Stephen Hawking Biography
স্টিফেন হকিং আজকের দিনের খুবই পরিচিত নাম। আমরা তাকে চিনি বিশিষ্ট পদার্থবিদ এবং সর্বকালের সেরা জোতির্বিজ্ঞানীদের অন্যতম হিসেবে।বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কারনে তিনি খবরের পত্রিকার শিরোনাম হয়েছেন।আজ ১৪ই মার্চ আরেক বিখ্যাত বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনের জন্মদিনে তিনি চলে গেলেন না ফেরার দেশে।কিন্তু তার কৃতকর্মের জন্য মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন যুগের পর যুগ।চলুন জেনে নেওয়া যাক সংক্ষিপ্ত আকারে লিখিত স্টিফেন হকিংয়ের জীবনকাহিনী। জন্ম এবং বাল্যকাল:হকিং ১৯৪২ সালের ৮ই জানুয়ারিতে ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ডে জন্মগ্রহণ করেন।ওইদিন ছিল বিখ্যাত পদার্থবিদ গ্যালিলিও গ্যালিলির ৩০০তম মৃত্যুবার্ষিকি।তার বাবা ফ্রান্ক হকিং এবং মা ইসোবেল হকিং।চার সন্তানের মধ্যে হকিং ছিলেন সবচেয়ে বড়।বাবা-মা দুজনেই ছিলেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া।তাই বলা যায় হকিং একটি শিক্ষিত পরিবারেই জন্মেছিলেন।তার বাবা একজন জীববিজ্ঞানী ছিলেন।
শিক্ষাজীবন: হকিং প্রথমে সেইন্ট আলবানস স্কুলে ভর্তি হন।বালক বয়সে তিনি পড়ালেখায় মোটেও মনোযোগী ছিলেন না। ক্লাসে শেষের দিক থেকে তৃতীয় ছিলেন!!স্কুলে পড়াকালিন হকিং বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা পছন্দ করতেন।অনেক বুদ্ধিমান হওয়াতে সহপাঠীরা তাকে “আইনস্টাইন” বলে ডাকতো।পরবর্তীতে তিনি বলেন যে বাল্যকালে তিনি নাকি দৈনিক এক ঘন্টার মতো পড়ালেখায় ব্যায় করতেন। স্কুল শেষ করে ১৭ বছর বয়সে তিনি অক্সফোর্ড কলেজে ভর্তি হন।হকিং চেয়েছিলেন গনিত নিয়ে পড়তে কিন্তু ভার্সিটি তাকে পদার্থ এবং কসমোলজি পড়তে বাধ্য করে। গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট হলে তিনি ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পি এইচ ডি করতে যান।
দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত: মাত্র একুশ বছর বয়সে যখন হকিং ক্যামব্রিজে পি এইচ ডি করছিলেন তখনই একটি মারাত্মক রোগে(ALS) আক্রান্ত হন। রোগটি ছিল সরাসরি মস্তিষ্কের সাথে জড়িত।শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ন্ত্রণকারী নিউরনগুলো নষ্ট হয়ে যায়। ফলে তিনি প্যারালাইসড হতে থাকেন। ডাক্তারদের ধারনা ছিল তিনি হয়তো দুই-তিন বছরের মধ্যে মারা যাবেন।এরপর থেকে তিনি হুইলচেয়ারে চলালচল করতে থাকেন এবং একসময় পুরোপুরিভাবে অবশ হয়ে যান। এমনকি কথাও বলতে পারতেন না। ১৯৮৫ সালে তিনি কথা বলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। টাচপ্যাড কম্পিউটারের মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করতেন। কিন্তু তার গবেষণা কখনো থেমে ছিলো না।
বিয়ে এবং পরিবার: হকিং তার জীবনকালে দুইটি বিয়ে করেন।১৯৬৩ সালে তিনি তার প্রথম স্ত্রী জেন ওয়াইল্ড এর সাথে মিলিত হন।তারা ১৯৬৫তে বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হন।তারা তিনটি বাচ্চার জন্ম দিয়েছিল। ১৯৯০ এ তাদের ডিভোর্স হয়ে যায় অএবং হকিং এরপর তার একজন নার্সকে বিয়ে করেন ১৯৯৫ এ। ২০০৬ এ তাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়।কিন্তু তার সন্তানেরা তখনও তার সাথেই ছিলেন।
প্রতিষ্ঠা এবং গবেষণা: স্টিফেন হকিং সর্বকালের সেরা জোতির্বিজ্ঞানীদের একজন। তিনি মুলত মহাবিশ্বের সৃষ্টি রহস্য,ব্ল্যাকহোল,স্পেস-টাইম ও মাত্রা নিয়ে গবেষণার জন্য বিখ্যাত। তার রোগটি তাকে গবেষণায় মনোযোগী করতে ব্যাপক সাহায্য করেছে এটা তিনি নিজেই স্বীকার করেন। যেহেতু সারাদিন হুইলচেয়ারে বসে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না তাই সবসময় তিনি বিজ্ঞান নিয়ে চিন্তাভাবনায় ব্যাস্ত থাকতেন। এ নিয়ে হকিং নিজেই বলেন- “Before my condition was diagnosed, I had been very bored with life,” he said. “There had not seemed to be anything worth doing.” ১৯৬৮ সালে হকিং ক্যামব্রিজের ইন্সটিটিউট অব অ্যাস্ট্রনমির সদস্যপদ লাভ করেন।এরপর থেকে তার পুরো জীবনই ছিল বিজ্ঞানময়। ১৯৭৩ সালে তিনি তার প্রথম বই-The Large Scale Structure Of Space-Time প্রকাশ করেন।তখন থেকেই তিনি সারা বিশ্বের জোতির্বিজ্ঞানীদের কাছে ব্যাপক পরিচিত লাভ করেন। ৩২ বছর বয়সে তিনি লন্ডনের রয়্যাল সোসাইটির ফেলো নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে তিনি ব্ল্যাকহোল এবং আইনস্টাইনের আপেক্ষিককতার তত্ত্ব নিয়ে আরো ব্যাপক গবেষণা চালাতে থাকেন এবং ব্ল্যাকহোল সম্পর্কিত হকিং রেডিয়েশন আবিষ্কার করেন।তার দাবি ছিল যে তিনি নাকি ১১ মাত্রা পর্যন্ত কল্পনা করতে পারেন।যেই বিষয়টির জন্য তিনি সবচেয়ে বেশি পরিচিত তা হলো বিগ ব্যাং থিওরি।এই থিওরির মুল তত্ত্ব হলো এই মহাবিশ্ব একসময় খুব ছোট আকারে ঘনীভূত ছিল এরপর একটি মহাবিস্ফোরনের মাধ্যমে তা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে যেতে থাকে এবং এখনো এটি আরো বেশি পরিধিতে ছড়াচ্ছে।
স্টিফেন হকিং আরো যেসব জিনিসের জন্য পরিচিত তা হলো তার প্রকাশিত বইসমুহ।
প্রকাশিত বইসমুহ: স্টিফেন হকিং এপর্যন্ত মোট ১৪ই বই প্রকাশ করেছেন এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হলো ১৯৯৮ সালের A Brief History Of Time এই বইয়ে তিনি মহাবিস্ফোরন তত্ত্ব উল্লেখ করেন।বইটি সর্বকালের সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া বইগুলোর মধ্যে অন্যতম এবং প্রায় ৪০টি ভাষায় এটি অনুদিত হয়েছে। তার লেখা আরো কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বই হলো-২০০১ এ প্রকাশিত The Universe In A Nutshell,২০০৫সালে A Briefer History Of Time,২০১০ এ The Grand Design.
পুরস্কার এবং সম্মাননা: ১৯৭৪ এ তিনি রয়্যাল সোসাইটির ফেলোশিপ অর্জন করেন।বিজ্ঞানে অসামান্য অবদানের জন্য ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে তাকে আজীবন সম্মাননা প্রদান করেন। তিনি আলবার্ট আইনস্টাইন অ্যাওয়ার্ড সহ আরো বিভিন্ন পুরস্কার এবং সম্মাননা লাভ করেন।প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তাকে হোয়াইট হাউসে নিমন্ত্রণ জানান। সেখানে বাংলাদেশি নোবেল বিজয়ী ডক্টর ইউনুস ও উপস্থিত ছিলেন।
২০০৭ সালের ১৯ ডিসেম্বর কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বীয় কসমোলজি কেন্দ্রে হকিংয়ের একটি মূর্তি স্থাপন করা হয়। মধ্য আমেরিকার দেশ এল সালভাদর তাদের রাজধানী সান সালভাদরে বিজ্ঞান জাদুঘরটির নাম হকিংয়ের নামে রেখেছে। আফ্রিকান ইন্সটিটিউট অফ ম্যাথমেটিকাল সায়েন্সের সামনে তার আরেকটি মুর্তি স্থাপন করা হয়েছে।
ধর্ম বিশ্বাস: নিজের বই বা বক্তৃতায় নানা প্রসঙ্গে হকিং “ঈশ্বর” শব্দটি ব্যবহার করেছেন। তার স্ত্রীসহ অনেকে তাকে একজন নাস্তিক হিসাবে বর্ণনা করেন। হকিং নিজে মনে করেন তিনি “সাধারণ অর্থে ধার্মিক নন” এবং তিনি বিশ্বাস করেন “দুনিয়া বিজ্ঞানের নিয়ম মেনেই চলে। এমন হতে পারে নিয়মগুলো ঈশ্বর সৃষ্টি করেছেন কিন্তু তিনি নিয়মের ব্যত্যয় ঘটানোর জন্য কখনো হস্তক্ষেপ করেন না”।
স্টিফেন হকিং সম্পর্কে আরো কিছু তথ্য
১। তার বাবা বায়োলজিস্ট হলেও হকিং মোটেই বায়োলজি পছন্দ করতেন না। তার বাবা চেয়েছিলেন তিনি যাতে ডাক্তার হন। কিন্তু তার আগ্রহ ছিল গনিত এবং ফিজিক্সে।
২। কলেজ জীবনে তিনি তার কলেজের বোট ক্লাবের সদস্য ছিলেন এবং খেলাধুলা তিনি প্রচন্ড ভালোবাসতেন।
৩। তিনি এবং পদার্থবিজ্ঞানী কিপ থর্ন তার একজন জুনিয়র সায়েন্টিস্টের সাথে ব্ল্যাকহোল নিয়ে একপি বাজিতে পরাজিত হন। এবং পরবর্তীতে হকিং ওই সায়েন্টিস্টকে পুরস্কার হিসেবে সমগ্র বিশ্বকোষ সম্পুর্ন একটি বেসবল দিয়েছিলেন।
৪। তিনি এপর্যন্ত বিভিন্ন টেলিভিশন এবং সিনেমাতে গেস্ট হিসেবে উপস্থিত হয়েছেন। তাকে দ্যা সিম্পসনস এবং স্টার ট্রেক সিনেমাতে দেখা গেছে। তাকে নিয়ে কয়েকটি টিভিতে প্রামাণ্য চিত্রও প্রকাশিত হয়েছে এবং স্টিফেন হকিংয়ের জীবনী নিয়ে একটি মুভিও হয়েছে নাম থিওরি অফ এভরিথিং(Theory Of Everything)।
চিত্র:- দ্যা সিম্পসনস অ্যানিমেশন ছবিতে স্টিফেন হকিং
৫। তার মহাকাশ ভ্রমণের শখ ছিল। সায়েন্টিস্টরা একবার একটি বোয়িং বিমানে জিরো গ্র্যাভিটি সৃষ্টি করে ওনাকে সেখানে নিয়ে যান। উনি সেটা খুব পছন্দ করেছিলেন এবং বলেছেন- The zero-G part was wonderful, and the high-G part was no problem. I could have gone on and on. Space, here I come!”
চিত্র:জিরো গ্র্যাভিটি উপভোগ করছেন স্টিফেন হকিং
৬। স্টিফেন হকিং এলিয়েনে বিশ্বাস করেন। তিনি মনে করেন এই মহাবিশ্বে হয়তো কোনো গ্রহে এলিয়েন থাকতে পারে।
৭। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারনে হকিং এপর্যন্ত অনেকবার পত্রিকার শিরোনাম হয়েছেন।তিনি ধারনা করেন প্রযুক্তি যেভাবে এগোচ্ছে সেভাবে হয়তো একসময় মানুষের সমান বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন রোবট আবিষ্কার হয়ে যাবে। তখন সেগুলো মানবজাতির অস্তিত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। ৮। তার লেখা বই A Brief History Of Time এ শুধুমাত্র একটি গাণিতিক সমস্যা আছে। সেটি হলো আইনস্টাইনের বিখ্যাত সুত্র E=mc^2.
Congratulations!
This post has been upvoted from Steemit Bangladesh, @steemitbd. It's the first steemit community project run by Bangladeshi steemians to empower youths from Bangladesh through STEEM blockchain. If you are from Bangladesh and looking for community support, Join Steemit Bangladesh Discord Server.
If you would like to delegate to the Steemit Bangladesh, you can do so by clicking on the following links:
50 SP, 100 SP, 250 SP, 500 SP, 1000 SP.
YOU ARE INVITED TO JOIN THE SERVER!
Congratulations! This post has been upvoted from the communal account, @minnowsupport, by Shayaike from the Minnow Support Project. It's a witness project run by aggroed, ausbitbank, teamsteem, someguy123, neoxian, followbtcnews, and netuoso. The goal is to help Steemit grow by supporting Minnows. Please find us at the Peace, Abundance, and Liberty Network (PALnet) Discord Channel. It's a completely public and open space to all members of the Steemit community who voluntarily choose to be there.
If you would like to delegate to the Minnow Support Project you can do so by clicking on the following links: 50SP, 100SP, 250SP, 500SP, 1000SP, 5000SP.
Be sure to leave at least 50SP undelegated on your account.