যেখানে নদী, পাহাড় ও ঝরনার বসতি

in #photography7 years ago

![a6228dbfd6a996e2e300f269da5db1ef-58bd86453cdb2.jpg](
সূর্যে উঠছে। সূর্যের নরম আলো পাহাড়ের গা বেয়ে নামছে জনবসতির দিকে। নাশতা সেরে চার বন্ধু প্রস্তুত। আগের রাতে বাসে পরিচয় হওয়া একদল তরুণও যোগ দিলেন আমাদের সঙ্গে। সময় নষ্ট না করে একটা ‘চান্দের গাড়ি’ ঠিক করা হলো। আঁকাবাঁকা পথের দুপাশে সবুজ পাহাড়। পাহাড়ের মাথা গিয়ে ঠেকেছে সাদা-সাদা কুয়াশায়। পাহাড়-বনের মধ্য দিয়ে ছুটে চলতে লাগল আমাদের গাড়ি। বান্দরবান শহর থেকে আমাদের গন্তব্য থানচি।
দুপুর ১২টার দিকে থানচি পৌঁছালাম। থানচি বাজারে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আবার শুরু হলো পথচলা। গন্তব্যস্থল এবার রেমাক্রি। নদীপথে যাত্রা। তিনটা ইঞ্জিনচালিত নৌকা ভাড়া করা হলো। থানচি বাজার থেকে সাঙ্গু নদী হয়ে অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে। এ পথ সোজা নয়। সাঙ্গুর সর্পিল গায়ে থরে থরে পাথর বিছানো। দুপাশে বিশাল আকৃতির সব পাথর। পাথরগুলো যেন নদীকে আগলে রেখেছে। ভ্রমণপিপাসুদের জন্য এ নদীর প্রতিটি বাঁকেই সৌন্দর্য অপেক্ষা করছে। নৌকা চলাচলের জন্য এই নদী উপযোগী নয়। প্রতিকূলতাকে পেছনে ফেলে আমাদের নৌকা ছুটে চলেছে রেমাক্রির দিকে। হালকা বাতাস বইছে, বাতাসে কী এক অদ্ভুত গন্ধ। পাহাড়ের গন্ধ কী? পাহাড়ের কী গন্ধ আছে? নদীর অবিরাম কলকল ধ্বনি নৌকার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছুটে চলেছে। পাহাড়ের গায়ে খুপরি ঘর, নদীর হাঁটুপানিতে নেমে ঝিনুক কুড়াচ্ছেন স্থানীয় তরুণীরা।
আমরা এখন ‘বড় পাথর’ এলাকায়। এখানে তুলনামূলকভাবে পাথরের সংখ্যা বেশি। পাহাড় থেকে পাথর ভেঙে ছড়িয়ে আছে নদীর বুকে। যেখানে পানি কম, সেখানে নৌকা পাথরে আটকে যাচ্ছে। একটু ভয় যে লাগছে না তা নয়। নৌকা ধাক্কা দিতে কয়েকবার পানিতে নেমেও পড়তে হলো। তবে মাঝির কোনো উদ্বেগ নেই। প্রতিদিন তাদের এ পথে যাতায়াত। মাঝি দক্ষতার সঙ্গে নৌকা বাইতে লাগলেন। প্রায় দুই ঘণ্টার রোমাঞ্চকর অভিযান শেষে রেমাক্রি পৌঁছালাম। একটু পরই সন্ধ্যা নামবে। পাহাড়ের ওপর একটি বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করা হলো। কামরা একটি কিন্তু লোক ১৩ জন। উপায় নেই, গাদাগাদি করেই রাতটা পার করলাম আমরা।
খুব সকালে উঠে আবার পথচলা শুরু। ঠান্ডা সত্ত্বেও বেরিয়ে পড়লাম। এবারের গন্তব্য নাফাখুম ঝরনা। ঘন কুয়াশায় বুক চিরে হাঁটছি। পাহাড়ের মাঝখানে ঝিরিপথ। দুপাশে পাহাড়, মাঝখানে রেমাক্রি খাল। এ সময়টায় পানি কম। কোথাও কোথাও হাঁটুজল। পাহাড়ের গা ঘেঁষে এগিয়ে যাচ্ছি। কখনো সমতল পথ, কখনো খাঁড়াই। এই শুকনো, এই আবার হাঁটুজল।
প্রায় পৌনে দুই ঘণ্টা পর নাফাখুম ঝরনার সামনে এসে দাঁড়ালাম আমরা কয়েকজন। প্রাকৃতিক ঝরনার সৌন্দর্য অবর্ণনীয়। ঝরনার সামনে দাঁড়িয়ে বিস্মিত, মুগ্ধ। এক কথায় অপূর্ব! অনেক দূর থেকে এই ঝরনার শব্দ পাওয়া যায়। শীতকালে নাফাখুমে পানি কম থাকে। বর্ষাকালে এর প্রকৃত রূপ উদ্ভাসিত হয়। একটা সময় মুগ্ধতার লাগাম ধরে টান দিতে হলো। থাকার সময়সীমা শেষ। af4a6fb753a92f05d308cb14d649a8ca-58bd8645269b3.jpgআবার পথচলা শুরু হলো। তবে এবার ফিরতি পথে।

Sort:  

nice photo, lovely nature over there!

This post has received a 0.45 % upvote from @drotto thanks to: @shadown.

Beautiful water falls n ice caption .

Coin Marketplace

STEEM 0.15
TRX 0.16
JST 0.028
BTC 67628.32
ETH 2424.36
USDT 1.00
SBD 2.35