পদ ছাড়লেন স্যামসাং ইলেকট্রনিক্স প্রধান
স্যামসাং ইলেকট্রনিক্স-এর প্রধান নির্বাহীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন কোওন ও-হাইউন।
নজিরবিহীন এক সঙ্কটের কারণেই তিনি পদত্যাগ করছেন বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি।
চলতি বছরের অগাস্টে স্যামসাংয়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়। এ ঘটনার পর থেকেই পদত্যাগ করেছেন প্রতিষ্ঠানের বেশ কয়েকজন উর্ধতন কর্মকর্তা। এবার সে তালিকায় যোগ হলেন প্রতিষ্ঠান প্রধান।
স্যামসাং ইলেকট্রনিক্স-এ তিনজন প্রধান নির্বাহীর একজন ও-হাইউন। তার পদত্যাগের দিনই প্রান্তিকের হিসাবে রেকর্ড আয়ের কথা জানিয়েছে ইলেক্ট্রনিক পণ্য নির্মাতা দক্ষিণ কোরীয় প্রতিষ্ঠানটি। মেমোরি চিপের দাম বাড়ায় প্রতিষ্ঠানের আয় বেড়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
স্যামসাংয়ের বোর্ড সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছিলেন ও-হাইউন। তিনি বলেন, “অনেক আগে থেকেই পদত্যাগের চিন্তা করছিলেন এবং এখন আর সেটা ধরে রাখতে পারছিলেন না।”
এক বিবৃতিতে হাইউন বলেন, “প্রতিষ্ঠানের ভেতরে ও বাইরে আমরা অদ্ভূত সঙ্কটের মধ্যে রয়েছি। আমার বিশ্বাস নতুন উদ্দীপণা এবং তরুণ নেতৃত্বের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানে এখন নতুনত্ব আনার সময় এসেছে, যাতে দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তি শিল্পের চ্যালেঞ্জগুলো আরও ভালোভাবে মোকাবেলা করা যায়।”
প্রধানের পদ ছাড়লেও ২০১৮ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত স্যামসাং ইলেকট্রনিক্স-এর বোর্ডে থাকবেন হাইউন।
তার পদত্যাগের ঘোষণায় প্রযুক্তি পরামর্শদাতা সিঙ্গাপুরি প্রতিষ্ঠান কিউইডি-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য রায়ান লিম বলেন, “স্যামসাং এখন নেতৃত্ব সঙ্কটে রয়েছে।”
“প্রতিষ্ঠানের বর্তমান ব্যবস্থাপনা কাঠামো জটিল যা স্পষ্ট নয় বরং বিভ্রান্তি তৈরি করে। এটি দ্রুত সমাধান করা উচিত। ভবিষ্যতে স্যামসাংয়ে কে নেতৃত্ব দেবেন তা না জানাটা চিন্তার কারণ হতে পারে।”
সমালোচনার জবাব দিতে স্যামসাংয়ের এক মুখপাত্র বিবিসি-কে বলেন, শীঘ্রই নতুন প্রধান নিয়োগ দেওয়া হবে। কিন্তু এর জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময় বলেননি তিনি।
দুর্নীতির অভিযোগে সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা নড়বড়ে অবস্থানে রয়েছে স্যামসাং। প্রতিষ্ঠানের চলমান দুর্নীতির মামলায় ইতোমধ্যেই পাঁচ বছরের সাজা পেয়েছেন স্যামসাং গ্রুপের উত্তরাধিকারী লি জি ইয়ং।
স্যামসাংয়ের কর্ণধার লি কুন হি ২০১৪ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে কার্যত অবসরে যাওয়ার পর থেকে তার ছেলে লিই বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ এই প্রতিষ্ঠানের দেখভাল করে আসছিলেন। তার চেয়ারম্যান হওয়ার পথ প্রশস্ত করতে পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল স্যামসাং গ্রুপ।
লির বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি সরকারি সুবিধা পাওয়ার জন্য তখনকার প্রেসিডেন্ট পার্ক জিউন-হাইয়ের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী চোই সুন সিল পরিচালিত কয়েকটি ফাউন্ডেশনে ৩ কোটি ৬৩ লাখ ডলার অনুদান দিয়েছেন।
ওই অভিযোগে চলতি বছর জানুয়ারিতে কয়েক দফা জিজ্ঞাসাবাদের পর ফেব্রুয়ারিতে লির বিচার শুরু করে আদালত। তখনই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
নেতৃত্ব সঙ্কটে থাকলেও প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায় এখনও এর তেমন প্রভাব পড়েনি বলে বিবিসি’র প্রতিবেদনে বলা হয়। ও-হাইউন-এর পদত্যাগের দিন এক প্রান্তিকে রেকর্ড আয়ের হিসাব দিয়েছে স্যামসাং।
সেপ্টেম্বরে শেষ হওয়া প্রান্তিকে এক বছর আগের চেয়ে প্রতিষ্ঠানের লাভ হয়েছে তিনগুণ, যা প্রত্যাশা ছাড়িয়েছে। এই প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানের মোট লাভ বলা হয়েছে ১২৮১ কোটি মার্কিন ডলার।