সৌদি থেকে ফিরে আয়েশা বললেন, ‘আল্লায় বাঁচাইছে’

in #news7 years ago

'বেটি আমারে কোনো কিছু খাইতে দিত না, এক বেলায় দিলে আরেক বেলা দিত না। কিছু কইলে রড দিয়া হাতে পায়ে মাইরত। বাতরুমে আটকাইয়া রাইখত। আল্লায় বাচাইছে, দ্যাশে ফিরবার পারছি।'

কথাগুলো সৌদি ফেরত নরসিংদীর আয়েশা বেগমের (ছদ্মনাম)। আয়-রোজগারের অনেক স্বপ্ন নিয়ে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন ৪৫ বছর বয়সী এই নারী। সেখানে তিনি যে বাসায় ছিলেন, সেখানে অমানবিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে তাকে।

১১ মার্চ, রবিবার ইত্তেহাদের রাত ৮টার ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন আয়েশা। বের হওয়ার সময় দুই নম্বর ক্যানোপি গেটের উত্তর পাশে প্রিয়.কমকে তার কষ্টের কথা জানান এ নারী।

আয়েশার সঙ্গে বিভিন্ন ধরণের নির্যাতনের শিকার আরো ৩৮ জন নারী দেশে ফিরে এসেছেন একেবারেই খালি হাতে।বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে এই ৩৯ জন নারী দেশে ফিরতে সক্ষম হন। এদের মধ্যে সৌদির ইমিগ্রেশন ক্যাম্পে ছিলেন ৩৬ জন।

আয়েশা জানান, তিনি গত ফেব্রুয়ারি মাসের ৫ তারিখে সেখানে গিয়ে রিয়াদের একটি বাসায় কাজ নেন। পরে তাকে বদল করে দাম্মামের একটি বাসায় নেওয়া হয়। দুইটি বাড়িই ছিল একই মালিকের।

দ্বিতীয় বাড়িতে যাওয়ার কয়েকদিন পরই শুরু হয় নির্যাতন। বাংলাদেশে নিজের পরিবারের কাছে ফোন করতে চাওয়ায় বাসার মালিকের স্ত্রী লোহার রড দিয়ে বেধড়ক মারধর শুরু করে। একপর্যায়ে তার গলায় পা তুলে দেন বলে দাবি করেন আয়েশা।

এতে করে তার গলা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। যার চিহ্ন তিনি প্রিয়.কমের প্রতিবেদককে দেখান। দেখা যায়, তার মুখের থুতনি থেকে গলার নিচ পর্যন্ত ফুলে আছে এখনো।

এই ঘটনার পর আয়েশা জানিয়ে দেন তিনি আর কাজ করবেন না। এরপর তার ঠাই হয় দাম্মামের মকতবে (দূতাবাসের আশ্রয়কেন্দ্র)। সেখানে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে আশ্রয় নিয়ে গতকাল রাতে তিনি দেশে ফিরে আসেন।

আয়েশা বলেন, 'ভাবছিলাম স্বামীটা কিছু করবার পারে না, টেকা আসবো, হের লাগি গ্যালাম। কিন্তু বাসার বেটি খালি মারে আর মারে। খাইতে দিতো না।'

মমিনা বলেন, 'কফিলের (বাসার মালিক) বৌ খুব খারাপ। কথায় কথায় মাইরধর করে। কিচ্ছু খাইতে দিতো না। আমারে কফিল যখন মাইরতো তখন দুই হাত জড়ো কইরা মাইরতো (হাতে হাতকড়া পরানোর চিহৃ)। কিন্তু কতদিন পারা যায়, তাই চইল্যা আসলাম। সৌদিতে কেউ যায়? বাইচ্যা থাকলে আর না।'

এই দুই নারীর মতোই স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে সৌদি গৃহকর্মীর কাজে গিয়েছিলেন সোনারগাঁয়ের পয়তাল্লিশ বছর বয়সী জমিলা (ছদ্মনাম)। বছর দেড়েক আগে তার স্বামী মারা যান। জমিলার তিন ছেলের মধ্যে দুজন রিকশা চালান, আরেকজন কয়েক বছর আগে নিখোঁজ হয়ে যান।

স্বামী হারানো এ নারী আয়ের স্বপ্নে পাড়ি জমিয়েছিলেন সৌদিতে। তার সে স্বপ্ন কাটা পড়ে গৃহকর্তার নির্যাতনে।

জমিলা জানান, কাজ শুরু করার পর প্রথম মাসে ভালই বেতন পান। কিন্তু পরের মাস থেকে তার বেতন বন্ধ হয়ে যায়। এরপর তিনি বেতনের কথা বললেই মারধর করা হতো। এভাবেই ছিলেন পাঁচ মাস। পরে তিনি কাজ করবেন না বলে জানালে বাঙালী এক যুবকের মাধ্যমে দূতাবাসে পৌছে দেওয়া হয় তাকে। সেখানে দু মাস থাকার পরে গতকাল রাতে তিনি দেশে ফিরেছেন।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.15
JST 0.028
BTC 58584.45
ETH 2302.31
USDT 1.00
SBD 2.48