L♥VE ST♥ry
বৃষ্টির সাথে আমার প্রথম দেখা আজ থেকে প্রায় ১ বছর আগে। কোন এক পড়ন্ত বিকেলে সূর্য যখন প্রায় ডুবতে যাচ্ছে ঠিক এমন সময় ক্লাস শেষ করে বাসায় আসছিলাম। এমনিতেই সারাদিনের ক্লাসের চাপে খুব ক্লান্ত। বাসে একটি সিট পেতেই বসে গেলাম। পাশে একটি মেয়ে বসেছিল। বাসের হেল্পার যখন ভাড়া নিতে আসল তখন আমি ভাড়া দিয়ে দিলাম। কিন্তু পাশের মেয়েটি বলল ভাড়া পরে নিতে। বাসের হেল্পার চলে গেলে মেয়েটি ফোনে কার সাথে যেন কথা বলছিল। মেয়েটার কথা থেকে বুঝলাম ওর কাছে কোন টাকা নেই। আমি সাধারণত অপরিচিত কারও সাথে গায়ে পড়ে কথা কখনই বলি না। কিন্তু ফোন রাখার পর আমি ওকে বললাম যে ভাড়া নিয়ে কোন টেনশন না করতে। আমি দিয়ে দিব। সাথে সাথে ও আমার সাথে ঝগড়া করা শুরু করে দিল। কেন তার ভাড়া আমি দিব, আমার কি ঠেকা পড়েছে এই নিয়ে বিশাল ঝগড়া শুরু করল। এমনিতেই খুব ক্লান্ত ছিলাম তাই আর কোন কথা না বাড়িয়ে ওকে সরি বলে সিটে মাথাটা এলিয়ে দিলাম। একটু বাসের হেল্পার আবার এসে চিল্লাচিল্লি শুরু করে দিলো। সামনের সিট থেকে কয়েকজন উঠে এল এবং নানাকথা বলতে লাগল। পাশে তাকিয়ে দেখি মেয়েটা লজ্জায় একেবারে চুপসে গিয়েছে। আমি আর কোন কথা না বলে হেল্পারকে ২০ টাকা দিয়ে দিলাম। সারা রাস্তায় ও একটি কথাও বলল না। মনে মনে বললাম কি রকম দেমাগ মেয়েটার! একটা ধন্যবাদও দিল না? দুনিয়া বড়ই আজীব। পরের ষ্টেশনে যখন ও নামলো তখন হঠাত করেই বলল- আপনার মোবাইল নম্বরটা দিন। টাকা গুলো ফ্লেক্সি করে দিব। আমি তাকে আমার মোবাইল নম্বরটা দিলাম। সেদিন রাতেই আমার মোবাইলে ২০ টাকা চলে আসল। টাকা পাওয়ার সাথে সাথে মনে মনে হেসে উঠলাম।
কয়েকদিন পরের ঘটনা। এক দিন আমি হাটতে হাটতে বই মেলায় চলে এসেছি। চারদিকে অনেক তরুন-তরুনী। প্রত্যেকটা সেকেন্ডে আমার অনুভূতি তখন চেঞ্জ হচ্ছিল। একবার মনে হচ্ছিল একা এসে কেমন কেমন লাগছে। ফ্রেন্ডদের নিয়ে আসলে অনেক ভাল হত। আবার মনে হচ্ছিল একা এসে ঠিকই করেছি। আমার আবার পুরা পাগলা রোগ ধরেছে। যেই দৃশ্যই দেখি কেন যেন মনে হয় এটাই আমি কিছুদিন আগে স্বপ্নে দেখেছি! হঠাত করে পকেটের মোবাইলে রিং বেজে উঠল। অপরিচিত এক নম্বর থেকে। ফোন রিসিভ করতে এক-দম ইচ্ছে করছিল না। তাও করলাম। ওপাশ থেকে এক মেয়ে কন্ঠ প্রথমেই জিজ্ঞাস করল আমি ব্যস্ত কি না!! ফোন করলে মানুষ হাই হ্যালো এসব বলে। কিন্তু ব্যস্ত কি না এটা জিজ্ঞাস করতে এই প্রথম দেখলাম। আমার কথা শুনে ও পাশ থেকেই বলল যে ও ওই বাসের মেয়েটা। ওই ঘটনা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম। যাই হোক, কিছুক্ষণ কথা হল। হঠাত করে ও বলল ও বইমেলায় এসেছে। পুরাই টাস্কি খেয়ে গেলাম। তারপর ওকে আমার অবস্থানের কথা বললাম। ও সব কিছু জেনে আমাকে ৪ মিনিট অপেক্ষা করতে বলল। আমি তার আদেশ পালন করতে লাগলাম। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই মনে হল আমার এই উসকো চেহারা দেখলে ও তো দৌড়ে পালাবে! তাও কথা যেহেতু দিয়েই ফেলেছি সেহেতু থাকতেই হয়। ও এসে উপস্থিত হয়েই আমার চেহারার করুণ অবস্থা নিয়ে প্রচন্ড বড় বক্তৃতা দেওয়া শুরু করল। আরে বাপ, একে অপরের নামই জানি না তাতেই এত কিছু! আরও কথার মাঝখানে তার নাম পরিচয় নেওয়া হল। কথা থেকে বুঝলাম দুইজনই বই পাগল। সেখান থেকেই শুরু। কি এক অজানা বাধনে বাধা পড়লাম। না পারলাম বাধনটাকে কাটতে না পারলাম ভেঙ্গে ফেলতে।
প্রতিদিনই বই মেলায় আসা। মেলার সব বই নিয়েই আমাদের দীর্ঘ গবেষণা। কোন বইয়ে কি ভাল কি লেখলে আরও বেশি ভাল হত এসব নিয়ে আমাদের যুক্তি তর্কের কোন শেষ হত না। আমার প্রিয় লেখক হুমায়ুন আহমেদ আর ও ক্লাসিকেল বই বেশি পড়ত। এসব নিয়ে আমাদের যুক্তি আর ঝগড়া ছিল । ও যুক্তিতে হেরে গেলে যে কি প্রচন্ড মন খারাপ করত। ওর মন খারাপ করা দেখে আমিও ইচ্ছে করে ওর সাথের যুক্তিতে হেরে যেতাম। ও ঠিকই বুঝে নিত ওর কাছে হেরে যেতে আমার ভাল বই খারাপ লাগে না এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই!! আমরা একই ভার্সিটিতে পড়তাম(ডিপার্টমেন্ট আলাদা)। আমাদের দুজনকে নিয়ে ফ্রেন্ড সার্কেলে প্রায় সব সময়ই আলোচনার ঝড় তুলত। ফ্রেন্ডগুলাও যে কি রকমের! আরেক জনের প্রেম সহ্য করতে পারে না। আড়ালে আবডালে কত কথা। অবশ্য আমরা এসব কথার নিকুচি করতাম। যত্ত সব আতেলগিরি!! আমরা আমাদের মতই সময় কাটাতাম। সময় পেলেই রিকশা করে ঘুরে বেড়াতাম। রিকশা দিয়ে ঘুরাটাও যে চরম রোমান্টিক তা আমি বৃষ্টির কাছ থেকেই প্রথম জেনেছি!
Some text missing