জলাবদ্ধতা ।। আমাদের কি কোনই দায় নেই!!!!
নমস্কার,,
বাংলাদেশে একটু বৃষ্টি হলেই রাজধানী শহর ঢাকা থেকে শুরু করে আশেপাশের যেসব অঞ্চল আছে যেমন টংগী বা গাজীপুর, সবখানেই জলাবদ্ধতা কম বেশি তৈরি হয়ে থাকে। এমনকি আরো অনেক সিটি কর্পোরেশনেও একই অবস্থা দেখা যায়। আর এমন নাজুক অবস্থার সম্মুখীন আমরা যখনই হই সাথে সাথে নগর কর্তাকে দোষ দিতে থাকি। একের পর এক অভিযোগ তুলে পাল্লা ভারি করতে থাকি।
আচ্ছা, একটা শহরের বা একটা এলাকার জলবদ্ধতার জন্য কি শুধুমাত্র সেই নগরকর্তাই দায়ী? আমরা যারা সাধারন জনগণও আছি তাদের কি কোন ভূমিকা নেই এতে!! নিজেদের দিকে কখনো কি আঙ্গুল তুলেছি আমরা?
কিছুদিন আগে যখন ঢাকা যাচ্ছিলাম তখন তীব্র যানজটের স্বীকার হই। যার অন্যতম প্রধান কারণ ছিল এই জলবদ্ধতা। গাড়িতে বসে থেকেই দেখছিলাম আশেপাশের মানুষজনের কত ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এই নির্মম পরিস্থিতিতে। বড় যানবাহন গুলো তবু কোন মত চলতে পারছিল, কিন্তু ছোট গাড়ির বেশ বেগ পোহাতে হচ্ছিল। আর কিছু কিছু সাধারণ মানুষকে দেখলাম বাধ্য হয়েই সেই নোংরা জলের মধ্যে দিয়ে হেঁটে হেঁটে যাচ্ছে। আধুনিক সমাজে থেকেও এরকম দৃশ্য যদি চোখের সামনে পড়ে তাহলে সত্যি খুব কষ্ট হয়।
কখনো কি আমরা ভেবে দেখেছি, আমাদের সামান্য কিছু দায়িত্ব-কর্তব্যবোধই পারে এই দুর্ভোগের মাত্রাটা অনেকাংশে কমিয়ে দিতে? একটু সুস্থ মস্তিষ্কে আমরা যদি চিন্তা করি তাহলে দেখতে পাবো যে ড্রেন বা ছোট ছোট খাল বিলগুলো যেগুলো দিয়ে বৃষ্টির জল পরিবাহিত হবে, সেগুলো বেশিরভাগই চিপসের প্যাকেট, কোল্ড্রিংসের বোতল বা অন্যান্য প্লাস্টিক দ্রব্যাদি দিয়ে কানায় কানায় পরিপূর্ণ। আর এগুলো যদি পরিষ্কার থাকে তাহলে অনায়াসে বৃষ্টির জল গুলো নদীতে চলে যেতে পারে।
আচ্ছা এই ময়লা আবর্জনাগুলো ফেলছে কে? আমি আপনি বা আমাদের মত সাধারন মানুষজনরাই তো ফেলছি প্রতিনিয়ত। আমরা যদি নিয়ম মেনে চিপসের প্যাকেট বা কোল্ড্রিংসের বতোল গুলো ডাস্টবিনে ফেলতাম তাহলে কি আর এই জলবদ্ধতার তৈরি হতো! যেখানে সেখানে আবর্জনা ফেলছি আর ড্রেনের মুখ বন্ধ করে ফেলছি। আবার অনেক সময় দেখা যায় যারা নতুন বাড়ি করছেন, তারা ইট বালি রড মূল সড়কে রেখে কাজ করছেন। একটু বৃষ্টি হলেই সেগুলো ভেসে ড্রেন গুলো ভরাট করে দিচ্ছে। অথবা কলামের জন্য যে মাটি খনন হয় সেগুলো রাস্তায় ফেলে রেখে বৃষ্টির জল গড়ানোর প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।
একটা পৌরসভায় বা সিটি কর্পোরেশনে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কর্মী কয়জনই বা আর থাকে! শুধু তাদের চেষ্টা দিয়েই কি বিশাল জনগোষ্ঠীর এই ময়লা আবর্জনা গুলোকে পরিষ্কার করা সম্ভব!! মোটেও সম্ভব নয়। এই জলাবদ্ধতা তৈরীর অন্যতম প্রধান কারিগর কিন্তু সেই সমাজে বসবাসকারী আমার আপনার মত মানুষেরাই। আমাদের নিজেদের সামান্য সচেতনতা বোধই পারে এমন দুর্ভোগের হাত থেকে আমাদেরকে এবং সমাজের পরিবেশকে রক্ষা করতে।
তাই আসুন আমরা নিজেদের বাজে অভ্যাস গুলো পরিবর্তন করি। যেখানে সেখানে প্লাস্টিক বা ময়লা আবর্জনা না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে সেগুলো ফেলি। হ্যাঁ রাতারাতি হয়তো পরিবর্তন সম্ভব নয়, তবে পরিবর্তনটা শুরু হতে হবে আমার আপনার থেকেই। নিজে নিজের বাজে অভ্যাস গুলো পরিবর্তন করার চেষ্টা করি এবং অন্যের ভুল গুলোও বিনয়ের সাথে সংশোধনের জন্য ধরিয়ে দেই।
আসলে ভাইয়া যেখানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় একটু লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে সেখানকার স্থানীয় মানুষদের বাজে অভ্যাসের কারণেই সেখানে এরকম সমস্যা সৃষ্টি হয়। তাই আমি মনে করি, সেখানকার মানুষদের সচেতন ও সতর্কমূলক আচরনের মাধ্যমে এ ধরনের সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
নগরকর্তার এখানে তো আমি কোন দোষই দেখতে পাই না ভাই। কারণ আমরা যে পরিমাণে পরিবেশ নোংরা করি তাতে নগরকর্তা আর কত দিকে খেয়াল রাখবে তাই বলেন। যতদিন না আমরা সাধারন মানুষ যারা আছি সচেতন হচ্ছে ততদিন এই সমস্যার পরিত্রাণ হবে না। এটা শুধুমাত্র যে ঢাকা শহর এ ঘটে সেটা কিন্তু নয়, আমাদের কলকাতাতেও সামান্য বৃষ্টি হলে এখন ভেসে যায়। কারণ ড্রেন বা বড় বড় নর্দমা গুলো নোংরা দিয়ে ভর্তি।
মজার ব্যাপার কি জানেন ভাই, আমরাই যখন ইউরোপ আমেরিকা তে থাকি তখন ভুল করেও নোংরা করার সাহস পাই না । অথচ নিজের দেশের ভালো মন্দ কেউ বুঝি না। এই তো আমাদের দেশপ্রেম।
রাতারাতি পরিবর্তন সম্ভব না হলেও, চেষ্টা করতে থাকলে ধীরে ধীরে আমরা একটা সুস্থ পরিবেশ গড়ে তুলতে পারবো। আমাদের মানুষজনদের অসুস্থ মস্তিষ্কের কারনেই আজকে আমাদের সকলেরই ভোগান্তি। বিশেষ করে যে মানুষগুলো রাস্তার পাশে ছোট ছোট বাড়িঘরগুলোতে থাকে ,জল জমা হলে তাদের যে কি পরিমাণ কষ্ট সেটা তারাই বুঝতে পারে শুধুমাত্র ।আমরা তো কিছুক্ষণের জন্য রাস্তাঘাটে যাতায়াত করতে গিয়ে তাই বিরক্ত হয়ে উঠি আর তারা প্রতিনিয়ত কিভাবে ওই জলের মধ্যে থাকছে!
কিন্তু আমাদের মধ্যে নিজেদের বাজে অভ্যাস গুলো পরিবর্তন করার চেষ্টা টাই যে নেই, তাহলে কি করে হবে বলুন! আমরা শুধু অন্যের কাধে দোষ দিতে জানি, নিজের ত্রুটি ভুল করেও চোখে পড়ে না। আর সে জন্যই আজকের এই বেহাল অবস্থা।