রহস্যময়ী ( ইমদাদুল হক মিলন) ১ম পর্ব
লীলা বেশ হাসি হাসি মুখে দরজা খুলল। খুলে গম্ভীর হয়ে গেল লীলার বয়সী একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে বাইরে। ঢোলাঢালা অফ হোয়াইট ট্রাউজার আর হালকা আকাশি রঙের শার্ট পরা। শার্টটা ফুল স্লিভ। হাতা কনুই অবধি গোটানো। মেয়েটির পায়ে কালো জুতো। গলায় পাতলা একটা সোনার চেন। কানে ইমিটেশানের বেশ বড় দুটো রিঙ। ঘাড় অব্দি লম্বা কোকড়ানো চুল বেশ ঝকঝক করছে। ঠোঁটে তীব্র লাল লিপষ্টিক ছাড়া আর কোনও প্রসাধন নেই মুখে। মেয়েটির এক হাতে তামার বেশ মোটা, বেশ ভারি একটা বালা। এই ধরনের বালা আজকালকার ছেলে মেয়ে যে কেউ পরে।
মেয়েটির অন্য হাতে সোনালি ব্যান্ডের সুন্দর ঘড়ি।
লীলা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে মেয়েটিকে দেখতে লাগল। মুখটা বেশ চেনা চেনা লাগছে। কোথায় যেন এই মুখ দেখেছে লীলা। কিন্তু কোথায় দেখেছে মনে করতে পারছে না।
মেয়েটি নরম গলায় বলল, মনজু ভাই আছেন?
কাউকে দেখতে দেখতে সেই মানুষটি সম্পর্কে কিছু ভাবতে থাকলে লীলা খুবই আনমনা হয়। ফলে মেয়েটির কথা শুনে সামান্য চমকাল সে। তীক্ষèচোখে মেয়েটির চোখের দিকে তাকাল। কিছু বলছেন?
লীলার আনমনা ভাবটা খেয়াল করল মেয়েটি। মিষ্টি করে হাসল। জ্বী কিছু বলছি।
লীলাও হাসল। কী?
একজনের কথা জানতে চেয়েছি।
কার কথা?
মনজুভাই।
ও
তিনি কী আছেন?
মুহূর্তের জন্যে আনমনা হল লীলা। কী ভাবল! তারপর বলল, না।
কথাটা শুনে চমকে উঠল মেয়েটি। জ্বী?
নেই।
কোথায় গেছেন?
জানে না তো!
মনজু ভইর ভাবী আছেন?
লীলা আবার হাসল। না সেও নেই।
কোথায় গেছেন?
পিংকির স্কুলে।
পিংকিকে নাকি ভাবী স্কুলে নিয়ে যান না!
হ্যাঁ। পিংকিকে স্কুলে নিয়ে যাওয়ার জন্যে একটি মেয়ে আছে। মেয়েটির নাম রুমা। কাল রাত থেকে রুমার খুব জ্বর, এজন্যে সে আজ যেতে পারেনি, আপাই পিংকিকে নিয়ে স্কুলে গেছে।
ভাবী বুঝি আপনার আপা?
জ্বী। আমরা তিনবোন। পিংকির মা বড়। তার নাম নীলা। তারপর মিলা। আমার মেজোবোন। মিলা থাকে প্যারিসে। ওর হাজব্যান্ড আর্টিষ্ট। স্কলারশিপ নিয়ে গেছে। দুবছর হর প্যারিসে আছে ওরা। মিলার পর আমি। আমাদের কোন ভাই নেই।
আপনাদের যে কোনও ভাই নেই এটা অবশ্য আমি জানি।
লীলা অবাক হল। কী করে জানেন?
মনজু ভাই বলেছেন।
ওর সঙ্গে আমাদের ফ্যামিলির ব্যাপারেও কথা হয়েছে আপনার?
জ্বী। কথায় কথায় একদিন বলেছিলেন।
আমার কথা কিছু বলেছে?
মেয়েটি হাসল। জ্বী না। আপনার কথা তেমন কিছু বলেনি। শুধু নামটা বলেছিল। আপনার নাম লীলা। রাজশাহী ইউনিভর্সিটিতে পড়েন।
কী পড়ি বলেনি।
বলেছেন। বাংলা।
লীলা হঠাৎ করে বলল, আপনি কী পড়েন?
আমি এবার বিএ পরীক্ষা দিয়েছি।
কী নাম আপনার?
সোনালি।
সোনালির কাঁধে যে তার ট্রাউজার রঙের একটা ব্যাগ আছে, ব্যাগটা এই প্রথম দেখতে পেল লীলা। এতক্ষণ ধরে মেয়েটির সঙ্গে কথা বলছে সে, ব্যাগটা দেখতে পায়নে কেন!
ভেতরে ভেতরে বেশ অবাক হল লীলা। সোনালির সঙ্গে কথা বলতে বলতে সে কী আসলে অন্য কিছু ভাবছিল? আনমনা ছিল?
সোনালি বলল, আপনি কবে এসেছেন?
চার পাঁচদিন হল।
থাকবেন কিছু দিন?
হ্যাঁ।
কতদিন থাকবেন?
মাসখানেক।
এতদিন?
হ্যাঁ।
ইউনিভার্সিটি?
অনার্স পরীক্ষা দিলাম তো!
ও।
দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছে দুজন, দরজাটা খোলা। সোনালি একবার ভেতর দিকে তাকাল। ব্যাপারটা খেয়াল করল লীলা। হঠাৎ করে কী রকম একটা ছটফট ভঙ্গিতে দরজাটা বাইরে থেকে টেনে দিল।
সোনালি খুবই অবাক হল! কী ব্যাপার? এসন করছ কেন লীলা। দরোজার বাইরে দাঁড়িয়ে এত কথা বলছে, ব্যবহারও বেশ ভাল মেয়েটির কিছু ভদ্রতা জ্ঞান নেই নাকি! একবারও তো বলল না, ভেতরে এসে বসুন।
সোনালি একটু গম্ভীর হল। মনজু ভাই আমাকে আসতে বলেছিলেন।
লীলা অবাক হল। তাই নাকি?
হ্যাঁ।
কী আশ্চর্য লোক, আপনাকে বলল আসতে তারপর বেরিয়ে গেল!
তাই তো দেখছি।
তারপর একটু থেমে সোনালি বলল, কিন্তু আমি যতদূর জানি মনজু ভাই এত সকালে ঘুম থেকেই উঠেন না। সাড়ে দশটা এগারোটার দিকে ওঠেন।
লীলা সঙ্গে সঙ্গে বলল, হ্যাঁ আমি এসেও তো তাই দেখছি। একদিনও এগারোটা আগে ওঠে না। শুধু আজই উঠেছে। আমার মনে হয় টেলিভিশন নাটকের আউটডোর আছে।
না তা নেই।
আপনি জানেন?
জানি। নাটকের ব্যাপারেই তা সঙ্গে কথা বলতে এসেছি আমি। আজ বিকেল পাঁচটায় আমাদের রিহার্শেল।
আপনিও বুঝি নাটক করেন?
জ্বী।
এজন্যেই আপনার মুখটা চেনা চেনা লাগছিল।
অবশ্য খুব বেশি একটা নাটক আমি করিনি। মনজু ভাইর সঙ্গে এটাই প্রথম।
নায়িকা?
হ্যাঁ।
লীলার মখটা কী রকম একটু ফ্যাকাশে হয়ে গেল। ব্যাপারটা খেয়াল করল না সোনালি। বলল, মনজু ভাইকে আপনি বলবেন, আমি এসেছিলাম। বিকেল পাঁচটায় রিহার্শেল। টেলিভিশনে চলে যেতে বলবেন।
লীলা জোর করে হাসল। দেখা হলে বলব।
দেখা হবে না?
বাড়ি ফিরলে হবে। তার ফেরা না ফেরার ঠিা নেই।
জ্বী আচ্ছা। আমি তাহলে যাই।
আবার আসবেন।
সোনালি কোনও কথা বলল না। জুতোয় খুট খুট শব্দ তুলে সিঁড়ি ভেঙে নিচে নেমে গেল। খানিক তাকিয়ে তাকিয়ে সোনালিকে দেখল লীলা। মুখে রহস্যময়, অদ্ভুত এক হাসি ফুটে উঠল তার।
Good job friend greetings!
thanks
Good job friend greetings!