চুপ থাকার উপকারিতা

in #thelast year

keep-quiet-20230909175623.jpg

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার কাছে তার দু’চোয়ালের মাঝখানের (জিহ্বা) এবং তার দু পায়ের মাঝখানের (লজ্জাস্থান) অঙ্গের জামানত দিবে আমি তার জন্য বেহেস্তের জামানত দিবো। ( বুখারি, হাদিস, ৬৪৭৪)

অর্থাৎ, যে ব্যক্তি এই দুই অঙ্গের যথাযথ ব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব গ্রহণ করবে তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ হয়ে যাবে। কারণ, এ দুটি অঙ্গই মানুষকে অসংখ্য গুনাহে লিপ্ত করে। তাই হাদিসে জিহ্বা ও লজ্জাস্থানের গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

মানুষ ইবাদত-বন্দেগীর প্রতি যতটা যত্নশীল সেই তুলনায় গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার ব্যাপারে সচেতন থাকে খুবই কম। অথচ পরকারে মুক্তির জন্য নফল ইবাদত পালন করার থেকে গুনাহ থেকে বিরত থাকার গুরুত্ব বেশি। এই হাদিসে সেদিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে।

আরেক হাদিসে হজরত মুয়াজ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেছেন, একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈমান, নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, সদকা, তাহাজ্জুদ ও জিহাদের আলোচনার পর বললেন, আমি কি তোমাদের এই ইবাদতগুলোর ভিত্তি বা উৎস সম্পর্কে বলবো?

মুয়াজ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আন্হু বলেন, হে রাসূলুল্লাহ! অবশ্যই বলুন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জিহ্বা ধরে বললেন, এ জিহ্বাকে সংযত রাখো। (তিরমিজি)

এই হাদিসেও চুপ থাকার বিশেষ উপকারিতার কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ, ‍চুপ থাকলে এবং নিজের জিহ্বাকে সংযত রাখলে মানুষের মনে এমন এক আত্মিক শক্তি বা নুর তৈরি হয় যার মাধ্যমে সব ইবাদত বন্দেগী পালন করা সহজ হয়ে যায়।

আরেক হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, প্রত্যেক দিন সকালে শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জিহ্বাকে অনুরোধ করে যে, আপনি আমাদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করুন। আপনি সহজ সরল পথে থাকলে আমরাও সহজ সরল পথে থাকবো। আপন পথভ্রষ্ট হলে আমরাও পথভ্রষ্ঠ হবো। (তিরমিজি)

এ হাদিস প্রমাণ করে যে, নিজের জবানকে সংযত রাখতে পারলে সব আমল সঠিকভাবে পরিচালত হয় এবং জবানের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললে ফিতনা-ফাসাদ সৃষ্টি হয়।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, চুপচাপ ও নীরব থাকলে মানুষের এমন মর্যাদা লাভ হয় যা ৬০ বছরের ইবাদতের থেকেও উত্তম। (বায়হাকী)

অর্থাৎ, অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা না বলে চুপ থাকলে ৬০ বছরের ইবাদতের থেকেও বেশি সওয়াব হয়।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজরত আবু গিফারি রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে বলেছেন, তুমি চুপ থাকো, কেননা নিরবতা শয়তানকে দূরীভূত করে এবং দ্বীনের কাজে বিশেষ সহায়ক হয়। (বায়হাকী)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরেক হাদিসে বলেছেন, মানুষ নিজের অজান্তে অনেক সময় এমন কথা বলে ফেলে যার ওপর আল্লাহ তায়ালা চিরদিনের জন্য নারাজ হয়ে যান। (শরহুসসুন্নাহ)

অর্থাৎ, মুখের কথা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় সহজ ও সাধারণ মনে করে এমন কথা মুখ থেকে বের হয়ে যায়, যা আল্লাহ তায়ালার অসন্তুষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

এছাড়া কুফর, গীবত, মিথ্যা, চোগোলখোরী ইত্যাদি গুনাহ জিহ্বার মাধ্যমে সংগঠিত হয়। তাই এর থেকে মুক্ত থাকার একটি পথ হলো- জিহ্বাকে সংযত রাখা, কম কথা বলা এবং অযথা কথা থেকে বেঁচে থাকা।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.24
JST 0.034
BTC 95527.71
ETH 2721.31
SBD 0.67