শোকাহত
পরিচিত মানুষগুলোর সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। হঠাৎ করেই যেন আমি পৃথিবীর ভিন্ন রকম একটা রূপ দেখছি। এটা সত্য যে, একদিন সবাইকেই পৃথিবী ছেড়ে যেতে হবে। তবে এ সত্য জানার পরেও, সমসাময়িক সময়ে কাছের মানুষগুলোর চলে যাওয়া মেনে নিতে একটু কষ্ট হয়ে যায়।
আরিফ শুধুমাত্র আমার বয়সে দুবছরের বড় ছিল। তাছাড়াও সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, যেহেতু একই এলাকাতে আমাদের বাড়ি ছিল এবং শৈশব কালের অনেকটা দীর্ঘসময় ওর সঙ্গে আমার কেটেছে, যেমন খেলাধুলা থেকে শুরু করে ঘোরাফেরা সব কিছু করেই, তাই ঐ দুই বছরের বড় সম্পর্কটা একটা সময় যেন বন্ধুত্বে পরিণত হয়েছিল।
ভর্তি পরীক্ষার যুদ্ধে, ও তো বেশ সম্মানের সহিত মেধা তালিকায় ঢাকা মেডিকেলে চান্স পেয়েছিল। তবে আমার মত ছাত্রের জন্য কখনোই সরকারি মেডিকেল না। তাই কোনমতে বাবার অর্থনৈতিক সাপোর্টের কারণে প্রাইভেট মেডিকেলে পড়ার সুযোগ হয়েছিল। মেডিকেলে পড়ার উৎসাহ কিছুটা ওর কাছ থেকেই পেয়েছিলাম।
থাক সেসব কথা, যেহেতু একই এলাকায় বড় হয়েছি, শৈশবের পড়াশোনাটাও করেছি একই স্কুলে। তারপরেও কলেজ জীবন থেকে ওর সঙ্গে আমার কিছুটা দূরত্ব বাড়তে শুরু হয়েছিল। কারণ ও বাহিরে চলে গিয়েছিল আর আমি এলাকাতেই থেকে গিয়েছিলাম। তবে সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে টুকটাক কথা হতো। তবে দেখা হতো শুধুমাত্র উৎসবে।
ওর বাবা ছিল এখানকার নামকরা উকিল। তাছাড়াও কমবেশি ওদের পরিবার এখানকার লোকজনের কাছে খুবই পরিচিত ছিল। আপনাদের কি মনে আছে, আমি মাঝে যে একটা আইনি ঝামেলায় পড়েছিলাম, সেই সময় কিন্তু ওর যে বড় ভাই পুলিশে কর্মরত আছে, সেই কিন্তু আমাকে সহযোগিতা করেছিল।
হঠাৎ করেই আরিফের পারিবারে যেন শোকের ছায়া নেমে এসেছে, গত বছরেই ওর মা মারা গিয়েছে। আরিফ নিজে ডাক্তার হয়েও তার মাকে বাঁচাতে পারেনি। আসলে মৃত্যুর স্বাদ সবাইকেই ভোগ করতে হবে। এটাই চিরন্তন সত্য কথা।
উকিল সাহেবের স্ত্রী চলে যাওয়ার পর থেকে সে অনেকটাই একাকী জীবনযাপন করতো। কারণ আরিফ তার বউকে নিয়ে ঢাকাতেই থাকতো আর ওর ছোট ভাইটা আর্মিতে ট্রেনিং কোর্সে আছে আর ওর বড় ভাই তো পুলিশে। এদিকে উকিল সাহেবকে দেখার দায়িত্বে ছিল একজন কাজের মানুষ।
উকিল সাহেব সারাটা জীবন কষ্ট করে সে তার সন্তানদের বড় করছে। তবে একটা সময়ের পরে কেউ তার পাশে নেই। সবাই ব্যস্ত তাদের আপন ভুবনে। তবে এটাই কিন্তু বাস্তব সত্য কথা। আসলে একটা সময়ের পরে চাইলেও আর কি সেভাবে একত্রে থাকা সম্ভব হয় না। কারণ আরিফের বাবা নিজেও কর্মজীবী মানুষ ছিলেন । যেহেতু পেশায় উকিল, তাই এখানকার কোর্টেই ওকালতি করতো সে।
কর্ম যেন সবগুলো মানুষের ভিতরে আলাদা একটা দূরত্ব তৈরি করে দিয়েছে। কিছুই করার নেই কারণ যার যার জীবন তার তার কাছে। তবে যতদূর আন্দাজ করতে পেরেছিলাম, উকিল সাহেব মূলত হতাশাগ্রস্ত জীবনযাপন করছিল, বলা যায় অনেকটা একাকীত্ব থেকেই তার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়ে মৃত্যু হয়েছে।
তিন ভাই সর্বদা কর্মব্যস্ত থাকতো তাদের কর্মস্থলে। তবে আজ তাদের কর্মব্যস্ততা কিছুটা কমেছে, সবাই এসেছে উকিল সাহেবকে দেখতে, তবে আফসোস কেউ আর উকিল সাহেবকে জীবিত দেখতে পারলো না।
কর্ম যেমন মানুষকে অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল করে ঠিক তেমন আবার কাছের মানুষদের থেকেও দূরত্ব তৈরি করে ফেলে। হাজার হলেও আরিফ আমার শৈশবের পরিচিত বন্ধু মানুষ,সকাল সকাল তার বাবার মৃত্যুর সংবাদ শুনে, যেন আমি অনেকটাই শোকাহত হয়েছি।
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |

VOTE @bangla.witness as witness

OR
মৃত্যু অবধারিত এবং সবাইকে এর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। আমরা মানুষজন এখন জীবিকার কারনে অনেক ব্যাস্ত হয়ে পরেছি। এমন অনেক সময় আসে পিতা-মাতার সাথে এক বছরেও দেখা হচ্ছে না 😕। তবুও পিতা মাতা পরম মমতায় আগলে রেখেছেন।
যাক শুনে শোকাহত হলাম আপনার বন্ধুর পিতা মারা গেছেন। আল্লাহ বেহেশত নসিব করুন 🤲
আমার অনুভূতি বুঝতে পারার জন্য, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
এই ব্যাপারটা জানতাম না শুভ দা। আজই পোস্ট পড়ে জানতে পারলাম।
মানুষকে অবশ্যই মরতে হবে এটা তো নিশ্চিত। তবে সেটা যদি হয় কষ্টের মৃত্যু তাহলে তো কোন কথাই নেই। আপনার বন্ধুর বাবা তার স্ত্রীর মৃত্যুর পর এমনিতেই খুব একা হয়ে গেছিল। তারপর আবার ছেলেপেলে পাশে না থাকার কারণে আরও বেশি কষ্টে জীবন যাপন করতে হয়েছে তাকে। আমি শুধু চিন্তা করছি মানুষটা মৃত্যুর সময় কতটা কষ্ট নিয়ে মরেছিল।
জীবন এমনি রে ভাই, কিছুই করার নেই। সবাইকেই যেতে হবে শুধু আগে আর পরে। তবে ভদ্রলোক বেশ ভালোই হতাশাগ্রস্থ ছিল। কারণ একাকীত্ব তাকে ঘায়েল করে ধরেছিল ।
আপনার বন্ধু আরিফ,তার বাবা মারা হওয়াতে খারাপ লেগেছে আপনার।আসলেই সবাইকে একদিন পৃথিবী ছাড়তে হবে,এটা চিরন্তন সত্য।এটা কিন্তু ঠিক বলেছেন ভাইয়া,কর্ম ব্যস্ত হওয়ার কারণে একে অপরের সাথে যোগাযোগ হয়ে ওঠেনা।আপনি বেসরকারি মেডিকেলে পরেছিলেন এই বন্ধুর অনুপ্রেরণায়।ধন্যবাদ সুন্দর পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।
ধন্যবাদ আপু, আমার অনুভূতি বুঝতে পেরে মন্তব্য করার জন্য।