এডমিশন জার্নি||জার্নি টু খুলনা
অনেক দিন পর আসলাম কমিউনিটিতে। আসলে ভীষণ ব্যস্ততায় দিন কাটছে। আপনি জানেন আমার ছোট বোনের নাম বিন্দু। সে এবারের এডমিশন ক্যান্ডিডেট। প্রথম পরীক্ষা ছিল খুলনা। এখন বড় ভাই হিসেবে দায়িত্ব এসে পড়ে আমার উপর।কারন ব্যবসার কারনে বাবার যাওয়া পসিবল না,আবার বাড়ি থেকে মায়ের ও যাওয়া সম্ভব না।
যদিও আমার একটু চাপ হয়ে যাচ্ছিল,কারন নতুন টিউশন শুরু করেছি মিস দিলেই সমস্যা। কিন্তু এটা প্রায়োরিটি আলফা,তাই যেতেই হবে। তবে বর্তমানে টাকা থাকলে সব সম্ভব৷ আমি প্রথমে যাওয়া,থাকা নিয়ে চিন্তায় ছিলাম।পরে সেটার একটি চমৎকার সমাধান বের করে বিন্দু।
বগুড়া থেকে একটি সার্ভিস চালু করা হয়েছে। এরা আপনাকে যে কোন ইউনিভার্সিটির পরীক্ষায় তাদের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থায় নিয়ে যাবে। অবস্থা বুঝে থাকার ব্যবস্থা করে দেবে আবার পরীক্ষা শেষে আপনাকে আবার নিয়ে আসবে। এখন এখন হিসেব করে দেখলাম অচেনা জায়গায় টেনশন নেওয়ার থেকে এদের সাথে যাওয়াই ভাল।
টিকেট কেটে ফেললাম দুজনের। সেখানে থেকে কিছু ইন্সট্রাকশন দেওয়া হল,যেমন :পরীক্ষার আগের দিন বেলা চারটায় গাড়ি ছাড়বে,রাতের খাবার সাথে নিতে হবে,নিজের খাবারের দায়িত্ব নিজের।যাই হোক আমাদের সিট নাম্বার আর টিকেট নিয়ে চলে আসলাম। এরপর সময়মত আমি আর বিন্দু তাদের ঠিক করে দেওয়া জায়গায় হাজির হলাম।
দেখলাম গাড়ি হাজির,কিন্তু লোকজন নেই। মনে মনে ভাবলাম বাংলাদেশ এর মত দেশে আসলে সময়ানুবর্তী হওয়াই বড় পাপ। বাস ছাড়ার কথা চারটায়,কিন্তু দেখা গেল ৬টা তেও ছাড়ার নাম নেই।তারপর সময় পেছাতে পেছাতে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় বাস ছাড়ল।
তবে আমি মনে মনে ভাবলাম এটাই ভাল হল,কারন যত তারাতারি বাস ছাড়ত তত গভীর রাতে পৌছাইতাম।তাতে ঝামেলা বাড়ত। এই ভেবে আরাম করে বসতে গেলাম,কিন্তু একি!সামনের সিট নামাতে নামাতে আমার কোলের উপর নিয়ে এসেছে,এদিকে আমি আমার সিট নামাতে গেলেই পেছনের আন্টি ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইক শুরু করতেছে।
এখন কি আর করা যাবে,অগত্যা আমিই হার মেনে কষ্ট করে বসলাম।এরপর রাতের খাবারের যাত্রা বিরতি দেওয়া হল,কিন্ত মজার বিষয় হল যে হোটেলে বিরতি দেওয়া হল সেখানের খাবার শেষ।অগত্যা আমাদের আবার নতুন জায়গা খুজতে হল খাবার জন্য।তবে আমরা বাড়ি থেকেই খাবার নিয়ে গেছিলাম তাই আমাদের চিন্তা ছিল না।
খাওয়াদাওয়া শেষ গাড়িতে এসে ভেবেছিলাম ঘুম দেব।কিন্তু সামনে আর পেছনের আন্টির অত্যাচারে তা আর হল না। এর মাঝেই আমরা গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলাম। ভোর ৪টা নাগাদ আমরা খুলনা পৌছে যাই।তবে সকাল হওয়া পর্যন্ত গাড়িতেই অপেক্ষা করছিলাম।
বিন্দুর সিট যে কেন্দ্রে পড়েছিল সেটি শহরের একটু ভেতরের দিকে,গুগল ম্যাপের সাহায্য নিয়ে কেন্দ্রে পৌছে যাই। এর মাঝে অবশ্য একটি পেট্রোল পাম্পে ফ্রেশ হয়ে নিয়েছিলাম।কেন্দ্রে পৌছে দীর্ঘ অপেক্ষা শুরু।কারন পরীক্ষা ১০টায় আমরা পৌছেছি ৭টায়। আমার তো আরো বেশি অপেক্ষা কারন ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত পরীক্ষা। এই সময়টাও বেকার বসে থাকতে হবে।যদিও বুদ্ধি করে একটা ওয়েবসিরিজ ডাউনলোড করে রেখেছিলাম।
এরপর একসময় পরীক্ষা শেষ হল(যদিও আমার মনে হচ্ছিল কয়েকবছর সময় পার হল)। তখন আবার বাইরে খাওয়াদাওয়া করে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলাম সবাই মিলে। রাত দুপুরে আমাদের বগুড়া নামিয়ে দিল। আমি বিন্দুকে মেসে দিয়ে বাসায় ফিরে আসলাম।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Twitter link
পরীক্ষার হলে যারা থাকে তাদের সময় কুলায় না ,আর যারা তাদের জন্য অপেক্ষা করে বাইরে তাদের মনে হয় বছর কেটে যাচ্ছে এরকম টাই আর কি হা হা হা। সঠিক বলেছেন আপনি বাংলাদেশে সময় অনুযায়ী জায়গায় পৌঁছানোটাই বড় পাপ। তারউপর আবার বাসে সামনের সিট আর পিছনের আন্টির গল্প শুনে তো হাসি পেয়ে গেলো। সাখের করাতের মতো অবস্থা। যাইহোক আপনার বোন অবশেষে ভালোভাবে এক্সাম দিতে পেরেছে এটাই অনেক।শুভ কামনা রইলো বিন্দুর জন্যে।আশা করি ভালো কিছু হবে।
আপনার প্রার্থনা ঈশ্বর মঞ্জুর করুক।আসলেই পরীক্ষায় বসলে সময় কোন দিক দিয়ে যায় বোঝাই যায়না। ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।
এডমিশনের সময় টা তে বেশ কয়েক জায়গায় জার্নি করতে হয়। আমার এডমিশনের সময় ও ঢাকা থেকে অনেক জায়গায় যেতে হয়েছে। অচেনা জায়গা গুলোতে এই ধরনের বাসের টিকিটগুলোই ভালো। আমরাও এগুলো ব্যবহার করেছিলাম। যাইহোক, আপনার বোনের জন্য অনেক শুভকামনা রইল।
ধন্যবাদ আপু সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।