মায়ের প্রতিশ্রুতি
আসসালামু আলাইকুম
- মা হওয়া মানে শুধু একটি সন্তানের জন্ম দেওয়া নয়, বরং প্রতিদিন তার শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য নিরন্তর লড়াই করা। সন্তানের হাসিমুখ দেখতে মায়েরা দিনের পর দিন নিজের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ত্যাগ করেন। সন্তানের অসুস্থতা মায়ের জন্য সবচেয়ে বড় উদ্বেগ। এই অবস্থায় মা যেমন মানসিক কষ্টে ভোগেন, তেমনি তাকে শারীরিক পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। আমি একজন মা, আমার দুই বছরের ছোট্ট মেয়ে মিরা গত কয়েক দিন ধরে জ্বরে ভুগছে। এই কয়েক দিনের অভিজ্ঞতা আমাকে আরও একবার মায়ের ত্যাগের প্রকৃত অর্থ বুঝিয়েছে। চলুন, আমার একটি সাধারণ দিনের গল্প শোনাই।
শীতের সকাল। জানালা দিয়ে ঠাণ্ডা হাওয়া ঢুকছে, কিন্তু আজ মনটা একদম ফুরফুরে নয়। আমার দুই বছরের মেয়ে মিরা গত দুই-তিন দিন ধরে জ্বরে ভুগছে। তার শরীর গরম হয়ে আছে, চোখ দুটো ফ্যাকাসে। মেয়েটা এমনিতে দুষ্টু, সারাক্ষণ এদিক-সেদিক ছুটে বেড়ায়। কিন্তু এখন সে একদম শান্ত, আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে থাকে। এ যেন আমার ছোট্ট চঞ্চল পরির একটা ভিন্ন রূপ।
মিরার অসুস্থতার জন্য আমি এক মুহূর্তের জন্যও শান্তি পাচ্ছি না।সারারাত আমার মেয়েটা ঘুমাই নি আমরা দুইজনও ঘুমাতে পারিনি। আমার ভেতরে এক অদ্ভুত উদ্বেগ কাজ করছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি, মেয়েটার শরীর আগের মতোই গরম। বুকের ভেতর চিনচিনে একটা যন্ত্রণা শুরু হয়। নিজের অনুভূতি চেপে রেখে তাকে এক হাতে কোলে নিই আর অন্য হাতে দৈনন্দিন কাজ শুরু করি।মিরার বাবা আমাকে অনেক হেল্প করতেছে।কিন্তু সব কাজ তো আর ছেলে মানুষ পারেনা তাই কষ্ট করে আমাকেই করতে হচ্ছে।
রান্নাঘরে ঢুকে প্রথমে চুলা জ্বালালাম। ভাত আর তরকারি বসালাম। ভাবছি, মেয়েটার জন্য নরম করে খিচুড়ি রান্না করবো। মিরাকে খাওয়াতে হবে। কিন্তু সে তো কিছুই মুখে তুলতে চাইছে না। গতকাল রাত থেকে শুধু পানি খাচ্ছে। পানি খাওয়ানোও যেন একটা যুদ্ধ হয়ে গেছে। এক হাতে তাকে সামলে অন্য হাতে কাজ চালাতে চালাতে নিজেকে অসহায় লাগছে। সংসারের কাজ তো থেমে থাকে না। রান্না করতে করতে কাটা-বাছা করি, আবার মাঝে মাঝে মেয়েকে পানি খাওয়াতে যাই। মেয়েটা ক্লান্ত শরীরে আমার কাঁধে মাথা রেখে থাকে।
রান্না শেষ হতে হতে বেলা প্রায় দশটা। ওর বাবা বাজার থেকে জিনিসপত্র নিয়ে এসেছে। হাতে একটা প্যাকেট দিয়ে বলল, দেখো, এগুলো ওর ভালো লাগতে পারে। বিস্কুট, কেক, মাল্টা, পেয়ারা, আরও কিছু আনলাম। যদি কিছু খাওয়াতে পারো, চেষ্টা করো। আমি মাথা নাড়লাম, কিন্তু ভেতরে একটা অনিশ্চয়তা কাজ করল।
মেয়েটা খুব ছোট। এমন অসুস্থ অবস্থায় তাকে খাওয়ানো সত্যিই কঠিন। ওর বাবা বলল, তোমার জন্যও এক বোতল দুধ আর কিছু বিস্কুট এনেছি। এত কাজ করছ, নিজের খেয়াল রাখো। শুনে মনের মধ্যে একটু শক্তি পেলাম। কিন্তু নিজের খাওয়া নিয়ে ভাবার সময় কোথায়? মিরার দিকে তাকিয়ে কেবল মনে হয়, আগে ওর খাওয়া ঠিক করতে হবে।
কিছুক্ষণ পর মিরাকে কোলে নিয়ে বসে মাল্টা খোসা ছাড়ালাম। ছোট্ট এক টুকরো মুখের সামনে ধরলাম। মেয়েটা একবার আমার মুখের দিকে তাকাল। মনে হলো, ওর ভেতরেও একটা চেষ্টা আছে, কিন্তু অসুস্থ শরীর তাকে আটকে রাখছে। সে মুখ ফিরিয়ে নিল। আমার মনটা ভেঙে গেল।এরপর বিস্কুট হাতে দিলাম। তাতেও কোনো কাজ হলো না। এক টুকরো কেকের গন্ধ ওর সামনে ধরলাম। তাও কিছু হলো না। মনে মনে ভাবলাম, আজকের দিনটা কীভাবে পার করব?
মেয়েটার এই কষ্ট দেখতে দেখতে আমি নিজেও ভেঙে পড়ছি। কিন্তু নিজের ভেতরের দুর্বলতা প্রকাশ করতে পারি না।মাঝে মাঝে মেয়েটা কেঁদে ওঠে। তাড়াতাড়ি তাকে কোলে নিই। তখন সে আমার গলা জড়িয়ে ধরে। মনে হয়, ওর জন্য আমিই পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়। আমাকে ছাড়া যেন ওর আর কিছুই দরকার নেই।বেলা গড়িয়ে দুপুর হলো। রান্না শেষ হয়েছে। ওর বাবা তখন অফিসের কাজ শেষে বাড়ি ফিরেছে। সে এসে মেয়েকে আদর করতে চাইল, কিন্তু মিরা আমার কাছ থেকে সরতে চায় না। আমার স্বামী বলল, তুমি খেয়ে নাও। আমি ওকে একটু কোলে রাখি।আমি জানি, সে সত্যিই চেষ্টা করছে, কিন্তু মিরার মাকে ছেড়ে থাকতে ইচ্ছে করছে না।
আমি তাড়াতাড়ি একটা গামলা নিয়ে ধোয়া-মোছার কাজ শুরু করলাম। অনেকগুলো কাপড় এই দুই তিন দিনে জমা হয়েছিল সেটা তাড়াতাড়ি করে ধুয়ে ফেললাম। ওদিকে মিরার বাবা ওকে নিয়ে ব্যস্ত। কিন্তু মেয়েটা যেন নিজের মত প্রকাশ করছে মা ছাড়া আমি থাকতে পারব না। সব কাজ গুছিয়ে মিরার জন্য ভাতের মাড় মেখে কিছু একটা খাওয়ানোর চেষ্টা করলাম। ছোট্ট একটা চামচ নিয়ে ওর মুখের সামনে ধরলাম। কয়েকবার ধরে রাখার পর সে একটু খেল। এই ছোট্ট ব্যাপারটা যেন আমার জন্য বিশাল বিজয়।
বিকেলের দিকে আবার চেষ্টায় লাগলাম। এবার পেয়ারা থেঁতো করে দিলাম। মেয়েটা একটু চেখে দেখল। কিন্তু ততক্ষণে সে আবার ক্লান্ত হয়ে গেছে। সারাদিন কোলে থাকতে থাকতে আমার শরীর অবশ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মেয়েটা যখন মাথা ঘষে ঘুমিয়ে পড়ে, তখন আমার ক্লান্তি ভুলে যাই। তার নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে শুনতে মনে হলো, পৃথিবীর সব শান্তি যেন এই মুহূর্তে এসে মিশেছে।
রাতে মেয়েকে আবার কোলে নিয়ে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করি। কিন্তু নিজের মনে একটা আশা জাগে পরের দিনটা হয়তো ভালো যাবে। হয়তো মেয়েটা একটু সুস্থ বোধ করবে। এই কষ্টের মধ্যেও আমার ভেতরে মায়ের হৃদয় শক্ত হয়ে যায়। আমি জানি, আমার যত্ন আর ভালোবাসাই মেয়েটাকে সুস্থ করে তুলবে।
এই ছোট্ট দিনযাত্রা শেষ হয় গভীর রাতে। মিরাকে পাশে নিয়ে আমি শুয়ে পড়ি। তার গরম শরীরটা বুকে লাগলে মনে হয়, এই পৃথিবীর সমস্ত দায়িত্ব আমার কাঁধে। আর আমি সেটা হাসিমুখেই পালন করব। কারণ, মিরাই আমার জীবন।
- অবশেষে এটাই বলব, মায়ের ভালোবাসার মতো আর কিছুই নেই। সন্তানের জন্য প্রতিটি মায়ের হৃদয় এক অপার ত্যাগ আর ভালোবাসায় ভরা। এই ছোট্ট একটি দিনের অভিজ্ঞতা আমার জীবনে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দিয়েছে। কোনো পরিস্থিতিই একজন মাকে তার দায়িত্ব থেকে বিচলিত করতে পারে না। মিরার অসুস্থতার এই কয়েক দিন আমাকে আবারও মনে করিয়ে দিল, মায়ের ভূমিকা শুধু একটি নাম নয় এটি একটি জীবনের প্রতিশ্রুতি।আজ এই পর্যন্তই সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আমার সোনা পাখিটার জন্য সবাই দোয়া করবেন আল্লাহ হাফেজ।
মীরার অনেক জ্বর জেনে অনেক খারাপ লাগলো। মীরার জন্য দোয়া করি আল্লাহ যেন খুব দ্রুতভাবে সুস্থ করে তুলে। একটি বাসায় যদি, একটি বাচ্চা থাকে, তাহলে বাড়ির সবাই সব সময় আনন্দের মাঝে থাকে। কেননা বাচ্চারা সব সময় দৌড়াদৌড়ি করে দুষ্টামি করে অল্প - অল্প করে কথা বলে। বাচ্চাদের কোমল মনে অনেক কিছু তারা করে থাকে। যা প্রতিটা মানুষেরই ভালোবাসার কারণ হয় এই বাচ্চারা। আমার বাসায় কয়েকটা বাচ্চা আছে ,আমি বুঝি বাচ্চাদের যদি অসুস্থ
থাকে, সত্যিই ঘরটা অনেক খালি-খালি লাগে মনে হয় কি জানি নাই, আর ভালো লাগেনা।
মায়ের ভালোবাসা যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। এর জন্য আল্লাহ তা'আলা মায়ের স্থান সবার প্রথমে দিয়েছে বাবার স্থান দ্বিতীয়তে। আশায় আছি মিরা খুব দ্রুতভাবে সুস্থ হবে। আপনি আবার মীরাকে নিয়ে একটি পোস্ট দিবেন। ভালো থাকবেন সুস্থ ,থাকবেন।
0.00 SBD,
1.40 STEEM,
1.40 SP
সুন্দর এবং আন্তরিক মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ। মিরার জন্য আপনার দোয়া এবং ভালোবাসা আমাদের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। আলহামদুলিল্লাহ, মিরা এখন অনেক ভালো আছে, আগের মতোই দৌড়াদৌড়ি আর দুষ্টামি করছে। সত্যি, একটা বাচ্চা অসুস্থ থাকলে পুরো বাড়ির পরিবেশটাই যেন বদলে যায়, সবকিছু ফাঁকা ফাঁকা লাগে।
আপনার কথাগুলো সত্যিই অনেক গভীর এবং সুন্দর। মায়ের ভালোবাসার স্থান যে কতটা উঁচু, তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না। আল্লাহ যেন আপনার এবং আপনার পরিবারের সবাইকে সুস্থ ও ভালো রাখেন। আবারও মীরার ভালো থাকার খবর নিয়ে শীঘ্রই একটি পোস্ট দেবো। আপনিও ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
আপু আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমার পোস্টটি মূল্যায়ন করার জন্য।