যাচাই ছাড়া কারো থেকে কোন কিছু শুনে বিশ্বাস করা মিথ্যার নামান্তর!!!
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
প্রিয় সাথী বৃন্দ, আজকে আমি সচরাচর আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যেই মিথ্যা টি হ্রহ করে থাকি যেমনঃ "যাচাই ছাড়া কারো থেকে কোন কিছু শুনে বিশ্বাস করা মিথ্যার নামান্তর"এই কাজটি আমরা প্রত্যেকদিন অধিকাংশ মানুষ অধিকাংশ সময় এমন মিথ্যা কথা বলে থাকি।
আমাদের এই দুনিয়াতে মহান আল্লাহ তাদের পাঠাইছেন তার হুকুম আহকাম দিয়ে আর এই হুকুম আহকাম গুলো কোরানুল কারীমে বলে দিয়েছেন। সেগুলো আমাদেরকে অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে। তাইতো আমাদের প্রত্যেকটি মানুষের এই পৃথিবীতে সর্বপ্রথম যেটি সেটি হল পাপ কাজ থেকে বিরত থাকা। আর আমরা কোন কোন ক্ষেত্রে কোন কোনটি পাপ কাজ তা আগে বুঝতে হবে জানতে হবে তারপর আমরা বিরত থাকতে পারবো। কোন কথা বললে পাপ হবে আর কোন কথা বললে পাপ হবে না এইটা আগে আমাদেরকে বুঝতে হবে জানতে হবে। অনেকে আছে যে বলে এত কখন ভাববো বা কখন জানবো সময় কই? আমি তাদের উদ্দেশ্যে দিয়ে একটা উদাহরণ পেশ করব। যেমন ধরুন কোন কৃষক জমিতে যদি কোন ক্ষেত লাগায় আর সেই ক্ষেত্রে গাছগুলোর পাতা লাল হয়ে যাচ্ছে অথবা পোকা খাচ্ছে অথবা মূল কাণ্ড মরে যাচ্ছে অথবা গাছ বড় হচ্ছে না অথবা ফুল ফল ধরছে না এমন যদি কোন সমস্যা তার খেতে দেখা যায় তবে সে তার ক্ষেতের ফসল এমন হচ্ছে কেন সেই কারণ খোঁজার জন্য সে মরিয়া হয়ে ওঠে। সে আশেপাশে জমিওয়ালার কে জিজ্ঞেস করে অথবা বন্ধু-বান্ধবদের জিজ্ঞেস করে অথবা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসা করে যা আমার ক্ষেতের সমস্যা হচ্ছে কেন? সেখানেও যদি সমস্যার সমাধান না হয় তবে যেখানে তার যা দরকার যেখানে গেলে তার এ সমস্যার সমাধান হবে ঠিক সে সেখানেই যাবে? এবং এই সমস্যার সমাধানের জন্য যে ওষুধ আনতে হোক না কেন যে কীটনাশক প্রয়োগ করা হোক না কেন যত টাকায় লাগুক না কেন সে কোন প্রকার কার পূর্ণ করবে না। লক্ষ্য করা যায় যে তার জমিতে ফসলের কোনো কারণে সে এরকম মরিয়া হইয়া ওঠে অথচ তার জিন্দেগি পাপমুক্ত থাকতে হবে আর কোন কাজ করলে পাপ হবে আর কোন কাজ করলে পাপ হবে না এই বিষয়টি জানার জন্য সে কখনো এরকম মরিয়া হয়ে ওঠে না। সে কাউকে জিজ্ঞাসা করে না কোন হুজুরের কাছে যায় না সে বলে আরে করি একটা, যা হয় হবে।
এখন আসুন তার জিন্দেগীর ব্যাপারে জানার অনীহা অথচ খেত সমস্যা হলে জানার জন্য মরিয়া হয়ে উঠি এর প্রধান কারণ হলো আমার মধ্যে পরকালের বিশ্বাস নড়বড়ে, আমার মধ্যে মহান আল্লাহ তায়ালার পরিচয় নড়বড়ে, আমার মধ্যে দুনিয়ার প্রতি আসক্তি এবং পরকালের প্রতি অনার শক্তি ভর করেছে। এই তিনটি কারণে আমরা দুনিয়ার অস্থায়ী জিনিসের প্রতি মরিয়া হয়ে উঠি অথচ যেখানে গিয়ে আমাকে থাকতে হবে যেখানে গিয়ে আমাকে বসবাস করতে হবে অনন্তকাল অনাদিকাল অথচ সেই জিন্দেগীর প্রতি আমার কোন প্রকার দরদ, মায়া, মহাব্বত, সতর্কতা কিছুই নেই।
তাইতো আমরা দৈনন্দিন এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ পাপ করে থাকে যে পাপটি হলো। কোন ব্যক্তির থেকে শোনা কথা যাচাই-বাছাই ছাড়াই বিশ্বাস করি এবং সেটা অন্যের কাছে প্রচার করি। এটা একটা মিথ্যার নামান্তর মিথ্যা ছাড়া আর কিছু নয়। আমাদের সমাজে প্রতিনিয়ত দেখা যাচ্ছে। একজন এমন একটা কাজ করেই নাই অথচ অন্য একজন সেটা বলে বেড়াতেছে যে অমুকে এই কাজ করেছে অথবা অমুকে এই কথা বলেছে অথবা অমুকে ওইখানে গিয়াছে। তখন আমরা সেই কথা শুনি এবং সেই মতে আবার অন্যের কাছে বলতে থাকি হ্যাঁ আমাকে তো এই কাজ করেছে হ্যাঁ আমাকে তো একথা বলেছে অমুকে তো ওইখানে গিয়াছে। আমি এই যে শোনা কথা এইভাবে অন্যকে বলে দিলাম এটা একটা মিথ্যা নামান্তর ছাড়া আর কিছুই নয়। অর্থাৎ এটা একটা মিথ্যা কথা হল। পরে যখন যাচাই করা যায় তখন দেখা যায় যে সেই ব্যক্তি ওই কথা বলেই নাই অথবা ওই ব্যক্তি ওই কাজ করেই নাই অথবা ওই ব্যক্তি অমক জায়গায় যাই নাই।
এমন কথা বিশ্বাস করা বা অন্যের কাছে প্রকাশ করা মিথ্যার নামান্তর ছাড়া আর কিছুই নয় অর্থাৎ সরাসরি সেটা মিথ্যা কথা হয়। আর মিথ্যা একটা জঘন্য অপরাধ এবং মিথ্যা কথা বলা কবিরা গুনাহ অর্থাৎ সবচাইতে বড় গুনাহ হয়। যে গুনা তওবা ছাড়া মাপ হয় না।
আর এই যে শোনা কথা যাচাইবা ব্যাতীরে অন্যের কাছে প্রকাশ করা বা বলা সেটা যে মিথ্যা কথা হয় আর প্রত্যেকটি মিথ্যাই কবিরা গুনাহ। এটা আমরা অধিকাংশ মানুষের অজানা। তাইতো প্রত্যেকটি পরিবার প্রত্যেকটি ব্যক্তিগত জীবন প্রত্যেকটি সমাজে রাষ্ট্রে অর্থাৎ কর্মস্থলে বিভিন্ন জায়গায় সিংহভাগ মানুষ এই কবিরা গুনাটি করে আসিতেছে। অথচ সে নিজেই জানিনা যে আসলে এটা এত বড় কবিরা গুনা হয়। এ ব্যাপারে কাউকে সে জিজ্ঞাসও করে না কাহারা থেকে শুনেও না বা কোন হুজুর বা আলেমের কাছে যায়ও না। ব্যাপার মনে করে সামান্য ব্যাপার মনে করে। অথচ তার জিন্দেগি ৫০ থেকে ৬০ বছর। এই পঞ্চা ষাট বছরে যদি প্রতিদিন গড়ে একটা করেও এমন কবিরা গুনাহ করে তাহলে কি পরিমান কবিরা গুনাহ হবে তা একটু ভেবে দেখেছে কি আমরা। না কখনোই দেখি নাই। এতগুলো কবিরা গুনা হওয়ার পর যদি আমি নিজে যদি না জানি যে আমার এতগুলো কবিরা গুনা হয়েছে তবে আমার অনুশোচনা আসবে কি করে। জানি আল্লাহতালা মহান দয়াময়, গফফার, সাত্তার। তার থেকে কোন বান্দা যদি কোন কিছু ক্ষমা চায় তওবা করে তাহলে মহান আল্লাহতালা আশা করা যায় উক্ত ব্যক্তিকে অবশ্যই ক্ষমা করবেনই ইনশাআল্লাহ। কিন্তু ক্ষমা তো মহান আল্লাহতালার কাছে চাইতে হবে। সে তো জানিই না যে তার এতগুলো কবিরা গুনাহ হয়েছে। জানার পরে তার অনুশোচনা আসবে আর অনুশোচনা আসার পরে সে নিজেকে অপরাধী ভাববে আর অপরাধী ভাবার পর দয়াময় মহান আল্লাহর কাছে আশ্রয় নেবে। আশ্রয় নেওয়ার পর তার কাছে তওবা করবে আর তখন আশা করা যায় মহান আল্লাহ তাআলা তাকে মাফ করে দিবেন।
তাইতো আমাদের উচিত প্রত্যেকেই আমরা দৈনন্দিন জীবনে পারিবারিক জীবনে ব্যক্তিগত জীবনে রাষ্ট্রীয় জীবনে যেখানে আমি পদার্পণ করি না কেন যেখানেই আমি গমন করি না কেন সেখানেই আমাকে সতর্ক থাকতে হবে যে যে কেউ যে সংবাদ যে কথা যে কাজই করে দেখাক না কেন সেটা আগে যাচাই করে দেখতে হবে। তারপর সেটা বিশ্বাস এবং অন্যের কাছে প্রকাশ করা যাবে। তাই আমাদের উচিত প্রত্যেকটি সোনা কথা যাচাইবা তীরে কখনোই আমরা অন্যের কাছে প্রকাশ করব না এবং বিশ্বাস করব না। আর এইভাবে যদি আমি জীবনে প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে চলতে পারি তবে আমার এই গুপ্ত ঘাতক মিথ্যা বলার কবিরা গুনাহ আমাকে স্পর্শ করতে পারবে না। আমি বিশাল এক বিপদ থেকে বেঁচে যাব। তাই আমাদের উচিত জীবনের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে প্রত্যেকটি কাজ করতে হলে অবশ্যই নিজে না বুঝলেও আলেমকে জিজ্ঞেস করে করা উচিত এবং আমরা করব ইনশাআল্লাহ। আমরা যদি দুনিয়ার সংক্ষিপ্ত জিন্দেগির আবাদ বসত, কাজকর্ম ওঠা বসা কথাবার্তা চালচলন ইত্যাদি যদি অন্যকে জিজ্ঞেস না করা পর্যন্ত না করি, তাহলে পরকালীন জিন্দেগীর আত্মার স্থায়ী জিন্দেগীর জন্য কোন কাজ ক্ষতি কোন কথা ক্ষতি কোন কি করলে ক্ষতি হবে সেই বিষয়গুলো আমরা আলেমদের কাছ থেকে কেন জেনে নেই না আমাদের উচিত প্রত্যাহারী যে কাজটি আখিরাতের সাথে সম্পৃক্ত সে কাজটি অবশ্যই আলেম-ওলামা থেকে জেনে বুঝে তারপর করা উচিত আমাদের।
তাই আসুন আমরা আজকে থেকেই শোনা কথা কখনো বিশ্বাস করব না যাচাই করা ছাড়া। তাহলে আমি বড় গুনাহ অর্থাৎ কবিরা গুনাহ মিথ্যা কথা বলা হতে বেঁচে যাব। মহান আল্লাহু আমার খুব খুশি হবেন রাজি হবে। আল্লাহ রাজি এবং খুশি হয়ে আমাকে চির সুখের জিন্দেগী চির শান্তির জিন্দেগি জান্নাত দান করবেন। আজকে এ পর্যন্তই আল্লাহ হাফেজ।