অলীক ফাঁকি

in Incredible India7 months ago (edited)

pexels-tim-samuel-5835419.jpgsrc
আমার নানা, গত কিছুদিন আগে নিউজ পেপার পড়ছিলেন। আর পাশে বসে থাকা আমি কান লাগিয়ে শ্রবণ করেছিলাম, তার পড়া ৷ প্রত্যেকটা শব্দ চয়ন ছিলো একেবারেই শুদ্ধ। নানা, আগেকার মানুষ। অভাবের সংসারে তেমন পড়াশোনা করতে পারেননি। নানার সাথে আলাপ করে জানতে পেরেছি মাত্র ক্লাস ওয়ান পর্যন্ত পড়েছেন, মানে সবে মাত্র স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন। আজ থেকে প্রায় পঞ্চাশ বছর আগেকার পড়াশোনা, যেসময় ছিলো না কোনো মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম। এককথায় সেসময় পৃথিবীতে তেমন উন্নত প্রযুক্তির ছোয়াই লাগেনি।

সেই সময়কার ক্লাস ওয়ানের পড়াশোনার মান ছিলো প্রবল উন্নত। ৯০ কিংবা তার আগের দশকের শিক্ষার মান কেমন ছিলো তা বর্তমানের সাথে তুলনা করলেই ভালোভাবে বুজতে পারা সম্ভব হবে বলে আশা করি।

pexels-mikhail-nilov-7929352.jpgsrc

আগেকার দিনের শিক্ষা ছিলো প্রাক্টিক্যাল শিক্ষা, আর এখনকার শিক্ষা হয়ে গেছে দায়সারা, মানে কোনো রকমে সিলেবাস কম্প্লিট হলেই হলো। এখনকার শিক্ষার্থীরা পরিতৃপ্তির সাথে শিক্ষা গ্রহন করতে নারাজ৷ তারা ছুটছে জিপিএ'র পিছনে। এতে যে শুধু শিক্ষার্থীরাই দ্বায়ী তা কিন্তু না, কিছু কিছু শিক্ষকও জড়িত।

pexels-max-fischer-5212348.jpgsrc

রাস্তার মোড়ে মোড়ে এখন কোচিং সেন্টার, এযুগের একজন স্টুডেন্টকে আলাদা আলাদা বিষয়ে আলাদা আলাদা শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়তে হয়। অথচ আগেকার যুগের শিক্ষার্থীরা এতটাই প্রখর মেধাবী ছিলো যে, চতুর্থ শ্রেণির একজন শিক্ষার্থী তৃতীয় শ্রেণির যেকোনো শিক্ষার্থীকে অনায়াসেই সব বিষয়ে প্রাইভেট পড়াতে সক্ষম ছিলো।

আমাদের দেশের অধিকাংশ কলেজ বা স্কুলগুলোতে ক্লাসের পড়ায় তেমন জোড় দেয়া হয়না বল্লেই চলে, যা হয় তা দায়সারা। কতিপয় কিছু সরকারি কলেজ কিংবা স্কুল ছাড়া সবগুলোরই একই দশা৷

pexels-pixabay-159213.jpgsrc

ক্লাস হোক বা না হোক ২য় অপরচুনিটিতো আছেই, কোচিং সেন্টার৷ সহজলভ্য হওয়ায় কোচিংয়ের ফাঁদে পা দেয় শিক্ষার্থী আর লাভবান হয় শিক্ষকরা। অথচ তাদের উচিত ছিলো তাদের কলেজে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীকে ক্লাসের পড়া ক্লাসেই কম্প্লিট করে দেয়া, ঐ যে বল্লাম দায়সারা একটা ব্যাপার আছে না!

অথচ তারা কিন্তু তাদের নিজের সন্তানদের ব্যাপারে ব্যাপক সচেতন। কতিপয় কিছু সংখ্যক শিক্ষক ছাড়া বেশির ভাগ শিক্ষকই তাদের সন্তানদের দেশ সেরা স্কুল কিংবা কলেজে পড়াতে মনোনিবেশ করেন৷ অপরের সন্তান যা করে করুক, নিজের সন্তান ভালো করলেই মিটে গেলো।।।

pexels-pixabay-160914.jpgsrc

জবাবদিহিতার অভাবে দেশ এখন প্রবল অসুস্থ। জানিনা কি ঔষধে সারবে এমন পরিস্থিতি। তবে আমি প্রচন্ড আশাবাদী এই পরিস্থিতির পরিবর্তন নিয়ে।

আমি কারো গুণকীর্তন কিংবা কাউকে দোষারোপ করছি না। আমি শুধু আমার চোখে দেখা এসময়ের শিক্ষার হালচাল আমার যুক্তিতে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি, মাত্র। এতে কেউ মনঃক্ষুণ্ন হলে দয়া করে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন৷🙏🙏

অলীক ফাঁকি থেকে বেড়িয়ে আবার ফিরে আসুক ৯০ কিংবা তার আগের দশকগুলো। স্বশিক্ষায় শিক্ষায় শিক্ষিত হোক প্রতিটি শিক্ষার্থী। এই কামনা ব্যক্ত করে আজকের মতো এখানেই শেষ করছি।

Posted using SteemPro Mobile

Posted using SteemPro Mobile

Sort:  
Loading...
 7 months ago 

প্রিয় ভাই, শিক্ষা মানুষের নৈতিকতার মান উন্নয়ন করে। কিন্তু বর্তমান সময়ে তা আর হচ্ছে না। এর জন্য দায়ী কারা। এই সমাজেরই লোকজন। আর আমাদের সমাজ ব্যবস্থা। এই ভয়াবহতা থেকে মুক্তি পাওয়া এখন সময়ের দাবি। বর্তমানে আমরা শিক্ষা গ্রহণ করি না বরং ভালো ফলাফল অর্জন করতে জান প্রাণ ছেড়ে দেই। কিন্তু শিক্ষার মৌলিক দিক কিন্তু এটি নয়। শিক্ষা মানুষের নৈতিকতার পরিবর্তন ঘটায়। আর এখন তার উল্টোটা হচ্ছে।

যাইহোক ভাই, আপনার আজকের লিখাটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো। ভালো থাকবেন। শুভকামনা রইলো।

 7 months ago 

আসলেই তাই। শিক্ষার মান যেন দিন দিন কমে যাচ্ছে। আগে কেউ মেট্রিক পাস করলে তাকে দূর দূরান্ত থেকে দেখতে আসছে। কিন্তু এখন ভুরি ভুরি এ+ কিন্তু সেই তুলনায় তাদের কোয়ালিটি নেই বললেই চলে। শিক্ষার নামে একটা বড় ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে। এসব থেকে বের হয়ে সঠিকভাবে শিক্ষা প্রদান করাই আমাদের একান্ত কাম্য।

 7 months ago 

বর্তমান সমাজের একদম বাস্তব চিত্র নিয়ে কথা বলেছেন ভাই।
আমার মেয়ে এই বছর প্লে থেকে নার্সারি তে উঠেছে, কিন্তু দুই ক্লাসের পড়া এবং বই এর মধ্যে কোনো পার্থক্য আমি খুজে পাই নি।
শিক্ষকেরা স্কুল থেকে পড়া দেয় ঠিকি কিন্তু সেই পড়া আদায় করে নেওয়াটা এখন উঠে গিয়েছে।
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য।

 7 months ago 

ভাইয়া কি আর বলব, আজকে আপনার পোস্ট পড়ে বাস্তবতা একেবারে চোখের সামনে ভাসতে লাগলো। আসলে ৯০ দশকের একজন ছাত্রের সাথে, বর্তমান সময়ের একজন ছাত্রের তুলনা করা একেবারেই বোকামি। কেননা তখনকার সময়ের পড়াশোনা ছিল একেবারেই ইউনিক।

বর্তমান সময়ে কোচিং সেন্টার এবং জিপিএ, এর পেছনে, মানুষ ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের দোষ কিংবা শিক্ষকের দোষ দিয়ে পার পেলে হবে না। কেননা এখানে দোষ আছে শিক্ষার্থীর বাবা-মায়ের। কেননা তারা সবসময় তাদের সন্তানদেরকে তাদের আত্মীয়-স্বজনের সন্তানের সাথে তুলনা করে। এ ক্ষেত্রে তাদেরকে অনেক বেশি পড়ানোর জন্য তারা কোচিং সেন্টারে ভর্তি করায়, যার কারণে হয়তোবা দেশের এই অবস্থা।

আমিও জানিনা এই দেশ কবে সঠিকভাবে আবারো পরিচালিত হবে, কবে আবারও ক্লাসের পড়া ক্লাস এই কমপ্লিট করা হবে কবে। সেই সাথে এই কোচিং সেন্টার গুলো বন্ধ করে দেয়া হবে। ধন্যবাদ চমৎকার টপিক নিয়ে আলোচনা করার জন্য। ভালো থাকবেন।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.16
JST 0.029
BTC 64451.72
ETH 2628.36
USDT 1.00
SBD 2.81