গল্পলেখাঃ- চির দুঃখী সুমির ভালবাসার গল্প। (১ম পর্ব)।
সবাইকে শুভ দুপুর,
প্রিয় কমিউনিটির সকল সম্মানিত ব্লগার ভাই ও বোনেরা আসসালামু আলাইকুম। লেখার শুরুতে সবাইকে শুভেচ্ছা ও স্বাগতম জানাচ্ছি আমার আজকের ব্লগিং পর্বে। আশা করি আপনাদের কাছে আমার আজকের ব্লগিং বেশ ভালই লাগবে। তো বন্ধুরা আপনারা সবাই কেমন আছেন। নিশ্চয়ই সকলেই ভালো আছেন। তবে ঠান্ডা এবং গরম মিলিয়ে সবাই বেশ অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় সৃষ্টিকর্তার অসীম রহমতে বেশ ভালোই আছি। সৃষ্টিকর্তা যখন যেভাবে রাখেন সেটাই আমাদের নিজেদের মঙ্গলের জন্যই করেন। তার জন্য আসলে হতাশ হওয়ার কোন কিছু নেই। যাক বন্ধুরা অনেক কথাই বলে ফেললাম এবার মূল টপিকসে ফিরে আসি।
আজকে আমি আপনাদের সাথে একটি বাস্তব গল্প শেয়ার করব। গল্পটি হচ্ছে একটি বাস্তব গল্প যা আমাদের গ্রামে আমাদের পাশের বাড়ির একটি গল্প। তাহলে শুরু করা যাক বন্ধুরা।
আমাদের বেশ কয়েকটি বাড়ির পরে গ্রামে সুমিদের বাড়ি। সুমিরা ছিলেন দুই ভাই এবং দুই বোন। তাদের বাবা ছিলেন একজন হাই স্কুলের সিনিয়র টিচার। তো আপনারা তো সকলেই জানেন আসলে শিক্ষক জীবনে তত বেশি টাকা নিয়ে আহ্লাদী করা যায় না। স্বল্প বেতনে সংসারের অভাব সবকিছু মিলিয়ে মধ্যবিত্ত পরিবারেই খুব সুন্দরভাবে তারা দিন যাপন করেছিলেন। কিন্তু সুমির মা তার বাবাকে চাপ দিতে থাকে। কারণ তাদের স্কুলের ইনকাম দিয়ে সংসারের খরচ মেটাতে কষ্ট হচ্ছে। কারণ দিন দিন খরচ বাড়ছিল। যেহেতু সন্তানেরা দিন দিন বড় হচ্ছিল। সেই জন্য তাকে বিদেশে চলে যাওয়ার জন্য সব সময় বলতে থাকছিল। তো একদিন সুমির বাবা সুমির মায়ের কথা শুনে বিদেশে চলে যাওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নিল।
যেহেতু তখনকার স্কুল শিক্ষকের বেতন অনেক কম ছিল যদিও খুব সম্মানের একটি চাকরি ছিল। একজন বি এস সি টিচার মানে বেশ ভাল মানের ছিল। বলতে পারেন আজ থেকে ২০ বছর আগের ঘটনা। তখন সুমির বাবা সুমির মায়ের কথা মতো একটা সৌদি আরবের ভিসা নিয়ে সৌদি আরবে চলে যান। সেখানে সুমির চাচারাও ছিল। কিন্তু সেখানে বেশি দিন তার সুখ সইলো না। যেহেতু শিক্ষক মানুষ তত বেশি ভারি কাজ করতে পারত না। তাছাড়া বয়সও প্রায় হয়েছিল বলতে হয়। কারণ পড়ালেখা করতে করতে প্রায় অর্ধেক বয়স হলে যায় এমনিতেই। আবার এদিক ওদিক চাকরির জন্য ছুটাছুটি সব মিলিয়ে বয়স ৫০ এর উপরে চলে গেছিল। তো এই বয়সের একজন মানুষ আসলেই কষ্ট করা খুবই জটিল ব্যাপার। একদিকেই বয়স হয়েছে অন্যদিকে শিক্ষক মানুষ পড়ালেখা করে মানুষ হয়েছে। বিদেশে ভাইয়েরা ও তেমন সহযোগিতা করলোনা।
তো কোন মতেই বিদেশে একটা ভাইয়ের সহযোগিতায় বাংলা স্কুলে চাকরি ব্যবস্থা করে নিল। সেটা নিয়ে আপাতত চলছিল। বেশ কয়েকটা টিউশনিও করছিল সৌদি আরবে। তো শোনা যায় হঠাৎ একদিন সুমির বাবা সৌদি আরবে স্টোক করে মারা গেল। নেমে আসলো তাদের পরিবারে অন্ধকার। সুমির মায়ের বেশি টাকার চাহিদায় শেষমেষ তারা বাবাকে হারালো। সুমির বাবা নাকি খুব টেনশন করতেন বিদেশে ছেলেমেয়েদের নিয়ে। সুমিরা বড় দুইজন মেয়ে ছিল ছোট দুইজন ভাই ছিল। ইনকামের আর কোন ব্যবস্থা ছিল না। এমন অবস্থায় সুমির মা খুবই খারাপ অবস্থায় পড়ে গেলেন চার সন্তানদেরকে নিয়ে। তো সুমির বাবা যেহেতু সৌদি আরবে চাকরি করতেন সেখানে কিছু টাকা পেয়েছিল স্কুল থেকে।
সেই টাকা গুলো দেশে ফেরত দিয়ে দিল। কিন্তু সুমির বাবাকে সৌদি আরবে দাফন করে নিল। যেহেতু দেশে তখন ফিরিয়ে আনতে বেশ কষ্টের ব্যাপার ছিল। এভাবে চলতে থাকলো বেশ কয়েকদিন। তবে সুমির বাবার বিদেশ থেকে যে টাকা ফেরত পেল তারা সে টাকা দিয়ে সুমির বড় বোন রুমিকে বিয়ে দিয়ে দিল ধুমধাম করে একটা ভালো পরিবারের ছেলে দেখে। রুমিকে যে ছেলেটার সাথে বিয়ে দিয়েছিল ছেলেটা খুবই ভালো ছিল। তাই শ্বশুরবাড়ির লোকজনদেরকে খুবই ভালোবাসতো। যেহেতু রুমি দেখতে খুবই সুন্দর ছিল। তাছাড়া পড়ালেখাও করেছিল রুমি এইচ এস সি পাশ। বাবা মারা যাওয়ার কারণে বিয়ে দিয়ে দিলো। তার স্বামীও তাকে অনেক বেশি পছন্দ করত। তাছাড়া বলতে গেলে সুমিদের পরিবার অনেক ভালো একটি পরিবার ছিল।
যদিও মধ্যবিত্ত পরিবার ছিল কিন্তু একটা শিক্ষকের পরিবার বলে কথা। তাছাড়া তাদের পরিবারের আরো অনেক ঐতিহ্য ছিল তাদের দাদার বাড়ি নিয়ে। অল্প জায়গা সম্পত্তি ছিল সুমির বাবার সেগুলো নিয়ে কোনরকম ধান চাষ করত সুমির মা মানুষ দিয়ে। এরপরে সুমি একটা এনজিওতে চাকরি করতো ছোটখাটো। তাছাড়া সুমি সেলাই কাজ জানতো ভাল। সেগুলো দিয়ে কোন রকমের সংসারের খরচ সামলাত। যেহেতু সুমি সেই সময় ইন্টারমেডিয়েট পাস করেছিল। এভাবে চলতেই থাকে সুমিদের পরিবার। সুমির আরো ছোট দুই ভাই ছিল। আসলে তাদের পড়া লেখার খরচ চালানো খুবই কষ্ট হয়ে গেছিল। এরই মধ্যে সুমির বড় বোন রুমি তাদের একদম ছোট ভাই জনিকে নিয়ে গেল তাদের বাড়িতে পড়ালেখা করানোর জন্য। কিন্তু সুমির আরেক ভাই ছিল সেলিম তাকে দুবাই পাঠিয়ে দেওয়া হয় রুমির হাজবেন্ডের সহযোগিতায়।
এখন বাড়িতে ছিল মাত্র সুমি এবং সুমির মা। তবে মাঝে মাঝে ছোট ভাই জনি ঘরে আসতো তার বোনের বাড়ি থেকে। যেহেতু সেই বোনের বাড়িতে নিয়মিত থাকতো এবং সেখান থেকে জনি পড়ালেখা করতো। এরই মধ্যে সুমি তাদের পাশের বাড়ির একটা ছেলের প্রেমে পড়ে যায়। যদিও ছেলেটি সুমির বয়সে ছোট ছিল। আসলেই প্রেমে বয়স ছোট বড় কিছুই মানে না সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু কথা হচ্ছে সুমির কিন্তু বয়স মোটামুটি ছিল। তাই কোন কিছু করতে হলে একটু ভেবে চিন্তা করতে হতো তার। ওই যে আগে বললাম প্রেমের কোন বয়স কিংবা ভালো মন্দ কিছু বুঝে না।
কিন্তু গোপনে এদের সম্পর্ক চলতে থাকলো কেউ টেরও পেল না। তো বন্ধুরা আশা করি আমার এই গল্প টি আপনাদের ভালো লেগেছে। বাকিটুকু পরে আপনাদের সাথে শেয়ার করব…………………
লেখার উৎস | নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বাস্তব গল্প। |
---|---|
ইমেজ সোর্স | ভিক্টিজি ডট কম |
অবস্থান | কক্সবাজার, বাংলাদেশ |
রাইটিং ক্রিয়েটিভিটি | @samhunnahar |
ক্যাটাগরি | জেনারেল রাইটিং |
সবাইকে অনেক ধন্যবাদ সময় দিয়ে আমার ব্লগটি ভিজিট করার জন্য।

🥀আল্লাহ হাফেজ সবাইকে🥀
আমি সামশুন নাহার হিরা। আমার ইউজার আইডি @samhunnahar। আমি আমার বাংলা ব্লগে কাজ করছি বাংলাদেশের কক্সবাজার থেকে। আমি বাংলা ভাষায় লিখতে-পড়তে অনেক ভালবাসি। রান্না করতে আমি অনেক পছন্দ করি। তাছাড়া সময় পেলে ভ্রমণ করি আর প্রকৃতিকে অনুভব করি। ফটোগ্রাফি করতে আমার ভীষণ ভাল লাগে। আমি মাঝে মাঝে মনের আবেগ দিয়ে কবিতা লেখার চেষ্টা করি। আমার প্রিয় শখের মধ্যে তো গান গাওয়া অন্যতম। আমার মনের ভাব বাংলায় প্রাকাশ করতে পেরে অনেক আনন্দিত। তার জন্য আমার প্রাণের/ভালবাসার কমিউনিটি "আমার বাংলা ব্লগ"কে অনেক ভালবাসি।
https://steemit.com/hive-129948/@samhunnahar/5cl79a
আগের দিনে বেশিরভাগ শিক্ষকদের পরিবারে কিছুটা অভাব ছিলো। তবে শিক্ষকতা পেশাটা নিঃসন্দেহে খুব সম্মানের। এমন বয়স্ক একজন লোককে বিদেশ পাঠানো মোটেই উচিত হয়নি। যাইহোক আসল কথা যার যেখানে মৃত্যু লেখা থাকবে সেখানেই হবে। তবে রুমির হাসবেন্ড আসলেই খুব ভালো। সেজন্য রুমির এক ভাইকে নিজের বাসায় রাখে এবং এক ভাইকে বিদেশ পাঠিয়ে দেন। সবকিছু মোটামুটি ঠিকঠাক চলছিলো। কিন্তু সুমির কপালে কি আছে, সেটা জানার আগ্রহ অনেকাংশে বেড়ে গিয়েছে। আসলে প্রেম ভালোবাসা বয়স দেখে হয় না। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম আপু।
একদম ঠিক বলছেন বয়সের চাপ টেনশন সবকিছু মিলিয়ে অবশেষে মৃত্যু হয়ে গেল। ভালো লাগলো আমার পোস্ট পড়লেন। আপনাদের সাথে আরো বিস্তারিত শেয়ার করব পরে ধন্যবাদ।
হুম শিক্ষকতা জীবনে কিন্তু বেশি টাকা নিয়ে আহ্লাদী করা যায় না। শিক্ষকতা একটা সম্মানের পেশা। মানুষ সম্মানের বশে এটা করে থাকে। আগেকার সময় বিএসসি টিচার মানে অনেক ভালো মানের ছিল কিন্তু এখনকার সময় তো শিক্ষার মান কমে গেছে। অনেক ভালো ভালো শিক্ষক ও কোন কিছু সলভ করতে পারে না। সৌদি আরবে সুমির বাবা মারা গেল। সত্যিই তাদের জীবনে অন্ধকার নেমে আসলো।অভাব এমন একটা জিনিস যা মানুষকে খুড়ে খুড়ে খায়। সে ছেলে মেয়েকে ভালো রাখতে বিদেশ গেছিল এবং হাজারো টেনশন হয়তোবা তার মাথায় ছিল। স্ট্রোক করেছিল। এখানে তার মৃত্যু লিখেছিল আল্লাহ।হুম প্রেম বয়স ছোট বড় কিছুই মানে না। আমরা অল্প বয়সে প্রেমে পড়ি এবং আবেগ কাজ করে। ফলে জীবনটা কিন্তু আমরা ধ্বংস করে ফেলি। একটা সময় বুঝতে পারি যে এই কাজটা না করলে ভালই হতো
জানিনা তার পরবর্তী জীবনে কি হবে সুমির
দেশে থাকলে হয়তো আরো অনেক দিন বেঁচে থাকতে পারতো। বিদেশের মাটিতে গিয়ে টেনশনে মৃত্যু হয়ে গেল। ধন্যবাদ আপনাকে পুরো পোস্ট পড়ার জন্য। অনেক সুন্দর অনুভূতি শেয়ার করলেন ভাল লাগলো।
শিক্ষকতা চাকরি হচ্ছে বড় সম্মানের চাকরি। বেতন কম হলো এখানে সম্মানটাই অনেক বড়। সুমির বাবা অথবা বিদেশ যাওয়ার জন্য চাই নাই। কিন্তু তার মায়ের চাহিদার কারণে হয়তোবা সৌদি আরবে গেলেন। আর বিদেশে বয়স্ক লোকদেরকে কেউ কাছে নিতে চায় না। এবং সুমির বাবা মনে হয় অতিরিক্ত টেনশন করার কারণে স্টক করে মারা গেল। তবে বড় ভাই সেলিম মনে হয় বিদেশ যাওয়াতে তাদের একটু ভালো হয়েছে। তবে এটি ঠিক প্রেমে কোন বয়স মানে না। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বয়স নিয়ে অনেক সমস্যা হয়। সুমির পাশের বাড়ি একটি ছেলের সাথে প্রেম করেছে যদিও ছেলেটি তার বয়সের ছোট। দেখি পরের পর্বে কি ঘটে সেই অপেক্ষায় রইলাম। আশা করি পরের পর্ব ঠিক খুব তাড়াতাড়ি আমাদের মাঝে শেয়ার করবেন।
হ্যাঁ বড় ভাই সেলিম এখন অনেক ভাল পর্যায়ে। অনেক কিছু করেছে পরিবারের জন্য। বলতে পারেন একজন বাবার অপূর্ণতা সেই পূর্ণ করে দিয়েছে ভাই বোনদের জন্য। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে বিস্তারিত শেয়ার করব ভাইয়া।
Twitter