কবিতায় আড্ডা :আজকে নির্মলেন্দু গুণ এর কবিতা -তোমার চোখ এত লাল কেন
হ্যালো বন্ধুরা,সবাই কেমন আছেন?আশা করি ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন।সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আজকে আমার পোস্ট লেখা শুরু করছি।আজকে আমি নিজের লেখা কোনো কবিতা শেয়ার করছি না।আমি বরং বিখ্যাত একজন কবির কবিতা নিয়ে নিজের ভাবনা চিন্তা আপনাদের সাথে শেয়ার করবো।
আগেই বলে রাখি প্রত্যেকটি চিন্তা ভাবনা আমার একান্ত ব্যক্তিগত।তারপর ও যদি কোনো বিষয়ে আপনাদের দ্বিমত থাকে তো অবশ্যই মন্তব্যের মাধ্যমে জানাবেন।যেকোন গঠন মূলক সমালোচনা সব সময় গ্রহণযোগ্য।
আজকে আমি বাংলাদেশের খ্যাতনামা কবি নির্মলেন্দু গুণ এর একটি কবিতা "তোমার চোখ এত লাল কেন" নিয়ে আলোচনা করবো।এটা কবিতার কোনো রিভিউ নয়।কবিতা নিয়ে আমার কি উপলব্ধি এবং তার সাথে বাস্তবতার কি মিল ও কি সংঘাত সেটা নিয়েই আমার আলোচনা।তবে আসুন আগে কবির কবিতাটি একবার পড়েনি।
আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ একজন আমার জন্য অপেক্ষা করুক,
শুধু ঘরের ভিতর থেকে দরোজা খুলে দেবার জন্য।
বাইরে থেকে দরোজা খুলতে খুলতে আমি এখন ক্লান্ত।
আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ আমাকে খেতে দিক।আমি হাতপাখা নিয়ে
কাউকে আমার পাশে বসে থাকতে বলছি না,
আমি জানি, এই ইলেক্ট্রিকের যুগ
নারীকে মুক্তি দিয়েছে স্বামী-সেবার দায় থেকে।
আমি চাই কেউ একজন আমাকে জিজ্ঞেস করুক:
আমার জল লাগবে কিনা, নুন লাগবে কিনা।
পাটশাক ভাজার সঙ্গে আরও একটা
তেলে ভাজা শুকনো মরিচ লাগবে কি না।
এঁটো বাসন গেজ্ঞি-রুমাল আমি নিজেই ধুতে পারি।
আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ একজন ভিতর থেকে আমার ঘরের দরোজা
খুলে দিক।কেউ আমাকে কিছু খেতে বলুক।
কাম-বাসনার সঙ্গী না হোক, কেউ অন্তত আমাকে
জিজ্ঞেস করুক: ’তোমার চোখ এত লাল কেন?
আপনাদের মতো আমিও বেশ কয়েকবার পড়েছি কবিতাটি।এই কবিতা নিঃসন্দেহে একটি প্রেমের কবিতা।কিন্তু কবি খুব সাবধানে এই কবিতাটিকে তথাকথিত প্রেমের কবিতা থেকেই একটু আলাদা ভাবে উপস্থাপন করেছেন।দেখুন তো একটু তুলনা করে আপনাদের সাথে আমার চিন্তাভাবনা মেলে কিনা।
কবিতার সাধারণ ভাবার্থ:
এই কবিতায় কবির ভালোবাসার প্রতি তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ পেয়েছে।কবি ভালোবাসাকে কোনো বিশেষ কিছু বলতে নারাজ।তিনি ভালোবাসাকে জীবনের মৌলিক বিষয় হিসেবে দেখছেন।তিনি তার প্রিয়তমার কাছে ভালোবাসি ভালোবাসি এই কথাটি শুনতে খুব একটা ইচ্ছুক না।তিনি অপ্রকাশের মাঝে যে প্রবল প্রকটতা থাকে সেই বিষয় টাকে গুরুত্ব দিয়েছেন।তিনি বলছেন যে তাকে ভালোবাসার দরকার নেই কিন্তু কেউ তার জন্য অপেক্ষা করুক।
একটি সরল বাক্যের মাধ্যমে কবি তীব্র ভালোবাসাকে ফুটিয়ে তুলেছেন।কবি অনেক পথ নিঃসঙ্গ ভাবে চলেছেন।এখন কবি চান একজন সঙ্গী যিনি কবির সব সাধারণের সাথে মিশে আপন মহিমায় অসাধারণ হয়ে উঠুক।তিনি তার সঙ্গিনীর কাছ থেকে কোনো সেবা যত্ন প্রত্যাশা রাখেন না।কারণ নারীর বংশানুক্রমিক এই অভ্যাস কবিকে আহত করে।
তাই কবি বলেছেন "বাসন গেজ্ঞি-রুমাল আমি নিজেই ধুতে পারি।"অর্থাৎ এই সব কাজের মধ্যে ভালোবাসাকে তিনি বিচার করতে চান না তিনি ভালোবাসাকে পরিমাপ করছেন এটা বলে
"আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ একজন ভিতর থেকে আমার ঘরের দরোজা
খুলে দিক।কেউ আমাকে কিছু খেতে বলুক।"
কবি ভালোবাসাকে প্রত্যাহিক জীবনের অংশ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন
কারণ এই মৌলিকতাই ভালোবাসার ভিত্তি।
আমার কি দাম আছে বলো যে আমি দামি?
তুমি ভালোবেসে অমূল্য করেছো আমায়
শহর জুড়ে তাই আজ আমি ভীষণ দামি।-ব্ল্যাক্সস
সত্যিকারের ভালোবাসা ভালোবাসার মানুষটাকে খুব দামি করে তোলে।ভালোবাসার আসলে পরশ পাথরের মতো যা স্পর্শ করে তাই সোনা অর্থাৎ অমূল্য সম্পদ হয়ে যায়।তেমনি মানুষ একে অপরকে ভালোবেসে দুজনেই মূল্যবান হয়ে যায়।
বাস্তবতা সাথে মিল:
বাস্তবতার সাথে মিল কি আর বলবো।পুরো কবিতাটাই তো একটা জ্বলন্ত বাস্তবতা।আয়োজন করা ভালোবাসা আসলে স্বল্প মেয়াদি।একদিন সেটা ফুরিয়ে যাবেই এটা অনেকটা অনিবার্য।তবে সে ভালোবাসা জীবনের সাধারণ কাজ কর্ম অভ্যাস আর চিন্তায় মিশে যায় তাই সত্যিকারের ভালোবাসা।কবির সম্পূর্ণ কবিতা জুড়ে ভালোবাসা এই রকমই বর্ণিত হয়েছে।
যদি ভালোবাসা কে এক মুহূর্তের জন্য
সরকার বেআইনী ঘোষণা করে দেয়,
আমি তোমাকে ভালোবেসে
অপরাধী হবো,চাইবো আজীবন কারাবাস।-ব্ল্যাকস
বাস্তবতার সাথে কবির এই কবিতার কোনো সংঘাত আমি অন্তত দেখতে পারছি না।হ্যাঁ যদি আপনারা সিনেমা নাটকে দেখানো প্রেম ও ভালোবাসাকে স্ট্যান্ডার্ড মানেন সে ক্ষেত্রে সত্যি আমার বলার বিশেষ কিছু নেই।
250 SP 500 SP 1000 SP 2000 SP 5000 SP
Take it out and let it go.
Creativity and Hard working.
Discord
দাদা আমি প্রথমেই বলতে চাই আপনার লেখা লাইন গুলো আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। ভালোবেসে সারাজীবন কারাবাস করার মাঝেও অনেক বেশি সার্থকতা রয়েছে দাদা। শ্রদ্ধেয় স্যার নির্মলেন্দু গুণ তার কবিতার মাঝে অসাধারন কিছু লেখা উপস্থাপন করেছেন। আসলে তিনি খুব সরল ভাষায় নিজের অব্যক্ত কথা কবিতার ভাষায় লিখে ফেলতেন। আজকে আপনি শ্রদ্ধেয় স্যার নির্মলেন্দু গুণের লেখা কবিতার থেকে খুব সুন্দর ভাবে কবিতার ভাবার্থ তুলে ধরেছেন। আসলে কবি তার বাক্যের মাঝে তীব্র ভালোবাসাকে ফুটিয়ে তুলেছেন। অনেক সুন্দর ভাবে কবিতাটির ভাবার্থ উপস্থাপন করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি দাদা। শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
শতভাগ সহমত পোষণ করছি আপনার সাথে দাদা। আজকের লেখাটি বেশ ভালো লেগেছে দারুণ একটা কবিতার বিষয়বস্তুকে আপনি খুবই চমৎকার ও বিষদভাবে সকলের মাঝে উপস্থাপন করেছেন। অনেকেই হয়তো কবিতার আসল মর্মার্থ বুঝতে পারেন না, তারা আজ কিছুটা হলেও আইডিয়া পেয়ে যাবেন। ধন্যবাদ
একদম ঠিক বলেছেন ভাইয়া।আমিও আপনার সাথে একেবারেই একমত।আসলে অনেক আয়োজন করে আর যাই হোক ভালোবাসা হয়না।জাস্ট লোক দেখানো হয়।
দাদা আপনার প্রতিটি কবিতা মন ছুয়ে যাওয়ার মত। মাঝে মাঝে আপনার কবিতা পড়ে নিজের ভালোলাগাকে খুঁজে পাইনি। আপনি সত্যিই একজন রোমান্টিক কবি। আপনার কবিতার রস মনের মাঝে আন্দোলন সৃষ্টি করে এবং সুপ্ত হৃদয়ের মাঝে ভালোবাসার জাগরণ সৃষ্টি করে। আমার মনে হচ্ছিল কেউ একজন হয়তো আমার জন্য হাতপাখা নিয়ে বসে আছে কিন্তু হঠাৎ দেখি আমার পাশে বৈদ্যুতিক ফ্যানটি ভনভন করে ঘুরতেছে। দাদা আপনার কবিতার গভীরে গিয়েছিলাম কিছুক্ষণের জন্য নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলাম কবিতার অবতলে। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি কবিতা আমাদের মাঝে খুব সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করার জন্য। আপনার জন্য ভালোবাসা এবং পরবর্তী কবিতার অপেক্ষায় রইলাম।
ও ভাইয়া অনেক সুন্দর একটি কবিতা শেয়ার করেছেন। আপনার কবিতাটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটি কবিতা আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য
অও,কবিতাটির প্রত্যেকটি অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবতার জ্বলন্ত রূপ,রস ফুটে উঠেছে।মনের সংঘাতে বেরিয়ে এসেছে লেখাটি,খ্যাতনামা কবি নির্মলেন্দু গুনের লেখা কবিতাটি পড়ে খুবই ভালো লাগলো।
দাদা,খুবই সুন্দর ছিল প্রত্যেকটি বাক্য ও সঙ্গে চমৎকার উপস্থাপনা।সত্যিকারের ভালোবাসা ফুটে উঠেছে,ভালো লাগলো পড়ে দাদা।ধন্যবাদ
এই কথা গুলোর সঙে একদম সহমত পোষণ করছি ভাই । দিনশেষে পাশে থাকার মতো মানুষ আসলেই খুব জরুরী । ভালোবাসা এমনি যেটা মুখে বলতে হয় না , বুঝে নিতে হয় ।
এমন প্রেমিক হৃদয়ের মানুষের ভালোবাসাকে স্যালুট জানাই।
দাদা এত সুন্দর কবিতা কেউ লেখে কবিতাটি পড়ে আমি আবেগঘন হয়ে পড়েছি। কবিতার প্রতিটি লাইন যেন আমার ভিতরে শুনতে পায়। আমাদের প্রত্যেককেই এমন একজন করে মানুষ চাই। সবাই তার প্রিয়জনকে তাদের মতো করে পেতে চাই। আপনার কবিতার প্রতিটি লাইন এতটাই মুগ্ধ ছড়িয়েছে যা যে কাউকে কল্পনা দিতে বাধ্য করবে। এত সুন্দর একটি কবিতা আমাদের মাঝে উপস্থাপন করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।