"আমার বর্তমান মানসিক পরিস্থিতি "

in Incredible India18 days ago
IMG_20250121_223824.jpg
"আজকের দিনের কিছু মুহুর্ত"

Hello,

Everyone,

গত এক সপ্তাহ যাবত সারাটা দিন হসপিটালে বসে কাটাই। এই কটা দিন মন খুলে কারো সাথে কথা বলা হয়নি। যখনই ফোনে কথা বলি একটাই বিষয় সেটা হলো শ্বশুর মশাইয়ের শারীরিক অবস্থা।

দিনের মধ্যে এই একই কথা বলতে বলতে কোথাও যেন বাদ বাকি কথাগুলো জীবন থেকে প্রায় বাদ পরেই গেছে। এই কারণেই মনে হচ্ছে কতদিন হয়ে গেল নিজের মনের কথা কারো সাথে শেয়ার করা হয় না। গতকাল থেকে শরীরটা বড্ড খারাপ।

প্রতিদিন সকালে বাইকে করে হসপিটাল পর্যন্ত পৌঁছানো, আবার রাতের বেলায় বাইকে করে মামা শ্বশুর বাড়িতে ফেরা। এ যেন একটা ডেইলি রুটিন হয়ে গেছে। তারপর কখনো ওয়ার্ড এর ভিতরে, কখনো ওয়ার্ডের বাইরে, কখনো রোদে, কখনো ছায়ায়, এই সব কিছু করতে করতে বড্ড বেশি ঠান্ডা লেগে গেছে। গতকাল রাতে বুঝলাম শুধু ঠান্ডা লাগেনি জ্বরও এসেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে উপায় একটাই প্যারাসিটামল। তাই দেরি না করে আমি ও শুভ দুজনেই প্যারাসিটামল খেয়ে নিয়েছি।

IMG_20250121_182320.jpg

"মামাবাড়ির জানলা দিয়ে দেখা সকালের রোদ্দুর"

কিছু কিছু বিষয়ে কখনো কখনো বিরক্তি এতটা চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে, আলাদা করে আর যেন কোনো কিছু অনুভূত হয় না। আমি জানি না এটা শুধু আমার সাথেই হয় নাকি এটা সকলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। গত একটা সপ্তাহে না কমিউনিটিতে সঠিকভাবে কাজ করতে পেরেছি, আর না সারা দিনে নিজেকে সময় দিতে পেরেছি।

যখন রাতের দিকে একটু ফ্রি হই, তখন সারাদিনের ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়ি। সত্যি বলতে একটা সপ্তাহ কিভাবে কাটল বা বর্তমান সময়ে কিভাবে অতিবাহিত হচ্ছে, আমি যেন সেটা কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছি না। কেমন যেন যান্ত্রিক হয়ে পরেছি।

মনে হচ্ছে সময় সময়ের মতো এগোচ্ছে, আমিও যেন তার সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলেছি। না কোন লক্ষ্য আছে, না পরিস্থিতি বদলানোর কোনো আশা, আর না নিজের কোনো ইচ্ছা বা অনিচ্ছা, সবটাই কেমন যেন তালগোল পাঁকিয়ে যাচ্ছে। এই অনুভূতিটাকে আসলে কি হিসেবে ব্যাখ্যা করা উচিত তা বুঝতে পারছি না।

IMG_20250121_182246.jpg

"পরন্ত বিকালে শূন্য ওপিডিতে যখন বসে ছিলাম"

গতকাল সকাল আটটা থেকে বিকেল প্রায় সাড়ে তিনটা পর্যন্ত বসেছিলাম এমআরআই রুমে। কিভাবে বসেছিলাম সেটা এখন ভাবতেও পারছি না। অথচ কাল ছোট্ট একটা রুমে শ্বশুরমশাইয়ের সাথে শুভ বসে রয়েছে, আর ঠিক তার পাশের রুমটাতেই আমি বসে ছিলাম। অতটা সময় কি করেছি যদি জিজ্ঞাসা করেন আমি নিজেও জানিনা, সত্যিই কি করেছি।

শুধু বসে বসে মানুষের অসহায়তা দেখেছি। কখনো হুইল চেয়ারে পেশেন্ট এসেছে, আবার কখনো বেড সমেত আইসিইউ থেকে পেশেন্ট আনা হয়েছে। সময় কিভাবে বয়ে গেছে সত্যিই জানিনা। তিনবারের প্রচেষ্টায় কাল শ্বশুর মশাইয়ের এমআরআই করা সম্ভব হয়েছে। উনি এত বেশি নড়াচড়া করছিলেন যে, প্রথম দুবার কিছুতেই করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। একেবারে শেষ পর্যায়ে পৌঁছে কোনো রকমে এমআরআই করা সম্ভব হয়েছে।

এরপর উনাকে ওয়ার্ডে পৌঁছে দিয়ে, বাইরে এসে বসে ছিলাম। কিছুক্ষণ বাদে শুভ এলো। তারপর আমরা দুজন খেলাম। তবে অর্ধেকটা খেয়ে বাকিটা আমরা ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছি। কারণ ততক্ষণে খিদে নষ্ট হয়ে গেছে, আটটা থেকে না খেয়ে বসে থাকাটা যতটা সহজে লিখছি, ততটা সহজ ছিল না। কিন্তু বেরিয়ে আসার পরেও খেতে ইচ্ছে করেনি আর।

IMG_20250121_182339.jpg

"ফাঁকা পার্কিং এরিয়া"

বিকাল থেকেই গোটা হসপিটাল শূন্য, কারণ ওপিডি সেকশন ততক্ষণে বন্ধ হয়ে গেছে। শুধু যে কয়েকজন রোগী ভর্তি আছে তাদের বাড়ির লোকেরা এক দুজন করে আসছে দেখে চলে যাচ্ছে। আজ সকাল থেকে উঠে জামা কাপড় ধুয়ে, ছাদে মেলে, খাওয়া দাওয়া করে তারপর বেরিয়েছিলাম। মাঝ রাস্তায় বাইকটা হলো খারাপ। কপাল মন্দ হলে যা হয় আর কি। অনেকটা সময় নিয়ে সেটা ঠিক করিয়ে তারপর হসপিটালে এলাম।

শুভ শশুর মশাইকে দেখতে গেলে আমি এই পোস্ট লেখা শুরু করেছিলাম। তবে শেষ করতে পারিনি। মাঝে কিছু পোস্ট ভেরিফাই করে এখন শেষ করতে বসলাম। আজকাল সত্যি কথা বলতে যেন লিখতে ইচ্ছে করে না, কারণ মাথাতে কিছু আসেই না, কি লিখবো। একই কথা প্রতিদিন পড়তে হয় তো আপনাদের ভালো লাগবে না। তাই ভাবলাম নিজের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানাই।

IMG_20250121_182357.jpg

"হসপিটাল থেকে বেড়োনোর পূর্বে আমরা দুজন পার্কিং এ বাইকের সামনে দাঁড়িয়ে"

আগামীকাল রিপোর্ট পাবো কিনা জানিনা। রিপোর্ট পেলে তবে ডাক্তাররা হয়তো বুঝতে পারবেন আদেও শ্বশুরমশাই এর সমস্যা কোথায়, আর এর কি ট্রিটমেন্ট চলবে। কবে বাড়ি পৌঁছাতে পারবো জানিনা।

অন্য কোনো কিছুর জন্য মনটা খারাপ না লাগলেও পিকলুর জন্য খুব মনটা খারাপ লাগে। বেচারা সারা বাড়িময় খুঁজে বেড়ায় আমাদের। কিন্তু হয়তো অনুভূতিটা প্রকাশ করতে পারে না।

সবকিছু মিলিয়ে ভীষণ খারাপ আছি বর্তমানে। আমি জানিনা কেন এই খারাপ থাকাটা আমাকে এত বেশি ঘিরে ধরেছে।আমি যেন এই খারাপ থাকাতেই অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছি। আমি মেনে নিতে শুরু করেছি আমার জীবন এই খারাপের থেকেও আরো অনেক বেশি খারাপ হবে ভবিষ্যতে।

মনে হয় গভীরে তলিয়ে যাচ্ছি। বুঝতে পারছি না আদৌ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবো। যাক কিছুক্ষণ বাদে আবার রওনা করব মামা শ্বশুর বাড়ির উদ্দেশ্যে। বর্তমানে এইতো জীবন। ভালো থাকবেন সকলে।

5c08ed51-26dc-462f-94f6-6f9e6e0fa2b4.gif

Sort:  
 16 days ago 

সম্পূর্ণ পোস্টটা পড়ে কোথাও গিয়ে যেন আমার বড্ড খারাপ লাগলো কিন্তু খারাপ লাগলেও কিছু করার নেই এরই নাম হল জীবন কখনো ভালো কখনো মন্দ কখনো এমন ঢেউ জীবনে আসে যেটা সামাল দিতে গিয়ে নিজেদেরই ঠিক রাখা অনেক কষ্টসাধ্য হয়েছে।

সারাটা দিন বলা যায় সত্যি বেশ পরিশ্রম করেন যদিও সে পরিশ্রম বসে থেকে তবে কাজ করার চাইতে এই পরিশ্রম আরো বেশি কষ্টকর। সেটা আবার হসপিটালে বসে, অসহায় মানুষগুলোর দিকে তাকালে যে পড়ে কি খারাপ লাগে সেটা বলার ভাষা থাকে না আর।

সবশেষে আমি প্রার্থনা করব যেন আপনার শ্বশুর মশাই দ্রুত সুস্থ হতে পারে এবং আপনিও আপনার পিকলুর কাছে ফিরে যেতে পারেন, আমি বলব যেকোনো পরিবেশেই থাকুন না কেন সুস্থ রাখার চেষ্টা করবেন।

 14 days ago 

সত্যিই এর নাম জীবন। যেদিন আপনি এই মন্তব্যটা করেছিলেন সেদিন আপনি আমার থেকে ভালো পরিস্থিতিতে ছিলেন, অথচ আজ আমি আপনার মন্তব্যের উত্তর দিচ্ছি, যেদিন আপনার পরিস্থিতি আমার থেকে অনেক বেশি কঠিন। তবে যেমনটা আপনি লিখেছেন এটাই জীবন। মেনে নেওয়া আর মানিয়ে নেওয়ার মধ্যে দিয়েই আমরা সকলেই এগিয়ে চলি। নিজের শরীরের দিকে খেয়াল রাখবেন, এই সময় সেটা সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মানসিক দিক থেকে অনেক ভেঙে পড়েছেন, তাই সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা নেই। তবে বাস্তবটাকে মেনে নিয়ে যত তাড়াতাড়ি পারবেন সামলে উঠুন, এটুকুই প্রার্থনা রইলো।

TEAM 2

Congratulations! Your comment has been upvoted through @steemcurator04. Good comment here should be..

TEAM-1.png

Curated by : @jyoti-thelight
 18 days ago (edited)

আজকের পোস্টটি পড়ে জানতে পারলাম! আপনি মানসিক পরিস্থিতিতে ভালো নেই। বেশ কয়েকদিন ধরেই আপনি হসপিটালে ই দৌড়াদৌড়ি করছেন। এত ব্যস্ততার মাঝেও থেকেও! আমাদের সাথে আপনার বিশেষ মুহূর্তগুলো আমাদের শেয়ার করছেন, এর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আপনার শ্বশুর মশাইয়ের সুস্থতার জন্য দোয়া করি।

 14 days ago 

হসপিটাল এমন একটা জায়গা যেখানে সুস্থ মানুষ শারীরিকভাবে না হলেও, মানসিকভাবে অসুস্থ হবে এ কথা অনিবার্য সত্যি। কারণ আশেপাশে প্রতিটি মানুষের অসহায়তা মানসিকভাবে আমাদেরকে অনেকটাই দুর্বল করে। জীবন কতটা অনিশ্চিত হতে পারে, সেটা বোধহয় হাসপাতালে বসেই আমরা বহুবার উপলব্ধি করি। এই কারণেই বোধহয় আপন জনের চিন্তার পাশাপাশি, নিজের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ভেবেও খানিকটা অসহায় বোধ করি। আপনার প্রার্থনার জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

 18 days ago 

হসপিটালে দিনের পর দিন থাকার অভিজ্ঞতা আমার আছে তাই জানি এই সময়টা কিভাবে কাটে। একই রকমের আলোতে থাকতে থাকতে দিন-রাত এর ব্যবধানও খুব একটা বোঝা যায় না জানালা দিয়ে বাইরে না তাকালে।তবুও সময় কিভাবে যেন কেটে যায়।
বয়স্ক মানুষদের এমআরআাই করানোটা খুবই কঠিন একটা কাজ। অবশ্য অনেক অল্প বয়সী মানুষও থাকতে পারেনা মেশিনের ভেতর।
পিকলুর সময়টা যে আপনাদের ছাড়া ভালো কাটছে না সেটা বুঝতে পারছি। আপনার শশুড় মশাই দ্রুত সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে আসুন এই প্রার্থনা করি।সাথে সাথে আপনিও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুন।

 14 days ago 

সত্যিই এমআরআই করানো অনেক কষ্টের, বিশেষ করে বাচ্চা এবং বয়স্কদের ক্ষেত্রে। একথা একদমই সত্যি হসপিটালের ভেতরের আলো থাকলে বাইরের আলো দেখে সময়ের আন্দাজ খুব একটা পাওয়া যায় না। আর সময় কি করে কাটে তাও বোঝা কঠিন। বাড়িতে ফিরে এসেছি ঠিকই, তবে পিকলু শরীরটা বেশ খারাপ। মাঝের কিছুদিন আমরা না থাকাতে ও আমাদেরকে মিস করেছে অনেক। চেষ্টা করছি ওকে যত্ন নিয়ে ভালো করার, জানিনা কি হবে। আমার পোস্ট পড়ে সুন্দর মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকবেন।

Loading...
 16 days ago 

জীবনে মাঝে মাঝে এমন পরিস্থিতি আসে যে প্রস্তুতি যায় না কাউকে বলে বোঝানো যায় না সহ্য করা।

আপনাদের সাথে পরিচয় হওয়ার পর থেকেই আপনার শ্বশুরমশায়ের অসুস্থতা কথা অনেকবার শুনেছি কিন্তু সবচাইতে এবার কঠিন পরিস্থিতি।। আর যেটা নিয়ে বেশ দৌড়াদৌড়ির উপরে রয়েছেন।। কখন সকাল কখন রাত কিছুই যেন বুঝে উঠতে পারছেন না।। হসপিটালে থাকলে মানুষের আর্তনাদ খুব কাছ থেকে বোঝা যায়।।

বেশ খারাপ লাগলো আপনার বর্তমান পরিস্থিতি জেনে।। তবে দোয়া করি ঈশ্বর যেন আপনার সকল সমস্যার সমাধান করে দেন।।।

 14 days ago 

হ্যাঁ শ্বশুর মশাই অনেকদিন যাবৎ অসুস্থ। এইবার সব থেকে বেশি দিন ওনাকে নিয়ে হসপিটালে কাটাতে হয়েছে। তবে হ্যাঁ সুস্থতার আর কোনো আশা নেই, তাই ভবিষ্যতে আরো কি কি পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে তা কেউই জানিনা। হসপিটাল আমাদের জীবনের বাস্তবতা যেমন বোঝায়, তেমনি আমরা কতখানি অসহায় সেটাও সেখানে বসেই সব থেকে ভালো উপলব্ধি করতে পারি। আপনার প্রার্থনার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই। ভালো থাকবেন।

TEAM 2

Congratulations! Your post has been upvoted through @steemcurator04. Good post here should be..

TEAM-1.png

Curated by : @jyoti-thelight
 12 days ago 

Thank you for your support @jyoti-thelight ma'am. 🙏

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.23
JST 0.033
BTC 95823.43
ETH 2602.71
USDT 1.00
SBD 2.44