Alokmoy Bangladesh ' গ্রিসে ইসলামের প্রসার বাড়ছে'
গ্রিসের রাজধানী এথেন্সের নিওস কসমস শহরে গত শুক্রবার ছিল প্রচণ্ড গরম। রাস্তার পাশের একটি ভবনের সামনে জড়ো হয়েছিলেন মুসল্লিরা। আরবি, গ্রিক ও অন্যান্য ভাষায় নিজেদের মধ্যে শুভেচ্ছা বিনিময় করছিলেন তাঁরা।
একে একে মুসল্লিরা ভবনের ভেতরে সোজা বেসমেন্টে চলে যান। জায়গাটা কার্পেটে মোড়ানো। ছাদ খুব নিচু। বাতাস চলাচলের কিছু ব্যবস্থা করা হয়েছে। কার্পেটে মোড়া ওই জায়গায় বসে পড়েন মুসল্লিরা। শিগগিরই ইমাম তাঁদের খুতবা শোনাবেন। কাছের হোটেলগুলো থেকে খেলোয়াড় ও ব্যবসায়ীরাও যোগ দিতে এসেছেন খুতবায়।
গ্রিসবাসীর বেশির ভাগই অর্থোডক্স খ্রিষ্টধর্মাবলম্বী। ১৯২৩ সালে খ্রিষ্টান-মুসলিম জনগোষ্ঠীর বিনিময় চুক্তি অনুসারে গ্রিসের বেশির ভাগ মুসলিম ধর্মাবলম্বী তুরস্কে চলে যান। এথেন্সের পুরোনো অংশে ঐতিহাসিক দুটি ছোট মসজিদ রয়েছে। অটোমান সময় থেকেই সেগুলোর ব্যবহার ছিল না।
এথেন্স ও বন্দরনগরী পাইরিসে শত শত মুসলিম জনগোষ্ঠী বসবাস করে। এই জনগোষ্ঠীর বেশির ভাগই মিসরের আরব বংশোদ্ভূত। এ ছাড়া তাঁদের অনেকেই মিসরের নিকটবর্তী লেভান্ত এলাকার বাসিন্দা। আফগানিস্তান, দক্ষিণ এশিয়া ও পশ্চিম আফ্রিকার এই অভিবাসীরা ১৯৭০ সালে গ্রিসে এসে পৌঁছান।
এই মুসলিম জনগোষ্ঠীর প্রার্থনার জন্য ক্ষমতাসীন বামপন্থী সরকারের প্রধানমন্ত্রী অ্যালেক্সি সিপরাস নতুন মসজিদের জায়গা বাছাই করেন। ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে মসজিদ নির্মাণের চুক্তি হয়। এখানে ৩৫০ পুরুষ ও ৫০ নারীর জন্য নামাজ আদায়ের বন্দোবস্ত রাখা হয়।
ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট জানাচ্ছে, এই মসজিদ নির্মাণের পথে বিরোধী রক্ষণশীল ন্যাশনালিস্ট পার্টি বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইনডিপেনডেন্ট গ্রিকস অথবা এএনইএলের সঙ্গে বামপন্থী সিরিজা দলের ক্ষমতার ভাগাভাগি রয়েছে। এএনইএলের সাংসদেরা মসজিদ নির্মাণসংক্রান্ত আইনের বিরুদ্ধে ভোট দেন। এথেনীয় মুসলিম কমিউনিটির নেতারা আনুষ্ঠানিকভাবে কোথায় মসজিদের উদ্বোধন হবে, তা নিয়ে দ্বিধান্বিত।
মসজিদ নির্মাণ নিয়ে এই সংকটের কারণে এথেন্সে মুসল্লিরা বেসমেন্টে, গ্যারেজে, বাড়িতে খোলা জায়গায় প্রার্থনা করেন।
একজন জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা বলছেন, ভবন নিরাপত্তাসংক্রান্ত আইনকানুন মেনে চললে এ ব্যবস্থায় কোনো অসুবিধা নেই। মুসলিমদের উন্মুক্ত জায়গায় প্রার্থনার জন্য ছয়টি লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে একটি লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে নিওস কসমস শহরে।
গ্রিসের মুসলিম অ্যাসোসিয়েশনের মিসরীয় বংশোদ্ভূত প্রেসিডেন্ট নাইম আল-ঘান্দোউর বলেন, তাঁর মতো দীর্ঘদিন ধরে যাঁরা এখানে রয়েছেন, সেই মুসলিমদের সঙ্গে কর্তৃপক্ষের সুসম্পর্ক রয়েছে। তবে নতুন প্রজন্মের অনেকেই এভাবে প্রার্থনা করা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
ঘান্দোউর বলেন, ‘নতুন প্রজন্মের অনেকেই জিজ্ঞেস করেন, আমি গ্রিসের বাসিন্দা, গ্রিসের স্কুলে পড়াশোনা করি, আমার আর কোনো দেশ নেই। তাহলে কেন আমাকে বেসমেন্টে নামাজ আদায় করতে হবে? যেখানে আমার প্রতিবেশী চার্চে যেতে পারে?’ তাঁদের এসব প্রশ্ন যৌক্তিক মনে করেন ঘান্দোউর। তবে নানা সুবিধা-অসুবিধা থাকলেও গ্রিসে ইসলামের প্রসার বাড়ছে। অনানুষ্ঠানিকভাবেই এথেন্সের বিভিন্ন জায়গায় নামাজ আদায় করছেন মুসল্লিরা।