ফটোগ্রাফি / Photograpy
কিভাবে সফলভাবে ফোটোগ্রাফি ব্যবসা শুরু করবে?
ছবি তুলতে এবং সেই ছবিকে নিয়ে বিভিন্ন রকম এক্সপেরিমেন্ট এখন বেশ ট্রেন্ড। আগে ফটোগ্রাফ বলে যে ব্যাপারটি ছিল বর্তমানে ডিজিটাল ফটোগ্রাফি এসে সেই ব্যাপারটির আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। ফটোগ্রাফি ব্যাবসায় তুমি প্রায় শূন্য মূলধন দিয়ে শুরু করতে পারো। তাই সব ব্যাবসার মধ্যে ফটোগ্রাফি ছোট্ট ব্যবসায়িক সূচনার মধ্যে অন্যতম এবং বেশ জনপ্রিয়ও বটে। এটি শুরু করার জন্য যেমন সামান্য মূলধনের প্রয়োজন হয়, তেমনি এটি চালানো এবং ক্লায়েন্টদের কাছে বিক্রি করাও সহজ। তোমাকে যেটা করতে হবে সেটি হলো তোমার ক্লায়েন্টদের তোমার ফোটোগ্রাফি নলেজ পরিবেশন করতে হবে এবং তাদের যথার্থ অভিব্যাক্তি, মুখের আদলের সঠিক ভাবে প্রয়োগ করতে হবে। একবার ব্যবসায় কাস্টমারদের থেকে সাড়া পেতে থাকলে নতুন ক্লায়েন্ট পাওয়া নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হয় না। তোমার গুরুত্বপূর্ণ পোর্টফোলিওর প্রচারের জন্য সামাজিক অনলাইন মিডিয়াতে এমনকি তোমার যদি ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট থাকে তার মাধ্যমেও অর্জন করতে পারো।
ফোটোগ্রাফি ব্যবসা শুরু করতে চাইছো কিন্তু কোন কোন ব্যাপারগুলো তোমাকে জানতে হবে এবং ব্যবসার প্রারম্ভিক ধাপ গুলো কি কি সেটাই আমরা এখন জানবো –
থমিক ধারণা ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সংগ্রহ
ফোটোগ্রাফি ব্যাবসায় মূল উপকরণ হলো ক্যামেরা। ফটো বা ভিডিও যে কোনটি তৈরী করার জন্যে তোমার একটি ভালো মানের ক্যামেরা প্রয়োজন। লেন্সের সম্পর্কে জ্ঞান প্রয়োজন। তোমার যদি এই বিষয়ে জ্ঞান থাকে তাহলে তো ভালো না হলে কম খরচে বিভিন্ন জায়গা থেকে ফটোগ্রাফ সম্পর্কে ছোট কোর্স করা যায়, অনলাইনে কোনো টাকা খরচ না করেও ফ্রীতে এই বিষয়ে যথেষ জ্ঞান লাভ করা যায়। তুমি যদি চাও তবে তোমার ফটোগ্রাফি ব্যবসায় দীর্ঘকাল ধরে রয়্যালটি অব্যাহত রাখতে ফটো–স্টক ওয়েবসাইটগুলিতে তোমার তোলা ফটোগুলিও বিক্রয় করতে পারো বা এক্সপোস করতে পারো তবে তার সাথে ছবি তোলার দক্ষতা, সঠিক মুহূর্তে একটি ছবি ক্যাপচার করার নিপুণতা এগুলো প্রয়োজন।
তবে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম এর মধ্যে ফটো এডিটিং সফটওয়্যার সম্পর্কে জ্ঞান, একটি ট্রাইপড, আলোর অর্র্যাঞ্জমেন্ট এবং অবশ্যই একটি কম্পিউটার সিস্টেম এগুলোও তালিকার মধ্যেই পড়ে। যদি শুরুতেই স্টুডিওর ব্যবস্থা না করতে পারো তাহলে বাড়ি থেকেই ব্যবসা শুরু করলে তারপর নিজস্য স্টুডিওর ব্যবস্থা করতে পারো।বাজারে অনেকরকম দামে ক্যামেরা পাওয়া যায়। বিভিন্ন ওয়েবসাইট সার্চ করে উন্নতমানের এবং টেকনোলজি সমৃদ্ধ ক্যামেরা কোথায় সুলভ মূল্যে পাওয়া যায় সেই ব্যাপারটার ওপর নজর দিতে পারো। সামগ্রী বিক্রেতাদের বা যারা অভিজ্ঞ ফটোগ্রাফার তাদের সাথেও আলোচনা করলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইনফরমেশন তুমি পেয়ে যাবে। বিক্রেতারা অনেক সময়ই নিজেদের ক্ষেত্রে বেশ পারদর্শী তাই সরঞ্জাম নির্বাচনে তাঁদের সাহায্য নিতে পারো।
ফটোগ্রাফির ক্ষেত্র সিলেক্ট করা
ফটো তোলার ক্ষেত্র বিশাল বড়ো তাই তুমি প্রথমে কোন পরিসরে ছবি তুলতে চাও সেটির ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত নাও। মানুষ থেকে শুরু করে প্রকৃতি,পশু পাখি,বিভিন্ন জিনিসের ছবি অনেক রকম অপসন থাকে তবে পশু পাখি বা প্রকৃতির ছবি তোলার জন্যে অনেক জায়গায় ঘুরতে হয়। তোমার যদি বিভিন্ন শহর, রাজ্য এবং কোনো জায়গার প্রতিটি বাঁক ঘুরতে নিজেকে আটকাতে না পারো থাকে খুব অনায়াসেই প্রকৃতির অসাধারণ রূপকে তোমার ক্যামেরায় বন্দি করে বড়ো মাপের ফটোগ্রাফার হয়ে উঠতে পারো। আর মানুষের ক্ষেত্রে সঠিক মুহূর্তের, সঠিক এঙ্গেলের জন্যে অপেক্ষা করতে হয়।এই আত্মবিশ্বাস টাই তোমাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তবে সাধারণত এক লক্ষ টাকার একটু অধিক টাকার প্রয়োজন হয় কোনো ভালো ক্যামেরা এবং সমস্ত কিছু অর্র্যাঞ্জমেন্ট করে দেয়ার জন্যে। এই দেশে ফোটোগ্রাফি সাধারণত দুরকমের হতে পারে, অ্যাসাইনমেন্ট ফটোগ্রাফি ও স্টক ফটোগ্রাফি। কোনটা কি এবার সেটাই বলবো।
অ্যাসাইনমেন্ট ফটোগ্রাফির ক্ষেত্রে তোমাকে গ্রাহক বা কাস্টমারের প্রয়োজন মতো ছবি তুলে দিতে হবে। বিজ্ঞাপনের ছবি বা বিবাহ অনুষ্ঠানের ছবি এইগুলি এই বিভাগেরই অন্তর্গত। এইসব কাজে যেমন অ্যাডভান্স নিয়েও কাজ করা যায় আবার ডিমান্ডও বেশ বেশি তাই নিয়মিত ভাবে আয়ের জন্যে অনেক ফটোগ্রাফাররা এই দিকে এগোচ্ছেন। কাজ শুরু করার আগে বিভিন্ন মার্কেটিং কোম্পানি গুলোতে কন্টাক্ট করতে পারো নির্দিষ্ট শর্তাবলী মেনে কাজ পাওয়ার জন্যে।বিবাহের মরসুমে বিয়ের ফোটোগ্রাফির বেশ চাহিদা থাকে।
অন্যদিকে স্টক ফটোগ্রাফিতে বিভিন্ন জিনিস বা ঘটনার ছবি তুলে তা ক্রেতার কাছে বিক্রি করতে হবে।খবরের কাগজের প্রতিবেদন, পত্রপত্রিকা, ক্যালেন্ডার, ওয়েবসাইট ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্টক ছবির প্রয়োজন হয়।অনলাইনেও স্টক ছবি বিক্রি করা যায়। তুমি নেট থেকে এই সব ওয়েবসাইট গুলোর কথা জানতে পারবে।
রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি
একটি ব্যবসার শুরু করতে হলে রেজিস্ট্রেশনের সঙ্গে সঙ্গেই একটা ব্যাবসায়িক অ্যাকাউন্টও থাকা দরকার। প্রতিদিনের বিষয়গুলি পরিচালনা করতে এটি সহায়তা করে। যদি তোমার নিজের নামে ব্যাবসার ডকুমেন্টস প্রিপেয়ার করতে চাও, সঠিক ডকুমেন্টস এবং কাগজপত্র প্রস্তুত থাকলে একটি সহজ সেট আপের সাহায্যে করা যায়। সার্ভিস ট্যাক্স রেজিস্ট্রেশনের ব্যাপারে একটু সতর্ক থাকলে ভালো হবে।
পারিশ্রমিক নির্ধারণ
যে কোনো সার্ভিসেই সঠিক মূল্য নির্ধারণ করা উচিত সে ছোট হোক বা বড়ো। তোমার সার্ভিসের বা যে কোনো উৎপাদিত পণ্যের মূল্য তোমাকেই স্থির করতে হবে। তোমার অভিজ্ঞতা না থাকার ফলে এটা সবসময় লক্ষ্য করবে কম পারিশ্রমিকে তোমাকে যেন বেশি পরিশ্রম না করতে হয়। নতুন ফটোগ্রাফারদের এই অভিজ্ঞতাটা বেশি হয়। অভিজ্ঞদের থেকে বাজারের দর জানার চেষ্টা কর এর থেকে তোমার নিজের পারিশ্রমিক ঠিক করতে সুবিধা হবে।দক্ষতা থাকলে উপযুক্ত পারিশ্রমিকেই কাজ পাবে তবে ধৈর্য হারিও না। তবে এর সাথে তোমার পারিশ্রমিক এতটাও বাড়িয়ে দিও না যাতে কাজ পেতে অসুবিধা হয় বা কোনো ক্রেতা তা কিনতে না পারে।ন্যায্য পারিশ্রমিকে কাজ করার সিদ্ধান্ত নাও।
নিজের ব্যাবসাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কিছু টিপস
যে কোনো ব্যবসা বৃদ্ধির জন্যে বিবিধ প্রচারের প্রয়োজন। প্রথম থেকে ভালো কাজের অভিজ্ঞতা নতুন কাস্টমার সাথে পরিচয় করে দেয়।তাই নতুন বা পুরোনো প্রতিটি কাস্টমারের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। একজন গ্রাহকের সঙ্গে একবার কাজ করার পর হয়তো দুই তিন বছর যে যোগাযোগ করলো না কিন্তু সুসম্পর্ক বজায় রাখলে পরবর্তী কালে তার প্রয়োজনে সে তোমার সাথে নিশ্চয় যোগাযোগ করবে।
বিভিন্ন শহরে বর্তমানে ফটোগ্রাফি কর্মশালা আয়োজিত হয়।হাতে কলমে শিক্ষার জন্যে এই কর্মশালা গুলোতে যোগদান করলেও তোমার কাস্টমার পেতে সুবিধা হতে পারে। তোমার ছবি তোলার ক্ষেত্রের সাথে যুক্ত কর্মশালা সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে সময় সুযোগ মতো যোগদান করতে পারো। এছাড়া ফটোগ্রাফি ক্লাব গুলোরও সহায়তা নিতে পারো। নিজের পছন্দ মতো এক বা দুটো ক্লাবে যোগ দিয়ে মানুষের সাথে সংযোগ বাড়াতে পারো সেখান থেকে নতুন শিক্ষার পাশাপাশি ব্যবসা বাড়াতেও সাহায্য করবে।
তুমি একটি বিসনেস কার্ড তৈরী করতে পারো। প্রচুর লোকের সঙ্গে নিয়মিত দেখা করা ও যোগাযোগ করার ক্ষেত্রে বিসনেস কার্ড থাকা খুব সুবিধা জনক। তবে খুব বেশি খরচ করে দামি বিজনেস কার্ড না বানিয়ে কম টাকায় বিসনেস কার্ড তৈরী করারও অপসন দেয় বিভিন্ন ওয়েবসাইট। বিজনেস কার্ডে সুন্দর ডিসাইন দিয়ে সমস্ত প্রয়োজনী তথ্য প্রদান করতে পারো সাথে লিফলেট বিলি, বিভিন্ন অফার দিতে পারো।
কম সময়ে বেশি মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্যে একটি সহজ উপায় ওয়েবসাইট তৈরি ও তোমার অনলাইন রেস্পন্স। এর ফলে যেমন বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করবে তেমন তুমি কি ধরণের কাজ করো সেই সম্পর্কে ক্রেতারা জানতে পারবে। বিনামূল্যে ব্লগও খোলা যায় আর তোমার প্রোফাইল থেকে বিভিন্ন কাজের নমুনা আপলোড করাও একটি বুদ্ধিমানের কাজ হবে। ওয়েবসাইটের পাশাপাশি বন্ধুবান্ধব, আত্মীয় পরিজন, চেনা পরিচিত মানুষের সাথেও কাজ করো সেখান থেকেও ভাল কাজ করলে তাদের মুখ থেকেই কাজের প্রচার হয়ে যাবে।
বর্তমানে ফোটোগ্রাফি একটি অন্যতম লাভজনক ব্যবসা তাই বেশি ভয় না পেয়ে নতুন উদ্দমে শুরু করে দাও তোমার স্বপ্নের উড়ান।