মন পস্তায়
এইতো আজ বাহিরে গিয়েছিলাম, যদিও মন ভালো থাকার কথা। তবে বাসায় আসার পর থেকে মনটা একটু ভারী হয়ে আছে। আজকাল ঘুমের ওষুধটাও হয়তো ঠিকমতো কাজ করে না। একটা নির্দিষ্ট সময়ের পরে কেন জানি হঠাৎ করেই ঘুমটা ভেঙে যায়। যখন গল্পটা লিখতে বসেছি তখন মোটামুটি চারিদিকে বেশ ভালোই ঘন অন্ধকার, হালকা ঠান্ডা বাতাস জানালা দিয়ে ফিরফির করে আসছে ।
ভিতরটা খচখচ করছে সন্ধ্যার পর থেকেই। তার অবশ্য যথাযথ কারণ আছে। খালেক মিয়াকে নিয়ে এর আগেও বহুবার লিখেছিলাম। বয়স ৬৫ এর কাছাকাছি। এই বয়সে এসেও, সে বেশ ভালোই দায়িত্ব নিয়েছে তার পুরো সংসারটার। হুট করেই সুস্থ মানুষটার শারীরিক ব্যাধি দেখা দিয়েছে। কয়েকদিন থেকে নাকি, শরীরটা বেশ ভালোই ফুলে যাচ্ছে ।
যদিও কয়েকদিন আগে, আমাকে সে ব্যাপারটা জানিয়েছিল। তবে আসলে আমি যে সময় সুযোগ করে তার সঙ্গে দেখা করবো , ঠিক সেটা করে ওঠা হয়নি। তবে আজ যখন সন্ধ্যা বেলায় একটা খবর শুনেছি, তারপর থেকেই মনটা অনেকটাই ভারী হয়ে আছে। মনটা ভীষণ পস্তাচ্ছে, কেন যে দেখা করতে গেলাম না তার সঙ্গে, এমনটাই বারবার ভাবছি।
জহুরা বিবি আমাকে ফোন দিয়েছে, ফোন ধরতেই ফোনের অপর প্রান্ত থেকে সে হাউমাউ করে কান্না করছিল। খালেক মিয়ার সহধর্মিনীর এমন আচরণ আমাকে বেশ অপ্রস্তুত করে ফেলেছে । তখনও আমি গাড়ির ভিতরেই ছিলাম। তবে আমি বুঝতে পেরেছি, সে নিরুপায় হয়েই আমার কাছে ফোন দিয়েছে এবং আমি অনেকটাই লজ্জিত হয়ে গিয়েছি তার কাছে। কারণ আমারই উচিত ছিল, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার । সময়ের অজুহাতে কত কিছু থেকেই যে বঞ্চিত হয়ে যাচ্ছি, তা আসলে বলে বোঝাতে পারবো না।
মাঝ রাস্তাতেই বাধ্য হয়ে গাড়িটা থামিয়ে দিলাম । তখনও জহুরা বিবির কান্না, আমি বেশ ভালোভাবেই শুনতে পাচ্ছি। আমি তাকে বারবার বলার চেষ্টা করছি, আপনি একটু শান্ত হোন, আমাকে সমস্যাটা একটু খুলে বলার চেষ্টা করুন । অবশেষে তার কথা গুলো শুনে আমি অনেকটাই বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছি।
মাস দুয়েক আগেই যে মানুষটাকে আমি একদম সুস্থ দেখে এসেছি, হঠাৎ করে তার কিডনি জনিত সমস্যার কথা শুনেই বেশ আকস্মিকভাবে যেন অনেকটাই ধাক্কা খেয়ে গেলাম। এখানকার ডাক্তারদের শরণাপন্নও সে হয়েছিল, তবে তার রোগের চিকিৎসা এখানকার ডাক্তাররা দিতে পারেনি। তারা বলেছে, অতি দ্রুত কিডনি বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়ার জন্য ।
গত তিনদিন আগে খালেক মিয়া ঢাকায় চলে গিয়েছে, যাওয়ার আগেও আমাকে ফোন দিয়েছিল। তবে খুব সকালে আমি ঘুম থেকে কোনভাবেই উঠতে পারি না। তাই তার কলটা ধরা হয়ে ওঠে নি। তবে পরবর্তীতে আমি যখন তাকে ফোন করেছিলাম, তখন অপরপ্রান্ত থেকে ফোনটা রিসিভ হয়নি । হবেই বা কিভাবে, সে তো হসপিটালে ভর্তি।
জহুরা বিবির কাছে যা শুনলাম, তাতে বুঝলাম তার এই মুহূর্তে অর্থ সহযোগিতার দরকার। বারবার বলছে কেবল তাদের জমির ধানগুলো কেটে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে, কদিন পরেই বিক্রি হয়ে যাবে কিন্তু এর মাঝেই খালেক মিয়ার এই অবস্থা।
নিজের কাছেই খারাপ লাগছে ব্যাপারটা পুরোপুরি জানার পরে। কারণ যে মানুষটা দুটো বছর আমার দেখাশোনা করেছে, তার কঠিন সময়ে আমি তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি, এটা ভেবে ভীষণ কষ্ট পাচ্ছি। আমি জহুরা বিবিকে আগামীকাল বাসায় আসতে বলেছি এবং তার কাছ থেকে আরো বিস্তারিত কথা জানতে চাই। আপাতত সেই অপেক্ষায় আছি ।
তবে অপেক্ষার সময় গুলো বড্ড দীর্ঘ হয়। যদিও একটা রাতের ব্যাপার, রাত পোহালেই জহুরা বিবি বাসায় আসবে, তবুও এই রাতটা যেন বেশ লম্বা মনে হচ্ছে, মনটা বড্ড পস্তাচ্ছে খালেক মিয়ার জন্য।
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |

VOTE @bangla.witness as witness

OR
খালেক চাচার অসুস্থতার কথা জেনে সত্যি খারাপ লাগলো ভাইয়া। এই মানুষটির সাথে আমরাও বেশ পরিচিত। বেশ কয়েকবার উনাকে নিয়ে আপনি লিখেছিলেন। আসলে কখন কে অসুস্থ হয়ে পড়ছে বোঝাই যাচ্ছে না। কিডনি জনিত সমস্যা দিনে দিনে বেড়ে যাচ্ছে। আসলে এই সমস্যাগুলো বড়ই জটিল। আমি বেশ কিছুদিন থেকেই কিডনির পাশে ব্যথা অনুভব করছি। দীর্ঘদিন ওষুধ খাওয়ার পর প্রায় দুই মাস ভালো ছিলাম। এরপর আবার শুরু হয়েছে। জানিনা কি হবে। তবে যাই হোক চাচা যেন সুস্থ হয়ে ওঠেন এই প্রার্থনাই করি। আর কারো জন্য অপেক্ষা করলে সময় সত্যি অনেক দীর্ঘ হয়ে যায় ভাইয়া।
আসলেই আপু তার কথা ভেবে বেশ ভালোই খারাপ লাগছে। ভদ্রলোকটার জন্য ভালোই মন পস্তাচ্ছে।
ভাইয়া পোস্ট পড়ে বেশ খারাপ লাগলো।আসলেই অনেক সময় ঘুমের জন্য ফোন রিসিভ করা হয় না।যাই হোক খালেক মিয়ার বউ আসার পর জানা যাবে পুরোপুরি ঘটনা কি হলো তাই।
যতদূর জানলাম সে কিডনি জনিত ব্যাধিতে ভুগছে আপু।
আসলে কিছু প্রিয় মানুষ থাকে যারা আমাদের সাথে দীর্ঘ অনেকটা পথ চলেছে, তারা যখন অসুস্থ হয়ে পড়ে তখন অনেক কষ্ট লাগে! ব্যস্ততার কারণে হয়তো কথা হয়না তেমন। তবে তাদের খারাপ সময়ে পাশে থাকতে না পারলে নিজের কাছেই কেমন অপরাধী মনে হয়। খালেক চাচার কিডনী সমস্যা ধরা পরেছে। আশা করি খুব শীঘ্রই উনি সুস্থ্য হয়ে ফিরবেন।
তার দ্রুত সুস্থতা আমিও কামনা করছি ভাই। দেখি এখন কি হয় সামনে।
ভাইয়া, আপনার পোস্টটি পড়ে, মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে গেল। খালেক চাচার অসুস্থতার ব্যাপারটি সত্যিই বেদনাদায়ক। তবে তার সাথে দেখা করতে পারলে আপনার বোধহয় এতটা খারাপ লাগত না। কিন্তু কি করার আছে ভাইয়া, আমরা তো সকলেই সময়ের হাতে বন্দি। ইচ্ছে করলেই অনেক কিছু করা যায় না। আর তাই সময়ের অজুহাতে আমরা নিজেকে গুটিয়ে নেই। তবে আপনি খুব মহৎ প্রাণ মানুষ, যার কারণে খালেক চাচার বিষয়টি আপনাকে খুবই পীড়া দিচ্ছে। খালেক চাচার বউয়ের কাছ থেকে বিস্তারিত জানুন, আর আমাদের কেউ একটু জানাবেন। খালেক চাচার শারীরিক সুস্থতা কামনা করছি। ধন্যবাদ
এখনও হাসপাতালে ভর্তি আছে সে ভাই, কয়েকদিন সে সেখানেই থাকবে।
ভাইয়া আপনার পোস্ট পড়লাম মনোযোগ দিয়ে সত্যি বলতে খারাপ লাগছে অনেক, আসলে মানুষের অসুস্থতা বলে কয়ে আসে না , তার থেকে এটা জেনে ভালো লাগছে যে আপনি উনার পাশে আছেন, আপনার এই মনমানুষিকতার জন্যে মন থেকে ধন্যবাদ জানায়। আর দোয়া করছি উনি ও তারা তারই সুস্থ হয়ে উঠুক।
মানুষ হওয়ার চেষ্টা করছি আপু। 🙏
একটা মানুষ এভাবে অসুস্থ হয়ে গেলে কতটা খারাপ লাগে একমাত্র তার কাছের লোক গুলোই বুঝতে পারবে।আর তার উপরে যেহেতু আপনার প্রতি ওনার যথেষ্ট অবদান ছিল, ওই কারণেই আপনি আরো ভেঙে পড়েছেন।আসলে এমনটাই হয় অনেক ক্ষেত্রে।যে আমরা দেখা করবো,কথা বলবো কথা দিয়েও সময়ের জন্য কুলিয়ে উঠতে পারি না। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করব খুব তাড়াতাড়ি যেন উনি সুস্থ হয়ে ওঠেন। কিডনির সমস্যা গুরুতর সমস্যা।ভালো জায়গায় চিকিৎসা না হলে বিপদ। তাই ভালো জায়গায় যদি চিকিৎসা করে উনি সুস্থ হয়ে ওঠেন, তবে আশা করি আপনি আবার ওনার সাথে দেখা করতে পারেন।