ভৌতিক গল্প : "মৃত্যুর কাছাকাছি" - পর্ব ০১
copyright free image source pixabay
বর্ষার মাঝামাঝি ।
গ্রামের নাম বাঘমুন্ডি । পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার একটা অজ পাড়াগাঁ । পাকা সড়ক গ্রামে একটাও নেই । বর্ষার সময় রাস্তাগুলো হয়ে ওঠে দুর্গম, হাঁটু সমান কাদা, কোথাও আবার জলে ডোবা ।
দুলাল কাঞ্জিলাল গ্রামের শেষ সীমায় থাকে । গরীব বেচারা, খেত মজুরের কাজ করেই সংসার চলে তার । বর্ষার সময় তার কয়েকদিন মাত্র কাজ থাকে, খেতে ধান রোপনের কাজ । তারপর অখন্ড অবসর । আর এই সময়টাকেই বড় ভয় দুলালের । গরীবের অবসর সময় মানেই পেটের ভাতে টানাটানি । বাড়িতে আছে বৃদ্ধা মা, বউ আর তিন বছরের ছেলে । মাত্র ৪টে পেট । কিন্তু, এই চারটে পেটের ক্ষুধা নিবারণ করতে গিয়েই দুলালের অবস্থা খারাপ । দিন রাত এক করে খাটতে হয় তাকে । তবে নিরীহ গোবেচারা সে । কারো সাতে পাঁচে থাকে না । সংসারেও কোনো অশান্তি নেই । বউ মুখ করলেও চিরদিনের শান্ত দুলাল কোনো প্রতিবাদ করে না ।
বর্ষার মাঝামাঝি এই সময়টাতে দুলালের হাতে কোনো কাজ থাকে না । কিন্তু, পেট তো তা শুনবে না । প্রতিদিন চারটে প্রাণীর দু'বেলা দু'মুঠো ভাতের জোগাড় তার করতেই হয়, যেভাবে হোক ।
আর তাই দুলাল রাতে মাছ ধরে । বর্ষার নতুন জল পেয়ে খালের মাছেদের ভারী ফুর্তি হয় । দিন রাত ছোটাছুটি করে । বিশেষ করে মাঝ রাত থেকে ভোর পর্যন্ত মাছ ধরার সবচাইতে সেরা সময় । দুলাল গভীর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত মাছ ধরে সেগুলো নিয়ে আবার সকালে বিক্রি করে; তারপরে চাল, ডাল, তেল, নুন কিনে বাড়ি ফেরে । বাড়ি ফিরে দুপুরে খেয়ে লম্বা ঘুম । সেই ঘুম ভাঙে সাঁঝের বেলা ।
আজকেও রাতের বেলা খাওয়া দাওয়ার পরে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ে দুলাল । মাছ ধরতে যাওয়ার আগে রাতে ঘন্টা দুই ঘুমিয়ে নেয় সে । এটা তার রোজকার অভ্যাস । মাঝ রাতে বউ ঠেলা দিয়ে ঘুম ভাঙায় দুলালকে ।
-"ওগো, শুনছো ? যাবে না মাছ ধরতে ?"
তড়াক করে ঘুম থেকে উঠে পড়ে দুলাল । দ্রুত হাতে জাল, খালুই আর ঢাকা দেওয়া লণ্ঠন নিয়ে প্রস্তুত হয়ে নিলো । এমন সময় শোনা গেলো তার প্রাণের বন্ধু নিতাই এর গলা ।
-"দুউউউউ লেএএএএএএ আআআআআয় ......"
দুলালও পাল্টা হাঁক দিলো -
-"আআআআসছিইইইইই ......"
দু'মিনিটের মধ্যে দুলাল বাড়ির বাইরে বেরিয়ে পড়লো । গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছে, সঙ্গে এলোমেলো জোলো হাওয়া দিচ্ছে । দুলালের মাথায় টোকা, এক হাতে মাছ ধরার জাল, অন্য হাতে ঢাকা লণ্ঠন, কোমরে মাছের খালুই । মাছ ধরে খালুইয়ে রাখবে । ঢাকা লণ্ঠনে আলোর চাইতে ধোঁয়া হচ্ছে প্রচুর, কালি পড়ে পড়ে কাঁচ হয়ে গেছে ঘোলাটে ।
উঠোনের পুঁই মাচাটাকে বাঁয়ে রেখে পশ্চিম ধার দিয়ে ঘুরে পুকুরের অপর পাড়ে গিয়ে পৌঁছলো দুলাল । মাঝে মাঝে, যখনই একটু জোরালো হাওয়া দিচ্ছে গাছের ভিজে পাতা থেকে বৃষ্টির ধারার মতো জল ঝরছে । নিশুত রাত, চারিদিক নিস্তব্ধ, শুধু শোঁ শোঁ জোলো হাওয়ায় শব্দ, ঝিঁঝিঁ পোকার একঘেয়ে শব্দ আর ব্যাঙের একটানা ডাক শোনা যাচ্ছে ।
পুকুরের পশ্চিম পাড়ে নারকেল গাছটার নিচে একটা আবছা মূর্তি দাঁড়িয়ে আছে । নিতাই । দুলাল নিতাইয়ের কাছে এসে বললো -
-"কীরে নেতাই ? তোর জাল, লণ্ঠন, খালুই এ সব কোথায় ? কিছু না নিয়ে ভূতের মতো দাঁড়িয়ে আছিস যে বড় !"
উত্তরে নিতাইয়ের সব গুলো দাঁত বেরিয়ে পড়লো ।
-"আর বলিস কেনো, বউ আজ বেরোতে দেবে না , কিন্তু তুই একলা একলা যাবি, তাই আমি চলে এসেছি । আর আমি আজকে মাছ ধরবো না রে ভাই , তাই জাল টাল আর আনিনি । "
-"বুঝলাম, এখন চল তো । আজকে মনসাপোঁতার খালে যাবো । অনেক মাছ মাইরি ! ভালো দাঁও মারা যাবে আজকে । চল ... চল ..."
হাঁটু সমান কাদা ভেঙে দুই বন্ধু চললো মনসাপোঁতার খালে । নিতাই আজকে বড় চুপচাপ । অন্যদিন হলে বক বক করেই যেত সমানে । দুলাল চিরদিনই চুপচাপ স্বভাবের । তবুও আজকে বললো -
-"কিরে নেতাই ? আজকে যে বড় চুপ আছিস ?"
উত্তরে নিতাই ঘোঁৎ ঘোঁৎ করে কি যেন বললো ঠিক বোঝা গেলো না । চলতে চলতে তারা বাগদি পাড়ার কাছে চলে এসেছে ।বাগদি পাড়া ছাড়ালে পড়বে শালুক বিল, তারপরে হাটখোলা । হাটখোলা পার হলেই গাঁয়ের পশ্চিমদিকে পড়বে মনসাপোঁতা । মনসাপোঁতার খাল বেশ বড় । মাছও পাওয়া যায় এ সময় প্রচুর ।
বাগদি পাড়ার ঢোকার মুখে বেশ কয়েকটা কুকুর জটলা করে থাকে পাঁচী বুড়ির ঘরের দাওয়ায় । খেঁকি কুকুর । মানুষের সাড়া পেলেই ডাকতে ডাকতে সারা পাড়া মাথায় করে তোলে এরা । আজকে কিন্তু একটা অদ্ভুত ব্যাপার ঘটলো ।
শারীরিক শ্রম ব্যবহার করে অর্থ উপার্জন করা খুব ক্লান্তিকর হতে হবে দুলাল একজন ভাল মানুষ কিন্তু তাকে শিক্ষিত ব্যক্তি বলে মনে হয় না তাই তিনি অর্থ উপার্জনের জন্য শুধুমাত্র শক্তির উপর নির্ভর করতে পারেন। আমি মনে করি দুলাইয়ের স্ত্রী একজন মহান মহিলা যিনি ভালোবাসার জন্য কষ্ট সহ্য করতে পারেন
ভালই হবে গল্প টা মনে হচ্ছে। পরের অংশগুলোর অপেক্ষায় থাকলাম।👻💀
নাইস
গ্রামে রাত করে মাছ ধরার প্রচলন রয়েছে।রাতে ভালো মাছ পাওয়া যায়। এখনও ভূতের কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যায় নি আপনার লেখায়।আর শেষ লাইনের-"আজকে কিন্তু একটা অদ্ভুত ব্যাপার ঘটলো"।কি ঘটনা ঘটেছে তা মনে হয় ২য় অংশে দেখা যাবে।পরের অংশগুলোর জন্য অপেক্ষায় থাকলাম।
ভৌতিক গল্প পড়তে বা এই ধরনের গল্প শুনতে বেশ ভালো লাগে আমার। খুব মনোযোগ দিয়ে পড়লাম, আমি নিয়মিত বাংলাদেশের রেডিও প্রোগ্রাম হতো ভূত এফএম এর শ্রোতা ছিলাম তবে এখন সেই অনুষ্ঠান তেমন হয় না। যাইহোক, দাদা পরের অংশ পড়ার অপেক্ষায় রইলাম, মনে হচ্ছে রহস্যময় আরো কিছু হবে।
প্রিয় দাদা গল্পের বাকি অংশের জন্য অপেক্ষায় রইলাম। আর এই দুলালের সাথে কিন্তু আমার কছুটা মিল রয়েছে। কিন্তু গল্পের দুলাল পেটের দায়ে মাছ ধরতে যায় মাঝ রাতে আর আমি শখের জন্য মাছ ধরি। আমি মাছ ধরতে খুবই ভালোবাসি। 🥳
আকর্ষণীয় ভৌতিক কাহিনী দাদা।দুলাল মিয়া খুবই ভদ্র স্বভাবের লোক।সে সংসার চালানোর জন্য অনেক চিন্তা করে থাকে।মাঝ রাতে তার বউ তাকে ঠেলা মেরে উঠিয়ে দেয়।আর দুলাল মিয়া মাছ ধরার জন্য প্রতিদিন বাড়ির বাহিরে যায়।চারটি পেটের অন্য জোগাতে গিয়েই হয়তো দুলাল মিয়া মৃত্যুর কাছাকাছি চলে যাবে।
আমি কিন্তু ভূতে গন্ধ পেয়ে গেছি দাদা! আমার কাছে ৯৯.৯৯ % মনে হচ্ছে দুলারের বন্ধু রুপী মানুষটাই ভুত।তার চাল চলন আমার কাছে খুব একটা ভালো লাগছে না।নিতাই ই ভুত আমার ধারণা।
কাল্পনিক গল্পের মধ্যে ১০০% বাস্তব কথা এটা, আসলেও দাদা গরীবের একদিন অবসর মানে তাদের মুখে হাত না গিয়ে পেতে হাত যাওয়া।😢
ব্যাপারটা আমি একটু আন্দাজ করছি কি অদ্ভুত ব্যাপার ঘটতে পারে।তবে আমি সেটা বলবো না☺️।
আমি ক্ষুদ্র একজন পাঠক হিসেবে গল্পটি আমার মন জয় করেছে।অনেক অনেক অপেক্ষা নিয়ে রইলাম পরবর্তী পর্বের জন্য।
শুভেচ্ছায় @sabbirrr
গল্পে কতোগুলো সুন্দর সুন্দর চরিত্র রয়েছে, দুলাল, নিতাই, দুলালের বই, বৃদ্ধ মা, তার ছোট বাচ্চা, এবং পাঁচী বুড়ি এবং তার কুকুরগুলো।
বাস্তবতার দোর গোড়াই দাড়িয়ে আজকের পর্বটা লিখা, এটা আমি মনে করি। গরিবেরা এক মুঠো পেটের ভাত জোগার করতে, রাতের ঘুমকে হারাম করে, ভয়কে জয় করে কাজ করতে লেগে যান। যেটা গল্পের দুল্লাল করে যাচ্ছেন। একজন মানুষ যখম একা তার পরিবারকে পরিচালনা করেন তখন তার জন্য সেটা অনেক কষ্টের। যদিও গল্পটা একটা ভৌতিক গল্প, তবুও মানব জীবনের এক চরম সত্য এই পর্বে প্রকাশ পেয়েছে। তবে আমি ভাবছি, নিতাই, যে সব সময় বক বক করতো, কি এমন হলো যে সে আজকে চুপ হয়ে গেল এবং পাঁচী বুড়ির বাড়ীর সামনে কি ঘটেছিল। আশা করি এর পরর্বতী পর্বে এর সকল উত্তরটা পেয়ে যাব।
আশা করি দাদা আমাদেরকে গল্পের দ্বিতীয় পর্বটা খুব তারাতারি পড়তে দিবেন। দাদার লেখা গল্পগুলোর সারর্মম বুঝতে গেলে আমাদের গল্পগুলো মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে। তা না হলে কিছুই বোঝা যাবে না।
আমাদের মাঝে সব সময় এতো সুন্দর সুন্দর পোষ্ট উপহার দেওয়ার জন্য দাদাকে জানাই ধন্যবাদ, ভালোবাসা এবং শুভ কামনা।
চলবে দাদা,,আমি তো রাতে ভুত এফএম না শুনলে ঘুমই হয় না, মাঝে মাঝে যখন খুব ভয় লাগে তখন ফোন বন্ধ করে দিই😀😀
আজ কোন কুকুরই হাঁক ছাড়বে না, কারন সঙ্গে আছে ভূত মামা, হা হা হা হা
মাছ ধরা নিয়ে আমাদের সমাজেও এই রকম একটা কথা প্রচলিত আছে তার সাথে আছে অনেক ঘটনা, বিশেষ করে যারা রাতের বেলায় মাছ ধরতে যান। তাদের সঙ্গে নানাভাবে ভূত মামাদের সাক্ষাত হয়।
আকর্ষন এবার ভূত মামার, তো অপেক্ষায় পরের পর্বের, জমে যাবে নিশ্চয় এবারও।