বহু প্রতিক্ষার সকাল!
ক্যাম্পাস লাইফের প্রত্যেকটা দিন আমার কাছে স্পেশাল। প্রতিটা ভোর, প্রতিটা সকাল, প্রতিটা সন্ধ্যা, এমনকি মুহূর্ত। তবুও মনে হয় যদি আরো রুটিন করে সময়টা পার করতে পারতাম তাহলে আরো সুন্দরতম হতো এই মুহূর্তগুলো।
বলছি ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের একটি শীতের সকালের কথা।
শীতের দিনে এমনিইতেই ঘুম থেকে একটু দেড়িতে ওঠা হয়। সকালে ক্লাস না থাকলে এই দেড়ির পরিমাণটা বাড়তে বাড়তে ১১ টার ঘরে গিয়ে পতিত হয়। ডিসেম্বর-জানুয়ারির দিকে রাজশাহীতে শীতের মাত্রা এতোটাই বেশি থাকে প্রায় দিই-ই সূয্যি মামার দেখা মেলে না।
আমার ভাবনার সাথে মিলিয়ে একটা সকাল আবিষ্কার করার চেষ্টা করছিলাম কয়েকদিন ধরে। কিন্তু কম্বলের ওম থেকে বের হয়ে কুয়াশায় ভিজবার সাহস হচ্ছিলো না। যদিও এমন দৃশ্য আমার খুবই পছন্দের।
একরাতে ফোনে বেশ কয়েকটা এলার্ম সেট করলাম এবং খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে বের হলাম ক্যাম্পাস ঘুরতে।
প্রথমেই আমার হলের পুকুর পাড়। চোখ পরে লাল শাপলাগুলোর দিকে। কুয়াশা আর জলের সন্ধি! মনে হচ্ছে চুলার হালকা আঁচে বসানো পানি থেকে বাষ্পগুলো উর্ধ্বাকাশের দিকে ছুটে যাচ্ছে এবং তার মাঝখানে দুএকটা লাল শাপলা ফুল ফুটে আছে।
পাড়ের বেঞ্চে বসে এই দৃশ্যটা মিনিট পাঁচেক উপভোগ করলাম। চোখ বন্ধ করে লম্বা নিঃশ্বাস নিয়ে অনেকটা হালকা হলাম।
তারপর আস্তে আস্তে জিমন্যাশিয়ামের দিকে হাটতে লাগলাম। রাস্তা একদম ফাঁকা। কুকুরগুলোও রাস্তায় নেই, হয়তো কোনো বিল্ডংয়ের করিডোরের এককোণে জঠলা বেধে শুয়ে আছে সবগুলো। জিমনেশিয়ামের রাস্তাটা খুব সুন্দর। রাস্তা ধরে হাঁটতে শুরু করলাম। টার্গেট প্যারিস রোড হয়ে মমতাজ উদ্দিন বিল্ডিংয়ের পূর্ব পার্শ্বের শিঁউলি তলা। এই প্রতিক্ষার সকালের বড় প্রতিক্ষা ছিলো এই শিউলি তলা।
প্যারিস রোডের পূর্ব পাশ থেকে পশ্চিম দিকে তাকালেই চোখ জুড়িয়ে যায়। ওখানে যেতে যেতে খেটে খাওয়া মানুষের কাজে যাওয়ার তাড়া শুরু হয়ে গেলে। কেউ হেঁটে কেউ সাইকেলে করে জীবিকার সন্ধানে যাচ্ছে।
তারপর আমার স্বপ্নের শিউলি তলা। মুগ্ধ হলাম, কিছু ফুল কচু পাতায় মুড়িয়ে নিয়ে হাঁটা শুরু করলাম মনিরের দোকানের দিকে। মনিরের দোকালের সকালের নাস্তা অনেক ভালো। সকালে গরম সবজি খিচুরী আর ডিম ওমলেট সাথে এমন সুন্দর কুয়াশা ভেজা সকাল।
খাওয়া শেষ করে হাঁটা শুরু করলাম রুমের দিকে।
ফাঁকা রাস্তা। নির্জন!
হাঁটছি..........
সাথে সদ্য ঝরে পরা শিঁউলি ফুলগুলো একদম প্রেমিকার নরম হাতের মতো স্পর্শ করে আছে আমায়।