গ্রামের ঐতিহ্য ধান সিদ্ধ
আসসালামু আলাইকুম
- প্রিয় বন্ধুরা কেমন আছেন সবাই আজ অনেকদিন পর হাজারো ব্যস্ততা ছেড়ে আপনাদের মাঝে চলে আসলাম গল্প লেখার জন্য আশা করি গল্পটা আপনাদের অনেক ভালো লাগবে।
গ্রামের পাড়ায় সকালে যখন আলো ফুটে, তখন চারপাশে শীতের হিমেল হাওয়ার মাঝে এক ধরনের কর্মব্যস্ততা দেখা যায়। ধান সিদ্ধ করার জন্য পুরো উঠোন যেন একটা ক্ষুদ্র কর্মশালায় পরিণত হয়। আজ সকাল থেকেই আমরা দুজন, আমি আর আমার শাশুড়ি, প্রস্তুতি শুরু করেছিলাম। শীতের সকাল, কিন্তু আমাদের কাজের উত্তাপে যেন শীতের কাঁপুনি আর টের পাচ্ছিলাম না।
ধান সিদ্ধ করা কোনো সাধারণ কাজ নয়, এটা গ্রাম বাংলার এক অনন্য ঐতিহ্য। প্রথমেই আমাদের উঠোন অনেক গুলো খড়কুটা রোদে দিয়েছিলাম ভালোভাবে শুকানোর জন্য।বেশ কিছুক্ষণ পর যখন খড়কুটোগুলো মচমচা হলো রোদে তখন আমি উঠানটা ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিলাম সবগুলো খরকুটো এক জায়গায় করলাম ধানের নিচে জাল দেওয়ার জন্য। তারপর ধানগুলো উঠোনের এক কোণে স্তূপ করলাম।
আমি একটা মাটির চুলায় বড় একটা হাড়ি বসাইয়া দিলাম তাতে পরিমাণ মতো এক জগ পানি ঢেলে দিলাম। ঢেলে দেওয়ার পর আমার শাশুড়ি আমাকে বলল তুমি চুলাতে আগুনটা ধরাও আমি পাতিলটা ভরে দিচ্ছি ধান দিয়ে। আমি সেই ভাবেই কাজ করতে লাগলাম সকালের রোদ উঠতেই বড় হাঁড়ি বসালাম।এটা আমার প্রথম ধান সিদ্ধ করা না আমি এর আগেও বহুবার ধান সিদ্ধ করেছি এবং সব নিয়ম কানুন আমি জানি একটু কষ্ট কম হওয়ার জন্য আমরা দুজন মিলে এই কাজটা করছি আমি আর আমার শাশুড়ি।
আগুন জ্বলে উঠলে হাঁড়িতে পানি গরম হতে শুরু করল। গরম পানির ভাঁপ উঠছিল, সেই ভাঁপে একটা সোঁদা মাটির গন্ধ ছিল, যা গ্রাম বাংলার প্রকৃত স্বাদকেই যেন প্রকাশ করে।এদিকে আমি ধানের নিচে খরকুটা দিয়ে জাল দিচ্ছিলাম আর ওদিকে আমার শাশুড়ি উঠোনে অন্য কাজ করছিল। এভাবে প্রায় ৪০ মিনিট ধানের নিচে জাল করতে হয়। আমি আনুমানিক ৪০ মিনিটের কথা বললাম কিন্তু আমরা বুঝি যখন ধানের ওপর একটা ভাব চলে আসে তখন ধানটা নামাইতে হয়।
ধান সিদ্ধ করা যেন কেবল একটা কাজ নয়, এটা ভবিষ্যতের জন্য এক ধরনের প্রস্তুতি।
পানি ফুটে গেলে ধানগুলো হাঁড়িতে ঢালা হলো। তখন শাশুড়ি বললেন,তাড়াহুড়ো করিস না, আস্তে আস্তে ঢাল। তাপটা সমান হতে দে।গরম পানিতে ধান ফুটতে শুরু করল। সেই ফুটন্ত পানির আওয়াজ, ধোঁয়ার মিষ্টি গন্ধ, আর চারপাশে পাখিদের ডাক সব মিলে একটা অপরূপ পরিবেশ তৈরি হলো।
যখন ধান সিদ্ধ হয়ে গেল, তখন সেগুলো চালনি দিয়ে ছেঁকে মাচায় শুকানোর জন্য রাখা হলো। শাশুড়ি প্রতিটি চালের দানাকে হাতে তুলে দেখছিলেন। তাঁর চোখে সন্তুষ্টির ঝলক ছিল। আমি তখন পাশে দাঁড়িয়ে ভাবছিলাম, এই সামান্য কাজের মধ্যেও কত ঐতিহ্য, কত স্মৃতি লুকিয়ে আছে।সারাদিন আমরা দুজনই পরিশ্রম করলাম, কিন্তু ক্লান্তি অনুভব করিনি। বরং আমাদের এই কাজের মধ্য দিয়ে একটা সুন্দর সম্পর্ক গড়ে উঠল। শাশুড়ি বারবার বলছিলেন, তোর মায়ের মতো কাজ করেছিস আজ! এই প্রশংসা যেন আমার হৃদয়কে ভরে দিল।
ধান সিদ্ধ করার দিনটা কেবল একটি কাজের দিন ছিল না।এটি ছিল শাশুড়ি আর আমার সম্পর্কের নতুন বাঁধনের দিন। গ্রামীণ জীবনের এই সরলতা, ঐতিহ্য আর আন্তরিকতাই আমাদের জীবনকে সুন্দর করে তোলে।
- আজ এই পর্যন্তই সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন এবং আমাদের জন্য দোয়া রাখুন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
নিজের চোখে দেখছি ধান কাটা থেকে শুরু করে পুরোটা একটা প্রসেসের মাধ্যমে ধান শুকানো ধান সিদ্ধ দেওয়া অনেক একটা কষ্টের ব্যাপার আগে তো গ্রামে ট্রাক্টর ছিল না ধান মারার যন্ত্র ছিল না আগে মানুষরা গরু দিয়ে ধান মারতো। গ্রামের এই দৃশ্যগুলো এখনো চোখে মাঝে মাঝে ভেসে ওঠে! ধানের সময় শেষ হয়ে গেলে কৃষকরা তখন আনন্দে আত্মহারা থাকে তখন গ্রামের লোকেরা মিলেমিশে , মেলা দেয় বিভিন্ন রকমের অনুষ্ঠান করে থাকে। আপু আপনারা তো এখন অগ্রাহন শেষ তাই না। এইবার কত নাম্বার ধান লাগাইছেন আর কি পরিমান ধান হয়েছে কাঠা প্রতি ।
ছোটবেলা থেকে গ্রামে বড় হয়েছি তাই ধান সিদ্ধ করা থেকে চাষের কাজ পর্যন্ত সবকিছু দেখেছি এবং কম বেশি পারি। অবশ্যই আমাদের এলাকায় এমন পাতিলে করে সিদ্ধ করতে দেখি নাই। আমাদের দিকে বড়ো কড়াই করে সিদ্ধ করে যাই হোক বাদবাকি সবই একই। লেখাটি এবং গ্রামের ঐতিহাসিক ধান সিদ্ধ করার পোস্ট শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
জি ভাই আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য। আমাদের গ্রামে আমি ছোট থেকে বড় হয়েছি এরকম পাতিলে ধান সিদ্ধ করতে দেখেছি এবং আমিও তাই করি। আসলে একেক এলাকার একেক রকম পাতিল বা করাই যেভাবেই করুক কিন্তু ধান সিদ্ধ একইভাবে করে আমার মনে হয়।