চিড়িয়াখানায় সুন্দর একটি দিন কাটানোর মুহূর্ত।।

in Incredible India22 days ago
  • আসসালামু আলাইকুম কেমন আছেন সবাই আশা করি সবাই ভাল আছেন। আজকে আমি আপনাদের মাঝে শেয়ার করবো, আমার জীবনে চিড়িয়াখানার কাটানো সুন্দর একটি দিন।

IMG_20241201_213201.jpg

ঢাকায় এসে ছয় মাস হয়ে গেল। এই শহরের ব্যস্ততা, নতুন জীবন, সব কিছুতেই এখনও মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। আমি আর আমার দুই বছরের ছোট্ট মেয়ে আমাদের দিনগুলো বেশ সাদামাটা। সকালবেলা আমার স্বামী অফিসে যায়, আর আমি আর মেয়ে বাসায় দিন কাটাই। তবে এই সাদামাটা জীবনের মাঝে একটা প্রাণের স্পন্দন এনে দিয়েছিল আমাদের সাম্প্রতিক অতিথিরা।

আমার শ্বশুর, আমার ননাস আর তার বড় ছেলে এসেছিলেন আমাদের বাসায়। যদিও শ্বশুর মাত্র দুই-তিন দিন থেকেই গ্রামের বাড়ি ফিরে গেছেন,এই দুই তিন দিন আমার শশুর কে রেখেছি অনেক কষ্টে। তিনি আসার পর একটা রাত থেকেই গ্রামের বাড়িতে চলে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমি কিছুতেই যাইতে দেইনি। ভেবেছিলাম শ্বশুরকে নিয়েই এই সুন্দর চিড়িয়াখানা টি সবাই মিলে ভ্রমণ করে আসব কিন্তু সেই সুযোগ আর হয়নি।

IMG_20241201_213127.jpg

কি আর করার,তাই শ্বশুরকে বিদায় দিলাম। আমার বাসায় থেকে গেল আমার ননাস এবং তার ছেলে। যেহেতু আমার ননাস এবং তার ছেলে থেকে গেলেন আমাদের বাসায় তাই তাদেরকে নিয়েই বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ালাম। ঘরটা যেন নতুন করে গুনগুন করতে শুরু করল। একটা পরিকল্পনা করলাম, যেটা সবার মন ভালো করবে চিড়িয়াখানা ভ্রমণ।

IMG_20241201_213147.jpg

সকালে উঠে নাশতা সেরে সবাই মিলে বেরিয়ে পড়লাম। আমার ছোট মেয়েটা খুব খুশি, তার যেন আনন্দ ধরে না। গাড়িতে বসে চিড়িয়াখানা যাবো, বলে বলেই লাফালাফি করছিল। যখন চিড়িয়াখানায় পৌঁছলাম, প্রথমেই মন ভরে গেল পাখিদের ডানার শব্দে। নানা রঙের পাখি, তাদের কিচিরমিচির আওয়াজে যেন পরিবেশটা জেগে উঠেছে।আমার মেয়ে হাততালি দিতে দিতে বলল, কাখি! কাখি! যেহেতু আমার মেয়ে এখনো পাখির নামটা সঠিকভাবে বলতে পারেনা এজন্য পাখিকে কাখি বলে। আমার মেয়ের এই কাখি ডাকা শুনে সবাই আমরা হেসে উঠলাম। আমি আর আমার ননাস ওকে সামলাতে ব্যস্ত।
আমার ননাসের ছেলেটাও বেজায় উৎসাহী, সে নিজেই পাখিদের নাম বলে বলে আমাদের জানাচ্ছে। এরপর গেলাম বানরদের খাঁচার সামনে। বানরদের লাফালাফি দেখে সবাই এমন হেসেছিলাম যে, আশেপাশের মানুষও তাকিয়ে তাকিয়ে হাসছিল। একবার তো একটা বানর এমন ভঙ্গি করল, যেন আমাদের সঙ্গেই মজা করতে চাইছে।
সবচেয়ে মজার অভিজ্ঞতা হলো হরিণের খাঁচার সামনে।

IMG_20241201_214108.jpg

মেয়েটা একটু ভয় পেয়ে গিয়েছিল, তার ছোট্ট হাত দুটো আমার আঁচল শক্ত করে ধরল। কিন্তু আমার ননাসের ছেলেটা এতটাই সাহসী যে, সে হরিণের ছবি তুলতে ব্যস্ত।
পাখিদের এই কিচিরমিচির শব্দ এক নিমিষেই মনটা ভালো করে দিল। আবার হঠাৎ আমার এই পাখিদের বন্ধি অবস্থা দেখে এতটাই খারাপ লাগল যে যদি এদের ছেড়ে দিতে পারতাম। কিন্তু তা তো আর সম্ভব না পাখিদের জীবনটাই এমন এরকম সারা জীবন খাচায় বন্দি থাকা। মনটা আবার খারাপ হয়ে গেল। আমি আমার ননাস কে বললাম আপু, দেখুন এই পাখিদের কি অবস্থা। সারাটা জীবন একটা বন্দি অবস্থায় থাকে এদেরও তো খারাপ লাগে।আপু আমাকে বলল কি আর করার ওদের জীবনটাই এমন। পাখিরা চাইলেও মুক্ত আকাশে উড়তে পারে না। যাই হোক সব বাদ দিয়ে বাস্তবে ফিরে আসলাম।

IMG_20241201_214054.jpg

তখন সূর্যের আলোও যেন মায়া ছড়িয়ে দিয়েছিল পুরো চিড়িয়াখানার ওপর। হাতি, হরিণ, জিরাফ, আর কত রকম প্রাণী দেখলাম। আমার ছোট্ট মেয়েটা প্রথমবার জীবন্ত প্রাণীদের এভাবে দেখে একের পর এক প্রশ্ন করছিল। মাঝে মাঝে আমরা ওকে খেলনা কিনে দিয়েছি, খাওয়ানোর সময়ও হল। মেয়েটা আঙ্গুলে চিপস খেতে খেতে বলল, আম্মু, আবার আসবো।

IMG_20241201_214433.jpg

সন্ধ্যায় যখন বাড়ি ফিরলাম, তখন সবার শরীর ক্লান্ত হলেও মন ভরে গিয়েছিল। ননাসের বড় ছেলে সারাদিনের মজার ঘটনা মনে করে জোরে জোরে হাসছিল। আমার মেয়েটা ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়ল, তার মুখে এখনও হাসির ছাপ।

এমন দিনগুলো আমাদের জীবনে খুব কম আসে, কিন্তু সেই মুহূর্তগুলোই আমাদের হৃদয়কে স্মৃতির আলোয় ভরিয়ে তোলে। চিড়িয়াখানার এই দিনটা ছিল সেই রকমই এক আনন্দময় দিন, যা আমরা অনেক দিন মনে রাখব।

  • কিছু কিছু জিনিস আমরা চাইলেও ভুলতে পারিনা। এই দিনটি আমাদের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে আজীবন। এত সুন্দর দিনটি কাটিয়েছি আরো স্মরণীয় করে রাখতে আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। আপনাদের কেমন লাগলো আমার এই গল্পটি অবশ্যই জানাবেন। আজ এই পর্যন্তই সবাই ভালো থাকেন সুস্থ থাকেন আল্লাহ হাফেজ।
Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 22 days ago 

Thanks

 22 days ago (edited)

পরিবারে লোকজন বেশি থাকলে একটা রমরমা পরিবেশ সর্বদাই বিরাজ করে। কিন্তু বর্তমানে যৌথ পরিবার গুলো কদাচিৎ দেখা যায়। যে কারণে সেই রমরমা পরিবেশ ও আর দেখা যায় না। আপনার স্বল্প সদস্যের পরিবারে হঠাৎ অতিথিদের আগমণ তাহলে প্রাণের স্পন্দন তো অনুভব হবেই।

জীবন জীবিকার তাগিদে এভাবে আমাদের আপনজনদের ছেড়ে অনেক সময় দূরত্বে অবস্থান করতে হয়। কিন্তু আপনজনদের হঠাৎ উপস্থিত এটা অনেক আনন্দের হলেও হঠাৎ বিদায়টা অনেক কষ্টকর। তবে আপনার শশুরকে দুই তিন দিন রাখতে পেরেছিলেন এটা জেনে বেশ ভালো লাগলো।

চিড়িয়াখানার মধ্য থেকে তোলা প্রথম হরিণের ছবিটি আমার কাছে অনেক বেশি আকর্ষণীয় মনে হয়েছে। যদি কখনো খুলনা আসেন তবে করমজল পরিদর্শন করার অনুরোধ করছি। কারণ সেখানে বন্য হরিণকে আপনি হাতে করে গাছের পাতা খাওয়াতে পারবেন।

 22 days ago 

আপনার কথাগুলো সত্যিই মন ছুঁয়ে গেল আপু । যৌথ পরিবারের সেই রমরমা পরিবেশ আজ সত্যিই বিরল, তাই হঠাৎ অতিথি এলে বাড়িতে যেন এক নতুন প্রাণের সঞ্চার হয়। শশুরকে দুই-তিন দিন কাছে পেয়ে সত্যিই ভালো লেগেছিল, কিন্তু বিদায়ের কষ্টটা ঠিকই রয়ে যায়।

চিড়িয়াখানায় তোলা ছবিগুলোর কথা বললে, হরিণের ছবিটা আমিও বিশেষ পছন্দ করেছি। খুলনার গরম জলে বন্য হরিণকে হাত দিয়ে খাওয়ানোর সুযোগের কথা শুনে বেশ আগ্রহী হলাম। ভবিষ্যতে সুযোগ পেলে অবশ্যই সেখানে যাবার চেষ্টা করব। আপনার পরামর্শের জন্য ধন্যবাদ।সব সময় ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। আপু

Loading...
 21 days ago 

নিজেদের মানুষদের সাথে ঘোরাফেরা করতে গেলে তার আনন্দটাই অন্যরকম লাগে। যদি আপনার শ্বশুর মশাই যেতে পারত তাহলে হয়তো বা আনন্দটি আরো অনেক বেশি হতো। যাইহোক সে গ্রামের বাড়ি চলে গিয়েছে বলে আর আপনাদের সাথে ঘোরাফেরা করতে পারল না। আপনারা চিড়িয়াখানা ঘুরে এসেছেন আশা করি অনেক আনন্দ অনুভব করেছেন এবং পোস্ট দেখে বোঝাই যাচ্ছে। যাইহোক সুন্দর একটি দিনের লেখা আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

Coin Marketplace

STEEM 0.26
TRX 0.25
JST 0.040
BTC 92903.81
ETH 3331.70
USDT 1.00
SBD 3.29