কিছু কিছু ঘটনা জীবনকে ভালবাসতে শেখায়
প্রিয়,
পাঠকগন,
কেমন আছেন আপনারা সকলে? আশা করছি প্রত্যেকে ভালো আছেন।
আমি আমার লেখার মাধ্যমে প্রায় দিনই আপনাদের সাথে রান্নার রেসিপি শেয়ার করে থাকি এবং আপনারা অনেকেই আমার সেই রান্নার রেসিপি পড়ার পর ভীষণ সুন্দর করে তার রিপ্লাইও করেন। তার জন্য সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আজকে আমি আপনাদের সাথে কোন রান্নার রেসিপি শেয়ার করব না। আজকে আমি আমার ভালোলাগার একটা ছোট্ট মুহূর্তের কথা আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চলেছি।
সপ্তাহের শুরুতে অফিসে কাজের চাপ একটু বেশিই থাকে। আর কাজের সূত্রে আজকে আমাকে একটু অফিসের বাইরে বেরোতে হয়েছিল। সেখান থেকে কাজ মেটাতে মেটাতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এলো। আমি এবং আমার এক সহকর্মী দুজনে মিলে ঠিক করলাম আমরা মেট্রো ধরে চলে আসবো। তাহলে আমাদের সময় বাঁচবে অনেকটা।
কারণ কলকাতার রাস্তায় সন্ধ্যার পর থেকে প্রচন্ড জ্যাম শুরু হয়ে যায়। যে কারণে বাস বা অটো করে ফিরতে গেলে রাস্তাতেই অনেকটা সময় ব্যয় হয়। তাই আমরা দুজন মিলে মেট্রোতে ফেরার সিদ্ধান্ত নিলাম।
এরপর টিকিট কেটে আমরা মেট্রো ধরবো বলে মেট্রো স্টেশনে দাঁড়িয়ে রয়েছি। এরকম সময় দেখতে পেলাম দুজন বয়েস্ক মানুষ আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের যথেষ্ট বয়স হয়েছে সেটা তাদের চেহারা দেখলেই বোঝা যাচ্ছে।
যাই হোক যথাসময়ে ট্রেন এলে আমরা সকলেই ট্রেনে উঠে পড়লাম এবং যে জিনিসটা প্রথমেই দৃষ্টি আকর্ষণ করল, বয়স্ক মানুষ দুটি ট্রেনে ওঠার পরেই দুটি ইয়ং মেয়ে উঠে দাঁড়িয়ে তাদেরকে বসতে দিলেন।
যেটা সচরাচর রাস্তায় চলতে গেলে খুব বেশি চোখে পড়ে না।বরং এইরকম উদাহরণ বেশি চোখে পড়ে যে, ইয়াং ছেলেমেয়েরা বসে ফোন দেখে যাচ্ছে, অথচ তাদের সামনেই তাদের থেকে বয়সে বড় মানুষেরা দীর্ঘ সময় ধরে দাঁড়িয়ে যাতায়াত করছেন।
যাই হোক কিছুক্ষণ পরে ভদ্রমহিলার বোধহয় বেশ ঠান্ডা লাগছিলো, কারণ মেট্রোতে এসি চলছিল।যদিও আজকাল গরম পরতে শুরু করেছে এবং মেট্রোতে যেহেতু যথেষ্ট ভীড় হয় ফলে, আমাদের মত মানুষের খুব একটা সমস্যা না হলেও বয়সের কারণে হয়তো ওনার একটু সমস্যা হচ্ছিলো।
তিনি তার হাজব্যান্ডকে কিছু বললেন এবং কিছুক্ষণ বাদেই তিনি তার হাত ব্যাগ থেকে একটা চাদর বের করে তার স্ত্রীর মাথায় সেটি দিয়ে দিলেন। স্ত্রীর মাথায় দেওয়ার পরেই, স্ত্রী স্বামীর দিকে কেমন যেন কটমট করে তাকালেন, আর সাথে বিড়বিড় করে কিছু একটা বললেন।
তারসাথে মুহূর্তের মধ্যে নিজের মাথার চাদরটার ভাঁজ খুলে তার স্বামীর মাথার ওপরেও দিয়ে দিলেন। দুজনে মিলে একটি চাদরের ভেতরে মাথা দিয়ে চুপচাপ বসে রইলেন।
জানি না কেন খুব অদ্ভুত একটা ভালো লাগা কাজ করল উনাদের দুজনকে দেখে। এই কারণেই হয়তো বলে, একটা বয়সের পরে সবকিছু চলে গেলেও যেটা থেকে যায়, সেটা হলো অভ্যাস।
হয়তো এই ভাবেই বছরের পর বছর দুজন দুজনার যত্ন নিতে নিতে ওনরা অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। যে কারণে বকার মধ্যে হোক, আগলে রাখার মধ্যে হোক, ঝগড়ার মধ্যে হোক, সবকিছুর মধ্যেই কোথাও একটা যত্ন লুকিয়ে থাকে।
জানেন সবাই কিন্তু সবার জীবনে এই মুহূর্তগুলো উপভোগ করার মত সৌভাগ্য পায় না। আমরা হয়তো অনেক কিছুই পেতে চাই জীবনে, কিন্তু সব পাওনা পূরণ হয় না। তবে আজকে ওনাদের দুজনকে দেখে আমার কোথাও মনে হল, আমাদের মতন ইয়ং ছেলেমেয়েদের উনাদের কাছ থেকে শেখার মত অনেক কিছু রয়েছে।
আমরা হয়তো ছোট ছোট বিষয়গুলিকে জীবনে অনেক বড় করে দেখি। হয়তো না পাওয়া গুলো এত বেশি পরিমাণে হিসাব রাখি যে, পাওয়ার হিসেব রাখতে আমরা ভুলে যাই।
ওই দুজন মানুষের মধ্যেও হয়তো অনেক কিছু না পাওয়া রয়েছে, কিন্তু তারা তাদের না পাওয়া গুলোর থেকেও হয়তো বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন নিজেদের পাওয়া গুলোকে। তাইতো আজও এই বয়সেও দুজন দুজনকে এতটা যত্ন করছে। কারণ দুজন দুজনের মূল্য বুঝেছে।
তারা হয়তো বুঝেছে জীবন প্রায় শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছেছে, তাই যতটুকু সময় আছে সেটাকে খুব ভালোভাবে উপভোগ করা উচিত। আর সেই কারণেই এই ছোট ছোট মুহূর্তগুলো তারা ভাগ করে নেয়।
কিছুক্ষণের মধ্যেই আমি আমার গন্তব্যে পৌঁছালাম। তখনও তারা দুজন একই রকম ভাবে চাদর মুড়ি দিয়ে বসে আছেন। হয়তো আরও কিছুটা পথ একসাথে এই ভাবেই চলবে তারা।
জানি না আর কখনো দেখা হবে কিনা, তবে তারা যেন ভালো থাকে, সুস্থ থাকে, এই কামনাটা আমার মন থেকে আজকে অতর্কিতে বেরিয়ে গেলো।
আসলে প্রতিদিন যদি ট্রেনে,বাসে যাতায়াত করা হয় এইরকম অসংখ্য ছোট ছোট ঘটনা চোখে পড়ে। যার মধ্যে খারাপ ঘটনার সংখ্যা বেশি হলেও, এমন ভালো ঘটনাও কিন্তু মনে দাগ কেটে যায়।
আপনাদের কেমন লাগলো আমার আজকের লেখা জানাতে ভুলবেন না। খুব ভালো থাকবেন সকলে, আর চেষ্টা করবেন নিজেদের জীবনে এইরকম ছোট ছোট মুহূর্তগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার। কারণ জীবন বেশ সুন্দর।
একসময় তাদের মধ্যে ছিল এক অগাথ ভালোবাসা। এখনো সেই গভীর ভালোবাসা আছে কিন্তু সেটা এখন অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। এখন একে অপরের প্রতি মায়া এবং অভ্যাস। যারা সারাটি জীবন ধরে একসাথে বসবাস করে আসছে। সুখে দুখে সবসময় একে অপরের পাশে থেকেছে।
যাই হোক ভাল লাগল বয়স্ক স্বামী স্ত্রীকে দেখে। তাদের বিষয়ে সুন্দর সুন্দর কথা আপনি আমাদের সামনে উপস্থাপন করেছেন, যা পড়ে অনেক ভালো লাগলো আমার। ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।
প্রথমত আমি জানতাম না যে আপনি একজন চাকরিজীবী। আপনার পোস্ট করে জানতে পারলাম। আচ্ছা যাই হোক আপনারা কাজ মেটাতে মেটাতে অনেকটা দেরি হয়ে গেল। যার কারণে আপনারা সিদ্ধান্ত নিলেন মেট্রো তে করে বাসায় ফিরবেন। যে সিদ্ধান্ত সেই কাজ আপনারা মেট্রোর জন্য অপেক্ষা করছিলেন। যাইহোক অবশেষে আপনাদের কাঙ্খিত মেট্রো আপনাদের সামনে এসে উপস্থিত হলো। এবং আপনারা প্রথমে খেয়াল করলেন।
ওই বয়স্ক দুইজন লোক মেট্রোতে উঠার সাথে সাথেই। দুটো ইয়াং মেয়ে উঠে তাদেরকে বসার জন্য সিট ছেড়ে দিল। যেটা আসলে আমার কাছেও বেশ ভালো লেগেছে। এই ঘটনাগুলো সচরাচর অবশ্যই দেখা যায় না।
তারপরে আপনি বলেছেন মেট্রোতে এসি চলতেছে। যার কারণে বৃদ্ধ মহিলার মনে হয় ঠান্ডা লাগছিল।যার কারণেই তার হাজবেন্ড তার হাত ব্যাগ থেকে চাদর বের করে তার স্ত্রীর মাথার উপরে দিয়েছিল। কিন্তু তার স্ত্রীর উদ্দেশ্য ছিল যে দুজনেই এক চাদরের নিচে থাকবে। কারণ হয়তো বা তার হাসবেন্ডের ঠান্ডা লাগছে এই জিনিসটা আপনি তাদেরকে ফলো করেছেন।
আপনি তাদেরকে অনেকক্ষণ যাবৎ ফলো করেছেন এ বয়সে এসে যে তারা এতটা কেয়ারিং রয়েছে একজন আরেকজনের প্রতি। সে বিষয়টাও আপনি আপনার পোস্টে তুলে ধরেছেন ছেন বিষয়টা খুবই ভালো লাগলো।
আসলেই আপনি ঠিকই বলেছেন আমরা আমাদের জীবনে না পাওয়ার জিনিসগুলোকে এত বেশি গুরুত্ব দেই। যে জিনিসগুলো আমরা পেয়েছি সেই জিনিসগুলোর কথা আমরা ভুলেই যাই। এ কারণেই হয়তোবা আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ সময় ঝগড়া লেগেই থাকে।আমরা যদি আমাদের এই ছোট ছোট পাওয়া গুলোকে অনেক বড় করে দেখতাম। তাহলে আমাদের জীবনটা অনেক বেশি সুন্দর হতো।
আমরা হয়তোবা ঘর থেকে তেমন একটা বের হই না। কিন্তু আপনারা প্রতিনিয়তই ঘর থেকে বের হন।বিভিন্ন জায়গায় চলাফেরা করেন অনেক ঘটনার সম্মুখীন হন। যেটা আপনি আপনার পোস্টে উল্লেখ করেছেন।তার মধ্যে কিছু ভালো কিছু খারাপ ঘটনা রয়েছে সেটাই স্বাভাবিক।
আপনি জানতে চেয়েছেন আপনার লেখাটি কেমন হয়েছে। আমি আমার জায়গা থেকে বলবো এক কথায় অসাধারণ হয়েছে। খুব সুন্দর ভাবে আপনার লেখাটাকে আমার উপস্থাপন করেছেন। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর একটা ঘটনা আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
সত্যিই কি কমেন্ট করবো ভেবে পাচ্ছি না।এত বয়সেও দুজন দুজনার প্রতি এতটা কেয়ার করছে জানতে পেরে কেমন জানি অন্য রকম একটা ভালোলাগা কাজকরছে মনের মধ্যে।
বর্তমানে তো এরকম কাপল পাপয়াই যায় না। এখন ডিজিটাল যুগে পান থেকে চুন খসলেই শুরু হয়ে যায় স্বামী -স্ত্রীর চুল ছেড়াছেড়ি।সামান্য ব্যাপার নিয়ে ভেঙে যায় বিয়ের মতো সারাজীবনের বন্ধন।
এই রকম একটা যুগে আপনি ওনাদের মতো একটা কাপল দেখতে পেয়েছেন বলতেই হচ্চে আপনি সত্যিই অনেকটা লাকি।কারণ এখন এরকম কাপল শুধু নাটক,সিনেমাতেই দেখা যায় বাস্তবে নয়।