ইচ্ছাপূরণের গল্প- গঙ্গাসাগর দর্শন(প্রথম পর্ব)
|
---|
Hello,
Everyone,
নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করাতে খুব ছোটবেলা থেকেই বুঝেছি, জীবনের কাছ থেকে খুব বেশি চাহিদা থাকতে নেই আমাদের। কিংবা বলতে পারেন চাহিদাগুলোকে ত্যাগ করা শিখে যাই আমরা অনায়াসেই।
কখনো সংসারের দিকে তাকিয়ে, কখনো অর্থের দিকে তাকিয়ে, নিজেদের ছোট্ট ছোট্ট ভালোলাগা গুলো বিসর্জন দেওয়া আমরা কখন শিখে যাই তা হয়তো আমরা নিজেরাও জানিনা। এমন কত আত্মত্যাগ আমাদের মায়েরা বাবারা করেছে তার হয়তো হিসেব রাখা হয়নি কখনোই।
আবার আমরাও হয়তো আমাদের সন্তানদের জন্য সেই আত্মত্যাগ গুলো করি, তখনই অনুভব করতে পারি আমাদের বাবা মায়েরাও হয়তো এমন ভাবেই আমাদেরকে মানুষ করেছেন। এমনই গল্প চলে প্রতিটি পরিবারে, যার বেশিরভাগ কথাই অব্যক্ত থেকে যায়।
|
---|
সুদিন আসবে, ইচ্ছে পূরণ হবে, আমরাও পারবো, আমরা না পারি আমাদের সন্তানরা পারবে, এই চিন্তা-ভাবনা গুলোর থেকে কখনোই আমাদের বাবা-মায়েরা বেরোতে পারেনি। আজও হয়তো অনেক বাবা-মাই পারে না। আর এই না পারা গুলোই বোধহয় আমাদের বাবা-মায়েদের সবথেকে বড় শক্তি। যা আমাদেরকে জীবনে খুব সহজ ভাবে বাঁচতে শেখায়, ভালো থাকতে শেখায়।
ছোটবেলা থেকে আমার মাকেও দেখেছি প্রত্যেকটা ছোট ছোট জিনিসে কি ভীষণ আত্মত্যাগ করতো। কি হাসিমুখে নিজের কত ইচ্ছে যে নিজের ভিতর চাপা রেখেছিলো, তা কোনোদিনও আর জানার সুযোগ হয়নি। হবেও না এ জীবনে।
বিষয়গুলো ভাবলে কখনো কখনো খারাপ লাগে। মায়ের কোনো ইচ্ছে পূরণ করার সুযোগ হয়তো পাইনি, কিন্তু মা যেমন ভাবে মানুষ করতে চেয়েছিলো, তার কিছুটা হতে পেরেছি ভেবে নিশ্চয়ই মা খুশি হয়। এই ভাবনা গুলো দিয়ে কখনো কখনো নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করি।
|
---|
এই একই গল্প এই বাড়িতেও। বিয়ের পর থেকে দেখেছি শাশুড়ি আমাকে অক্লান্ত পরিশ্রম করতে। শাশুড়ি বৌমার সম্পর্ক কখনোই মা মেয়ের মতন হয় না এটা সত্যি। কারণ না শাশুড়ি কখনো বৌমাকে মেয়ের স্থান দিতে পারেন, আর না বৌমা কখনো মায়ের স্থান দিতে পারে। কিন্তু একসাথে পথ চলতে চলতে দুজনের মধ্যে কিন্তু টক-ঝাল-মিষ্টি একটা সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায়।
দীর্ঘ বছর কাটানোর পর কখন কিভাবে দুজনের ভালোলাগা দুজন বুঝতে পারে, জানতে পারে, সেটা হয়তো তারা নিজেরাও জানেনা। আমার ক্ষেত্রেও কিন্তু তার ব্যতিক্রম নয়।
|
---|
আমার শাশুড়ি মাকেও দেখেছি এই সংসারকে আগলে রাখার জন্য অনেক সময় নিজের ভালোলাগা ত্যাগ করেছেন, নিজের পছন্দের খাবার না এনে আমাদের পছন্দের খাবার এনেছেন।
তাই আজ যখন বাড়ির বাইরে বেরোই, বাড়িতে ফেরার সময় মন থেকেই যেন ইচ্ছে করে ওনার পছন্দের কিছু খাবার নিয়ে আসতে। হাতে করে যখন সেই খাবার নিয়ে আসি মুখে হয়তো উনি বলেন কেন আনলে? কি দরকার ছিলো? তোমরা যেটা ভালো খাও সেটাই আনতে পারতে।
আসলে দরকারটা ওনার নয়, এটা আমাদের কর্তব্য। সন্তান হিসেবে একটা বয়সের পর বাবা-মার ভালোলাগা মন্দ লাগার খেয়াল রাখবো, এটাই তো করা উচিত। এটাই তো শিখেছি ছোটবেলা থেকে মায়ের কাছে।
আমার বিয়ের আগে আমার শাশুড়ি মা কোথাও ঘুরতে যেতে পারতেন না সংসারের দায়িত্ব ছেড়ে। কিন্তু আমি বিয়ের পর থেকে ওনাকে খুব বেশি দূরেও ঘুরতে যেতে দেখিনি। হয় বাপের বাড়ি, না হলে আমার ননদের বাড়ি। তবে হ্যাঁ গত কয়েক বছরে উনি বেশ কিছু জায়গা ঘুরে দেখেছেন। যেমন- পুরি, বৃন্দাবন, গঙ্গাসাগর, বোলপুর, বিষ্ণুপুর এসব জায়গা।
|
---|
গত বছর শ্বশুর মশাই অসুস্থ ছিলেন। তাই গঙ্গাসাগরে যাওয়াটা ওনার পক্ষে সম্ভব হয়নি। কিন্তু শাশুড়ি মায়ের ভীষণ যাওয়ার ইচ্ছা ছিলো, তাই পাশের বাড়ির একজন মামার পরিবারের সাথে উনি এবং শুভর মাসি দুজনে মিলে যাওয়ার প্ল্যান করেছিলেন।
|
---|
দুদিনের ট্যুরে গিয়েছিলেন বলে আমিও আর বাধা দিইনি। কারণ ধীরে ধীরে ওনারও বয়স বাড়ছে। এরপর হয়তো উনি আর যেতেও পারবেন না। মুখ ফুটে কখনো কিছু বলেন না তবে সেবার বলেছিলেন, তাই আর আপত্তি করিনি।
তবে বৃন্দাবন হোক বা পুরীতে ওনরা তেমন ছবি তুলতে পারেননি। কারণ ছবি তোলাতে ওনরা একেবারেই অদক্ষ। খুব কষ্টে ফোন তুলতে পারেন, তাও আবার বেশিরভাগ সময় সাইলেন্ট হয়ে থাকে বলে বুঝতেই পারেন না।
|
---|
আজ একটু দরকারে ঐ মামাদের বাড়িতে গিয়ে যখন কম্পিউটারে ছবিগুলো দেখছিলাম। তখনই কয়েকটি ছবি আমার হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দিতে বলেছিলাম। ছবিগুলো দেখতে দেখতে প্রত্যেকটা ছবি সংক্রান্ত গল্প বলছিল মামা, মামি ও আমার শাশুড়ি মা। গত বছরের যাওয়ার আনন্দ আজও যেন তারা গল্পের মাধ্যমে উপভোগ করছিলো।
ছবিগুলো দেখে যতটা না খুশি হলাম, তার থেকে অনেক খুশি হলাম শাশুড়ি মায়ের মুখের হাসি দেখে। এইটুকুই তো দিতে পারা, এইটুকু আনন্দ পেতেই তো উনি যেতে চেয়েছিলেন এই গঙ্গাসাগরে।
|
---|
|
---|
ভালো লাগলো জানেন, মায়ের জন্য কখনো কিছু করা হয়নি ঠিক, তবুও শাশুড়ি মায়ের মুখে হাসিটাও কি অদ্ভুত ভাবে মনে একটা তৃপ্তি এনে দিলো। যদি ওই সময় ওনাকে যেতে না দিতাম, হয়তো নিজের চোখে ওনার গঙ্গাসাগর দেখা হতো না। আর আমিও ওনার মুখের এই অনাবিল হাসিটা দেখতে পেতাম না।
|
---|
যাইহোক গঙ্গাসাগরের সকল ছবিগুলো আমি আপনাদের সাথে পরবর্তী পোস্টে শেয়ার করবো। আজ যদি সব ছবিগুলো দেখতে চাই তাহলে পোস্টটা অনেক বড় হয়ে যাবে। তাই আগামী পড়বে বাকিটা শেয়ার করবো আপনাদের সাথে।
সকলে ভালো থাকবেন। চেষ্টা করবেন বাড়ির সকল বয়স্ক মানুষগুলোর মুখের হাসি বজায় রাখার। একটা বয়সের পরে এটাই সবথেকে কঠিন কাজ, একটু কষ্ট করে যদি এই কঠিন কাজগুলো করেন, দেখবেন বেশ ভালো লাগে। আমিও অবশ্য আমার অনুভূতি থেকেই কথাগুলো বললাম।
Thank you so much for your support @kouba01 Sir. 🙏
Dear you visit such a beautiful place it look so amazing and beautiful keep sharing your thoughts with all of us like that.
Best wishes for Future
আপনার লেখা পড়ে সত্যি মনটা ছুঁয়ে গেল আপু। পারিবারিক বন্ধন, আত্মত্যাগ এবং হাসিমুখের ছোট ছোট আনন্দগুলো কতটা মূল্যবান, সেটা আপনি অত্যন্ত সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। শাশুড়ি মায়ের জন্য আপনার যত্নশীল মনোভাব সত্যিই প্রশংসনীয়।
বড়দের মুখে হাসি ফোটানোই হয়তো আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় পাওয়া। এমন সুন্দর অনুভূতি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। সবসময় এরকম হাসি খুশি থাকবেন। সবাইকে নিয়ে ভালো থাকবেন এই কামনাই করি।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে আমার পোস্টটি মন দিয়ে পড়ার জন্য এবং বিষয়বস্তুটা এত সুন্দর ভাবে উপলব্ধি করার জন্য।আজকালকার দিনে যখন ছোট ছোট বাচ্চাদের কথা শুনি, বড়দের প্রতি তাদের অভিব্যক্তি দেখি বড্ড অবাক লাগে।
আধুনিক সময়ে নিজেদেরকে কখনো কখনো বড্ড পুরোনো দিনের মনে হয়।কিন্তু যখন আজকালকার দিনের বাচ্চাদের বড়দের প্রতি অসম্মানজনক কথা বলতে দেখি,তখন মনে হয় আমরা সেকেলে হয়েই ভালো আছি। অন্ততপক্ষে জীবনের আসল শিক্ষা টুকু আজও আমাদের মধ্যে থেকে হারিয়ে যায়নি।
ভালো-মন্দ মিলিয়ে জীবন জানেন। সব সময় ভালো সম্পর্ক জীবনে থাকবে এমন হয় না। সম্পর্কের মধ্যে ওঠাপড়া সব সময় থাকে। কিন্তু সকলেই যদি চেষ্টা করি সম্পর্ককে আগলে রাখার, তাহলে সম্পর্কগুলো খুব বেশি খারাপ হয় না।
শাশুড়ি মা সচরাচর ছবি তুলতে একদম পছন্দ করেন না। তবে এইবারের ছবিগুলো দেখে আমার নিজেরও বেশ ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ আবারো একবার আমাদের পরিবারের সকলের ভালো থাকা কামনা করার জন্য। আপনারাও সকলে ভালো থাকুন।
গংগা নদীর নাম জানা থাকলেও এই নামে যে সাগর রয়েছে তা আমার এতদিন অজানা ছিল। এটা কি বঙ্গোপসাগরের আরেক নাম? খুব সুন্দর কিছু মুহূর্ত কাটিয়েছেন পরিবারের সাথে। পরব্রতী পোষ্টে অন্যান্য ছবি গুলো দেখার অপেক্ষায় থাকলাম।
মধ্যবিত্ত মা বাবাদের যে অব্যক্ত কথা থাকে তা আপনার পোস্টের মাধ্যমে অনেকটাই যেন ব্যক্ত হয়ে গেল। ধন্যবাদ সুন্দর ব্লগ উপহার দেবার জন্য।
না এটি বঙ্গোপসাগরের আরেক নাম নয়। এটি আসলে গঙ্গা এবং বঙ্গোপসাগরের মিলন স্থল, যা গঙ্গাসাগর নামে পরিচিত। এখানে কপিল মুনির একটা আশ্রম রয়েছে, যেখানে পৌষ সংক্রান্তিতে বিশাল মেলা আয়োজিত হয়, যে মেলা আমাদের হিন্দু ধর্মের সব থেকে বড় বড় মেলার মধ্যে দ্বিতীয়।
হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষের জন্য এটি একটা পূণ্যভূমি। আমরা সকলে এটা বিশ্বাস করি এই জায়গাতে একবার তীর্থ করতে গেলে আমাদের মানব জীবন সার্থক হয়।
আপনি আমার পোস্টটা ভালোভাবে পড়েছেন এবং মন্তব্য করেছেন দেখে ভালো লাগলো।
মধ্যবিত্ত পরিবারে বাবা মায়েদের জীবন কাহিনী সব দেশে একই হয়।তাদের অনুভূতির বেশিরভাগটাই অব্যক্ত থাকে। তবে যখন নিজেরা মা বাবা হই, যদি তখনও যদি বাবা-মায়ের অব্যক্ত কথাগুলোকে না বুঝতে পারি, তাহলে বোধহয় সন্তান হওয়াটাই বৃথা।
জীবনে অনেক কিছু দিতে না পারলেও ভালো সময় উপহার দিলেই বাবা-মায়েরা খুব খুশি থাকে। যদিও এটা আমার ব্যক্তিগত অনুভূতি। তবে আশা করি আপনিও তাতে সহমত হবেন। ধন্যবাদ আরও একবার ভালো থাকবেন।