সাধনার অন্যরকম সংসার - পুরান ঢাকার ঐতিহ্য
পুরান ঢাকার গেণ্ডারিয়ার দ্বীননাথ সেন রোডে অবস্থিত সাধনা ঔষধালয়। যেখান থেকেই ঢাকায় বানরের বিস্তার।
আজও সেখানে টিকে আছে বানরের সুখের সংসার। এরা বছরের পর বছর বাচ্চা দেয়। খেলা করে। গত শীতে এদের বেশিরভাগের ঘরে এসেছে নতুন অতিথি। সব মিলে এখন সাধনা ঔষধালয়ে দুই থেকে আড়াইশ বানরের বসবাস। দ্বীননাথ সেন রোডের ১ নম্বর নিকেতন গলিতে প্রবেশের ঠিক আগ মুহূর্তে ৫-৬ জনের জটলা। ডান পাশে গোডাউন আর বামপাশে সাধনার অফিস। গোডাউনের গেটে লোকজনের সঙ্গে খেলা করে বানরগুলো। উত্সুক মানুষের অনেকে এদের দিকে ছুড়ে মারে কলা অথবা রুটি।
চোখের নিখুঁত নিশানায় সেগুলো লাফিয়ে ধরে ফেলে এরা। ওই স্থানটিতে সারা দিনই এভাবে চলে মানুষ-বানরের খেলা। টিনের চালার নিচ দিয়ে হলুদ দালানের একটি থেকে আরেকটি যাওয়া আসায় এরা যেন বিরামহীন। অবশ্য বানরের জন্য সাধনার খ্যাতি বেশ পুরনো। পুরান ঢাকার বানর দেখতে সবার আগে মানুষ ছুটে যান সাধনা ঔষধালয়ে। এরপর তাদের আকর্ষণ থাকে ফরাশগঞ্জ ও সূত্রাপুর এলাকায়। এছাড়া মিলব্যারাক, বনগ্রাম, মৈশুণ্ডি, জনসন রোড, নবাবপুরের রথখোলা, টিপু সুলতান রোড, নারিন্দা, স্বামীবাগ এলাকায় এক দালান থেকে আরেক দালানে বানরগুলোর লাফিয়ে যাওয়ার দৃশ্য সহজেই পথচারীর চোখে পড়ে। জানতে চাইলে সাধনার নিরাপত্তাকর্মী সুবীর দাস এ প্রতিবেদককে বলেন, বানরের খাবারের জন্য সকালে শুধু ছোলা দেওয়া হয়। এই খাবার সংকটের কারণে মাঝখানে বানরের সংখ্যা কমে গিয়েছিল। নতুন বাচ্চা হওয়ায় এদের সংখ্যা বেড়ে গেছে। খাবারের ঘাটতি হলে এরা আশপাশে বাসা-বাড়িতে গিয়ে খাবার চুরি করে। অনেক সময় দেখা যায়, কোনো কোনো বানর খেলার ছলে এদিক-সেদিক লাফালাফি করতে থাকে। এমন খেলার একপর্যায়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে কিছু বানরের মৃত্যুও হয়েছে।
জানা গেছে, ১৯১৪ সাল থেকে সাধনার চত্বরকে বানরের জন্য নিরাপদ আবাসস্থল হিসেবে গড়ে তোলেন প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ ডা. যোগেশ চন্দ্র ঘোষ। তিনি নিজস্ব ছাপাখানার ওপরের একটি কক্ষ বানরের বিশ্রামখানা হিসেবে ছেড়ে দেন। সেই সঙ্গে সকাল-বিকাল খাবার সরবরাহের ব্যবস্থা করেন। তার ছেলে নরেশ চন্দ্র ঘোষ ও নাতি প্রদীপ চন্দ্র ঘোষ পূর্বপুরুষের এ ধারা বজায় রাখেন। শত বছরেরও অধিক সময় ধরে এ নিয়ম চালু রেখেছে সাধনা কর্তৃপক্ষ। সাধনা থেকেই বানর গোটা ঢাকাতে ছড়িয়ে পড়েছিল। প্রাণিবিজ্ঞানীদের মতে, ঢাকার বোটানিক্যাল গার্ডেন, মাদারীপুরের চরমুগুরিয়া, যশোরের কেশবপুর ও গাজীপুরের বর্মী এলাকায় নানা প্রজাতির বানর পাওয়া গেলেও পুরান ঢাকায় শুধু রেসাস জাতের বানর দেখা যায়। দেশে হনুমান ও উল্লুক ছাড়া বানর রয়েছে পাঁচ প্রজাতির। তবে রেসাস ও ম্যাকাকু প্রজাতির বানরের ডিএনএর গঠন মানুষের খুব কাছাকাছি। তাই গবেষকদের কাছে পুরান ঢাকার এই বানর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পুরান ঢাকাবাসীর ভালোবাসাই বানরকুলকে রক্ষা করতে পারে। এজন্য সাধনার পাশাপাশি বলধা গার্ডেনকেও বানরের অভয়াশ্রম হিসেবে গড়ে তোলা দরকার। সাধনা ঔষধালয়ের সিনিয়র কর্মকর্তা নারায়ণ চন্দ্র চক্রবর্তী। ১৯৭৭ সাল থেকে এখানে কর্মরত। তিনি জানালেন, প্রতিদিন শুধু সকাল বেলা তাদের প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বানরের খাবার সরবরাহ করা হয়। এখন পর্যন্ত একদিনের জন্যও সেই খাবার দেওয়া বন্ধ করা হয়নি। গেন্ডারিয়ার বাসিন্দা সবুজ জানান, এক সময় স্বামীবাগের শক্তি ঔষধালয়, সাধনা ঔষধালয়সহ বেশ কিছু মঠ-মন্দির-আশ্রম কর্তৃপক্ষ বানরের জন্য নিয়মিত খাবার সরবরাহ করতো। এখন আর তেমনটা দেখা যায় না। তবে সাধনা ঔষধালয় আজও ব্যতিক্রম। তারা এই মহৎ কাজটি চালিয়ে যাচ্ছে। সেখানেই বেশি বানর বসবাস করে। এলাকাবাসীরা জানান, খাদ্য সংকটের কারণে বিভিন্ন বাসা-বাড়ি, প্রতিষ্ঠান কিংবা দোকানে হামলা করে বানরগুলো। কলা, রুটি কিংবা ভাতের ভাণ্ড ছাদে তুলে নিয়ে যায় এরা। আবার খাবার না পেলে অনেক সময় এরা মানুষকে কামড়ও দেয়।
Special Thanks to :
@craigrant----
Non bid bot upvote services:
Here are links to other bid bots I have reviewed:
@boomerang Please read abou t this bot before you use it
Bidder beware
@mrswhal e
@getboos t : !