ভালো থাকিস কনক
মসজিদের পাশে ছোট যে মাঠটা ছিল, সেখানেই কনকের সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হয়েছিল। তাও তো এখন থেকে কমপক্ষে বছর ২০ আগে। মূলত ওর সঙ্গে পরিচয়ের সূত্রপাত ঘটেছিল সেখান থেকেই। ঐ মাঠে রোজ বিকেলে খেলতে যেতাম।যেহেতু মসজিদের সঙ্গেই আমার নানুবাড়ি ছিল। তাই কিছুটা হলেও সুবিধা হতো আমার জন্য ঐ মাঠে দ্রুত যেতে।
ছোটবেলায় দীর্ঘসময় বলা যায়, আমি নানু বাড়িতেই থাকতাম। যেহেতু ঐ মহল্লায় কমবেশি সকল ধর্ম বর্ণের লোকজন বসবাস করতো, তাই সকলের ছেলে-মেয়েদের কোলাহলে বিকেলবেলা করে মুখরিত হতো ঐ খেলার মাঠটি। কনক আর আমার বয়সের তফাৎ খুব একটা বেশি ছিল না। হয়তো দু থেকে এক বছরের ব্যবধান ছিল।
একটা সময়ের পরে আমার জন্য দীর্ঘদিন নানু বাড়িতে যাওয়া প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। যেহেতু ছোটবেলা থেকে বাহিরে পড়াশোনা করতে হয়েছিল তাই নানুবাড়ির সঙ্গে অনেকটা দূরত্ব তৈরি হয়ে গিয়েছিল। তবে সেসময় শুধুমাত্র বিভিন্ন ছুটিতে নানুবাড়িতে যাওয়া হচ্ছিল।
কনকের সঙ্গেও তারপর থেকে আর দেখা হয়ে ওঠেনি। তাছাড়া সময়ের পরিবর্তনে মসজিদের ছোট মাঠটাও ক্রমশ যেন আরও ছোট হয়ে আসছিল আর সেখানে খেলাধুলাতেও বেশ কড়াকড়ি নিয়ম চলে এসেছিল।
যখন বগুড়ায় পড়াশোনা করতাম। একবার তখন কনকের সঙ্গে আমাদের মেডিকেল কলেজের মাঠেই দেখা হয়েছিল। মূলত তখন আমি মেডিকেলের প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলাম। যেহেতু ক্রিকেট খেলার প্রতি আমার আগে থেকেই দুর্বলতা ছিল, যার কারণে সময় সুযোগ পেলেই ক্রিকেট খেলায় মনোনিবেশ করার চেষ্টা করতাম।
কনকের চেহারাটা আগের মতোই ছিল কোন রকম পরিবর্তন হয়নি। ও মূলত মেডিকেল কলেজের পাশেই একটা মেসে ছিল, আর সেখান থেকেই অনার্সে পড়াশোনা করতো। ও এসেছিল আমাদের খেলা দেখতে আর সেই সময়েই আমাদের ঘটনা ক্রমে দেখা হয়ে গিয়েছিল।
তারপরে আবারও দূরত্ব বেড়ে যায়। দেখতে দেখতে পড়াশোনা জীবন শেষ হয়ে গেল। মোটামুটি ডাক্তারি পেশার সঙ্গে যুক্ত হয়ে গিয়েছিলাম। ব্যস্ততার খাতিরে ফেলে আসা জীবনের মানুষজনের সঙ্গে ক্রমাগত দূরত্ব বেড়েই যাচ্ছিল।
গতকাল ইফতারের পূর্বে হঠাৎ করে যখন ফেসবুকের নিউজ ফিডে এক পরিচিত সাংবাদিকের একটা পোস্ট দেখলাম, তখন যেন মুহূর্তেই মনটা বিষাদে ভরে উঠেছিল।
আত্মহত্যার সংবাদ গুলো এমনিতেই আমাকে বেশ ব্যথিত করে ফেলে। একটা জিনিস খেয়াল করে দেখবেন, প্রত্যেকেরই কিন্তু নিজের জীবনের প্রতি ভীষণ মায়া থাকে। একজন পাগল মানুষও রাস্তা অতিক্রম হওয়ার সময়, এদিক-সেদিক বেশ ভালো করে খেয়াল করে। কারণ জীবনের মায়া প্রত্যেকেরই আছে।
সাংবাদিক ভাইয়ের পোস্টটাতে যার ছবিটা দেখেছিলাম, তার সঙ্গে কনকের চেহারার অনেকটা মিল আছে।
কনকদের বাড়ি যে জায়গাটাতে ছিল, সেখানেই আমার নানুবাড়ি। চেষ্টা করলাম নানু বাড়ির লোকজনের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করার জন্য। তারপরে যা শুনলাম,তা অনেকটাই কষ্টদায়ক। কারণ ছবির ছেলেটি আর কেউ নয়, সে আমার ছোটবেলার খেলার সাথী কনক।
আমি জানিনা এই ঘটনা কেন সে ঘটালো, তবে যতটুকু আন্দাজ করতে পেরেছি, অনেকটা হতাশাগ্রস্ত হয়ে সে এমন কাজ করেছে।
বেশি খারাপ লাগছিল ওর দুটো ছোট বাচ্চার জন্য। ঘটনাটা আসলেই ভীষণ হৃদয়বিদারক।
আসলে এই ধরনের কাজ একটা সুস্থ মানুষ সহজে করার সিদ্ধান্ত নেয় না। যখন কেউ চরম হতাশায় ভোগে এবং পৃথিবীটা তার কাছে ভীষণ কষ্টদায়ক হয়ে যায় বেঁচে থাকার জন্য, হয়তো সে সময় এমন সিদ্ধান্ত অনেকেই ভুলবশত নিয়ে ফেলে।
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |

VOTE @bangla.witness as witness

OR
শেষের অংশে এসে আত্মহত্যার কথা জেনে সত্যিই খারাপ লাগলো। বিশেষ করে খারাপ লাগছে তার ছোট ছোট বাচ্চাগুলোর জন্য। আসলে মানুষ কতটা হতাশাগ্রস্থ হলে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় এটা ভাবতেই অবাক লাগছে। আমাদের জীবনে হয়তো সবারই কিছু কিছু দুঃখ আছে। কিন্তু সেই দুঃখের সীমা যখন অনেক গভীর হয়ে যায় তখন বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। এরপরেও আমি বলতে চাই সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে হলেও সে এই ভুল সিদ্ধান্ত থেকে বেরিয়ে আসতে পারতো।
হয়তো বেরিয়ে আসতে চেয়েছিল আপু, তবে মানসিক যন্ত্রণা হয়তো তাকে শেষ রক্ষা পেতে দেয় নি।
কনক ভাইয়ের ব্যাপার টা শুনে ভীষন খারাপ লাগলো ভাইয়া! একটা মানুষ চরম পর্যায়ে হতাশাগ্রস্থ হয়ে গেলেই আত্নহত্যার মতো সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়! আপনাদের কতো সুন্দর স্মৃতি ছিল সেগুলো যেন এখন চোখের সামনে ভাসছে! জীবনের মায়া যে সবারই আছে! কিন্তু জীবন নিয়ে হাজার রকমের অভিযোগ জমে গেলে মানুষ বাধ্য হয় কঠিন সিধান্ত নিতে!
আপনার মন্তব্যের শেষের কথা গুলোর সঙ্গে হয়তো ব্যাপারটা কিছুটা মিলে গিয়েছিল ভাই।
কনক এর নাম শুনে প্রথমদিকেই ভেবেছিলাম হয়তো আপনার সাথে তার দেখা হয়েছে অথবা খুব সুন্দর একটা সময় কাটিয়েছেন। কিন্তু পরক্ষণে যখন জানতে পারলাম আত্মহত্যার বিষয়টি তখন সত্যিই বেশ খারাপ লেগে উঠলো। আত্মহত্যা যদিও মহাপাপ কিন্তু যারা আত্মহত্যা করে তাদের অনেকের মধ্যেই হতাশা বিষয়টা অনেক বেশি গেঁথে যায়। তবে আত্মহত্যাই যে সমস্যার শেষ সমাধান নয় সেটা হয়তোবা তাদের মাথায় তখন কাজ করে না। চেনা সাংবাদিকের পোস্টে সেই চিরচেনা মুখটা দেখে আপনি যেরকম ব্যথিত হয়েছেন ঠিক তেমনি আমিও ব্যথিত হলাম তার ছোট দুটো বাচ্চার কথা শুনে।
মূলত আমারো বেশি কষ্ট লাগছে ওর দুটো ছোট বাচ্চার জন্য।
একটা মানুষ মানসিক যন্ত্রনার কোনো পর্যায়ে গেলে আত্মহত্যা করে শুধুমাত্র সেই মানুষ টাই জানে। আপনার বন্ধু কনকের ভেতরের কষ্ট দুঃখগুলো সবার অজানা থেকে গেল আর সে পাড়ি দিল। যাইহোক তার জন্য দোয়া করি। মূহূর্তটা আপনার জন্যও বেশ কঠিন। যোগাযোগ না থাকলেও আপনার অনেক কাছের মানুষ ছিল যে কনক সেটা বুঝতে পেরেছি।।
আসলে ছোট বেলা থেকেই অনেকটা সময় কাটিয়েছি ওর সঙ্গে, ওর এই হঠাৎ চলে যাওয়াটা বড্ড ব্যথিত করেছে আমাকে।
ভাইয়া আপনার পোস্ট পড়ে প্রথম দিকে অনেক ভালো লাগলেও শেষের দিকে অনেক খারাপ লাগল। সত্যি বলেছেন ভাইয়া প্রত্যেকেরি তার জীবনের জন্য অনেক মায়া রয়েছে। কনক কেনো আমার মনে হয় যেকেউ সহজে নিজের জীবন শেষ করতে চায় না।সত্যি পরিচিত কারো ছবি এভাবে হঠাৎ সামনে পড়লে কষ্টলাগা স্বাভাবিক। আসলে বাচ্চা দুটির জন্য অনেক খারাপ লাগল। দোয়া করি ওপারে ভালো থাকবে কনক।ধন্যবাদ আপনাকে।
বেশি খারাপ লাগছে ওর দুটো ছোট বাচ্চার জন্য। জানি না আসলে ও কি সমস্যার ভিতর দিয়ে চলছিল।
হতাশাগ্রস্থ যখন চরম পর্যায়ে চলে যায় তখনই মানুষ আত্মহত্যার মত চরম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়। কিন্তু ভাই তার হতাশা থেকে বের হওয়ার জন্য কাউন্সেলিং নিতে পারতেন । কিন্তু আমাদের অনেক কিছুই মনে হতে পারে। কিন্তু কনক ভাই কেন যে , এ পথ বেছে নিলেন কেবল তিনিই জানেন। তার পরিবার যেন এ শোক সইতে পারে এ কামনা করি।
আসলে কাউন্সেলিং করে ছিল কি না, তা আমি বলতে পারবো না আপু। গতকাল সংবাদ টা শুনেছি এবং বেশ ব্যথিত হয়েছি।
আপনার পোস্টটি পড়ে সত্যিই ভীষণ ব্যথিত হলাম ভাইয়া । ছোটবেলার বন্ধুকে শেষবার এভাবে আপনাকে ফেসবুকে দেখতে হবে সত্যিই খুবই দুঃখজনক ঘটনা । এরকম ঘটনা যেন আর কারো সঙ্গে না ঘটে । আসলে মানুষ হতাশাগ্রস্থ হয়ে এমন একটা ভুল সিদ্ধান্ত নেয় যেখানে সে তার নিজের আপনজনের কথাও চিন্তা করে না ।এটা সত্যিই ভীষণ কষ্টদায়ক । যাইহোক খুবই খারাপ লাগলো । ধন্যবাদ আপনাকে ।
এই ধরনের ঘটনা গুলো আসলেই খুব কষ্ট দেয়। যদিও তোমার পোস্ট পড়ার আগেই টাইটেল দেখে বুঝতে পেরেছিলাম যে এরকম কিছু একটা ঘটবে। তবে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব অথবা আপন জনের বিয়োগে আমরা সকলেই খুব ব্যথিত হই। এই মুহূর্তে তোমাকে সান্ত্বনা দেওয়া ছাড়া আমি আর কোন কথা খুঁজে পাচ্ছি না শুভদা।
ভাইয়া আপনার পোস্টটির টাইটেল দেখে মনে করছিলাম হয়তোবা আপনার কোন নিকটতম মানুষ কোন কর্মের জন্য প্রবাসে অথবা দেশের কোন দুর স্থানে গিয়েছে। কিন্তু তার আত্মহত্যার কথাটা জানতে পেরে সত্যি আমি মর্মাহত হয়েছি। আর আপনার এরকম চিরচেনা মানুষের অকাল মৃত্যুর কথা জানতে পেরে আপনার মনে প্রচন্ড আঘাত পেয়ে ব্যথিত হওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে আত্মহত্যা করা যে মহাপাপ এবং এটা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। যদিও তার দুটি ছোট বাচ্চা আছে। তার এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ার পূর্বে অন্ততপক্ষে তার ছোট বাচ্চা দু'টির কথা চিন্তা করা উচিত ছিল।