বাবুই পাখির বর
প্রতিটা সম্পর্কে "তোমার মাঝে তুমিত্ব" টাকে আবিষ্কার করতে, জানতে, চিনতে ও বুঝতে কিছুটা সময় লাগে৷ এর আগ মুহুর্ত পর্যন্ত সম্পর্কে কিছু ছোট খাটো ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হতে থাকে, যার জন্য না চাইতেও আপনি আপনার মনের মানুষটাকে নিজের অজান্তে কষ্ট দিয়ে ফেলেন৷ হ্যাঁ কষ্ট, অস্বাভাবিক কষ্ট যেটা হয়তো মৃত্যুর মতোই যন্ত্রনাময়৷ মৃত্যুর সময় মৃত্যুদূত যেমন একটা মানুষের ইচ্ছার বিরুদ্ধে দেহ থেকে প্রাণটা বের করে নিয়ে আসে ঠিক তেমন প্রিয় মানুষটির ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার মধ্য থেকে "তুমিত্ব"কে বের করে নিয়ে আসতে চান৷ এই যন্ত্রনাটা মানুষটার নীরবতার মাধ্যমে প্রকাশ পায়৷ সবকিছু বলে প্রকাশ করা যায় না, বলতে গেলে সেই কথার প্রেক্ষিতে হাজারটা যুক্তি আপনি দেখাতে থাকবেন৷ এজন্য তার নীরবতার মাধ্যমে পরিষ্কার বুঝতে পারবেন আপনার প্রিয় মানুষটার মনে কতটা ঝড় বয়ে যাচ্ছে৷
দুই.
কেউই সম্পর্কের শুরুতেই একজন অজানা নতুন মানুষের মনের সবটুকু সঠিক ভাবে বুঝতে পারে না, বোঝা সম্ভব ও না৷ বুঝতে সময়ের প্রয়োজন হয়৷ সব ধরণের পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়৷
তিন.
আপনি সম্পর্কের শুরু থেকেই আপনার প্রিয় মানুষের সবটুকু বোঝে, এমন দাবী যদি আপনি করে থাকেন তাহলে বুঝতে হবে অাপনার সম্পর্কটাতে এখনো পর্যন্ত কোন "ক্রিটিকাল মোমেন্ট" জিনিসটাই আসে নি৷ আর যেটা আসে নি সেটা নিয়ে ভবিষ্যতবাণী ও করা যায় না সেই মোমেন্টটা আসলে কি ঘটবে৷ আর এই মোমেন্টটা প্রতিটা সম্পর্কে কখনো না কখনো আসবেই, সেটা আগেই আসুক কিংবা পরে, আসবেই আসবে
চার.
এজন্য প্রতিটা সম্পর্কের সেই ক্রিটিকাল মোমেন্টটা যত দ্রুত আসে ততোই ভালো৷ কারণ এই মুহুর্তের পরেই আপনার মনের মানুষের মাঝে যে মানুষটা আছে, সেই মানুষটার সন্ধান পাবেন৷ সেই মানুষটার সন্ধান পাওয়ার পরে যদি সেই মানুষটাকে ভালোবাসতে পারেন তাহলেই আপনি জোড় গলায় বলতে পারেনঃ "আমি তোমাকে ভালোবাসি, হ্যাঁ আমি তোমাকেই ভালোবাসি৷"
পাঁচ.
এক ধরণের মানুষের ক্ষেত্রে এই ক্রিটিক্যাল মোমেন্টের পরে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয় না৷ কারণ সবার চাহিদা এক রকম না৷ এই ধরণের মানুষ শুধু নিজে ভালো থাকার জন্য, নিজের মন মতো বাকীটা জীবন কাটানোর জন্য সম্পর্কে জড়ায়৷ জড়ানোর পরে "তোমার মাঝে তুমিত্ব" জিনিসটাকে মেরে ফেলে নিজের মনের মত মানুষ বানাতে চায়৷ যদি সেই মনের মানুষটি তার "আমার আমিত্ব" বাঁচিয়ে রাখতে চায় তখন সম্পর্কে আসে বিপত্তি৷ সম্পর্কটা ভেঙ্গে যায়৷
ছয়.
আরেক ধরণের মানুষ আছে (সংখ্যা নেহাতই কম) যারা তাদের মনের মানুষটার নীরবতার মাধ্যমে প্রকাশিত কষ্টটা মন থেকে অনুধাবন করতে পারে৷ তখন সে ভাবে এটা তো আমি কখনোই চাইনি৷ যাকে আমি ভালো রাখার স্বপ্ন দেখেছি এতোটা বছর ধরে, তাকে আমি নিজের মতো করে পরিবর্তন করতে চাইলে তার মাঝের "তুমিত্ব" টাই যে পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে৷
বলতে পারেন এটা বুঝতে ক্রিটিক্যাল মোমেন্ট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হলো কেন? কেন নিজে নিজে বুঝে নিল না? উত্তর খুবই সিম্পল, আমরা সুযোগ পেলেই একটা ডায়ালগ দিয়ে থাকিঃ বাচ্চা না কাঁদলে মা ও খাবার দেয় না৷ এই ডায়ালগ টা ভুল৷ বাচ্চার মা একটা নির্দিষ্ট সময় পর পর ঠিকই বাচ্চার মুখে খাবার তুলে দেয়৷ তবে বাচ্চার মায়ের এটা জানা জরুরী তার বাচ্চাকে কোন খাবারটা কতটুকু পরিমাণ দিতে হবে৷ বেশি খাওয়াতে গেলেই বদ হজম হবে৷ প্রথম প্রথম মা হওয়ার পরে সেই মা টা প্রয়োজনের বেশি খাবার দিয়ে ফেলে যেটা ভালোবেসেই, আর তখনই বদ হজম হয়ে যায়৷ যখন মা বুঝতে পারে যে না, খাবার প্রয়োজনের চেয়ে বেশি দেয়া হয়েছিল বলে কষ্ট পাচ্ছে, তারপর থেকে কখনোই প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খাবার দেয় না৷
সম্পর্কের ক্ষেত্রেও এমন, ভালোবাসার মানুষের কিছু কিছু ব্যাপার হয়তো ভালোবেসেই পরিবর্তন করতে চায়৷ পরিবর্তনটা নিজের জন্য না শুধু, দুজনেরই ভালো থাকার জন্যেই৷ তবে আপনি যদি বুঝতে পারেন, আপনার মনের মানুষ সেটা নিতে পারতেছে না তখন আর জীবনের কখনোই আপনি চাইবেন না তাকে পরিবর্তন করতে৷
এর পর প্রিয় মানুষের ঐ ব্যাপার গুলো যেটা আগে সমস্যা মনে হতো সেগুলো আর কখনোই সমস্যা মনে হবে না৷ সমস্যা মনে হবে না কেন জানেন? সবকিছুর পরও তাকে ভালোবাসবার আকুলতা তার মাঝে আছে, মানুষটাকে ভালো রাখার প্রচেষ্টা আছে৷ ভালোবাসার মানুষের নীরবতা তার কাছে মনে হয় পর্বতসম চাপ মনে হতে থাকবে৷
সাত.
আমার ক্ষেত্রে ছয়ে বর্ণিত ঘটনার মতোই হয়েছে৷ সে এতোটা কষ্ট পাবে আমি বুঝতে পারিনি৷ আমি তার কাছে বিশ্বস্ততার জায়গা ছিলাম, আস্থার জায়গা ছিলাম৷ ওর সব কিছু আমার কাছে শেয়ার করতো৷ কিছু জিনিস মেনে নিতে পারিনি, চাপ দিয়েছি৷ সে আর আগের মতো নেই৷ তার মনের কষ্টটাও শেয়ার করতে পারে না, তার মুখের হাসি বিলীন হয়ে গেছে৷ মাত্র দুদিনেই বুঝতে পেরেছি আমি কতো বড় ভুল করতে যাচ্ছিলাম৷ তারপর থেকে বারবার বলছি আগের মতো হও৷ কিন্তু সে পারছে না৷ তার নীরবতা আমাকে কষ্ট দিচ্ছে৷ অনেক বছর অপেক্ষা করেছি, কখনো ভাবিনি তার কাছাকাছি যেতে পারব৷ কিন্তু আজ এতোটা কাছে গিয়ে তাকে হারিয়ে ফেলছি৷
আমি তোমাকে পরিবর্তন করতে চাই না৷ একবার ফিরে এসো, তোমার জন্য আমি অপেক্ষা করছি৷ তোমার মাঝের তুমিত্বকে আমি বুঝতে পারিনি৷ এখন সত্যি বুঝতে পারি৷ ফিরে এসো প্লিজ৷