একসাথে একটি দিন: জাতীয় জাদুঘর ভ্রমণ

in Incredible India20 days ago

আসসালামু আলাইকুম কেমন আছেন সবাই আশা করি সবাই ভাল আছেন আমি আলহামদুলিল্লাহ বেশ ভালো আছি। আজকে আমি আপনাদের মাঝে একটা নতুন গল্প নিয়ে এসেছি চলুন দেরি না করে শুরু করা যাক।

IMG_20241129_161239.jpg

গত সপ্তাহে বিকেল বেলা আমার শাশুড়ি, খালা শাশুড়ি এবং মামি শাশুড়ি আমাদের বাসায় বেড়াতে এসেছিলেন। পুরো বাসাটা যেন আনন্দের গুঞ্জনে ভরে উঠেছিল। রান্নাঘরে নানা রকমের খাবারের গন্ধ, বড়দের হাসি-গল্প, আর আমার দুই বছরের মেয়ের ছোট ছোট দুষ্টুমিগুলো মিলিয়ে বাসাটা যেন উৎসবের মঞ্চে পরিণত হয়েছিল। সেই আনন্দ আরও একটু বাড়ানোর জন্য আমি এবং আমার হাজব্যান্ড সিদ্ধান্ত নিলাম যে সবাই মিলে ঢাকার জাতীয় জাদুঘরে ঘুরতে যাব।

পরের দিন সকালে, শীতের মিষ্টি বাতাসে স্নিগ্ধ সূর্যের আলো মাখা দিনটিতে আমরা রওনা হলাম। আমার ছোট্ট মেয়েটি খুবই উৎসাহী। ওর ছোট ছোট চোখগুলোতে যেন কৌতূহলের ঝিলিক ফুটে উঠছিল। আমরা বড় একটি গাড়ি ভাড়া করেছিলাম যাতে সবাই আরাম করে বসতে পারে। খালা শাশুড়ি আর মামি শাশুড়ি তো গল্প করতে করতে পুরো রাস্তা জমিয়ে তুললেন। আমার শাশুড়ি মাঝেমাঝে হাসিতে যোগ দিচ্ছিলেন আর আমার হাজব্যান্ড আমাদের আনন্দ উপভোগ করতে গাড়ি সাবধানে চালাচ্ছিল।

IMG_20241129_161221.jpg

জাতীয় জাদুঘরে পৌঁছানোর পর সবাই মুগ্ধ হয়ে গেল। বিশাল প্রবেশদ্বার দেখে আমার মেয়ে তো চিৎকার করে বলল, আম্মু এটা কত বড়! ওর এই মুগ্ধতা দেখে আমরা সবাই হেসে উঠলাম। টিকিট কেটে আমরা ভিতরে ঢুকতেই হঠাৎ করে সিকিউরিটি আমাদের আটকে দিল, আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল, যে ভেতরে ব্যাগ নিয়ে প্রবেশ করা নিষেধ । আমি উনাকে বললাম যে আমার ব্যাগের ভিতর তো মেয়ের এর জন্য খাবার আছে। ব্যাগটা তো সাথে নিয়ে যাইতেই হবে আমাদের।উনি আমাকে বলল যে খাবারটা আপনি হাতে বের করে নেন। কিছুতেই ব্যাগ নিয়ে ঢুকতে দিলো না।

উনি আমার হাজব্যান্ড কে উদ্দেশ্য করে বলল যে ব্যাগটা আপনি ব্যাগ কাউন্টারে জমা করে দিন। কি আর করার সাথে সাথেই আমার হাজব্যান্ড ব্যাগ কাউন্টারে গিয়ে ব্যাগটা জমা করে দিল। এদিকে আমরা ভেতরে প্রবেশ করলাম। ভেতরে প্রবেশ করার পর পরই আমার মনে পড়ল যে আমার মেয়ের জামাটা ব্যাগের ভিতর আছে। বাইরে প্রচন্ড গরমের কারণে আমি মেয়ের জামাটা খুলে ব্যাগের ভিতর ছিলাম। কি আর করার আমি একবার বাইরে বের হলে আমাকে আর ঢুকতে দেবে না।

IMG_20241129_161819.jpg

তাই আমার শাশুড়ি মা বলল যে ও স্যান্ড্রো গেঞ্জি টাই পড়ে থাক জামা লাগবে না যাওয়ার সময় জামাটা পরাইয়া দিও। তাই ওইসব চিন্তা বাদ দিয়ে আমরা প্রথমেই গেলাম প্রাচীন নিদর্শনের গ্যালারিতে।
সেখানে গিয়ে সবাই যেন হারিয়ে গেলাম বাংলাদেশের প্রাচীন ইতিহাসে। হাজার বছর পুরনো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, মুদ্রা আর মূর্তি দেখে আমার শাশুড়ি বললেন, ভাবতেই অবাক লাগে, আমরা কত সমৃদ্ধ ছিলাম। খালা শাশুড়ি প্রতিটি জিনিসের ছবি তুলতে ব্যস্ত। মামি শাশুড়ি আবার কিছু কিছু জিনিসের ইতিহাস নিয়ে আমাদের নানা প্রশ্ন করছিলেন। আমার মেয়ে অবশ্য এর কিছুরই ধার ধারে না,ও শুধু দৌড়ে দৌড়ে এখানে-ওখানে যাচ্ছিল।

এরপর আমরা মুক্তিযুদ্ধ গ্যালারিতে গেলাম। এই গ্যালারিটি দেখে সবাই চুপচাপ হয়ে গেল। যুদ্ধের ছবি, অস্ত্র আর শহীদদের তালিকা দেখে আমাদের গর্ব এবং শোকের এক অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছিল। আমার হাজব্যান্ড অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের ছবির সামনে। আমার মেয়ে কিছু বুঝতে না পেরে বলল, আম্মু এরা কে? আমি তাকে সহজ ভাষায় বোঝানোর চেষ্টা করলাম যে এরা আমাদের দেশের জন্য লড়াই করেছে। শাশুড়ি একবার চোখ মুছলেন। আমার মনেও এক ধরণের ভারী অনুভূতি কাজ করছিল।

IMG_20241129_161142.jpg

IMG_20241129_161127.jpg

এরপর আমরা গিয়ে ঢুকলাম প্রকৃতি ও পরিবেশ গ্যালারিতে। এখানে ছিল নানা ধরণের প্রাণী, পাখি আর গাছের প্রতিকৃতি। আমার মেয়ে তো আনন্দে নেচে উঠল। সে একটি হাতির মূর্তির দিকে ইশারা করে বলল, আম্মু আতো আম্মু আতো।যেহেতু আমার মেয়ে কথা বলা এখনো শেখেনি পুরোপুরি তাই এভাবে আমাকে বুঝানোর চেষ্টা করল এদিকে আসো আম্মু এদিকে আসো। মামি শাশুড়ি হেসে বললেন, এত খুশি হলে তো বাসায় একটা ছোট হাতি রাখতে হবে। সবাই মজা করে হেসে উঠলাম।

জাদুঘরের শেষ অংশটি ছিল শিল্পকলা গ্যালারি। বাংলাদেশের বিখ্যাত শিল্পীদের আঁকা অসাধারণ সব চিত্রকর্ম দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে গেলাম। খালা শাশুড়ি বললেন, এই শিল্পগুলো দেখলে মনে হয় যেন তারা কথা বলছে। আমার মেয়ে অবশ্য আবার নিজের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছিল। তার ছোট ছোট পায়ের শব্দ আর মিষ্টি হাসি যেন আমাদের দিনটাকে আরও রঙিন করে তুলছিল।

IMG_20241129_161202.jpg

জাদুঘরের সব ঘোরাঘুরি শেষে আমরা কাছের একটি পার্কে গিয়ে বসে পড়লাম। আমি বাসা থেকে নানা রকমের খাবার নিয়ে এসেছিলাম। সেগুলো আমরা সবাই মিলে ভাগ করে খেলাম। ছোট্ট মেয়েটা তার ছোট্ট হাত দিয়ে সবার প্লেটে কিছু না কিছু দিতে চাইছিল। ওর এই আদর-আপ্যায়ন দেখে সবাই হেসে উঠলাম।
সেদিন বিকেলে আমরা যখন বাসায় ফিরছিলাম, তখন গাড়ির ভেতর একটা অন্যরকম শান্তি আর তৃপ্তি কাজ করছিল। সবাই খুব ক্লান্ত ছিলাম, কিন্তু আমাদের মনের ভেতর একরাশ আনন্দ ছিল।

খালা শাশুড়ি বললেন, এমন দিনগুলোই মনে রাখার মতো।মামি শাশুড়ি যোগ করলেন, অবশ্যই, আজকের দিনটি খুব বিশেষ হয়ে থাকবে। আমার মেয়ে আমার কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছিল, আর আমি তার মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবছিলাম, এই ছোট ছোট মুহূর্তগুলোই জীবনের আসল সম্পদ।
ঢাকার জাতীয় জাদুঘরে এই ভ্রমণটি শুধু একটি দিন কাটানোর জন্য ছিল না,এটি ছিল আমাদের পরিবারের সাথে কাটানো একটি বিশেষ মুহূর্ত। জীবনের ব্যস্ততার ভিড়ে এমন দিনগুলোই আমাদের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান স্মৃতি হয়ে থাকবে।

যাইহোক আজ এই পর্যন্তই আমাদের পরিবারের সবাই মিলে কাটানো মুহূর্তগুলো আপনাদের কেমন লাগলো অবশ্যই জানাবেন। সব সময় দোয়া করি সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।

Sort:  
 20 days ago 

ছোটবেলা একবার জাতীয় জাদুঘরে গিয়েছিলাম যদিও খুব একটা কিছু মনে নেই তবে আপনার পোস্টটা পড়ে এবং দেখে কিছুটা মনে পড়ছিল,,,।
আপনার কথার সাথে একমত বাসায় কেউ আসলে কিন্তু আর সীমা থাকে না,, আবার চলে যাওয়ার সময় কষ্ট পাওয়ারও আবার অপেক্ষা রাখে না মন।
তবে আপনি যে তাদের কে ঘুরতে নিয়ে গিয়ে অনেক আনন্দ করেছেন,, এটা শুনে ভালো লাগলো,, ঘুরতে গেলে এমনিতে মনটা ভালো লাগে সেই সাথে যদি আরো কাছের মানুষগুলো থাকে এবং সুন্দর সুন্দর দৃশ্য দেখার মত হয় তাহলে তো কথাই নেই ,, আপনার খালা শাশুড়ি কিন্তুু ঠিকই বলেছি এমন আনন্দের দিন সত্যি মনে রাখার মত।।।

 20 days ago 

আপনার মন্তব্য পড়ে সত্যিই খুব ভালো লাগল! ছোটবেলার স্মৃতিগুলো এমনিতেই অমূল্য, আর সেগুলো কোনোভাবে মনে পড়ে গেলে মনের ভেতর যেন এক ধরনের উষ্ণতা কাজ করে। আপনার কথাগুলো একদম ঠিক,পরিবারের কাছের মানুষদের সঙ্গে কাটানো এমন মুহূর্তগুলোই জীবনে বিশেষ হয়ে থাকে।

আমার খালা শাশুড়ির সেই কথাটাই সবচেয়ে ভালো লেগেছিল, কারণ এমন দিনগুলো সত্যিই মনে রাখার মতো। আপনার এই সুন্দর অনুভূতিগুলো শেয়ার করার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ!

TEAM 06
Congratulations!!!
your post has been supported. We support quality posts, good comments anywhere and any tags.
Curated By : @wirngo

 19 days ago 

Thank you

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

Loading...
 17 days ago 

বাসায় অনেক আত্মীয়-স্বজন এসেছে। বাসায় আত্মীয় আসলে অনেক ভালো লাগে। তার পাশাপাশি ছোট বাচ্চা তো আছেই আপনার বাসায়। যাইহোক এটা অনেক ভালো একটি সিদ্ধান্ত আপনারা নিয়েছেন। আপনার শাশুড়ি এবং খালা শাশুড়ি এবং মামি শাশুড়ি তাদেরকে নিয়ে একটু ঘোরাঘুরি করা। তারা হয়তো বা অতি সহজে কোথাও ঘুরতে যেতে পারেনা সংসার জীবনের জন্য। যাইহোক ঢাকা জাতীয় জাদুঘর ভ্রমণ করাতে নিয়ে গেছেন এবং আশা করি আপনারা সবাই অনেক আনন্দ অনুভব করেছেন। শুভকামনা রইল আপনার জন্য ভালো এবং সুস্থ থাকবেন।

Coin Marketplace

STEEM 0.21
TRX 0.26
JST 0.040
BTC 101158.43
ETH 3649.74
USDT 1.00
SBD 3.20