প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সিলেট ভ্রমণ (অষ্টম পর্ব)। ১০% সাইফক্স।
পূর্ববর্তী পর্বের লিংক
ফুলের বাগান থেকে বের হওয়ার পর আমরা আর রাস্তায় কোথাও থামিনি। কারণ সামনে আমাদের অনেক রাস্তা পড়ে আছে। সেখান থেকে বের হওয়ার ৪০ মিনিট পর আমরা লাউড়ের গড় নামে একটি বাজারে উপস্থিত হলাম। আমাদের প্রথম গন্তব্য হচ্ছে শিমুল বাগান। জাদুকাটা নদী পার হয়ে সেখানে যেতে হবে।
সমস্যা হচ্ছে সেখানে যাওয়ার একমাত্র মাধ্যম মোটরসাইকেল। অন্য কোনভাবে সেখানে যাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু আমাদের সাথে আমার আম্মা রয়েছে। তিনি বয়স্ক মানুষ হওয়ায় তাকে মোটরসাইকেলে উঠতে দিতে আমার মন সায় দিচ্ছিলো না। আমার ভেতর একটি ভয় কাজ করছিল। যদি কোনো অ্যাক্সিডেন্ট হয়ে যায়। কারন আম্মার মোটর সাইকেলে চলার অভিজ্ঞতা খুব একটা নেই। তারপর এখানে মোটরসাইকেল যে রাস্তা দিয়ে চলবে সেখানে মূলত কোনো রাস্তা নেই। কখনো বালির ভেতর দিয়ে চলবে। আবার কখনও পাহাড়ি পথ বেয়ে। যার ফলে আম্মাকে নিয়ে একটু টেনশনে পড়লাম।
শেষ পর্যন্ত সমস্ত দ্বিধা দ্বন্দ্ব কাটিয়ে আম্মা ও আমাদের সাথে রওনা দিলো। এই সমস্যার সমাধানে জামিল ভাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। জামিল ভাই একটি মোটরসাইকেলে আম্মাকে উঠিয়ে আমাদের বলেছিলো আন্টিকে নিয়ে চিন্তা করবেন না। আমি তাকে নিয়ে ধীরেসুস্থে চালাবো। আমাদের সেই বাজারে কিছুক্ষণ সময় নষ্ট হলো মোটরসাইকেল ভাড়া করতে গিয়ে। শেষ পর্যন্ত চারটি মোটর সাইকেলে আমরা রওনা দিলাম শিমুল বাগানের উদ্দেশ্যে।
এই বাগানটি সম্বন্ধে জানতে পারলাম জয়নাল আবেদীন নামে এক লোক ১৮ বছর আগে এই বাগান শুরু করেছিলেন। কিন্তু এতদিন দেশের লোকজন এই বাগান সম্বন্ধে তেমন কিছু জানতো না। এবার কয়েকটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে এই বাগান নিয়ে প্রতিবেদন প্রচার হওয়ায়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ আসছে বাগানটি দেখার জন্য। যদিও সেই জয়নাল আবেদীন এখন আর জীবিত নাই। বাগানটি তার ছেলে দেখাশোনা করছে। শুনেছি এই বাগানে ৩০০০ শিমুল গাছ আছে।
আসলে এটি দেখার মতো একটি জায়গা। তবে এই শিমুলবাগান এ আসতে হলে আপনাকে অবশ্যই যে সময়টাতে শিমুল ফুল ফোটে তখন আসতে হবে। কারণ বাগানে এসে যদি গাছে ফুল না পান তাহলে এখানে আসার কষ্ট টাই সাড় হবে। যাহোক আমরা মোটর সাইকেলে রওনা দেয়ার কিছুক্ষণের ভেতরে যাদুকাটা নদীর একটি ঘাটে এসে পৌঁছলাম। সেখান থেকে আমাদেরকে বড় আকারের নৌকায় করে নদী পার হতে হবে। সেই নৌকাগুলোতে মোটরসাইকেল মানুষ সবই ওঠে। যার ফলে আমরা মোটরসাইকেল থেকে নেমে সেই নৌকায় উঠলাম। সাথে আমাদের মোটরসাইকেলগুলো নৌকায় উঠানো হলো। কারণ নদী পার হওয়ার পর কিছুটা পথ এই মোটরসাইকেলে করে যেতে হবে।
আর এই মোটরসাইকেল আমরা দিন চুক্তি ভাড়া করেছি। মোটরসাইকেল চালক আমাদের তিনটি স্পট ঘুরিয়ে দেখাবে সেই হিসেবে তাদের সাথে চুক্তি হয়েছে। যাহোক কিছুক্ষণের ভেতরে আমরা নদী পার হয়ে গেলাম। তবে যে নদীটি আমরা অতিক্রম করলাম। এই জাদুকাটা নদী নিজেই একটি দর্শনীয় স্থান। চমৎকার স্বচ্ছ পানিতে লোকজন কয়লা উত্তোলন করছে। ছবির মতো সুন্দর একটি নদী। এত সুন্দর পানি দেখে আমার মনে হল এখানে গোসল করতে পারলে মন্দ হতোনা। তবে শীতের দিন হওয়ায় সেই ঝামেলায় আর গেলাম না। তবে যদি শীতকাল না হতো তাহলে আমি অবশ্যই এখান থেকে গোসল করতাম।
নদী পার হওয়ার পর আমরা ১০ মিনিটের ভিতরে শিমুল বাগানের পৌঁছে গেলাম। সেখানে পৌঁছে টিকিট কেটে আমরা বাগানে প্রবেশ করলাম। দেখলাম সেই বাগানটিকে একটি পার্কে রূপ দেয়া হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ এই বাগানটি দেখতে আসছে। সেখান থেকে পার্ক কর্তৃপক্ষের অনেক ভালো একটা ইনকাম হচ্ছে। বাগানে ঢোকার পর আমাদের মনে হল আর কয়েকটা দিন পরে আসলে আমরা আরো সুন্দর দৃশ্য দেখতে পারতাম। কারণ এখনও শিমুল ফুলগুলি পুরোপুরি প্রস্ফুটিত হয়নি। যখন সবগুলো গাছ আগুনরঙা শিমুল ফুলে ছেয়ে যাবে তখন বাগানটি দেখতে আরো অনেক ভালো লাগবে।
বাগানের ভেতরে দেখলাম কয়েকটি জায়গায় বিভিন্ন আকার দিয়ে ফুল সাজিয়ে রাখা হয়েছে। তার ভেতরে বসে মানুষ ছবি তুলছে। আবার কিছু লোককে দেখলাম যারা ঘোড়া নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আপনি চাইলে ৫০ টাকার বিনিময় ঘোড়ায় চড়ে বাগানে ঘুরতে পারবেন। তবে সেটা খুবই অল্প সময়ের জন্য। আবার কিছু ছোট ছোট বাচ্চাদের দেখলাম যারা বরই বিক্রি করছে সাথে লবন মরিচ গুঁড়া মিশ্রিত আছে। দেখেই আমার লোভ লাগলো। আমি একটি বাচ্চার কাছ থেকে কিছু বরই এবংঝাল কিনে নিলাম। তারপর ঝাল দিয়ে বরই খেতে লাগলাম।
এভাবে আমরা বেশ কিছুক্ষণ বাগানের ভেতর ঘোরাফেরা করে বাগান থেকে বেরিয়ে আসলাম। বাগান থেকে বের হওয়ার পর দেখি গেটের সামনে কয়েকটি দোকানে বিভিন্ন রকম ফল বিক্রি করছে। সাথে আছে মুড়ি মাখা। যেহেতু সকালে নাস্তা করে আমরা বের হয়েছি এরপর আর তেমন কিছু খাওয়া হয়নি। তাই আমরা সেখান থেকে তরমুজ এবং মুড়ি মাখা খেলাম। আকারে ছোট হলেও তরমুজ খেতে যথেষ্ট মিষ্টি ছিল। আর মুড়ি মাখা ছিল অসাধারণ। আমি প্রথমে এক প্লেট খেয়ে পরে আরো দুই প্লেটের অর্ডার করলাম সবাই মিলে খাওয়ার জন্য। এখানে হালকা খাওয়া-দাওয়া শেষ হলে আমরা পরবর্তী গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। পরবর্তী গন্তব্য অনিন্দ্য সুন্দর নীলাদ্রি লেক।
আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে এই ভ্রমণের পরবর্তী পর্ব নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন।
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | হুয়াই নোভা 2i |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @rupok |
স্থান | লিংক, লিংক, লিংক |
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
এই শিমুল বাগানের কথা অনেক শুনেছি এটা অনেক সুন্দর জায়গা। তবে কখনো যাওয়া হয় নাই। আপনার ফটোগ্রাফির মাধ্যমে কিছু দৃশ্য দেখার সৌভাগ্য হলো, বেশি ভালো লাগলো বাগানে ৩০০০ শিমুল গাছ আছে এই কথা শুনে।তবে আপনি সত্যি বলছেন, কিছু দিন পর গেলে অনেক ভালো হতো তখন বাগান আরো কালারফুল থাকতো।
বাগানে বেঁধে রাখা ঘোড়াটি অনেক সুন্দর। আমি কখনো ঘোড়ায় চড়ি নাই কিন্তু চড়ার ইচ্চে আছে। কি অবস্থা আমার তো মনে হয় না জয়নুল আবেদিন ভাই এই বাগান পার্কের জন্য তৈরি করছে। আসলে লোকজনের আগ্রহ থেকেই এটা পার্কে পরিণত হইছে আর কর্তপক্ষ এখন সুযোগটা নিচ্ছে।
অষ্টম পার্ট পড়া হলো বাকিগুলো এখনো পড়া হয় নাই তবে পড়ে ফেলবো। ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর একটি ভ্রমণ কাহিনী পার্ট বাই পার্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য। ভালোবাসা অবিরাম ❣️❣️
আপনার ফটোগ্রাফি গুলো খুবই ভালো লেগেছে। বাগানের ভেতরে বিভিন্ন ফুল দিয়ে সাজিয়ে রাখা আমার বেশ ভালো লেগেছে। বুঝা যাচ্ছে আপনি অনেক ঘুরাফেরা করেছেন।তরমুজ আর মুড়ি মাখা বেশ মজা করে খেয়েছেন। ঘুরাফেরা আমার খুবই পছন্দ। কোথাও গেলে ঝাল মুড়ি খেতে দারুণ মজা লাগে।অনেক ধন্যবাদ আপনার সিলেট ভ্রমণ অনুভূতি শেয়ার করার জন্য।
মুড়ি মাখা আমারও খুব প্রিয়। তবে এখানকার মুড়ি মাখাটা খুবই মজার ছিল। ধন্যবাদ আপনাকে।
প্রতিটা ছবি ছিল অসাধারণ।অনেক সুন্দর ভাবে সিলেট ভ্রমণ উপস্থাপনা করেছেন আমাদের মাঝে। যা ছিল সত্যিই চমৎকার। প্রতিটা ছবি খুব সুন্দর হয়েছে।সিলেট একটি চমৎকার জায়গা আমরা সবাই জানি আপনার ছবিগুলোর মাধ্যমে সিলেটের কিছু চমৎকার জায়গা দেখতে পেলাম।
সামনে আরো কিছু দেখতে পাবেন আশা করি। তবে সময় করতে পারলে একবার অবশ্যই সিলেট থেকে ঘুরে আসবেন। মন ভালো হয়ে যাবে।
অবশ্যই ভাই অপেক্ষায় থাকবো
এই শিমুল বাগানের গল্প অনেক শুনেছি। সম্পূর্ণ সিলেট বিভাগের মধ্যে এটি অন্যতম একটি আকর্ষণীয় টুরিস্ট স্পট। আমার অনেক দিনের ইচ্ছা বাগানটি দেখতে যাব।যাই হোক তোমার পোষ্টের মাধ্যমে টুকটাক অনেক তথ্যই জেনে ফেললাম।
ইনশাল্লাহ সবকিছু যদি ঠিকঠাক থাকে তাহলে আমি, তুমি আর রাসেল একবার সিলেট থেকে ঘুরে আসবো।
👍
ফুলের বাগান তাও আবার শিমুল ফুল গাছ ।এই শিমুল ফুল গাছ ছিল আমাদের বাড়ীর সামনে । ছোট বেলায় এই ফুল কে ফেদার বলতাম।কিন্তু এখন আর সেই গাছটি নেই। সুন্দর একটি সময় পার করে এসেছেন। এত সুন্দর জায়গা কোনদিন যেতে পারবো কিনা জানি না। আপনার এই ছবি গুলো দেখে তবু সিলেটের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে পারলাম। ধন্যবাদ ভাই আপনাকে ।ভাল থাকবেন।
বৌদিকে নিয়ে ঘুরে আসুন। আমি নিশ্চিত আপনাদের ভালো লাগবে।
ভাইয়া,এই জায়গাটি দেখে মনে হচ্ছে যেন আমিও সেখানে ঘুরতে গেলাম।যদিও সশরীরে উপস্থিত হতে পারিনি তবে আপনার এই ছবিগুলো আর কথার মাধ্যমে অনুভব করতে পারছি।শিমুল ফুলগুলো বেশ দারুণ,আর যেভাবে সাজিয়ে রাখা হয়েছে তা তো আরও বেশি সুন্দর দেখাচ্ছে।আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া আমাদের মাঝে এই সুন্দর মূহুর্তটি শেয়ার করার জন্য।
আপু শিমুল বাগানটি আসলেই অনেক সুন্দর ছিল। সময় পেলে একবার এই বাগান থেকে ঘুরে আসবেন।
সিলেট ভ্রমনের বেশ কিছু সুন্দর মুহূর্ত গুলো আর সুন্দর মনোরম পরিবেশের ফটোগ্রাফি শেয়ার করেছেন ভাই। ফুল দিয়ে সাজানো ছবি টি অনেক সুন্দর লাগছে আর জম্পেশ আড্ডা এবং খাওয়া দাওয়া দেখে আমার মনটা আনচান করছে। আপনার সিলেট ভ্রমণ সফল এবং শুভ হোক ভাই।
ধন্যবাদ ভাই আমার।
আপনার সিলেট ভ্রমনের পর্বগুলোর অপেক্ষায় থাকি, আজ দেখতে দেখতে অষ্টম পর্বে এসে পৌঁছে গিয়েছি। আর সত্যি বলতে একটা নিউজ আপনার এখানে পোষ্টের মাধ্যমে জানতে পারলাম, যে সিলেটে মোটরসাইকেল ভাড়া করে নিয়ে ঘুরা যায়। এ বিষয়টি আমার অনেক ভালো লেগেছে। কেননা 2009 সালে যখন গিয়েছি তখন এরকম চিন্তা-চেতনায়ই ছিল না। তারমানে পরবর্তী সময়ে যখন যাব অবশ্যই বাইক ভাড়া নিয়ে কিন্তু ঘুরাঘুরি করবো। তাহলে সময়ও কম নষ্ট হবে ।যাইহোক বিশেষ করে আপনার ফটোগ্রাফির মধ্যে আলপনার যে ফটোগ্রাফি গুলো সেগুলো খুব চমৎকার এবং ইউনিক মনে হচ্ছে আমার। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ,এবং ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন সবসময় এই কামনা করব।
মোটরসাইকেল ভাড়া করে একবারে তিনটি জায়গা ঘুরে আসতে পারবেন। শিমুল বাগান, নীলাদ্রি লেক এবং বারিক্কা টিলা।
অনেক উপকার হলো ভাই এটা জানতে পেরে। অনেক ধন্যবাদ।
প্রাকৃতিক ফটোগ্রাফি গুলো দেখতে খুবই ভালো লাগে আমার কাছে। আপনার তোলা ফটোগ্রাফি গুলো দেখতে অসাধারণ লাগছে। আচ্ছা ভাইয়া এখন তরমুচ পেলেন কোথায় এখন সিজন না। তরমুজ দেখে ভাই লোভ লেগে গেলোপ্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রতিটি ফটোগ্রাফি আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই আমাদের মাঝে কিছু সুন্দর সুন্দর মুহূর্ত গুলো শেয়ার করার জন্য। অনেক অনেক শুভকামনা রইল আপনার জন্য ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।
আমিও সেটাই চিন্তা করছিলাম যে এখন তো তরমুজের সিজন না। পরে জানতে পারলাম এটা এক ধরনের অসময়ের তরমুজ। তবে খেতে কিন্তু ভালো ছিল।
অও, অসাধারণ সৌন্দর্য্যের জায়গা ও সুন্দর পরিবেশ।গাছে গাছে শিমুল ফুল ভরে আছে।নদী ও বাগানের নামটি খুবই সুন্দর।তবে নদী দেখে মনে হচ্ছে খুব বেশি গভীর নেই ও জল কম।নৌকাগুলি সারি সারি সাজানো।খুবই সুন্দর ভ্রমণ করেছেন পরিবারের সঙ্গে, তাছাড়া ঘোড়াটি দেখতে ভারী সুন্দর ও আকর্ষণীয়।ধন্যবাদ ভাইয়া।
এই অঞ্চলটা কিন্তু একদম সীমান্তঘেঁষা। শিমুল বাগানটার কিছুটা দূরেই ইন্ডিয়ান বর্ডার। যদিও কলকাতা থেকে সম্ভবত এই এলাকাটা দূরে হবে।