কর্তব্য

in আমার বাংলা ব্লগlast year

নমস্কার বন্ধুরা,

কংক্রিটের বাড়িঘরে বসবাস করতে গিয়ে মানুষ যেন নিজেরাই কংক্রিটের মতো হয়ে পড়ছে, মানবতাহীন। বিশেষ করে সন্তানেরা তাদের বৃদ্ধ বাবা মার প্রতি। যে বয়সে বাবা মায়েরা সন্তানের উপরেই সবচাইতে বেশি নির্ভরশীল হওয়ার কথা সেই সময়েই সন্তানেরা তাদের বাবা-মায়ের হাত ছেড়ে দিচ্ছে। ধীরে ধীরে এটা সমাজের ভাইরাল রোগের মতো আকার ধারণ করছে। এক সময় শুধুমাত্র বড়ো বড়ো শহর গুলোতেই এরম ঘটনা শুনতে পাওয়া গেলেও বর্তমানে অত্যন্ত ছোট ছোট শরেও এগুলো আকছার হয়ে চলেছে। বয়স্ক বাবা-মায়েদের না দেখাটা অনেকটা ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজ হঠাৎ এমন কথা বলছি কেন? তাই ভাবছেন তো। আসলে এমন এক ঘটনার সম্মুখীন হলাম, সেই পরিপ্রেক্ষিতে কিছুটা বিব্রত হয়ে আছি।

hands-4114905_1280.jpg

Copyright free Image Pixabay

রবিবার হাসপাতাল থেকে তাড়াতাড়ি এসে দুপুর বেলায় খাওয়া দাওয়া সেরে বিছানায় সটান হয়েছি। চোখটা অল্প বুজে এসেছে তখন বিল্ডিংয়ের অন্য পাশ থেকে অনেক গুলো গলার জোরে চিৎকার এবং দৌড়োদৌড়ির আওয়াজ শুনতে পেলাম। শুরুতে কিছুটা গুরুত্ব না দিলেও যখন চিৎকারের ফাঁকে দু'একবার আগুন কথাটা শুনতে পেলাম তখন নড়েচড়ে বসতেই হলো। ভাবলাম সরেজমিনে গিয়ে দেখে আসি। আগুন লাগলে, চার দেওয়ালের মধ্যে আটকে থাকাটা ঠিক হবে না।

চটজলদি নেমে বিল্ডিংয়ের যে পাশটায় থেকে আওয়াজ আসছিলো সেদিকে চলে গেলাম। পাড়ার কজন দাদা খুব দৌড়াদৌড়ি করছে। তাদের পিছুপিছু দোতলায় উঠলাম। দেখি অনেকে মিলে একটা দরজা ভাঙার চেষ্টা করছে। সেজন্য কয়েকজন খুব সজোরে এক ফ্ল্যাটের দরজায় লাথি মারছে। তাদের কথায় আগুনের কথা কানে এলেও। কিন্তু ঠিক কোথায় আগুন লেগেছে সেটা ঠিক বুঝতে পারছিলাম না। বেশ কিছুক্ষণের প্রচেষ্টায় দরজা ভাঙা পড়লো।

দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকতেই পোড়া গন্ধটা নাকে এলো। ফ্ল্যাটের রান্নাঘরের মেঝেতে এক প্রৌঢ়া আগুনে দগ্ধ অবস্থায় লুটিয়ে আছে। আসলে সেই ফ্ল্যাটে এক বয়স্ক ভদ্রমহিলা একা থাকেন। বছর আটেক হলো স্বামী গত হওয়ার পর থেকেই একা। দুই সন্তান বর্তমানে বিদেশে। রান্না করতে গিয়ে কোন কারনে গায়ে আগুন লেগে গেছে কিন্তু আগুনটা নিজে নেভাতে না পেরে গায়ে আগুন লেগে যায়। তৎক্ষণাৎ এম্বুলেন্সে ডেকে তাকে ধরাধরি করে হাসপাতালের পথে নিয়ে যাওয়া হলো। প্রথমে কাছের এক বেসরকারি নার্সিংহোম নিয়ে যাওয়া হলেও সেখানে যখন ভর্তি করলো না তখন সোজা সরকারি হাসপাতালে যাওয়া হলো।

এসব দেখে বারবার মনে হচ্ছিলো। সন্তানের দায়িত্ব ঠিক কি? বাবা মায়ের বয়স হলে তাদেরকে দেখভাল করাটা কি সন্তানের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে না? যে মানুষগুলো একটা সময় হাঁটতে শিখিয়েছে, মাথার উপরে বাসস্থান জুগিয়েছে, জীবনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য পদে পদে থেকেছে বয়সকালে তাদের লাঠি হওয়াটা কি আমাদের কর্তব্য নয়?




IMG_20220926_174120.png

Vote bangla.witness

Sort:  
 last year 

একটা বাবা-মা যখন ছোটবেলায় আমাদের নির্দ্বিধায় মানুষ করতে পারে, আমরা যখন বড় হই তখন আমরা একটা বাবা-মাকে মানুষ করতে পারিনা কিন্তু আমাদের এটা কর্তব্যের মধ্যে পড়ে।তাদের দেখভাল করা বয়স হয়ে গেলে ঠিক বলেছেন দাদা। অবশ্যই কর্তব্য ছেলে মেয়ের। বিদেশে আছে বাবা-মাকে ঠিকমতো খেয়াল খোঁজ-খবর নেয় না আসলে এরকম সন্তান হওয়ার থেকে না হওয়াই ভালো।

Posted using SteemPro Mobile

 last year 

বাবা মা সন্তানদের ভালোর জন্য জীবনের সব রকম সেক্রিফাইস করে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় বৃদ্ধ বয়সে এসব বাবা মাকে একাকী দিন পার করতে হয়। বিশেষ করে যাদের সন্তানেরা বিদেশে থাকে। তাদের সন্তানদেরকে উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে পাঠানোর আগে তাদেরকে মানসিক শিক্ষায় দীক্ষিত করা উচিত। তা না হলে এরকম বৃদ্ধ বাবা-মায়ের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাবে। মহিলাটির জন্য আসলেই খুব খারাপ লাগছে। পরে মহিলাটি কি অবস্থা হলো দাদা?

 last year 

১০০% সেকেন্ড ডিগ্রি বার্ন দিদি

 last year 

আমার তো মনে হয় এখন বাবা মাকে না দেখাটাই একটি ফ্যাশন হয়ে দাড়িঁয়েছে। মাঝে মাঝে ভাবী যে কি লাভ এসব সন্তানদের জন্য এত পরিশ্রম করে। কি লাভ এসব সন্তানদের কে শিক্ষিত করে। তার চেয়ে এদের কে ছেলেবেলা হতে মানবতার বিদ্যালয়ে ভর্তি করে মানবতা শিক্ষা দিলে তো অনেক ভালোই হতো।তাহলে অন্ততঃ তারা বাবা মায়ের প্রতি আন্তরিক হতে পারতো।

 last year 

আসলেই দাদা, বর্তমানে বৃদ্ধ মা বাবার দায়িত্ব নিতে চায় না বেশিরভাগ সন্তানেরা। আগে এমন ঘটনা খুব কম দেখা যেতো, কিন্তু এখন ঘরে ঘরে এমন ঘটনা দেখা যায়। আসলে মানুষের নৈতিকতার অবক্ষয় হলে যা হয় আর কি। সে সমস্ত কুলাঙ্গার সন্তানেরা একবারের জন্যও মনে করে না,মা বাবা যদি ছোটবেলায় আমাদেরকে আদর যত্ন করে লালন পালন না করতো, তাহলে আমাদের অস্তিত্ব থাকতো কিনা। এসব ঘটনাগুলো আসলেই হৃদয় বিদারক। যাইহোক সবার শুভবুদ্ধির উদয় হোক সেই কামনা করছি। এই পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা।

Posted using SteemPro Mobile

 last year 

খুব দুঃখজনক ঘটনা দাদা। ভাগ্যিস দরজা ভেঙ্গে সবাই ঢুকতে পেরেছিলেন এবং ওনাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পেরেছিলেন। আসলে সন্তান জন্ম দেয় মানুষ বংশবৃদ্ধি এবং শেষ বয়সে লালন পালনের দায়িত্ব যেন নিতে পারে এজন্য আর সেই সন্তানরা যদি বাবা-মাকে দেখভাল না করে তাদের শেষ বয়সের লাঠি না হয় তাহলে কিচ্ছু করার নেই কারো। নিজে থেকে মানবিক না হলে কেউ ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে পারবে না মানবিকত। সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি উনি যেন তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠেন । ধন্যবাদ দাদা

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.25
JST 0.034
BTC 95768.49
ETH 2809.01
SBD 0.67