একগুচ্ছ অণুকবিতা- নীলম সামন্ত
প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,
সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।


আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।
বুধবার তাড়াতাড়ি পোস্ট করার দিন অথচ আমার এই কয়েকদিন এমনই নাকে নিঃশ্বাসে অবস্থা যে আমি রাতের আগে সময়ই করে উঠতে পারছি না৷ অনেকবার ভেবেছি রাতে পোস্ট রেডি করে রাখব। সকালে টুক করে পোস্ট করে দেব। কিন্তু বেশিরভাগ সময় সেগুলো চিন্তা ভাবনাতেই থেকে যায়। আজও সকাল থেকে নানান কাজের মধ্যে দেখতে দেখতে বিকেল হয়ে গেল।
যাইহোক বন্ধুরা আপনারা কেমন আছেন, আপনাদের দিনকাল সব কেমন যাচ্ছে? নিয়মিত ডিসকর্ডে আসতে পারছিনা ঠিকই তবে আপনাদের ব্লগ আমি সবসময়ই পড়ি। সেইগুলো কাজের ফাঁকে হাতের ফাঁকে করে রাখি।
বিগত কয়েকদিন ধরে একটি মেয়ে আমার বাড়িতে আসে আমার কাজী সাহায্য করে দেওয়ার জন্য। তাকে আমি মাস শেষে কিছু টাকা দিই। মেয়েটি ১৫ দিনের ছুটি নিয়ে নেপাল বেড়াতে গেছি। নিজের নানান কাজের ব্যস্ততার মধ্যে যেন আমার ঘাড়ে এসে সবই আজকাল নিশ্বাস ফেলছে। মেয়েটার পরীক্ষা না যতক্ষণ শেষ হচ্ছে আমিও একদমই ফ্রি হতে পারছি না। আসলে আমি কিছু কাজ করলেই ও পড়াশোনা ভুলে হাঁ করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। এটা হয়েছে সব থেকে বড় মুশকিল। যেহেতু আমি ওর শিক্ষক মানে গৃহ শিক্ষক তাই আমাকে ওকে জাগতে হয়। তবে কাউকে পড়াতে পড়াতে মোবাইল হাতে নিয়ে নিজের কাজ করাটাও আমি খুব একটা পছন্দ করি না। কারণ আমি মনে করি আমাকে দেখেই আমার মেয়ে শিখবে। আজ সে আমাকে যা দেখছে দুদিন পরে সেও আমার সাথে একই ব্যবহার করবে। যেহেতু সে এখনো শিশু তাই তাকে বড় করার জন্য আগে তার দিকটাই দেখি পরে নিজের সমস্ত প্রয়োজনীয়তা।
তবে যারা মনে করেন বাচ্চা বাচ্চার মত বড় হয়ে যাবে আমার বয়সটা চলে যাচ্ছে আমি আমার মত কাটাই আমার মনে হয় আমাদের ভারতীয় বা বাঙালির মধ্যবিত্ত সমাজের দাঁড়িয়ে তার সন্তান জন্ম দেওয়ার কোন প্রয়োজন ছিল না। আজকাল অনেক বাবা মাকেই আমি দায়িত্বহীন দেখি। যে বিষয়টা মন থেকে একেবারেই মেনে নিতে পারি না। এই অবহেলা গুলোর কারণেই বাচ্চারা বাবা মায়ের থেকে দূরে তো যাই উপরন্ত অশিক্ষা কুশিক্ষায় ভরে ওঠে।
যাইহোক বন্ধুরা প্রতি সপ্তাহে আমি আপনাদের জন্য একটি করে কবিতা নিয়ে আসি। কিন্তু আজ ভাবলাম কয়েকটি ছোট ছোট কবিতা দিই যাকে আপনারা অণুকবিতা বলেন।
বর্ণবৃত্তের ফলক
------------------------------------ নীলম সামন্ত
১)
স্বপ্নের দীর্ঘ আদর -
বুলেট হাতে কারা যেন ছুটে এসেছিল
কারও কারও হাতে বারুদের গন্ধ...
২)
সমর্পণের শরীরে আগুন ঝরেছিল
রক্ত রক্ত বাতাসে অসংখ্য প্রেমিক-প্রেমিকা
তাদের হাতে অক্ষর প্রতিমা...
৩)
ভাংচুর সমেত লুটিয়ে পড়া আখ্যানের ইতিহাসে
স্বচ্ছ জুতোর দাগ,
অক্ষর জানে এই দাসীবৃত্তি জেহাদের বুনিয়াদ নয়
বাক-পূজোর নৈবেদ্য।
৪)
সেদিনের অসমাপ্ত নিরক্ষীয় লড়ায়ের ফলে
নদীর নাম বদলায়নি,
অথচ বাসি ফুলের বদলে ভেসে গেছে
মাতৃভাষার রূপকথা।
৫)
শহীদের মুখের রঙ আবেগ;
প্রতিদিন সূর্যস্নানের পর
আজও জন্ম নেয় উনিশের যৌবন।
৬)
আমাদের সম্পর্কের ভেতর চাঁদছাপ।
উপবৃত্তাকার কক্ষপথে
স্মৃতি উন্মোচন হলে ধরা পড়ে
বাংলার অক্ষর-বাউল।
৭)
হাতে হাতে বৈভবের সমার্থক উড়ে যায়।
ইতিহাস জানে -
পদ্মা, বাংলা, বেয়োনেট ঠাসা ভিসুভিয়াসের
রঙ ছিল টাটকা প্রেম।
৮)
অলিন্দের ভেতর পাখি সংলাপ
চলো আজ অন্তত উড়ে যাই
শহীদের শরীরে জমা করি
উবু পায়ের প্রনামীবাক্স।
আপনারা যারা নিয়মিত আমার কবিতা পড়ের তাঁদের সবার কাছেই কৃতজ্ঞ৷ জীবনে সৃষ্টি টুকুই আমি করি আর হয়তো নিজের বলে কিছু নেই। আমার পাশে থাকার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ। জানেন তো পাঠক না থাকলে কবিতার কোন জীবন নেই। আপনারাই পারেন একটি কবিতাকে প্রাণবন্ত করে তুলতে।
এই অণুকবিতাগুলো পড়ে কেমন লাগলো মন্তব্য করে অবশ্যই জানাবেন।
আবার আসবো আগামীকাল অন্য কোন ব্লগ নিয়ে। আজ এ পর্যন্তই।
ভালো থাকুন৷

পোস্টের ধরণ | ক্রিয়েটিভ রাইটিং |
---|---|
কলমওয়ালা | নীলম সামন্ত |
মাধ্যম | স্যামসাং এফ৫৪ |
লোকেশন | পুণে,মহারাষ্ট্র |
ব্যবহৃত অ্যাপ | ক্যানভা, অনুলিপি |
১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে
~লেখক পরিচিতি~
আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশ ও ইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিত গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।
https://x.com/neelamsama92551/status/1897238985824768361?t=TwexxFbqokq-XSFmiujdfA&s=19
অসাধারণ কিছু সিরিজ কবিতা ব্লকের মাধ্যমে সকলের সঙ্গে শেয়ার করেছিস। প্রত্যেকটি কবিতাকে আমার জাতীয়তাবাদের এক একটি বুলেট বলে মনে হলো। শহীদের কথা প্রত্যেকটি কবিতায় উঠে এসেছে এবং তার পরিবেশনার ধরন অসাধারণ। তোর কবিতা নিয়ে নতুন আর কী বলব। যত পড়ি তত ভালো লাগে।
ভালো হয়েছে বলছো? টুকরো টুকরো লাইনে কিছু অনুভূতি লিখেছি এভাবেই। জানোই তো আমার সিরিজ গুলো কেমন চোখে নিমেষে লেখা হয়ে যায়। যেন একটা আবেগের অক্ষর-রূপ।
এই অনু কবিতাগুলি ইতিহাস, সংগ্রাম, প্রেম ও আত্মত্যাগের এক অদ্ভুত মিশ্রণ। প্রতিটি স্তবক যেন আমাদের অতীতের তীব্র যন্ত্রণার চিহ্ন তুলে ধরে, যেখানে প্রেম ও সংগ্রাম একে অপরকে পরিপূরক। শহীদদের আত্মত্যাগ, মাতৃভাষার প্রতি অবিচল শ্রদ্ধা এবং বাংলার সংস্কৃতির প্রতি গভীর ভালোবাসা এই কবিতাগুলির মধ্যে এক সুক্ষ্ম বোধ ফুটে উঠেছে। ভাষার শক্তি ও মানুষের আত্মবিশ্বাসে ভরপুর এই কবিতাগুলি আমাদের অতীতের সন্মান এবং বর্তমানের দায়বদ্ধতা উভয়কেই স্মরণ করায়। খুবই প্রগাঢ় ও আবেগময় কবিতা শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ দিদি।
আমি যেদিনই কবিতা পোস্ট করি সেদিন আপনার মন্তব্যের অপেক্ষা করি এবং সেটা এখন আমার খুব বেশি দাঁড়িয়ে গেছে। আপনি যেভাবে কবিতাগুলো পড়েন এবং বোঝেন সেই বুদ্ধিমত্তা এবং সাহিত্য বোঝার মানুষ আজকালকার দিনে খুবই কম দেখা যায়। অনেক ভালোবাসা আপু আপনাকে।
সব বাচ্চারা আপু এমন মায়েরা যা করেন তা চেয়ে থাকে শিখতে চেষ্টা করেন। যেহেতু আপনি গৃহ শিক্ষক আপনি অন্য দিকে ব্যস্ত হয়ে গেলে বাচ্চারা অমনোযোগী হয়ে যায়। কি আর করার আমাদেরকে পারিবারিক কাজগুলো সমস্যাগুলোর সমাধান করতে হয়। যাক আপনার লেখা অনু কবিতা গুলো অনেক ভালো লেগেছে পড়ে। সুন্দর কবিতা গুলো লিখে শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ আপু সুন্দর মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য। আসলে বাচ্চারা তো এমনই অত্যন্ত চঞ্চল কি আর করা যাবে। এইসব নিয়েই চলতে হবে। বিরক্ত হয়ে বাচ্চাদের হাত দিয়ে ছেড়ে দেবো সেটা তো হয় না। মায়েদের চেয়ে অনেক দায়িত্ব।
এটা একদমই ঠিক বলেছেন আপনি বাচ্চারা তো বড়দের থেকেই শিখে। এখন আমার জন্য এটা অনেক বড় মুশকিল হয়েছে। ছোট বাচ্চাটা তাকিয়ে থাকে হাতে মোবাইল নিয়ে তার সাথে সময় কাটালে। এখন কাজও করতে হবে এদিকে বাচ্চার সামলাতে হবে দুই দিকে একসাথে সামলানো একদমই যায় না। আর আপনার আজকের এই অনু কবিতাগুলো পড়ে বেশ ভালো লেগেছে। শহীদের আত্মত্যাগ এবং আরও অনেক কিছুই কবিতার মধ্যে ফুটিয়ে তুলেছেন যা বেশ ভালো লেগেছে।
হ্যাঁ। তাই আমাদেরই উচিত মোবাইলের ব্যবহার কমানো এবং বাচ্চার সামনে তো একেবারেই নয়।
আমার কবিতা গুলো যে আপনার ভালো লেগেছে তার জন্য খুশি হলাম। ধন্যবাদ জানাই আপনাকে আর এত এত ভালোবাসা পাঠালাম।
আপনার অনু কবিতা গুলো একেবারে ভিন্ন ধারার ছিল। সাধারণ আমাদের কমিউনিটি তে যেমন অনো কবিতা দেখা যায় তার চেয়ে বেশ আলাদা। চমৎকার লাগল আপনার অনু কবিতা গুলো। খুবই সুন্দর লিখেছেন আপু। ধন্যবাদ আমাদের সাথে শেয়ার করে নেওয়ার জন্য।।