জুলাই গনহত্যা এবং একটি বিপ্লবী স্বাধীনতা !!

in #writing2 months ago (edited)

আসসালামু আলাইকুম ! সবাই কেমন আছেন । আশা করি ভাল আছেন । আমিও আল্লাহর রহমতে ভাল আছি । আজকে অনেক দিন পর আসলাম স্টিমিটে । আসলে ব্যাস্ততায় সময় হয়ে উঠেনা । তারপরেও মাঝে মাঝে একটু উকি ঝুকি দিই আপনাদের মাঝে। আপনারা জানেন বিগত জুলাই হতের আগষ্টের ৫ তারিখ পর্যন্ত বাংলাদেশে কি ঘটনা ঘটেছে । কি অবর্নণীয় দুঃসময় কেটেছে যা ভাষায় বর্ননা করার মত না। তারপরেও কিছু কথা বলতে হয়। কারন এখন আমরা স্বাধীন ।এখন আমরা মন খুলে কথা বলবো । এতদিন প্রায় দীর্ঘ ১৬ বছরের মত সময় ধরে আমরা নামে মাত্র স্বাধীন ছিলাম। যেখানে আমাদের চলার স্বাধীনতা থাকলেও বলার স্বাধীনতা ছিলনা । এখন আমাদের বাক স্বাধীনতা ফিরে এসেছে। এই স্বাধীনতা পেতে প্রায় এক মাস ৫ দিন আমাদের আন্দোলন করতে হয়েছে । স্বৈরাচারের রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে পরিশেষে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিতে হয়েছে রাজপতে । ৭১ এর স্বাধীনতার পর নতুন করে এই স্বাধীনতা পেতে আমাদের প্রান দিতে হয়েছে নিজ দেশেরই মানুষের হাতে। আমাদের টাকায় কেনা বুলেট আমাদেরই বুকে গেথে দিয়েছে স্বৈরাচারের সহযোগিরা। হাজারের উপর ছাত্র জনতা কে হত্যা করে শেখ হাসিনা। এত বড় গনহত্যা চালিয়েও বিপ্লবী ছাত্রজনতাকে দমাতে পারেনি হাসিনা সরকার । ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের মুখে অবশেষে ৫ই আগস্ট চোরের মত পালাতে বাধ্য হয় স্বৈরাচার হাসিনা।

IMG20181104064812 - Copy - Copy.jpg

২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলন দিয়েই মুলত স্বৈরাচার পতনের বীজ বপন হয় । ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলন সরকার এক প্রকার বাধ্য হয়ে মেনে নিয়ে সরকারি চাকরিতে কোটা থাকবেনা মর্মে প্রজ্ঞাপণ জারি করে । সেই প্রজ্ঞাপণের বিপরীতে কতিপয় কোটাধারি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা আদালতে রিট করে । সেই আবেদন হাইকোট ২০২৪ এর প্রথম দিকে রায় দেয় এবং রায়ে কোটা থাকবেনা প্রজ্ঞাপণকে অবৈধ বলে ঘোষনা দেয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্ররা আবার কোটা সংস্কার আন্দোলনে নামে। প্রথম দিকে কোনো সহিংসতা ছাড়া আন্দোলন এগিয়ে যায় নানা ধরনের কর্মসূচীর মাধ্যমে ।

১৫ জুলাই শেখ হাসিনার জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষনে ছাত্রদের আন্দোলনের উপর বিষদগার করা হয় এবং আন্দোলন কারীদের কে রাজাকারের নাতি বলে গালি দেওয়া হয় ।এরফলে রাতেই প্রতিটা ক্যাম্পাসে ছাত্র ছাত্রিরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে এবং প্রতিবাদে "আমি কে তুমি কে ,রাজাকার রাজাকার " স্লোগানে মূখরিত হয়ে উঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য । প্রতিটা হল থেকে দলে দলে শিক্ষার্থীরা নেমে আসে সেই রাতে । তারপর সড়ক ও জনপদ মন্ত্রি ওবাইদুল কাদের আওয়ামি লীগের দলীয় সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে আন্দোলন দমানোর ঘোষনা দিলে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে ফলে ১৮ জুলাই ছাত্রলীগ অস্ত্র লাঠী নিয়ে আন্দোলন কারীদের উপর চড়াও হয়। এই সময় অনেক শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের নৃশসং হামলার শিকার হয় । হামলায় বাদ যায়না নারী শিক্ষার্থীরাও ।

এরপর সারাদেশের ছাত্রছাত্রীরা আন্দোলনে ফেটে পড়ে এবং হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবী তোলে। সেই সাথে সচেতন অভিবাবকরাও তাদের সন্তানদের পাশে শিক্ষার্থীদের পাশে এসে দাঁড়ায় । আন্দোলন দিন দিন তীব্র থেকে তীব্র হতে থাকে । এ সময় সরকার ক্যাম্পাস বন্ধের ঘোষনা দেয় আন্দোলন বন্ধ করার জন্য এবং ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে পুলিশ র‍্যাব বিজিবি কে পাঠানো হয় । এবং দেশের বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের সাথে আন্দোলন কারীদের সংগর্ষ ঘটে এবং বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের ছাত্র আবু সাঈদের বুকে পুলিশ গুলি চালায়। এই ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশ ব্যাপি নিন্দার ঝড় উঠে এবং আন্দোলন আরো তীব্র হয়ে উঠে । এর পরিপ্রেক্ষিতে বৈষম্য বিরিধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা দেশ ব্যাপি শাট ডাউনের ঘোষনা দেয় । এই দিকে শাট ডাউনের বিপরীতে সরকার জরুরী বৈঠক ডাকে এবং কারপিউ জারি করে । শাট ডাউন কর্মসূচীকে সফল করার জন্য শিক্ষার্থীরা রাজপথে আসার চেষ্টা করলে পুলিশ নির্বিচারের গুলি চালায় নিরীহ আন্দোলনকারীদের উপর । এই দিন প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা পুরো রাজপথ দখল করে ছিলো বলা চলে। প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের সাথে দফায় দফায় সংঘর্ষ ঘটে পুলিশ র‍্যাব বিজিবির ।

IMG20190703191435.jpg

এই আন্দলনে অনেক প্রানহানীও ঘটে ফলে টানা আন্দোলন চলতে থাকে এর মাঝে শিক্ষার্থীদের থেকে ৯ দফার দাবী উত্থাপিত হয় । যেখানে প্রধানমন্ত্রিকে ক্ষমা চাওয়া এবং কয়েকজন মন্ত্রির পদত্যাগ ও চাওয়া হয়। যা সরকার মেনে নিতে পারেনি। এর ভিতরে নানা নাটক তৌরি করা হয় । সমন্বয়কদের ডিবি হারুন তুলে নিয়ে গিয়ে ডীবি কার্জালয়ে জোড়পুর্বক আন্দোলন স্থগিতের ঘোষনা দেয় এতে বিক্ষুব্ধ ছাত্রজনতা আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে । প্রতিদিনের আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহতের সংখ্যা বাড়তে থাকে ।ইন্টারনেট বন্ধ করে ছাত্রজনতার উপর চালানো হয় গনহত্যা। ফলে দেশের সচেতন আপামর জনগন নেমে আসে ছাত্রদের পাশে।

আইনজীবি , শিক্ষক, শীল্পি গোষ্ঠি ,দিন মজুর, রিক্সাচালক সবাই শামিল হয় আন্দোলনে এবং ৯ দফা ততক্ষনে হয়ে যায় ১ দফাতে । এবার স্লোগান উঠে" ১ দফা ১ দাবি হাসিনা তুই কবে যাবি" দফা ১ দাবি ১ ,খুনী হসিনার পদত্যাগ। জুলাই শেষ আগস্টের ৩ তারিখ "রিম্যাম্বারিং আওয়ার হিরোস" ব্যানারে বিশাল এক জনসভা হয় ঢাকার শহীদ মিনারে এবং চট্টগ্রামে। লক্ষ লক্ষ মানুষে কানায় কানায় ভরে উঠে শহীদ মিনারের প্রাঙ্গন। ঘোষনা আসে ৫ তারিখ হতে সর্বাত্নক অসহযোগ আন্দোলনের এবং ৬ তারিখ লং মার্চ টু ঢাকা । এসব কিছুই চলতেছিল কারপিউর ভিতরে। এরপর ৪ তারিখ রাতেই আবার আন্দোলনের সমন্বয়করা ঘোষনা দেন ৬ তারিখ নয় ৫ তারিখ হবে লং মার্চ টু ঢাকা। এরপর সারারাত ছাত্রলীগের গুন্ডারা হুমকি ধামকি দিলেও ৫ তারিখ সকাল থেকে কারপিউ ভেংগে ছাত্রজনতা আসতে থাকে ঢাকার রাজপথে । এদিন সকালে সবজায়গায় পুলিশ জনতার উপর নির্বিচারে গুলি চালায় । এরপর শেষমেশ আন্দোলন দমাতে না পেরে হাসিনা দুপুর ৩ টার দিকে সেনাবাহীনির সহায়তায় পালিয়ে যায় ভারতে। বাংলার আকাশে বাতাসে স্বাধীনতার সু বাতাস বইতে থাকে । চারদিক থেকে জনতা নেমে আসে রাস্তায় । আনন্দ উদযাপন হয় রাস্তার মোড়্ মোড়ে । বাংলার ইতিহাসে রচিত হয় আরেকটি স্বাধীনতা ।২৪ সের স্বাধীনতা । বৈষম্যের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা। মানুষের কথা বলার স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতা নস্যাৎ করার জন্য এখনো দেশ বিদেশি ষড়যন্ত্র চলছে।

এই ছিলো জুলাই গনহত্যার সংক্ষিপ্ত উপস্থাপন ।

সবাইকে ২৪শের স্বাধীনতার শুভেচ্ছা।

t (2).png

Coin Marketplace

STEEM 0.25
TRX 0.21
JST 0.037
BTC 98282.96
ETH 3475.43
USDT 1.00
SBD 3.41