গল্প পোস্ট- ভালোবাসলেও সবার সাথে ঘর বাধাঁ যায় না || written by@maksudakar ||
আসসালামু আলাইকুম
আসসালামু আলাইকুম
সকাল সকাল বেশ চকচকে রোদে চারদিক ছেয়ে গেছে।বেশ ভালো লাগছিল সকাল সকাল চকচকে রোদে হেটে আসতে অনেক দূর পর্যন্ত।আর ভালো লাগবেই না বা কেন? চারদিকে এখন শীতের আবহাওয়া পড়ে গেছে। যার কারনে এখন ঢাকায়ও কিছুটা শীত অনুভব হচ্ছে। গত দিনের বৃষ্টি যেন শীতটা আরও একটু বাড়িয়ে দিয়েছে।বাংলার গ্রামগঞ্জের শীত দেখলেই কিন্তু শীতের প্রকৃত রূপ বুঝা যায়।কিন্তু শহরে জীবনে এত অপরূপ রূপ আর চোখে পড়ে না।
না আজ আমি শীত নিয়ে আপনাদের মাঝে কিছু শেয়ার করবোনা।হুম আজও আমি আপনাদের মাঝে একটি গল্প শেয়ার করবো।আমরা কিন্তু অনেকেই গল্প পড়তে বা শুনতে পছন্দ করি।আর যদি সেটা হয় ভালোবাসা বা প্রেমের গল্প তাহলে তো আর কথাই নেই।তাহলে যেন আমাদের মনযোগ আরও বেশী বেড়ে যায়।আমার মনে হয় জীবন টাই একটা গল্প।আর প্রতিটি মানুষের জীবনে কিছু না কিছু গল্প আছে।মানুষের জীবনে ঘটে যাওয়া সেসমস্ত গল্প হতে আজ আমি আপনাদের মাঝে আরও একটি গল্প শেয়ার করতে যাচ্ছি।আশা করি আমার আজকের গল্পটিও আপনাদের ভালো লাগবে।
ভালোবাসা এমন একটি অধ্যায় যেখানে কেউ পাশ করলে পাশ।আর পাশ না করতে পারলে সারা জীবনের জন্য ফেল। ভালোবেসে সংসার করলে সবাই যে সুখী হবে তার কিন্তু কোন গ্যারান্টি নেই।কারন ভালোবাসা আবার সময়ে সময়ে রং বদলায়।আর যদি জীবনের জন্য সঠিক মানুষটিকে চিনতে ভুল হয়ে যায় তাহলে তো সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হয় এর খেসারত।যেমনটি হয়েছে আমাদের শান্তার জীবনে।শান্তা বাবা মায়ের বড় সন্তান।বাবা একজন ভালো মানের ব্যবসায়ী।ব্যবসার কাজে প্রায় তাকে দেশের বাহিরে থাকতে হয়।তবে ঢাকায় তাদের তিন তলাএকটি বাড়ি আছে।যার প্রথম তলায় ব্যাচেলর ভাড়া দেওয়া।আর সেখান থেকেই লিটনের সাথে শান্তার পরিচয়।
লিটন তার মামার ব্যবসা দেখাশুনা করে।লিটনের সৌন্দর্য আর ব্যাক্তিত্ব দেখে শান্তার তাকে বেশ ভালো লেগে যায়।একসময় তাদের মাঝে গড়ে উঠে ভালোবাসার সম্পর্ক।এদিকে শান্তার পরিবার থেকে তার বিয়ে ঠিক করা হয়।কিন্তু শান্তা কিছুতেই লিটনকে ছাড়া অন্য কাউকেই বিয়ে করবেনা।তাই বাবা মা লিটনের সাথেই শান্তার বিয়ে দেয়।এদিকে শান্তার বিয়ের পর হতেই শান্তা লিটনের মধ্যে বেশ পরিবর্তন দেখতে পায়।লিটন কেমন যেন পরিবর্তন হয়ে যেতে থাকে।দিনে দিনে শান্তার সাথে বেশ খারাপ ব্যবহার করতে থাকে।
শান্তা এসমস্ত কথা তার পরিবার কে জানায় না।কারন তার পরিবার এমন সব কথা শুনলে বেশ কষ্ট পাবে।তাই শান্তা নীরবে লিটনের সব অপমান সহ্য করে যায়।এক সময়ে শান্তা অনুভব করে সে মা হতে চলছে।শান্তা বেশ আনন্দ অনুভব করে।নিজের মধ্যে মাতৃত্বের স্বাদ অনুভব করে।দেখতে দেখতে তার কোল জুড়ে একটি ছেলে সন্তান আসে।শান্তা তো তার সন্তান নিয়ে বেশ খুশি।কিন্তুএদিকে লিটনের ব্যবহারের কোন পরিবর্তন হয়না।এক সময়ে লিটনের খারাপ ব্যবহার বেড়ে যেতে থাকে। লিটন তার মামার ব্যবসা ছেড়ে দেয়। লিটন চায় শান্তার বাবারব্যবসা নিজে রনামে করে নিতে।কিন্তু শান্তার বাবা এমন কাজ কখনওই করবেনা।কারন তার নিজের ছেলেও দিনে দিনে বড় হয়ে যাচ্ছে।আর এমন অনেক দ্বন্দের মধ্য দিয়ে কেটে যেতে থাকে তাদের জীবন।
বেশ কিছুদিন পর শান্তার কোল জুড়ে আরও একটি সন্তান আসে।আর সন্তানের দিকে চেয়ে শান্তা লিটনের সব অত্যাচার মেনে নেয়। কিন্তু লিটন দিনে দিনে আরও খারাপ হতে থাকে।এক সময়ে শান্তা বুঝতে পারে যে লিটন ড্রাগ এডেকটেড। কি করবে শান্তা নিজেও বুঝেনা।এক সময়ে লিটনের সাথে শান্তার অনেক ঝগড়া হয়।তারপর লিটন শান্তাকে মারধর করে বিয়েতে দেওয়া গহনা নিয়ে শান্তাকে রেখে চলে যায়।তারপর পারিবারিক ভাবে অনেক চেষ্টা করেও তাদেরকে আর এক করা যায়নি।
এর পর শান্তার পরিবার হতে শান্তা কে বহুবার বুঝানো হয় যে লিটনকে ডিভোর্স দিয়ে নতুন করে জীবন শুরু করতে। কিন্তু শান্তা কেন জানি সেটা পারেনা।তার মনের ভিতর লিটনের জন্য অনেক ভালোবাসা লুকায়িত থাকায় সে লিটন কে ভুলতে পারেনা।আবার লিটনকে আনতেও পারেনা।আর অন্য দিকে লিটন মাদকাসক্ত হওয়ায় তার কাছে কেউ মেয়ে বিয়ে দিতে চায়না।এভাবেই কেটে যায় দুই তিন বছর। এক সময়ে শান্তা অনুভব করে তার জীবনের জন্য লিটনকে প্রয়োজন। তাই শান্তা তার পরিবারের সাথে কথা বলে লিটনের পরিবারের সাথে কথা বলতে বলে।তখন শান্তা জানতে পারে যে লিটন মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত।
লিটনের এমন অবস্থার কথা শুনে শান্তা আর বসে থাকতে পারে না।চলে যায় লিটনের কাছে।তার পর লিটনের সাথে কথা বলে এবং তাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে চিকিৎসার জন্য রাজি করে।এরপর লিটন কে একটি মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করে দেওয়া হয়। যেখানে মাদকাসক্ত সহ মানসিক রোগীদের চিকিৎসা করা হয়।সেখানে কিছু দিন রেখে সুস্থ করে শান্তা লিটন কে আবার ফিরিয়ে আনে। এখন কিন্তু লিটন শান্তা কে বেশ ভালোবাসে। মনে হয় শান্তা আর লিটনের এ ভালোবাসা কখনও শেষ হবে না।
কিন্তু না কিছুদিন না যেতে যেতেই লিটনের চরিত্র আবার পরিবর্তন হয়ে গেল। এবার লিটন শান্তার সাথে প্রতিনিয়ত ঝগড়া করে। লিটন শান্তা কে বলে যে শান্তার বাবার ফ্যাক্টরি লিটন কে দিয়ে দিতে। আর এ নিয়ে প্রতিনিয়ত শান্তার সাথে ঝগড়া হতে থাকে। এমন কি এ জন্য শান্তা এক সময়ে সুসাইড করারও কথা ভাবে। কিন্তু দুটি সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে তা আর করে না। আর এভাবে প্রতিনিয়ত অশান্তির মধ্য দিয়ে লিটন আর শান্তার দিন কেটে যেতে থাকে। তবে একন শান্তার ছেলে দুটো প্রায় বড় হয়েছে। তারা বাবার এমন ব্যবহার মেনে নিতে পারে না। তাই তারা মায়ের পক্ষ নিয়ে বাবার সাথে ঝগড়া করে। যার কারনে লিটন একদিন তার নিজের সন্তান কেও ছুটি দিয়ে আঘাত করতে ছাড়েনি।
কিন্তু এভাবে কি আর সংসার করা যায়? শান্তা বেশ ভাবনা চিন্তায় পড়ে যায়। একদিকে তার সন্তান। একদিকে ভালোবাসা এবং একদিকে অশান্তি। সব মিলিয়ে শান্তা তার সন্তানদের সাথে আলোচনা করে এবং তার বাবা মায়ের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয় যে সে আর লিটনের সাথে সংসার করবে না। তাই একজন আইন জীবির সাথে কথা বলে সে এবার লিটন কে ডিভোর্স দিয়ে দেয় এবং দুটি সন্তান কে নিয়ে বাকী জীবন কাটানোর সিদ্ধান্ত নেয়। আর এভাবেই শান্তার জীবন চলে যাচ্ছে আজও
আজ এখানেই রাখছি। আগামীতে আবারও ফিরে আসবো নতুন করে নতুন কোন পোস্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে। কেমন লাগলো আমার আজকের ব্লগটি? জানার আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় রইলাম। আশা করি আপনাদের মূল্যবান মন্তব্য দিয়ে উৎসাহিত করবেন। |
---|

আমি মাকসুদা আক্তার। স্টিমিট প্লাটফর্মে আমি @maksudakawsar হিসাবে পরিচিত। ঢাকা হতে আমি আমার বাংলা ব্লগের সাথে যুক্ত আছি। আমি একজন গৃহিনী এবং চাকরিজীবী। তারপরও আমি ভালোবাসি আমার মাতৃভাষা বাংলায় নিজের মনের কথা গুলো আমার বাংলা ব্লগের প্লাটফর্মে শেয়ার করতে। আমি ভালোবাসি গান শুনতে এবং গাইতে। আমি অবসর সময়ে ভ্রমন করতে এবং সেই সাথে সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি নিজের ক্যামেরায় বন্দী করতে ও ভালোবাসি। মাঝে মাঝে নিজের মনের আবেগ দিয়ে দু চার লাইন কবিতা লিখতে কিন্তু আমার বেশ ভালোই লাগে। সর্বোপরি আমি ভালোবাসি আমার প্রাণপ্রিয় মাকে।
আমার ব্লগটির সাথে থাকার জন্য এবং ধৈর্য সহকারে আমার ব্লগটি পড়ার জন্য সবাই কে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ। সেই সাথে সবার প্রতি আমি আন্তরিক ভাবে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
আমার ব্লগটির সাথে থাকার জন্য এবং ধৈর্য সহকারে আমার ব্লগটি পড়ার জন্য সবাই কে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ। সেই সাথে সবার প্রতি আমি আন্তরিক ভাবে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
![image.png](
আমার কাছেও ভীষণ ভালো লাগে সকাল সকাল চকচকে রোদে হাঁটতে। আমাদের এখানেও শীত পড়তেছে। যে আপনি ঠিক কথা বলেছেন গ্রাম গঞ্জের শীত দেখলেই প্রকৃত শীত বোঝা যায়। অনেক অপরূপ সুন্দরভাবে প্রকৃতিতে ধারণ করে শীত।মানুষের জীবন থেকে ঘটে যাওয়া অনেক গল্পই আমাদের সামনে ভেসে বেড়ায় এবং আজকে তার একটি গল্প আপনি আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন। আপনার টাইটেলটি অনেক মনোমুগ্ধকর ছিল যে বাস্তবসম্মত। ভালবাসলেও সবার সাথে ঘর বাধা যায় না। আপনি সুন্দর যুক্তি দিয়েছেন ভালোবাসা এমন একটি জায়গা কেউ পাশ করলে পাশ আর পাশ না করলে ফেল। আসলে ভালোবাসার জন্য কত মানুষ কত কি করতেছে? কেউ এই কাজে সফল হয় কেউ এই কাজে সফল হয় না।ভালোবাসার মানুষটির জন্য শাহজাহান তাজমহল বানিয়ে দিয়েছেন। লাইলি মজনুর প্রেম। শিরি ফরহাদের প্রেম। ভালোবাসা আছে কিন্তু বর্তমান সময়ে ভালোবাসা নেই বলতেই চলে। ভালোবাসাটা এখন ছেলে খেলা হয়ে গেছে প্রতিটা মানুষের কাছে। একটা কথা ঠিক যে প্রেম আর বিয়ে কিন্তু দুইটা আলাদা কথা। ভালোবেসে যারা সংসার করে প্রায় মানুষই অসুখী হয় আমার চোখে দেখা।সেখানে প্রাপ্ত সম্মানটা থাকে না। সত্যিই মেয়েদের জীবনে এমনই। সন্তানের দিকে চেয়ে লিটনের সব অত্যাচার সহ্য করে নিচ্ছে। মনের ভিতর লিটনকে সে ভালবেসে ফেলেছে আসলে সত্যিকারের ভালোবেসে কখনোই অন্য জনকে আর মনের ভিতর আনা যায় না। আমি শান্তা ম্যাডামকে দেখে অবাক হচ্ছি একটা মানুষের জন্য কতটা পাগল সে। তাকে এত অবহেলা করলো আর সেই মানুষটি তার মানসিক বিপর্যয় শোনে তার কাছে ছুটে গেল এবং তাকে ভালো চিকিৎসা করার জন্য ব্যবস্থা করল।এত ভালবাসার পরও লিটন আপন হতে পারেনি খুবই খারাপ লাগতেছ। আসলে মানুষ স্বার্থবাজ। এত অশান্তি শান্তা ম্যাডাম কিভাবে যে সহ্য করতে যে একধারে সন্তান একধারে সংসার ও অন্যদিকে ভালোবাসা। সত্যিই আমি ভেবে পাচ্ছি না। শান্তা ম্যাডাম খুব সুন্দর সিদ্ধান্ত নিয়েছে এভাবে জীবন চলতে পারেনা।তার বাকি জীবনটা যেন তার ছেলে-মেয়েকে নিয়ে কেটে যাক এই কামনাই করি। এমন স্বামী যেন কারো ভাগ্যে না জোটে এত ভালোবাসার পরেও অবহেলা। অনেক সুন্দর ছিল গল্পটি কিন্তু পড়ে মনটা খারাপ হয়ে গেল।
ভাইয়া শান্তার তো দুটোই ছেলে। বেশ ভালো লাগলো আপনার এত সুন্দর গঠন মূলক মন্তব্য পড়ে। ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য।
ছোটগল্পের মাধ্যমে আপনি যেন একটা বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছেন আমাদের সমাজের। সত্যি বলতে কি আমাদের সমাজে এমন ঘটনা সচরাচর দেখা যায়। ভালোবেসে বিয়ে করে সবাই সুখী হতে পারে না। যার ভালোবাসার মানুষটা সঠিক হয় না সে কখনো জীবনে সুখ পায় না। ঠিক তেমনি লিটন এবং শান্তার ক্ষেত্রেও হল। শেষ পর্যন্ত লিটন শান্তার বাবার সম্পত্তির প্রতি লোভ দেখায় আবারও। সে কারণে আর মূলত শান্তার উপর অত্যাচারের কারণেই শান্তার দুই ছেলে মিলে তাদের বাবা-মায়ের সংসার বিচ্ছেদের কথা বলে। আসলে এগুলা কষ্টদায়ক হলেও বাঁচতে হলে, সুন্দর করে জীবন সাজাতে হলে এরকম করতেই হতো। যাই হোক খুব ভালো লাগলো গল্পটি পড়ে।
বাহ্ দারুন সুন্দর একটি মন্তব্য করেছেন তো। ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য।
Tweeter