World Online News ' মেগান যেদিন বদলে দিলেন অনেক কিছু'
ব্রিটিশ রাজপরিবার সব সময়ই সাধারণ জনগণের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখে। তারা একান্তে থাকতে পছন্দ করে। সব সময় ঐতিহ্যের চাদরে মুড়িয়ে রাখে নিজেদের সবকিছু। এবার প্রিন্স হ্যারি ও মেগান মার্কেলের বিয়ে যেন সেই চিরায়ত ধারাকে ভেঙে নতুন যুগের সূচনা করল, যা বিয়ের কিছু সময় আগেও কল্পনা করা যায়নি।
যেমন বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার সময় গসপেল কয়্যার বেন ই. কিংসের ‘স্ট্যান্ড বাই মি’ গানটি গেয়ে শোনান। বিয়ের রেজিস্ট্রি খাতায় যখন বর-কনে সই করছিলেন, তখন বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে সবাইকে মুগ্ধ করেন ১৯ বছরের এক কৃষ্ণাজ্ঞ শিল্পী। আর অনুষ্ঠানটি শেষ হয় মার্কিন নাগরিক অধিকার আন্দোলনের সমার্থক ইটা জেমসের ‘দ্য লিটল লাইট অব মাইন’ গানের মধ্য দিয়ে।
এখানেই শেষ নয়; রাজকীয় প্রথা ভেঙে নবদম্পতির বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার একটা পর্যায়ে বক্তব্য দেন এপিসকোপাল গির্জার প্রথম আফ্রিকান-মার্কিন কৃষ্ণাঙ্গ বিশপ মাইকেল ব্রুস কারি। তিনি আবেগঘন কণ্ঠে মার্কিন নাগরিক অধিকার আন্দোলনের নেতা এবং শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের উদ্ধৃতি দিয়ে উপস্থিত অতিথিদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই ভালোবাসার মধ্যে যে শক্তি রয়েছে, তা আবিষ্কার করতে হবে। যখন আমরা এটা করব, কেবল তখনই আমরা আজকের পৃথিবীকে নতুন পৃথিবীতে পরিণত করতে পারব। ভালোবাসাই একমাত্র পথ। ভালোবাসায় শক্তি আছে। একে অবমূল্যায়ন করবেন না। জীবনে যিনি প্রেমে পড়েছেন, তিনিই জানেন আমি কী বোঝাতে চেয়েছি।’
সাদা পোশাকে মেগান গাড়ি থেকে নেমে সিঁড়ি ভেঙে একাই চ্যাপেলের ফটক পর্যন্ত উঠে যান। এ সময় তাঁর পেছনে একঝাঁক শিশু ব্রাইডসমেইড ছিল। কিন্তু ছিল না কোনো মেইড অব অনার। কোনো পুরুষও তাঁকে স্বামীর হাতে তুলে দেয়নি।
সুপরিচিত অভিনেত্রী মেগান আধুনিক যুগের দাসত্ব ঘোচাতে লিঙ্গসমতা নিয়ে কাজ করেন। তিনি প্রকাশ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিন্দা করেছেন। এমনকি ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বের হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তেরও সমালোচনা করেন।
তাই যখনই হ্যারি ও মেগানের বাগদানের খবর প্রচারিত হলো, তখন জনমনে প্রশ্ন জাগে, মেগান নতুন পরিবারের চালচলনের সঙ্গে তাল মেলাতে পারবেন তো। রাজপরিবারের চাপে পড়ে মুখ বন্ধ করতে হবে না তো।
কিন্তু বিয়েতে রাজকীয় বিভিন্ন প্রথা ভেঙে যে নতুনত্ব যোগ হয়েছে, তাতে সিএনএনের ইশা সিসেই মনে করেন, মেগান তাঁর কর্মকাণ্ড আগের মতোই চালিয়ে যাবেন। আর রাজপরিবারের এ নিয়ে তেমন মাথাব্যথা নেই। বরং তারা নববধূকে সমর্থনই দেবে।
মতামতধর্মী এক লেখায় সিসেই এই বিয়েকে ঘিরে রাজপরিবারে ঐতিহ্যে পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগার কিছু উদাহরণ টানেন। বলেন, এ বছর ব্রিটিশ রাজপরিবারে নাগরিক অধিকার বিক্ষোভ নিয়ে গান পরিবেশন করা হয়, যা পুরো বিশ্ব দেখে। মেগান রেভার্নড ড. মার্টিন লুথার কিংয়ের কিছু উদ্ধৃতি তুলে ধরতে কৃষ্ণাজ্ঞ বিশপকে আমন্ত্রণ জানান। তিনি একাই হবু বরের দিকে হেঁটে আসেন।
মেগানের এ সবকিছুই জনমনে ঠিক জায়গায় সাড়া ফেলেছে। ২০১১ সালে প্রিন্স উইলিয়াম ও ক্যাথরিনের বিয়ের অনুষ্ঠানে সরাসরি উপস্থিত থেকে সংবাদ সংগ্রহ করেছিলেন আয়শা। তিনি বলেন, সে সময় তিনি সেখানে অনেক বেশি শ্বেতাঙ্গ, বয়স্ক ও পুরুষ অতিথি দেখেছেন। কিন্তু এবারের দৃশ্য অনেকটাই ভিন্ন। দুই বিয়েতে মানুষের শুভেচ্ছা জানানোর ধরনটা অন্য রকম। আগে যাদের রাজপরিবার নিয়ে কোনো আগ্রহ ছিল না, এখন তারাও এই পরিবারকে কাছের মনে করছে।
খুব অল্প সময়ের মধ্যে মেগান মার্কেল নতুন চেতনার সূচনা করেছেন। ডাচেস অব সাক্সেস তাঁর বিয়ের মুহূর্তটিকে এমন একটি ক্ষণে পরিণত করেছেন, যা পুরো বিশ্বকে জাতিগত ও লিঙ্গসমতা নিয়ে ভাবিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে মেগান পুরো বিশ্বকে একটি বার্তা পৌঁছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আর এ সিদ্ধান্ত তিনি তাঁর স্বামী হ্যারি ও তাঁর নতুন পরিবারের আশীর্বাদ নিয়ে করেছেন। এই সিদ্ধান্তের শক্তি অনেক বেশি।