বাংলা সাহিত্যের গোয়েন্দারা
বাংলা সাহিত্যে গোয়েন্দা কাহিনীর প্রবেশ বহু পুরোনো । তবে সেগুলির অধিকাংশই ছিল বটতলা টাইপের উপন্যাস । বাংলা সাহিত্যে গোয়েন্দা কাহিনীকে ব্রাত্য রাখা হয়েছিল বহু যুগ ধরে । গোয়েন্দা কাহিনী তখন অতি নিম্নস্তরের সাহিত্য হিসেবে পরিগণিত হতো । এই ধারার পরিবর্তন সর্বপ্রথম সম্ভবপর হয় শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের কলম ধরে । তিনিই সর্বপ্রথম গোয়েন্দা ও রহস্য কাহিনীকে বাংলা ভাষার সাহিত্যে অপাংয়েক্তেয় হয়ে থাকার হাত থেকে রক্ষা করেন ।
"ব্যোমকেশ কাহিনী সমূহ" হলো সর্বপ্রথম লিখিত কোনো সাহিত্যমন্ডিত গোয়েন্দা কাহিনী । যদিও শরদিন্দু কোথাও তাঁর রচনায় "গোয়েন্দা" শব্দটি ব্যবহার করেননি, বরঞ্চ ব্যোমকেশ কাহিনীর সর্বত্র তিনি ব্যোমকেশকে একজন "সত্যান্বেষী" হিসেবে উল্লেখ করে গিয়েছেন । "সত্যান্বেষী", অর্থাৎ যিনি রহস্যের জাল ছিন্ন করে সত্যকে অন্বেষণ করে অবশেষে সেটিকে উন্মুক্ত করেন ।
শরদিন্দু লিখিত ব্যোমকেশ কাহিনী বাংলা সাহিত্যে গোয়েন্দা কাহিনীর স্বর্ণযুগের সূত্রপাত করে । তাঁর সাহসী পদক্ষেপে আর শক্তিশালী কলমে অচিরেই বাংলা সাহিত্যে "গোয়েন্দা কাহিনী" একটি সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র ধারা হিসেবে পরিচিতি পায় । ব্যাস, এর পর থেকে অনেক সাহিত্যিকই "গোয়েন্দা ও রহস্য কাহিনী" লিখতে কলম ধরতে সাহস পেয়েছেন ।
এবার আসি "বাংলা সাহিত্যে গোয়েন্দাদের বিষয়ে" কিছু আলোকপাত করতে । বাংলা সাহিত্যে প্রচুর লেখকের কলমে ভুরি ভুরি গোয়েন্দা কাহিনী জন্মলাভ করেছে । তন্মধ্যে কিছু গোয়েন্দা চরিত্র ভীষণভাবে আমাদেরকে প্রভাবিত করেছে । বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
প্রথমেই আসি শরদিন্দু বন্দোপাধ্যায়ের "ব্যোমকেশ বক্সী" । অত্যন্ত সুখপাঠ্য, সাহিত্যমন্ডিত আর টানটান উত্তেজনায় ভরপুর ব্যোমকেশ ও তাঁর লেখক বন্ধু অজিত বন্দোপাধ্যায়ের অভিযানগুলি । এ যেনো বাংলার শার্লক হোমস । এরপরে আমার অত্যন্ত পছন্দের লেখক সত্যজিৎ রায়ের "ফেলুদা" গল্পগুলি, টানটান রহস্য-রোমাঞ্চে ভরপুর । ফেলুদা, তোপসে ও জটায়ু এই থ্রী মাস্কেটিয়ার্সের অভিযানগুলি অত্যন্ত প্রিয় আমার ।
"কিরীটি", এই গোয়েন্দা চরিত্রটির জন্ম নীহাররঞ্জন গুপ্তের হাতে । রহস্য আর রোমাঞ্চ সব চাইতে বেশি এই কিরীটি কাহিনী গুলোতে । কিশোর বয়সে নীহাররঞ্জন গুপ্তের "কালো ভ্রমর" পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম । এই উপন্যাসেই সর্বপ্রথম আবির্ভাব ঘটে কিরীটি রায়ের ।
তারপরেই আসি সদ্য প্রয়াত সমরেশ মজুমদারের "অর্জুন কাহিনী সমূহে" । অর্জুন হলো সমরেশ মজুমদার সৃষ্ট একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় গোয়েন্দা চরিত্র । ছোটবেলায় আনন্দমেলা পূজা বার্ষিকীতে প্রত্যেক বছরই একটা করে অর্জুনের এডভেঞ্চার থাকতোই । আনন্দমেলার কথাতেই যখন এলাম তখন আরো মনে পড়লো প্রখ্যাত সাহিত্যিক সমরেশ বসু সৃষ্ট গোগোল চরিত্র । কিশোরদের জন্য লিখিত "গোগোলের এডভেঞ্চার" গুলো অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল । আর হ্যাঁ "গোগোল" ছিল ক্ষুদে গোয়েন্দা ।
এরপরে আসি "কিকিরা"-র কথায় । বিমল কর সৃষ্ট "কিকিরার" গোয়েন্দা কাহিনীগুলো তখন আনন্দমেলা পূজাবার্ষিকীতে প্রত্যেক বছর বেরোতো । মোটামুটি লাগতো কাহিনীগুলো । তবে আনন্দমেলায় বেরোনো সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের "কর্নেল" কাহিনীগুলি গোগ্রাসে গিলতাম । কর্নেল আমার অত্যন্ত প্রিয় একটি গোয়েন্দা চরিত্র । "কর্নেল ও জয়ন্ত", দু'জন অসমবয়সী মানিকজোড়ের গল্প গুলি ছিল টানটান উত্তেজনায় ভরপুর ।
এবার আসি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের "কাকাবাবু" কাহিনীসমূহে । আমার প্রথম কাকাবাবু পড়া "আনন্দমেলা" পূজাবার্ষিকীতে - "কাকাবাবুর প্রথম অভিযান" । "কাকাবাবু ও সন্তু" কাহিনী আমার অত্যন্ত প্রিয় । কাকাবাবুকে যদিও ঠিক গোয়েন্দা বলা চলে না, তবে রহস্যভেদী বলা চলে অনায়াসেই ।
আমার মনে আছে তখন আনন্দমেলা পূজাবার্ষিকীতে ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়ের "পান্ডব গোয়েন্দা" বেরোতো প্রত্যেক বছর । এই কাহিনীগুলি গোয়েন্দা কাহিনী না বলে এডভেঞ্চার কাহিনী বলাই শ্রেয় । যদিও তাতে ভালো লাগার কমতি ছিল না পড়তে । শেষের দিকে আনন্দমেলাতে নিয়ম করে বেরোতো প্রখ্যাত লেখিকা সুচিত্রা ভট্টাচার্যের "মিতিন মাসি" । আমার পড়া একমাত্র নারী গোয়েন্দা চরিত্র ।
শারদীয়া শুকতারাতে নিয়ম করে তখন বেরোতো অদ্রীশ বর্ধনের "ইন্দ্রনাথ রুদ্রের" গোয়েন্দা কাহিনী । বেশ ভালোই লাগতো পড়তে আমার । একটু বড় হয়ে হাতে পেলাম প্রেমেন্দ্র মিত্রের বিখ্যাত গোয়েন্দা চরিত্র পরাশর বর্মার কীর্তিকলাপ । এর আগে ঘনাদার একটি কাহিনীতে পরাশর বর্মার নাম আমি জানতে পেরেছিলাম । পরাশর বর্মার কাহিনীগুলো মজায় ভরপুর, কিন্তু রসহ্য আর উত্তেজনার কমতি নেই কোথাও । পড়া শুরু করলে আর শেষ না করে ওঠা যায় না ।
এবার আসি আমার পড়া সর্বশেষ গোয়েন্দা চরিত্রের কথায় । বিখ্যাত লেখক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের দুটি গোয়েন্দা চরিত্র আছে । একটি বড়োদের জন্য - শবর, আরেকটা ছোটদের জন্য - গোয়েন্দা বরদাচরণ । এই শেষোক্ত গোয়েন্দা বরদাচরণের সব কয়টি গল্পই আমি পড়েছি । অত্যন্ত মজাদার । বিশেষ করে একটি গল্প পড়তে পড়তে হাসতে হাসতে আমি শেষ । লাউ চুরির কেস । সেই কেসটি কিন্তু বরদাচরণ সল্ভ করতে পেরেছিলেন । নিজের ভাগ্নে ও সহকারী চাক্কুই ছিল লাউ চোর । হা হা :)
------- ধন্যবাদ -------
পরিশিষ্ট
আজকের টার্গেট : ৫১০ ট্রন জমানো (Today's target : To collect 510 trx)
তারিখ : ১২ মে ২০২৩
টাস্ক ২৬৩ : ৫১০ ট্রন ডিপোজিট করা আমার একটি পার্সোনাল TRON HD WALLET এ যার নাম Tintin_tron
আমার ট্রন ওয়ালেট : TTXKunVJb12nkBRwPBq2PZ9787ikEQDQTx
৫১০ TRX ডিপোজিট হওয়ার ট্রানসাকশান আইডি :
TX ID : fbfc3952c2605cabd494cc141c4f604c72bb70aeb329d21fa9138ee4b5ac3eba
টাস্ক ২৬৩ কমপ্লিটেড সাকসেসফুলি
Account QR Code
VOTE @bangla.witness as witness
OR
দাদা দারুন একটি বিষয় নিয়েই আজকের ব্লগটি সাজিয়েছেন। আমি কখনো বাংলা সাহিত্যের গোয়েন্দা বিষয় নিয়ে চিন্তা করি নাই। যে-বয়সে আমাদের এসব বই পড়ার কথা ছিল সে বয়সে আমরা ফেসবুক পড়েছি। যার কারণে আমাদের মাথার মধ্যে গোবর ছাড়া আর কিছু নেই। যাই হোক আজকে আপনার ব্লগটি পড়ে বাংলা সাহিত্যের গোয়েন্দা চরিত্র নিয়ে লেখা কিছু সমগ্র পড়ার ইচ্ছা জেগেছে। আশা করি গোয়েন্দা চরিত্রের কিছু বই কালেক্ট করে পড়বো। ধন্যবাদ দাদা।
প্রথমেই ধন্যবাদ জানাচ্ছি শরদিন্দু বন্দোপাধ্যায়কে। কারণ তাঁর সাহসী পদক্ষেপ এবং কলমের শক্তিতে বাংলা সাহিত্যে গোয়েন্দা কাহিনী খুব ভালো ভাবে পরিচিতি লাভ করে। পরবর্তীতে অনেক সাহিত্যিক গোয়েন্দা কাহিনী লিখার সাহস পেয়েছে। যাইহোক গোয়েন্দা কাহিনীর উত্থান সম্বন্ধে আমাদেরকে স্পষ্ট ধারণা দেওয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
This post has been upvoted by @italygame witness curation trail
If you like our work and want to support us, please consider to approve our witness
Come and visit Italy Community
This post has been upvoted by @nawed145 witness curation trail
If you like our work and want to support us, please consider to approve our witness
......................................
......................................
আপনাকে একটা বই দেখাই দাদা, হয়তো আপনার কাছে থাকলেও থাকতে পারে।তবে কৌতুহলবশত এই বইটা আমি কিনেছিলাম।বইটা পড়ে মনে হয়েছে কৌতুহলটা যথেষ্টই কাজে লেগেছে।বাংলা সাহিত্যে একচেটিয়া গোয়েন্দা বলতে আমরা বুঝি ফেলুদা অথবা ব্যোমকেশ। আর বাচ্চাদের জন্য বড়জোর পান্ডব গোয়েন্দা।কিন্তু একটু পেছনের দিকে গিয়ে চর্চা করলে দেখা যাবে, বাংলা সাহিত্যে এরকম অনেক গোয়েন্দার কাহিনী আছে যেগুলো সত্যিই এক কথায় এক একটা রত্নখনি।সুতরাং আপনার এই পোস্টটা দেখে বেশ ভালো লাগলো। যে চর্চাটা বর্তমানে খুব কম লোকে করে, সেটা নিয়ে কিছু অন্ততঃ লিখলেন।
গোয়েন্দা গল্পগুলো পড়তে আমার অনেক ভালো লাগে। যদিও আজকাল খুব একটা পড়া হয়না। তবে একটা সময় বইয়ের ফাঁকে লুকিয়ে রেখে গোয়েন্দা গল্পের বই পড়তাম। আসলে গোয়েন্দা গল্পের সেই চরিত্রগুলো এখনো মনে পড়ে। দাদা আজকে আপনার এই পোষ্টের মাধ্যমে অনেক কিছু জানতে পারলাম। অনেক অনেক ভালো লাগলো দাদা আপনার পোস্ট পড়ে।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Hi @rme,
my name is @ilnegro and I voted your post using steem-fanbase.com.
Come and visit Italy Community
গোয়েন্দা গল্পগুলো পড়তে ভীষণ ভালো লাগে আমার। যদিও আজকাল বই তেমন একটা পড়া হয়ে ওঠেনা।আগে পড়ার বইয়ের পাশাপাশি সব ধরনের বই পড়ার খুব অভ্যাস ছিল।আপনার আজকের পোস্ট পড়ে অনেক কিছু জানতে পেরেছি আর খুব ভালো ও লাগলো। ধন্যবাদ দাদা শেয়ার করার জন্য।
বাহ! বাদ যায়নি কোন কিছু দাদা। তবে না আমি কোন ধরনের গোয়েন্দ কাহিনী পড়ার সুযোগ পাই না, স্কুলের পড়ার বই ঠিক মতো পড়ি নাই আর গোয়েন্দা কাহিনী। তবে বইগুলোর নাম লিখে রাখলাম, সুযোগ পেলে পড়বো।
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.