শাসন হোক সোহাগের মাধ্যমে

আমরা কাউকে শাসন করতে গেলে শাসনের পেছনে একটি লক্ষ্য থাকে আর তা হলো কারো কোনো দোষ ত্রুটি থাকলে তা সংশোধন করে দেওয়া। শাসন করার পেছনে যদি প্রতিশোধ প্রবনতা না থাকে বরং সেখানে সহানুভূতির সম্পর্ক বজায় থাকে তবে সেই শাসন হয়ে উঠে তাৎপর্যময়। আমরা সাধারণত কল্যাণ করার উদ্দেশ্য নিয়েই শাসন করে থাকি কাউকে অত্যাচার করার ইচ্ছা নিয়ে অথবা কারো ক্ষতি করার ইচ্ছে থেকে কাউকে শাসন করি না। শাসকের মনের ইচ্ছে যদি হয় কাউকে অত্যাচার করা তবে তার পক্ষে কখনই ন্যায়বিচার করা সম্ভব না।

অন্যায় যে করে সে সকলের চোখে অপরাধী আর সকল অপরাধীরই শাস্তি পাওয়া উচিত। আর কারো কোন দোষ ত্রুটি দূর করার জন্য প্রয়োজন হয় শাসনের। আমাদের সমাজে এ ধরনের শাসনের রীতি প্রচলিত রয়েছে। আমাদের সমাজে অপরাধমূলক কর্মকান্ড করার জন্য অপরাধীকে দন্ড দানের রীতি বহুদিন ধরেই চলে আসছে। এ ধরনের শাসন আমাদের সমাজের উন্নতি করার জন্য খুবই প্রয়োজন। কোন কোন দন্ড নির্মম হয়ে গেলেও আমাদের শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য এর আবশ্যিকতা অপরিহার্য। কোন অপরাধীকে শাস্তি প্রদান করা শাসক বা বিচারকের অপরাধ বা অত্যাচার নয়। ওরা যোগ্যতা ও বিশৃঙ্খলা থেকে সমাজের মানুষদের রক্ষা করার একটি উপায়।

কিন্তু বিশৃঙ্খলা নিরাময়ের নামে শাস্তি যদি হয় নিষ্ঠুর, সমাজবিরোধী এবং সমাজে বিভিষীকার তৈরি করে তবে তা অল্প সময়ের জন্য সফলতা নিয়ে আসলেও সমাজে বিরাজমান অন্যায়কে সমূলে তুলে ফেলতে পারে না। সমাজ থেকে সকল অন্যায় অবিচার সমূলে তুলে ফেলতে চাইলে অন্যায়কারীকে শাস্তি দেওয়া যেমন দরকার ঠিক তেমনি অন্যায়কারীকে শাস্তি দেওয়ার সময় বিচারকের মন অন্যায়কারীর প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া ও প্রয়োজন। শাস্তি দেওয়ার সময় যখন বিচারকের মন কাতর হয় তবে তা অপরাধীর হৃদয়কে স্পর্শ করে যায় যা তার হারানো বিবেক বুদ্ধি ফিরে পেতে সহায়তা করে থাকে। এতে করে অপরাধীর মনে অনুসূচনা হয় এবং বিবেক জাগ্রত হয়। ফলস্বরূপ তারা সুপথে ফিরে আসে।

শাসক বা বিচারকের মূল লক্ষ্য আমাদের শাস্তি দেওয়া নয় বরং আমাদের চরিত্রের দোষ ত্রুটি সংশোধন করে দেওয়া। কাউকে সংশোধন করতে অবশ্যই তার প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া উচিত। মানব কল্যাণের জন্যই এই সহানুভূতি প্রদর্শন করা উচিত নইলে সেই বিচারক বা শাসকের শাসন করা অনুচিত। শাসনের মাঝে সোহাগ থাকলে তাতে কল্যাণ ধর্ম ফুটে উঠে। একারণেই বলা হয়েছে থাকে আমাদের পাপীকে নয় বরং পাপকে ঘৃণা করতে হবে। এই ধরণের আত্মবিশ্বাসে বলিয়ান হয়ে আদর সোহাগের মনোভাব নিয়ে শাসন করলে মানবতার কল্যাণ সাধন সম্ভব।