সুন্দরবনে রোমাঞ্চকর দ্বিতীয় দিবস!(Exciting second day in Sundarban)
গতকাল ইংরিজিতে নিজের ভ্রমণের সূত্রপাত তুলে ধরেছিলাম আপনাদের মাঝে।
আজকে, লেখাটা বাংলায় লিখছি। কারণ, বিষয়বস্তু এক হয়ে গেলে আর সেটি যদি পর্বের আকারে তুলে ধরা হয় তাও একই ভাষায়, অনেকেই লেখা পড়ায় অনিচ্ছা প্রকাশ করেন।
এরপর, নিজের দেশে ঘুরছি তথা, নিজের ভাষা দিয়ে এই যাত্রার আরেকটি পর্ব উপস্থাপন করতে চাই, যাতে একই ভাষাভাষীর মানুষ প্রকৃতি তথা ভারতীয় ঐতিহ্যের কিছু নিদর্শন পড়বার তথা চাক্ষুষ করবার সুযোগ পায়, লেখা এবং ছবির মাধ্যমে।
আজকে সুন্দরবনে অতিবাহিত দ্বিতীয় দিনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরছি আপনাদের মাঝে।
শহরে প্রতিদিন উঁচু উঁচু ইমারত দেখতে দেখতে আর কালো ধোঁয়ায় যখন ফুসফুসের দমবন্ধ পরিস্থিতি, ঠিক সেই মুহূর্তে এই সবুজ আর জলের গুরুত্ব মূল্যায়িত হয়।
আমি শেষ আমার দাদার সাথে বেনারস গিয়েছিলাম, সেটাও দুবছর আগে! প্রতিদিন শুধু নিজেকে সমর্পিত রেখে চলেছি কাজের মাঝে, সেটা ঘরে বসেই হোক অথবা এই ঘোরার মাঝে!
দুটি বিষয়ের মধ্যে পার্থক্য হলো, প্রথমটি, মানে ঘরে বসে কাজ করতে করতে এক প্রকার যান্ত্রিক হয়ে পড়ছিলাম!
দ্বিতীয় ক্ষেত্রে, এই সবুজের মাঝে যখন লেখাটা লিখছি, তখন ফুসফুসে ভরে এনেছি বিশুদ্ধ অক্সিজেন, আর চোখে করে বয়ে এনেছি একরাশ প্রকৃতিকে!
আজকের যাত্রার প্রারম্ভ: |
---|
আজকে সকাল নয়টায় বেরোবার কথা, সেই মতো তৈরি হয়ে গিয়েছিলাম, কিন্তু কিছুজন দেরি করায়, বেরোতে বেরোতে সকাল সাড়ে নয়টা বেজে গিয়েছিল।
গতকাল এবং আজকে মিলিয়ে যদি লক্ষ্য করেন, দেখবেন আমি কিন্তু খাবারের কথা এখনও পর্জন্ত উল্লেখ করিনি!
যদিও, এদের প্রতিদিনের খাবারের তালিকা শুধু দীর্ঘ তাই নয়, পাশাপাশি বেশ সুস্বাদু।
তবে, আমি খাবারের সন্ধানে যেহেতু আসিনি, তাই সেইভাবে খাবারের ছবি তুলিনি।
এখানে শুধু লেখায় উল্লেখ করে দিচ্ছি, যাতে আপনারা বুঝতে পারেন কাল থেকে খাবারের কি কি ব্যবস্থা ছিল।
যতই হোক কিছু বাঙালির উৎসাহ নিশ্চই থাকবে বিষয়টিতে।
কাল যখন ভোর বেলায় বাসে উঠেছি, তখন সকলের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল, একটি শুকনো খাবারের প্যাকেট।
যার মধ্যে ছিল, মিও আমোরে থেকে নেওয়া দু ধরনের কেক, সাথে কলা, সেদ্ধ ডিম, দু রকমের মিষ্টি, নিমকি আর সাথে এক বোতল মিনারেল জলের বোতল।
এরপর, কমলা লেবু ছিল, মাঝে ছিল, চা কফির ব্যবস্থা।
পৌঁছনোর পর পুরোটা সময় লঞ্চে অতিবাহিত হয়েছে, যেটা গতকাল যারা লেখা পড়েছেন জানবেন।
গতকাল দুপুরের খাবারের তালিকায় ছিল, ডাল, আলু ভাজা, কাতলা মাছ এবং চিংড়ি মাছ, চাটনি, পাপড়।
এরপর পর সন্ধ্যা বেলায় একত্রিত হবার সময় ছিল, চা, কফি সাথে চিকেন পকোড়া।
রাত্রে ছিল ভাত এবং রুটির ব্যবস্থা। আমি রুটি খেয়েছিলাম।
সঙ্গে ছিল, ডাল, আলু ভাজা, মিক্সড সবজি, মাটন, চাটনি, পাপড়।
আজকে সকালে বেরোবার আগে চা খেয়ে বেড়িয়েছিলাম, তারপর লঞ্চে উঠে প্রাতঃরাশ এ ছিল, কড়াইশুটির কচুরি আর আলুর দম।
এরপর পেয়ারা, আমোদি মাছ ভাজা ছিল, কারণটা বিশদে জানালাম না, যারা বোঝার নিশ্চই বুঝে যাবেন।
যাইহোক, আজকে আমাদের গন্তব্যস্থল ছিল,
গতকাল জানিয়েছিলাম বাঘ মামার দর্শনের একটা সুপ্ত ইচ্ছে ছিলই, তাই এই জায়গায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সকলে মিলে।
এখানে অন্যান্য প্রাণী সহ বাঘেদের নিয়ে আসা হয় চিকিৎসার কারণে।
প্রথমে তাদের উদ্ধার করে চিকিৎসা দ্বারা সুস্থ করে পুনরায় জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হয়।
আচ্ছা, শুধু বাঘ মামা নয়, যেকোনো পশুর ক্ষেত্রেই এটি হল রেসকিউ কেন্দ্র।
এখানে ময়ূর, কুমিরের উপস্থিতি ছিল, তবে আমি ভিতরের রাস্তা ধরে আগে বাঘের দর্শন করতে গিয়ে ময়ূরের ছবি তোলা হয়নি।
আপনাদের সাথে ছবি সহ ছোট্ট ছোট্ট ভিডিও ভাগ করে নিচ্ছি, যাতে রোমাঞ্চকর দৃশ্যের খানিক উপভোগ করতে পারেন।
কিছু কিছু বিষয়ে মানুষ কেমন শিশুর মত আচরণ করেন, তার নিদর্শন আজকে বাঘ দেখার সময় আমাদের সাথে যাওয়া সিনিয়র ব্যক্তিদের দেখে শিখলাম।
বাঘ মামা তো তার মত করেই বিশ্রাম নিচ্ছে, এদিকে সিনিয়রদের ইচ্ছে তার মুখ দর্শন করবে!
তাই, তাকে বিভিন্ন নাম সহ শব্দের প্রয়োগ করে দৃষ্টি আকর্ষণ করবার প্রয়াস করে চলেছিলেন সাথে যাওয়া সিনিয়ররা
আমার কাণ্ড দেখে বেজায় হাসি পেয়েছে!
আসলে ওখানে ছিল তিনটি বাঘ ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানে, আর বেশ দূরে।
মাঝে যে ব্রিজ দিয়ে চিকিৎসালয় যেতে হয়, সেটিতে পর্যটক দের যাওয়া নিষিদ্ধ।
এরমধ্যে একটি বাঘের নাম সোহান। আচ্ছা তার বিবরণ সহ খাদ্য তালিকা লেখা ছিল একটি জায়গায়, ছবিতে নিশ্চই দেখতে পাচ্ছেন?
তবে, যেটা মুশকিল সেটা হল, পর্যটকরা তো আর জানেন না, তিনটির মধ্যে কোনটি সোহান, আর এই রকম আচরণ করা সিনিয়ররা যে বাঘ দেখছে তাকেই ঐ নামে ডাকছে, তাদের যুক্তি যার নাম সে নিশ্চই নিজের নাম শুনলে একবার তাকাবে! ভাবুন একবার!
আচ্ছা, প্রথমে যখন বাঘ দেখতে পাচ্ছেন না, তখন বলছেন, যাদের নাকি জন্ডিস আছে, তারাই নাকি খালি বাঘ দেখতে পান!
আমি তো হেসে কুটিপাটি! মাথায় আসেও বটে!
এই ঝরখালির মাঝে যে পার্ক রয়েছে, সেখানে দেখলাম বেশ কিছু সুন্দর সুন্দর ফুল এবং পার্কের মাঝখানে নানা বর্ণের ভিন্ন ভিন্ন ফুল দিয়ে বেশ সুন্দর করে সাজানো।
এই পার্কে প্রবেশের জন্য বড়দের মাথা পিছু ৩০ টাকা আর শিশুদের ১০ টাকা করে টিকিট ধার্য্য করা।
পার্কে পৌঁছনোর মাঝে ছিল স্থানীয় বাজার, যেখান থেকে কিছু জিনিস কিনেছি, সেগুলো সহ বাড়ি ফেরার যাত্রার কথা কাল আপনাদের সাথে ভাগ করে নেবো।
ওখান থেকে বেরিয়ে আবার লঞ্চে উঠে পঞ্চ নদীর মধ্যে দিয়ে পুনরায় হোটেলে ফিরে আসি সাড়ে চারটের সময়।
বেলাশেষের সুন্দরবনের সূর্য্য কে ছবিতে ধারণ করে।
আজকে, জল খুব কম খাওয়ার ফলে, ঠিক করেছি, রাতটা জল খেয়ে থাকবো, কারণ কালকে আবার জল কম খাবো, রাস্তায় কাটবে অনেকটাই সময়।
আগামীকাল, এই যাত্রার অবশিষ্ট অংশ সহ, নিজের কিছু অনুভূতি এবং অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেবো, জানিনা আর কোনোদিন আসা হবে কিনা!
তবে, এইবারের অভিজ্ঞতা স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
ভিডিওতে যিনি বলেছেন টারজনের আওয়াজ দিলে বাঘটা আসতে পারে,তাকে আমার পক্ষ থেকে একটা স্যালুট জানাবেন। এতো বুদ্ধি কোথায় রাখেন বড় জানতে ইচ্ছে করছে।
লেখার শেষ অংশ পড়ে হাসতে হাসতে আমার তো পেট ব্যথা হওয়ার যোগাড়। তবে যাই বলুন না কেন এই সকল মানুষদের সাথে ঘুরে কিন্তু মজা আছে, এক মিনিটও আপনার মুখ থেকে হাসি দূর হতে দেবে না। যাদের জন্ডিস আছে তারাই শুধুমাত্র বাঘ দেখতে পারে এই যুক্তিটা তো আরও মারাত্মক।
সবকিছু মিলিয়ে আপনার ঘোরার অভিজ্ঞতা যে ভালো, আপনি যে আনন্দ করছেন, এটা জেনেই খুশি হলাম। পরবর্তী পর্বে আপনার অভিজ্ঞতা শোনার অপেক্ষায় রইলাম, আর কি কি শপিং করলেন সেটাও তো জানতে হবে,তাই না? ভালো থাকুন, কাল সুস্থভাবে ফিরে আসুন এইটুকুই প্রার্থনা। শুভ রাত্রি।
আরে একদম! ঐ ব্যক্তির নাম প্রসূন! সাংঘাতিক সেন্স অফ হিউমার! পুরোটা যাত্রায় এক কথায় মাতিয়ে রেখেছিলেন।
আমি তো সব ভিডিও দিতেই পারিনি শরীর ভাল ছিল না এতদিন বাদে বাইরে বেরোলে যা হয়।
তার উপরে আমি বেশি সঙ্গী নিয়ে ঘুরে অভ্যস্ত নই, নতুন মানুষ নতুন পরিবেশ সব নিয়ে অনেক ছবি ভিডিও দেওয়া বাকি আছে।
যদি দিতে পারি পরে, হয়তো বুঝবি কিছু মানুষ কিভাবে জমিয়ে রাখতে পারে একসাথে অনেক মানুষকে।
বাঘ মামার সাক্ষাৎ পেয়ে গেলেন অবশেষে, আপনার দ্বিতীয় দিনের সুন্দরবনের, ঘোরাঘুরি দেখে অনেক আনন্দই পাচ্ছি! আমি কখনো সুন্দরবনে ঘুরতে যাই নাই! তারপরও আমি যতটুকু জানি,আমাদের বাংলাদেশে, আপনাদের মতন সুন্দরবনের ভিতরে এরকম মিনি চিড়িয়াখানা নাই! এত সুন্দর চিড়িয়াখানা দেখে খুব ভালোই লাগছে। আপনার পোস্টটি পড়ে জানতে পারলাম, আপনারা যে প্যাকেজের মধ্যে সুন্দরবনে ঘুরতে গিয়েছিলেন, এর মধ্যে খাবারের তালিকা অনেক কিছুই ছিল! আপনার ভিডিওগুলোতে দেখতে পেলাম। সুন্দরবনের আরও কিছু সৌন্দর্য, যা অনেক মনমুগ্ধকর দৃশ্য ছিল! এত সুন্দর একটি আনন্দ মুহূর্ত আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য, আপনাকে ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন,সুস্থ থাকবেন, আর আপনার জন্য সব সময় দোয়া রইল দিদি।
পেলাম বটে তবে ভালো হতো যদি ডিজিটাল ক্যামেরা থাকতো!
অনেকটাই দূরে তার অবস্থান ছিল, মানে তাকে সামনাসামনি দর্শন করতে হলে কুমির ডিঙিয়ে যেতে হতো, সেটা করবার চেষ্টা করলে এই মন্তব্য কুমিরের পেট থেকে করতে হতো!
তাই সে পথে না হেঁটে ঐ দূর থেকে দেখেই সন্তুষ্ট হয়েছি।
এখানে জঙ্গলের পশুদের চিকিৎসা করতে নিয়ে আসে, আবার জঙ্গলে ছেড়ে দেয়, এটা পশু সংরক্ষণের একটু ভাল দিক।
তবে, এদের দেখে বয়স্ক মানুষ কেমন শিশুর মত আচরণ করে, সেটা আমায় বেশ আনন্দ দিয়েছে।
@muzack1 thank you for your support 🙏☺️