দুষ্টু মিষ্টি প্রেম কাহিনী..

in #mm13 days ago

দুষ্টু মিষ্টি প্রেম কাহিনী..

লাল টুকটুকে বেনারসির সাথে গা ভর্তি হীরের গয়না পরে বধূবেশে খাটের উপর বসে আছে নির্জনা।
হন্তদন্ত হয়ে সেই ঘরে এলো তার ফুপু রৌশনারা বেগম।
–এইজন্য কয়, পিঠের ছাল পেটে লাগে না। পাপিয়া কার লগে তর বিয়া দিতাছে জানোছ? ছেলের তো মাথা খারাপ, বাইরে পাগলামি করতাছে । সৎ মাইয়া বইলা একটা পাগলের লগে বিয়া দিবো? আজকে তোর জায়গায় যদি নিজের পেটের মাইয়্যা হইতো তবে কি এই বজ্জাত মহিলা এমনটা করতে পারতো?কিন্তু তুই কেন বোকার মতো একটা পাগলকে বিয়ে করছিস ? এখনও সময় আছে পালিয়ে যা।
ফুপু রৌশনারা বেগমের কথার প্রতিত্তোরে কোন কিছুই বলছে না নির্জনা। বরং প্রাণহীনভাবে শূন্য দৃষ্টিতে চুপচাপ খাটের উপর বসে আছে। যেন সে কিছুই শুনতে পাচ্ছে না।
তার এরূপ আচারণ দেখে রৌশনারা বেগম আবার বলেন,
–অতীত নিয়া পইরা থাকলে কুনো লাভ নাই। আগের কতা সব ভুইলা যা। পলাইয়া যা।
ঠিক তখনই নির্জনার সৎমা পাপিয়া আক্তার ঘরে প্রবেশ করে বলে,
–আপা আপনার কথা শেষ হলে একটু বাইরে যান। নির্জনাকে কিছু গয়না পরাবো।
– গয়না পইরা কি অইবো? ইস্ত্রীলোকের আসল গয়না অইলো তার স্বামী আর সেখানেই তো তুমি আমার ভাইজির কপাল পুইড়া দিতাছো। আমার ভাইটা মরার ভালই ফায়দা লুটছো পাপিয়া। নিজের সুবিধার লাইগ্যা মাইয়াডারে বেইচা দিতাছো। নওশাদ বাইচ্যা থাকলে এমন একটা পাপ তুমি করতে পারতা?
–যে মানুষটা নেই তার কথা তুলে কি লাভ আপা?
–সেই তো আমার ভাই থাকলে কি আর তার মেয়েকে একটা পাগলের লগে বিয়া দিতে পারতা?এতে বড় অন্যায় করতে তোমার বুকটা কাঁপলো না?
পাপিয়া আক্তার একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের মাথা ঠান্ডা করে বলেন,
–আপা কথায় কথা বাড়ে। বিয়েতে এসেছেন শান্তিতে খেয়ে-দেয়ে চলে যান।
–এখন তো যাইতেই কইবা। আমার ভাই আর ভাইপো মরেছে এখনো এক বৎসর হয় নাই আর তুমি সব আত্মসাৎ করতে উইঠা পইরে লাগছো। তোমার কোনদিন ভালা অইবো না।
তাচ্ছিল্যের সাথে পাপিয়া বলে,
–আমার আর খারাপের কি বাকি আছে আপা? স্বামী মারা গেছে, ছোট্ট ছেলেটা দিনের পর দিন মৃত্যু যন্ত্রণা ভোগ করে মারা গেছে । আর আত্মসাৎ এর কথা বলছেন? ছোট চাকরির জমানো দু-এক টাকা ছিলো যার সবটাই হাসপাতালেই খরচা হয়ে গেছে। এখন এই ভিটেমাটা ছাড়া আপনার ভাইয়ের আর কি আছে, বলুন? এটাও যে আপনার অন্য ভাইয়েরা খুব তাড়াতাড়ি দখল করে নিবে তা আমি জানি।
– এইসব তোমারই কর্মের ফল। সারা জীবন সৎ দেইখ্যা মাইয়্যাডারে অবহেলা করছো। তাই আল্লাহ তোমার বুক খালি কইরা দিছে।
–বিশ্বাস করেন আপা আপনার সাথে তর্ক করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা আমার নেই। আমি নির্জনাকে অবহেলা করেছি কি-না তা আমি আর আমার আল্লাহ ভালো করেই জানেন। এখন দয়া করে আপনি একটু বাইরে যান।
–যাচ্ছি তয় আমি বাঁইচ্যা থাকতে তোমাকে এই অন্যায় আমি করতে দিতাম না। নির্জনার মা-বাপ নাই তো কি অইছে? আমি আছি, তাছাড়া নির্জনার মামা-চাচারা এখনও আছে। তুমি একটা পাগলের লগে বিয়া দিয়া তার জীবন নষ্ট করে দিবে এটা আমি অইতে দিবো না।
তাচ্ছিল্যের সাথে মিথ্যা হাসি দিয়ে পাপিয়া বলে,
– আপনাদের আমার অনেক দেখা হয়েছে আপা। ঠিকই বলেছেন এখনো বছর ঘুরে নি যে সব ভুলে যাবো।বিপদের সময় তো আপনাদের কাউকে পাশে পাইনি। নিজের ভাইকে রক্ত দেওয়ার জন্যও আপনারা কেউ আসেন নি। বরং এটা বলে ফোন রেখে দিতেন যে, আমাদের সাহায্য করে আপনারা বিপদে পরতে পারবেন না। এমনকি তার লাশ নিয়ে বাড়ি ফিরবো সেই এম্বুলেন্সের ভাড়াটাও আমার ধার করতে হয়েছে।
পাপিয়ার এই এক কথায় রৌশনাআরা থোতা মুখ ভোঁতা হয়ে গেলো তিনি কোন প্রতিত্তোর না করে ধুপধাপ পা ফেলে ঘর থেকে বের হয়ে যায়।

অস্ট্রেলিয়া, মেলবোর্ন।।
নির্জনার অসংখ্য ছবি দিয়ে একটা ঘর সাজানো। সেগুলোকে সাতাশ/আটাশ বছরের একজন যুবক নেশালো নয়নে মুগ্ধ হয়ে দেখছে আর বলছে,
–তেমার মায়া ভরা মুখটা দেখি না কতদিন সুইটহার্ট । কবে যে বাবা বাংলাদেশে সব ঠিক করবে আর আমি তোমার কাছে যেতে পারবো।

রৌশনারা বের হতেই পাপিয়া আক্তার দরজার ছিটকিনি তুলে দিয়ে নির্জনার পাশে বসে গলায় একটা চেইন আর হাতে দুটো চিকন চুড়ি পরিয়ে দিতে দিতে বললেন,
–এগুলো তোমার মায়ের। এতো বছর আমার কাছে ছিলো। শত কষ্টেও হাতছাড়া করিনি ।
নির্জনা তখনও চুপ।
পাপিয়া আক্তার একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মেয়ের মাথায় হাত রেখে বলেন,
–এখনো সময় আছে তুমি চাইলে এখনও বিয়েটা আটকাতে পারো। আমি আগেও বলেছি, প্রয়োজনে তোমাকে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেবো। তোমার ফুপি কথায় যুক্তি আছে, একটা পাগলকে বিয়ে করে জীবনটা নষ্ট করার কোন মানে হয় না। তাছাড়া যে ছেলের স্মৃতি এগারো বছর বয়সে আটকে আছে তাকে বিয়ে করে তুমি ভালবাসা পাবে না।
মায়ের কথায় চমকে আতঙ্কিত হয়ে উঠে নির্জনা।
–না আম্মু ভুলেও ভালোবাসার কথা উচ্চারণ করবে না। এই সর্বনাশা ভালোবাসার কারণে রক্ত আর লাশের বন্যা বয়ে গেছে। আমি সব হারিয়েছি। চাই না আমার ভালবাসা। তাছাড়া যেখানেই পালিয়ে যাইনা কেন শকুনের দৃষ্টির বাইরে তো যেতে পারবো না। একবার না বারবার চেষ্টা করেছি ফলাফল নতুন আরেকটা লাশ। এরচেয়ে বিয়েটা হয়ে যাক জাফর স্যার যখন কথা দিয়েছেন তিনি যেকোনো মূল্যে আমাদের রক্ষা করবেন।
বলেই সে কাঁদতে থাকে।
–নির্জনা...
বলে পাপিয়া ক্রন্দনরত মেয়েকে বুকে মিশিয়ে নেয়। এইটুকু বয়সে মেয়েটা এতকিছু সহ্য করছে। পাপিয়া আক্তারের আজ মনে হচ্ছে তার চেয়ে দুর্ভাগা মা পৃথিবীতে নেই। কারণ তিনি চাইলেও মেয়ের দুঃখ দূর করতে পারছে না। বরং বাধ্য হয়ে তাকে তুলে দিতে হচ্ছে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের হাতে ।

জাফর সিদ্দিকীর কোলে ক্লান্ত হয়ে মাথা রেখে তার ছোট ছেলে অর্ক শুয়ে আছে। বড্ড নিষ্পাপ দেখাচ্ছে তাকে।
বিয়ে বাড়িতে মানুষ দেখে উত্তেজিত হয়ে পড়েছিল। অনেক চেষ্টার পর ছেলেটাকে শান্ত করতে পেরেছেন তিনি।
স্ত্রীর মৃত্যুর পর এই ছেলেকে বুকে আগলে রেখেছেন তিনি। কিন্তু রাজনীতি করার ফলে তার শত্রুর অভাব নেই। তাই সবসময় এই ভয়ে থাকেন তার কিছু হয়ে গেলে অর্ককে কে দেখবে? যদিও তার অপর দুই সন্তান বড় ছেলে অর্ণব আর মেয়ে আরশি অনেক ভালো। কিন্তু তাদেরও তো একদিন সংসার হবে তাই তারা তো চাইলেও সারা জীবন পাগল ভাইয়ের দায়িত্ব নিতে পারবে না। এইসব চিন্তায় তার ঘুম আসতো না।

–চলবে?
সূচনা পর্ব
#MM
বিঃদ্রঃ বানান ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
গল্প সম্পর্কে নিজের মতামত জানাবেন।

Sort:  
Loading...

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.14
JST 0.030
BTC 60238.27
ETH 3215.90
USDT 1.00
SBD 2.46