ভালো থাকবেন নিজের প্রতি যত্ন নিবেন।
@mdsahin111 তৃতীয় পক্ষ, চতুর্থ পক্ষ, এসব এর উপরে সম্পর্ক নির্ভর করে বলে আমি মনে করি না!
আমার কাছে ভরসা মানে একটি মানুষের শৈশব থেকে বেড়ে ওঠার পরিবেশ এবং তার স্বভাব এর উপর বর্তায়।
কাজেই, যারা যেগুলো দেখেছে সেগুলো শিখেই বড় হয়েছে এবং অন্যের সাথে সেই ভাবেই আচরণ করে যাবে আমরণ।
এরা হলো সেই সারমেয় দের লেজ যাদের হাজার বছর সোজা পাইপ এর ভিতরে রাখলেও বাঁকাই থেকে যাবে।
কথায় আছে যার নয় তে হয়না, তার নব্বইতে হবে না, গোড়ায় গলদ কখনোই পরিবর্তন করা যায় না।
তাই আমি এই বিষয়ে আপনার সাথে কিয়দংশ ভিন্ন মানসিকতা ধারণ করি।
আর, আমি বিশ্বাস করি এটা আমার কর্ম আগেও বহু লেখায় উল্লেখিত, আর যারা সেটা ভঙ্গ করে সেটা তাদের কর্ম এখানে কোনো তৃতীয় পক্ষকে দোষারোপ করতে আমি রাজি নই।
আমি তো জল নই, যখন যে পাত্রে রাখা হবে তার আকার ধারণ করবো, তাই কোনো পক্ষ আমার ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন করতে পারে না, তাই বলে তার প্রতিফলন অন্যদের প্রভাবিত করবে না সেটা শতভাগ নিশ্চিত হয়ে বলা যায় না।
বরঞ্চ, সেই মানুষের ভিড় অধিক। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
বিশ্বাস এবং ভরসার উপর ভিত্তি করে লেখা এই টুকরোটার প্রতিটি বাক্য যেন জীবনের একেকটি সত্য উচ্চারণ। লেখায় যে অভিজ্ঞতা আর উপলব্ধি উঠে এসেছে, তা সত্যিই গভীর এবং বাস্তবিক।
ভরসা আর বিশ্বাস অর্জন করতে যে সময় লাগে, তা ভঙ্গ হতে কয়েক মুহূর্তও লাগে না এই কথাটির মধ্যে জীবনের কঠিন বাস্তবতাকে চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন দিদি।
আপনার লেখায় যে আত্মসমালোচনা এবং অভিজ্ঞতার মিলবন্ধন রয়েছে, তা খুবই মূল্যবান। মানুষ আর সম্পর্কের জটিলতাকে যেভাবে সরল ভাষায় ব্যাখ্যা করেছেন দিদি, তা সত্যিই প্রাসঙ্গিক। একদিক থেকে মনে হয়, জীবনে টিকে থাকতে হলে কাটা-যুক্ত গোলাপের মতো নিজেকে সুরক্ষিত করাই শ্রেয়, যা আপনি খুব সুন্দরভাবে বোঝাতে পেরেছেন।
বিশ্বাস আর ভরসার ক্ষয় সমাজে যেভাবে প্রভাব ফেলছে, সেটাও অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে বিশ্লেষণ করেছেন। এই উপদেশটি, যে অর্থের পাশাপাশি বিশ্বাস এবং ভরসাও জীবনে সমান গুরুত্বপূর্ণ, নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে। লেখার ভাষা, ধারাবাহিকতা, আর ভাবনার গভীরতা সবকিছুই প্রশংসনীয়।
এই ধরনের লেখা শুধু পাঠককে অনুপ্রাণিত করে না, বরং জীবনের প্রতি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দেয়। আপনি নিজের চিন্তা-ভাবনাগুলোকে যেভাবে সাজিয়েছেন, তা সত্যিই অসাধারণ। পরের লেখার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।