|| ভুতনি - এক গা ছমছমে গ্রামের পথে... ||
প্রিয় বন্ধুরা কেমন আছেন? আশা করি সকলে ভালো আছেন। আজ ভূতনি গ্রামে আমার আমরা তিন ভাই-বোনের যাত্রার কাহিনী বর্ণনা করেছি। যেখানে আমার পিসির বাড়ি রয়েছে। ভূতনি এক গা ছমছমে গ্রাম। আমরা সেই গ্রামে যাই। সেখানে পিসির অনেক আদর যত্ন ও সোহাগ পেয়ে আমরা আবার ফিরে আসি। আজকের পোস্টে সে কাহিনী বর্ণনা করেছি।
আমার পিসির বাড়ি যে জায়গাটায় নাম শুনলে প্রথমে একটা ভয় ধরে, জায়গাটার নাম হলো ভূতনি। এমন নাম শুনে আপনারা হয়তো ভেবে ফেলেছেন এই জায়গাটি ভীষণ প্রান্তিক এবং গাছপালা জঙ্গলে পরিপূর্ণ একটি জায়গা। আপনার কথা খুব একটা ভুল হবে না। সত্যি নামের সাথে এই জায়গাটির ভালোই মিল রয়েছে।
তবে একসময় এর মিল অনেক বেশি পাওয়া যেত। এখন একটু হলেও উন্নতির পথে এগিয়েছে এই গ্রাম। প্রথমে সত্যই বনজঙ্গলে ঘেরা ছিল এই ভূতনি গ্রাম। এলাকাটি খুব নিরিবিলি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর একটি গ্রাম। চারিদিকে নদী। বড় নদী একদিকে রয়েছে, একদিকে একটা ছোট নদী এবং এক প্রান্তে গঙ্গা। এই জায়গাটি সরকারের তরফ থেকে ভালোভাবে বাঁধ দিয়ে ঘেরা রয়েছে। অত্যন্ত যত্ন করে বাঁধ দেওয়াই এখন অব্দি এখানে বন্যার প্রকোপ দেখা যায়নি।
তবে এই জায়গাটি আমার খুবই পছন্দের। পিসির বাড়ি বহুদিন যাওয়া নেই, ভাবলাম একবার যাই। পিসিও বার বার ডাকছিল। তাই আমার একটি ভাই ও বোনকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ি, বহুদিন পরেই যাচ্ছিলাম তাই একটা দারুণ কৌতুহল ভেতরে ছিল।
গিয়ে দেখি জায়গা অনেক পরিবর্তন হয়েছে। তবে পিসির বাড়ি এবং সামনের বেড়াটা একই রকম রয়েছে। পিসি তো খুবই খুশি আমাদের দেখে। আমাদের পেয়ে পিসি অনেক খুশি হয়ে গেল।
আমরাও অনেক আনন্দ পেলাম। তিন ভাইবোন পিসির সাথে কত পুরনো নতুন গল্প জুড়ে দিলাম। তারপরে হলো খাবার পালা। পিসি একে একে খাবার নিয়ে আসছে। আমরা তো একেবারে বিপদে পড়লাম। এত খাবার খায় কেমন করে? কিন্তু পিসির হাত থেকে রেহাই পাওয়া মুশকিল। এর আগেও যখন এসেছিলাম তখনও একই দশা হয়েছিল। বিশেষত খাবারের দিক থেকে পিসির হাত থেকে ছাড় পাওয়া যায় না বললেই চলে।
আমি দেখেছি পিসি খুবই সুন্দরভাবে সমস্ত রকম খাবার তৈরি করতে পারে। তার জন্য আমি তারিফ করতেই হয়। আমরা যখন গেলাম তখনই ঠান্ডা শরবত দিয়ে শুরু করল পিসি। তারপর একে একে লুচি - পায়েস, দুপুরের খাবারে তো এলাহি সব আয়োজন!
যাই হোক দুদিন মত ছিলাম। কারণ আমার বাড়ি ফিরবার তাড়া ছিল। কলকাতা আসার দিন ও টিকিট আগে থেকেই ঠিক করা ছিল। অতএব পিসির বাড়ি বেশিদিন থাকা হলো না। যেদিন আমরা ফিরে এলাম গাড়ি থেকে তিন ভাইবোন নেমে গিয়ে মাঝপথে বেশ আনন্দ করলাম। পিসির বাড়ি থেকে ফেরার পথে একটা বিরাট ব্রিজ রয়েছে যা অনেক উঁচু। এখানে প্রচুর হাওয়া লাগে।
অতএব এমন জায়গায় না নামাটা একপ্রকার বোকামি হবে। আমি এই ধরনের সুযোগ হাতছাড়া করলেও আমার বন্ধু কোনভাবেই করবে না। সে বলল দাদা তাড়াতাড়ি নামো, এই জায়গায় ক'টা ছবি তুলে নি!
সত্যি জায়গাটা ছবি তোলার জন্য অসাধারণ হয়ে আছে। আমরা তো বিকেলবেলা ফিরেছিলাম। ফিরতে ফিরতে তখন সন্ধ্যে হয়ে এসেছিল।
এমন সময় সত্যি জায়গাটা ছবি তোলার একটা পরিবেশ হয়ে উঠেছে। আমি দেখলাম পশ্চিম দিকে সূর্য ডুবতে যাচ্ছে, তার লাল আভায় গোটা পশ্চিম আকাশ ছেয়ে গেছে। দেখতে পাচ্ছি অনেক নিচে বহু গাছ পালা। আমরা ব্রিজ থেকে উপভোগ করতে লাগলাম এই সুন্দর সুন্দর পরিবেশটা। ব্রিজের নিচেই তো অনেক বড় নদী ফুলোহর! যে ফুলহর আমাদের বাড়ির কাছে দেখা যায়, সে ফুলহর এখানে একেবারে সরু হয়ে গেছে এবং সামনের দিকে তিন কিলোমিটার পরই মিশে যাচ্ছে বড় গঙ্গায়। যেহেতু নদীর উপরে দাঁড়িয়ে আছি সেই সূত্রে হাওয়া লাগছিল ভীষণ। প্রকৃতি এত মধুর লাগছিল কি বলব! আমার বোনকে গোটা পাঁচের ছবি ও দুই তিন খানা ভিডিও করে দিলাম, তারপর সে খুশি হল!
বহুক্ষণ ঘোরাফেরা করে আমরা এবার চলে গেলাম বাড়ির পথে। আবারো ধরলাম গাড়ি। গাড়ি বলতে টোটো! এরকম নিরিবিলি গ্রামাঞ্চলে আর তো কোন বড় গাড়ি পাওয়া যায় না। তাই টোটোটাই হচ্ছে একমাত্র যাতায়াতের বাহন। সেই সূত্রে আমরা টোটো ধরে চলে গেলাম মথুরাপুর। সেখান থেকে আবার টোটো ধরতে হয়। তবে তাড়াতাড়ি যাবার জন্য আমরা বাস ধরার চেষ্টা করি। বাস শেষ অব্দি পেয়ে যায়!
মজার ব্যাপার হলো এত বড় হয়ে গিয়েও পিসি সেই ছেলেবেলার ব্যাপারটা এখনো ধরে রেখেছে। হাজার হোক আমরা তো সন্তান। যতই মাথায় হই না কেন আমরা তো তাদের সন্তান। পিসিকে দেখলাম আমাদের প্রত্যেককে পকেটে করে কিছু টাকা গুঁজে দিল। আমার বোনকে একটা ভালো চুরিদারের পিস ও দেড়শ টাকা, আমাকে ৫০০ টাকা এবং আমার ভাইকে ৫০০ টাকা দিল। আমি তো নেব না। কিন্তু কিছু করার নেই, আগেই বলেছি পিসির হাত থেকে ছাড় পাওয়ার কোন জো নেই! অতএব নিতেই হল! যাইহোক, সেদিন আমরা খুবই আনন্দ করেছিলাম তিন ভাইবোন মিলে! মহানন্দে পিসির বাড়ি থেকে ফিরে এসেছিলাম।
ক্যামেরা - iQOO 9se
মডেল - 12019
ফোকাস লেংথ - 35mm
আজ এই অব্দি রইল। আগামীকাল আবার নতুন কিছু কথা নতুন একটি লেখা নিয়ে হাজির হব। ততক্ষণ আপনারা ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ।
দেখুন আপনি আমার বাংলা ব্লগের সদস্য হয়ে কেন ক্লাব পঞ্চাশ ট্যাগ ব্যবহার করছেন তা আমার বোধগম্য নয় । যদি একটু আমাকে বুঝিয়ে বলতেন এই ট্যাগ ব্যবহার করার কারণটি কি , তাহলে আমার জন্য বুঝতে সুবিধা হতো । আমি আপনার উত্তরের অপেক্ষায় থাকলাম। ধন্যবাদ
শুরুর দিকে কয়েকজনের দেখেই আমি ট্যাগটা ব্যবহার করে আসি। এই ট্যাগটি ব্যবহার করতে হয়, এরকমই একটা ধারণা নিয়েই এতদিন ব্যবহার করেছি, এ ব্যতীত অন্য কোনো অভিপ্রায় নেই। কেউ বারণ করলে হয়তো পূর্বেই বিষয়টি সংশোধন হয়ে যেত। এটা কমিউনিটির নিয়মের বহির্ভূত হলে আমি অজ্ঞাত ত্রুটির জন্য দুঃখিত।
আসলে আমাদের কমিউনিটির পোস্টে এই ধরনের ট্যাগ ব্যবহার করাটা গ্রহণযোগ্য নয় । আপনি সংশোধন করে নিয়েন । ধন্যবাদ।
পিসির বাড়ি তিন ভাইবোন মিলে ঘুরতে যাওয়ার যে আনন্দঘন মুহূর্তটি আপনি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন সত্যি বিষয়টি আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। আসলে পিসিরা এমনই হয়। যাই হোক বিশেষ করে ব্রিজের উপরে যে ছবিগুলো তোলা হয়েছে প্রত্যেকটা ছবি অসাধারণ ছিল সব মিলিয়ে আপনার পোস্টটি আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে। অসংখ্য ধন্যবাদ এরকম সুন্দর মুহূর্তগুলো আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্য করার জন্য। হ্যাঁ দাদা আমরা খুব সুন্দর মুহূর্তগুলো কাটিয়েছিলাম।
ভূতনি নাম শুনে আমিও ভয় পেয়েছি ভাইয়া। আর এমন কাছে আত্মীয়দের থেকে আসলে রেহাই পাওয়া সম্ভব নয়। যেমন আমার খালামণি নিজের হাতেই ভাত খাইয়ে দেয় না খেলে । যাইহোক ভাইয়া বেশি উপভোগ করলাম আপনার পোস্টটি।
জায়গা দেখলে আরো ভয় পেতেন। হ্যাঁ পিসি মাসি দের হাত থেকে ছাড় পাওয়া সত্যিই মুশকিল।
বেশ অদ্ভুত তো এলাকার নামটি।মনে হচ্ছে অ্যাডভেঞ্চার এর জন্য জায়গাটি একদম পারফেক্ট।আর সত্যিই রক্তিম আলোয় দারুন লাগছে পুরা আকাশ।আর বড়ো জন কিছু দিলে না করতে হয় না,নিব না নিব না বলে নিয়ে নিতে হয়😁
নাম টা সত্যিই অদ্ভুত। তবে আমাদের শুনে শুনে সহজ হয়ে গেছে নাম টা। ধন্যবাদ দাদা পোস্টটি পড়ার জন্য।
ছবিগুলো বেশ ভালোই এসেছে। ভুতনি নামকরণের কোন ইতিহাস আছে কিনা খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন। লোকাল বয়স্ক লোকজন জানতে পারে, আর নয়তো গুগুল বাবাই ভরসা।আর এটা একদম ঠিক, আত্মীয়স্বজনের বাড়ি গেলে খাবারের চাপে মারা পড়ার যোগার হয়।আমি একবার মামাবাড়িতে গিয়ে ১৫ দিনে ৪ কেজি গেইন করে এসেছিলাম।
হাহাহা, ঠিকই বলেছেন দিদি, কদিন থাকলে তাই হতো আমারও। আর নামকরণটা নদী ঘেরা জঙ্গল ঘেরা জায়গা বলে, এটা পিসির মুখে শুনেছিলাম।