শহরের প্রত্যাবর্তন // ১০% পেআউট লাজুক খ্যাঁক-কে
নমস্কার,
করোনা আমাদের জীবন থেকে কত কিছুই না কেড়ে নিয়েছে। বিশেষ ভাবে মানুষের প্রাণচঞ্চলতা। ছুটে বেড়ানো মানুষগুলোর জীবন একেবারেই থমকে গেছে। ২০১৯ থেকে কলকাতায় আমার বাস, কলকাতাকে কখন থেমে থাকতে দেখবো সেটা কল্পনাতেও ভাবিনি। করোনা এই অসাধ্য সাধন করেছে। করোনা দ্বিতীয় স্রোতে আজ প্রায় আট মাস লোকাল ট্রেন বন্ধ ছিলো, অবশেষে বেশ কিছুদিন আগে পূর্ণ ভাবে লোকাল ট্রেন চালু হয়েছে। আংশিক ভাবে ট্রেন চলার সময়েও মানুষের সংখ্যা ছিলো হাতেগোনা। অথচ লোকাল ট্রেনকে কলকাতার ধমনী বলা যায়।
নভেম্বরের শুরু থেকে লোকাল ট্রেন পূর্ণরূপে চালুর পরে আমি প্রথমবার ট্রেনে চড়লাম, মানুষের ভিড় দেখে চিন্তায় হলেও, চিন্তার সাথে ছিলো আলাদা একটা ভালোলাগা। মানুষ দেখে একটু উৎফুল্ল হয়েছিলাম বটে। হয়তো মানুষকে নিজের জীবনের ছন্দ পতন কাটিয়ে ফিরতে দেখেই ভালো লাগলো। প্রাণচঞ্চল এই শহরের স্বাভাবিক হওয়াটা খুবই জরুরি। আর কিছুদিন বাড়িতে আটকে থাকলেই শহর আরো একাকিত্বে ডুবে যাবে।
আমাদের একাকিত্বের জন্য দায়টা করোনার ঘাড়ে চাপালেও আমি আংশিক ভাবে সোশ্যাল মিডিয়াকেও একাকিত্বের জন্য দায়ী করি। সোশ্যাল মিডিয়া আর বাস্তব জীবনের বিস্তর ফারাক জানা সত্ত্বেও মানুষ যেন আরো বেশি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঢুকে চলেছে। কারন হিসেবে বিগত পৌনে দু বছরে মানব স্পর্শ না পাওয়াকেই ধরি। সোশ্যাল মিডিয়াই এই স্পর্শকাতর হোমো সেপিয়েন্স ধীরে ধীরে ডিপ্রেশনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। পালাবার পথ নেই।
পরিসংখ্যান বলছে বিগত দু বছরে করোনার কারণে যত মানুষ মারা গেছে থেকে তার থেকে অনেক বেশি মানুষ আত্মহত্যা করেছেন। মানসিক চাপই এর মূল কারন। করোনা আমাদের মনে যে ভীতির সঞ্চার করা হয়েছে তা থেকে যেন কেউই বেরিয়ে আসতে পারছে না। দিনের-পর-দিন, মাসের-পর-মাস বাড়িতে আটকে রয়েছে বিশাল সংখ্যক জনসংখ্যা। চার দেওয়ালের মাঝে তাদের মানসিক পরিস্থিতি তলানিতে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। করোনা প্যান্ডেমিকের অগোচরে লুকিয়ে আছে আরো বেশি ভয়াবহ প্যান্ডেমিক, বিষণ্ণতা।
দেশলাই বাক্সের মতো আবাসনগুলোয় বাস করা পৌঢ় থেকে মিলেনিয়াল কেউই এই মানসিক প্যান্ডেমিক থেকে দূরে নেই। বয়স্ক মানুষ গুলোর কষ্টটাই হয়তো সবচাইতে বেশি। বেশিরভাগেরই সন্তান কর্মসূত্রে বাইরের দেশে কিংবা অন্য শহরে থাকে, দু'বছর সন্তানরা বাড়িতে ফিরে আসার সুযোগ পায়নি, অনেকে আসবার সুযোগ পেয়েও আসেনি। মানুষগুলোর বাঁচার জন্য একটু অক্সিজেন প্রয়োজন।
চিন্তা করতে করতেই ট্রেনটা চলে এলো, উঠে পড়লাম! প্রাণচঞ্চল শহরে একটু গা ভাসিয়ে দিই। একটু অক্সিজেন আমারও প্রাপ্তি।
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |

ঠিকই বলেছেন দাদা করোনা যেন আমাদের জীবন থেকে প্রাণ চাঞ্চল্য কেড়ে নিয়েছে। আমরা ভালো আছি মনে সেই আগের মতো আনন্দ নেই। নেই আগের মতো যখন যেখানে ইচ্ছামতো যাওয়ার স্বাধীনতা।
আমি কলেজ থেকে লোকাল ট্রেনেই বাড়ি ফিরতাম। দীর্ঘ একবছরের বেশি সময় পরে যখন আমি আবার লোকাল ট্রেনে উঠি তখন আমার মধ্যেও আলাদা একটা ভালো লাগা কাজ করছিল। বিধান নগর স্টেশনটা তো বেশ সুন্দর।।
করোনা মানুষের জীবন থেকে অনেকটা মূল্যবান সময় কেড়ে নিলো। ধন্যবাদ ইমন 🤗
করোনা যেমন একটা প্যান্ডেমিক ঠিক তেমনই এই বাড়িতে আটকে থাকা, সন্তানেরা ঘরে ফেরাও অনেক বড় একটা প্যান্ডেমিক।আসলে আমাদের চারপাশটায় এতো ভয়াবহতা বেড়ে গেছে যে চাইলেও এসব থেকে আর বের হতে পারছিনা। আর এই চার দেয়ালে বন্দিটা একদিকে যেমন সেইফ অন্যদিকেও আবার তেমন ভয়ংকর।দারুণ লিখেছেন।
অদৃশ্য প্যান্ডেমিক! শহরে প্রকোপ বেশি। দেশলাইয়ের মতো ফ্ল্যাটে আটকে আছে। অন্ত নেই...
ঠিকই বলেছেন দাদা মানুষ এখন আর আগের মতো প্রাণচঞ্চল নেই। শহরের অদূরেই খেলাধুলা, হইহুল্লোড়, হাসি তামাশা, দীর্ঘ সময় বাইরে ঘুরে ঘুরে আড্ডা দেওয়া।
এগুলো থেকে অনেকটা দূরে সরে গেছে এই করুনার কারণে। মানুষ এখন মানুষকে হিসেবে গণ্য করে না। কে আপন কে পর বোঝা বড় মুশকিল এ করুনা মানুষকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। আপনার দীর্ঘ দিন ট্রেন বন্ধ থাকায় যাতায়াত করতে পারেননি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ছেন। পরিস্থিতি যাতে আগের মত স্বাভাবিক হয়। কিন্তু আমার কথা হচ্ছে এমনও তো দেখেছি পিতা মারা গেছে সন্তানরা কাছে যায়নি একবার দেখার পর্যন্ত প্রয়োজন মনে করেনি। তাহলে আমরা কি সে মানুষ, আপনি তো অনেক কিছু লিখেছেন আমি যে কিছু লিখব ওই সম্পর্কে আমার সে ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। কারণ আমি বাস্তবে দেখেছি সম্পর্ক কাকে বলে, ভালোবাসা কাকে বলে, আপন পর কাকে বলে। মিডিয়া এমন একটা জাত অর্থের কাছে চাপা পড়ে যায় অনেক কিছু আবার গরিবের জন্য মিডিয়া একটা পাস। যাই হোক আমাদের সাথে অনেক সুন্দর করে গুছিয়ে আপনি উপস্থাপন করেছেন। শুভকামনা রইল দাদা।
করোনা মানুষের মধ্যে নোংরামিটা আরো বেশি করে ফুটিয়ে তুলেছে। অসুস্থ বাবা মায়ের সাথে বাজে আচরণ করেছে, সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক। আমাদের সমাজের অধঃপতন!
মানুষ যা খায় মিডিয়া তাই দেখায়, এক্ষেত্রে আমি মিডিয়াকে দোষ দিইনা।