শিক্ষার নামে অসুস্থ প্রতিযোগিতা||আমার চিন্তাভাবনা
সোর্স
আমরা জানি শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড।একটি জাতির উন্নতির পিছনে সব থেকে বড় অবদান থাকে শিক্ষার।কোন জাতিকে ধ্বংস করতে হলে সে জাতির ছাত্রদের ধ্বংস করলেই যথেষ্ট।আর যদি ছাত্ররা ছোট থেকেই সৎ আদর্শবান হিসেবে গড়ে ওঠে তবে সেই জাতির উন্নতি কেউ ঠেকাতে পারবে না।
আজকে জাপান বিষয়ক একটি বই পড়ছিলাম।সেখানে জাপানের শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে জানার সুযোগ পাই।সেখান থেকে জানতে পারলাম জাপানে ছোট থেকেই দলগত শিক্ষার ব্যপারে জোর দেওয়া হয়।সেখানে পরীক্ষার নাম্বারের থেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় বাচ্চারা কতটুকু শিখল।সেখানে রোল নাম্বার সাজানো হয় নামের প্রথম অক্ষর অনুযায়ী।বাচ্চাদের ছোট থেকেই শেখানো হয় বিনয়ী হতে,সৎ হতে দলগত ভাবে কাজ করতে।জাপান আজ কতটা উন্নত তা কিন্তু বলে দিতে হবে না।আপনি যদি আপনার ওয়ালেট হারিয়ে ফেলেন তাইলে সেটা আপনি আবার ফিরে পাবেন এটা একদম নিশ্চিত।
সোর্স
এবার আসি আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায়।আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় ছোট থেকেই শিশুদের এক অসুস্থ প্রতিযোগীতায় নামিয়ে দেওয়া হয়।স্কুল যেন স্কুল নয় এক একটি প্রেশার কুকার।যেখানে শিশুর ওজনের থেকে বেশি হয় স্কুলের ব্যাগের ওজন।যে বয়সে শিশুদের খেলাধুলা করার কথা সেই বয়সে তারা নিজের ওজনের ব্যাগের বোঝা টেনে স্কুলে যায় আর গাদা গাদা বই মুখস্ত করে।যাদের নৈতিক শিক্ষার বদলে শেখানো হয় যেভাবেই হোক রোল নাম্বার এক বানাতেই হবে।কাউকে সাহায্য করবে না।আমার পরিচিত এক অভিভাবক ছিল যে সন্তান কে নিষেধ করে দিত স্কুলে কি পড়িয়েছে তা তার যে বন্ধু স্কুলে যায় নি তাকে না বলে দিতে।
এখন বাবা মায়ের কাছে রোল এক হলেই সে মেধাবী।আপনি যতই ভাল আর্ট করেন গান করেন অথবা কোন খেলায় পারদর্শী হন,আপনি হবেন অপদার্থ। সবাই আপনাকে হেয় করবে।বলবে জীবনে কিছুই সম্ভব না আপনার দ্বারা।শুধুমাত্র আপনি যদি গাদা গাদা বই মুখস্ত রাখতে পারেন তবেই আপনি মেধাবী।সবাইকেই মাপা হয় একপাল্লায়।আপনাকে দেখানো হবে আপনি কতটা অপদার্থ অন্যদের তুলনায়।যেখানে শিক্ষা টা হওয়ার কথা ছিল আনন্দের সাথে, সেখানে শিক্ষা টাই হয়ে ওঠে চরম বেদনাদায়ক।
এর প্রভাব পড়তেও কিন্তু বেশি দেরি হয়না।ছেলেমেয়েরা একটু বড় হতে না হতেই পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।মানুষের কাছে নিজের অপদার্থতার কথা শুনে শুনে সেও নিজেকে অপদার্থ- ই ভাবতে শুরু করে।এভাবে একসময় হতাশ হয়ে পরে।সেই হতাশা কাটানোর জন্য হারিয়ে যায় নেশার জগতে।এভাবেই অনেক মেধাবী হারিয়ে যায় নেশার জগতে শুধু মাত্র আমাদের মানসিকতার জন্য।
আবার অনেকেই হতাশার এমন পর্যায়ে পৌছে যায় যে আত্মহত্যা কেই নিজের পথ হিসেবে বেছে নেয়।
সোর্স
তাই আপনার সন্তানের পরীক্ষার ফলাফল একটু খারাপ হলে তাকে বকা দেওয়া,মানসিক নির্যাতন করা বন্ধ করুন।মেধাবী সবাই।কিন্তু সবার মেধা এক ভাবে প্রকাশ পায়না।কেউ যদি খেলাধুলায় ভাল হয় তবে তাকে খেলতে উৎসাহ দিন।কেউ ভাল গান করলে তাকে গান গাইতে উৎসাহ দিন।কে বলতে পারে আপনি হয়ত ভবিষ্যতের শচীন টেন্ডুলকার বা কিশোর কুমার কে উৎসাহ দিচ্ছেন।সন্তান কে জিজ্ঞাস করুন সে কি হতে চায়।তার কি পছন্দ।জোর করে বিদ্যা গেলাবেন না।তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে।
সন্তান কে নৈতিক শিক্ষা দিন।তাকে ভাল মানুষ হতে বলুন।ভাল মানুষ হওয়ার শিক্ষা দিন।দেখবেন একদিন সে অবদশ্যই আপনার নাম দেশের নাম উজ্জ্বল করবে।
You've got a free upvote from witness fuli.
Peace & Love!
ভাই প্রথমে আপনাকে স্যালুট জানাই এরকম একটি বিষয় এত সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন, সত্যিই একেবারে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। আসলে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাটা এতটাই নাজুক আপনি যেভাবে এই শিক্ষা ব্যবস্থাটাকে উপস্থাপন করেছেন একেবারে বাস্তবতার সাথে মিলিয়ে উপস্থাপন করেছেন। আসলে বর্তমান মা-বাবাদের দোষ দিয়েও লাভ কি কারণ তারাও তো এই একই শিক্ষাব্যবস্থা থেকে উঠে এসেছে তারা যেটা শিখেছে সেটাই প্রয়োগ করছে। তবে এক্ষেত্রে আমাদের সকলেরই এই চিন্তা ভাবনা থেকে বের হয়ে আসা উচিত। অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই এত চমৎকারভাবে জাপানের শিক্ষাব্যবস্থা সাথে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার পার্থক্যটা আমাদেরকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন।
এত সুন্দর একটি গঠণমূলক পোস্ট করার জন্য ধন্যবাদ।
আরে বাপরে এত সুন্দর কনসেপ্ট কই পেলেন আপনি আজ।
এটা আমাদের দেশের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য এখন। ছোট ছোট বাচ্চা তাদের ওজন হয়তো ১৫-২০ কেজি হবে তবে তাদের ঘাড়ে পাঁচ থেকে ছয় কেজি ওজনের ব্যাগ। তবে জাপানের শিক্ষা ব্যবস্থার ওই ব্যাপারটা আমার একদমই জানা ছিল না যেখানে রোল নাম্বার হয় নামের প্রথম অক্ষর দিয়ে। এটা খুব সুন্দর উদ্যোগ।
ইউটিউবে ওদের শিক্ষাব্যবস্থার অনেক ভিডিও আছে।দেখলে অবাক হয়ে যাবেন।আমরা কত পিছিয়ে আছি