শেষ বিকেলের মায়া - আমার লেখা ছোট একটি গল্প - পার্ট ১৯
গল্পের বাকি অংশ সুরু করা যাক ......
.
ওড়না খুঁজতে শুরু করলাম। এমন সময় দাদু এসে আমাকে পরিচয় করিয়ে বলল, ‘এইটা মনিরের বড় মেয়ে।’ লোকটা হুংকার দিয়ে বলতে লাগল, “খুবই বেয়াদব মেয়ে একটা। দেখল মুরুব্বি একজন এসেছে, অথচ এই বেয়াদব সালাম পর্যন্ত দিল না।'
আরেকবার কী হলো, দেশে প্রথম এলে সর্বসাধারণ যেমন পেটের পিড়ায় ভুগতে হয় তেমন আমিও ভুগতে শুরু করলাম। কিন্তু লজ্জায় কুটিকুটি হয়ে যাওয়া আমি মুখ ফুটে কাউকে কিচ্ছু বলতেই পারছিলাম না। আমার একেবারে যায় যায় অবস্থা। তো আম্মি যখন সৌদি থেকে কল দিল তখন আম্মিকে জানালাম। আম্মি জানাল মেঝ ফুপ্পিকে। মেঝ ফুপ্পি তড়িঘড়ি করে আমার ওষুধের ব্যবস্থা করলেন। নড়ার শক্তিটুকু হারিয়ে বিছানার সাথে মিলে আছি৷ নিজে উঠে বসার শক্তিও নেই আমার। কোনোমতে ওয়াশরুমে গিয়ে এসে আবার চিৎ।
For Photos I use:
Camera |
Iphone 12 Mini |
Lens |
Wide 26 mm-Equivalent |
Photographer |
@fxsajol |
Location |
Mirpur 12 , Dhaka, Bangladesh |
Processing photos |
Outdoor |
এমন সময় হঠাৎ এক ভাইয়া রুমে এসে বলতে লাগল, ‘মুন তো কারও সাথে কোনো কথাই বলে না! তাই এই কথাগুলো লিকুইড হয়ে বের হচ্ছে।' এই সমস্যাগুলো যখন আম্মিকে বলতাম আম্মি উলটো হাসত। বলত দেশের মানুষরা এমনই। কিন্তু পর্দা রক্ষার জন্য কোনো পদক্ষেপই কেউ নিত না। আমি নিজে ওই বয়সে একেবারে নতুন একটা জায়গায় সব অপরিচিত মানুষদের ভিড়ে আর কীইবা করে উঠতে পারতাম! সেই সময়ের আমার মানসিক যন্ত্রণাটা আসলে কিছু শব্দের বিন্যাসে সাজানো সম্ভব না। ভরা বাজারে কেউ যদি টেনে হিঁচড়ে আপনার কাপড় খুলে দেয়, তখন আপনার যেমন মানসিক অবস্থা হওয়ার কথা, আমারও ঠিক তেমনই লাগত। আরেকবার কী হলো, বাপ্পা সৌদি ফেরার আগে আমরা কক্সবাজার বেড়াতে গিয়েছিলাম। তো সমুদ্র দেখতে যাওয়ার সময় হঠাৎ সবাই নাক উঁচু করে বলতে শুরু করল, ‘মুন বুঝি এখন সমুদ্রেও এমন জুব্বা পরে যাবে?' এ ধরনের আরও নানা কথা।
সবার এত্ত কথার পরও আমি বোরকা নিকাব ছাড়া যাব না তো যাবই না। দরকার পড়লে সবাই যাক, আমি যাব না। প্রয়োজন নেই আমার সমুদ্র দেখার। আমার জেদের সাথে পেরে না উঠে সবাই বাপ্পাকে গিয়ে ধরল। আমি মনে মনে হাসছিলাম, যে বাপ্পা আমাকে সেই বাচ্চা বয়স থেকে এত্ত স্ট্রিক্টলি রেখেছে, তাকে রিকুয়েস্ট করা হচ্ছে, আমি যেন সমুদ্রে বোরকা ছাড়া যাই, এটা বলার জন্য। বাপ্পা বলবে বোরকা ছাড়া বের হতে! কস্মিনকালেও এটা সম্ভব না। কিন্তু সেদিন আমাকে অবাক করে দিয়ে বাপ্পা বলেছিল, ‘থাক, আজকে তোমার নিকাব পরতে হবে না।' যাক, এমন ছোটছোট ঘটনাগুলো উল্লেখ করলে হয়তো পুরো একটা বই-ই লেখা লাগবে।
তারপর গেলাম কলেজ হোস্টেলে, হোস্টেলে, সেখানে সেখানে শুরু হলো নতুন যন্ত্ৰণা৷ ক্লাসমেট, রুমমেট, স্যার অথবা ম্যাম আমার দিকে আজব দৃষ্টিতে তাকাতে লাগল, যেন আমি একটা এলিয়েন। সময়ে অসময়ে নানাভাবেই বোরকা-নিকাব পরাটাকে হেয়
করতে লাগল।
আমি তখন কালো বোরকা নিকাব পরতাম। অন্য কালার পরাটা আমার কাছে খ্যাত মনে হতো। কিন্তু মানুষজন যখন দেখত, কোনোভাবেই আমাকে বোরকা ছাড়ানো যাচ্ছে না, তখন বলত—কালো না পরে অন্য কালার পরলে আমাকে সুন্দর লাগবে।
এসব কথার ভিড়ে নিশ্চয় আমার আশপাশের সবাইকে খুব খারাপ মনে হচ্ছে, তাই না? ব্যাপারটা আসলে সে রকম না। যে যেটুকু জানে সেটুকুর মধ্যেই আমার জন্য ভালোই চাচ্ছিল সবাই। এ দেশের মানুষগুলো তো পর্দা ছাড়া থাকাটাকেই স্মার্টনেস বোঝে। পর্দা করলেও তো সুন্দর ফুলহাতা সেলোয়ার কামিজের সাথে হিজাব পরে পর্দা করা যায়। পর্দা করতে আবার এমন ঢিলেঢালা বোরকা নিকাবের কী দরকার, এটাই এখানের মানুষের ধারণা।
নিজের সাথে নিজে তুমুল যুদ্ধ করতে করতে একসময় আমিও এসব মিষ্টি কথার লুপ হোলে পড়ে গেলাম। আমার পর্দা ছিল সৌদিতে থাকার ফলে গড়ে ওঠা একটা অভ্যাস মাত্র। এই বোরকা দ্বীনের জ্ঞান থেকে গায়ে জড়াইনি আমি। ছেড়ে দিলাম নিকাব। কেউ বাধা দিল না। সত্যিই বলছি, কেউ না, বরং উলটো বাহবা পেলাম অনেকের কাছ থেকে। অনেকেই বলতে লাগল, ‘এই তো এখন কত্ত সুন্দর লাগছে তোমাকে।' নিজেকে সুন্দর দেখাক এটা তো সবাই চায়। আর টিনএইজে ঝোঁকটা এ সৌন্দর্যের দিকে একটু বেশিই থাকে। আমারও ছিল। নিজেকে গুছিয়ে রাখা। পরিপাটি থাকা। সবই ভালো লাগত। আর এ মন্তব্যগুলো তাতে হাওয়া দিত।
For Photos I use:
Camera |
Iphone 12 Mini |
Lens |
Wide 26 mm-Equivalent |
Photographer |
@fxsajol |
Location |
Mirpur 12 , Dhaka, Bangladesh |
Processing photos |
Outdoor |
নিকাব ছাড়ার পর শুরু হলো বোরকা নিয়ে নানা কথা। এত্ত ঢিলেঢালা বোরকা পরার কী দরকার? সব সময় কালোই কেন পরতে হবে? একটু টাইট করে নিলেও তো পারি অথবা শর্ট বোরকাও তো পরতে পারি আমি। কিংবা কিছু সুন্দর ফুলহাতা কামিজও তো বানিয়ে নিতে পারি; কামিজের সাথে হিজাব করলেই তো চলে। এমন আরও হাজারও কথা। এই কথাগুলোও শয়তান আমার কানে মধু মেখে ঢুকিয়ে দিল। জীবনে প্রথম বোরকা নিকাব ছাড়া গিয়েছিলাম কলেজ পিকনিকে। সবাই এত্ত বাহবা দিল, এত্ত ভালো বলল, আর এত্ত সুন্দর হাসিমাখা মুখে আমায় দেখেছিল, যেন আমি তো আমি না; মাত্রই জান্নাত থেকে একজন হুর মাটিতে পা রেখেছি। তখন থেকেই কলেজে বোরকা নিকাব ছাড়া শুধু হিজাব পরে যেতে লাগলাম। কলেজের বাইরে অবশ্য তখনও লং বোরকা পরি। আমার এই অধঃপতনে কেউ বাধা দিল না। কেউ না৷ আম্মি-বাপ্পাও না৷ খুব আফসোস হয়। খুব। জীবনে একটা মানুষ যদি একবার মাথায় হাত রেখে আমাকে বুঝিয়ে বলত, ‘মুন, তুমি ভুল পথে পা বাড়াচ্ছ।' তাহলে হয়তো জীবনের অনেক অনেক ভুল থেকে আমি বাঁচতে পারতাম। খুব অবাক লাগে। সবাই এমন কেন!
আমাদের সামনে কেউ যদি বেখেয়ালে হাঁটে, আর আমরা যদি টের পাই যে, সামনে একটা বড় গর্ত আছে,
Congratulations, your post has been upvoted by @nixiee with a 9.235134238764362 % upvote Vote may not be displayed on Steemit due to the current Steemit API issue, but there is a normal upvote record in the blockchain data, so don't worry.