সুখ-দুঃখ
সব কিছু প্রস্তুত ছিলো।
প্রস্তুত ছিলো যেনো বাইরের আকাশটাও। জানালার পর্দা সরিয়ে কেয়া দেখছে কেমন করে আকাশটা মেঘে ছেয়ে গেলো। মেঘ কেয়ার খুব পছন্দ। মেঘ তার পাখায় করে বৃষ্টি নিয়ে আসে। কেয়ার অধিকারবোধ প্রবল। তার ধারনা সারা পৃথিবীতে বৃষ্টি নামে শুধু তারই জন্যে। এই বৃষ্টি তার নামে যে লিখে দিয়েছে, তার মেঘের মত পাখা নেই। তার আছে আশ্চর্য সম্মোহনী দুটি চোখ। যেদিন কেয়ার চোখে চোখ রেখে সে বলেছিল, পৃথিবীর যত বৃষ্টি আজ থেকে সব তোমার। তার ঘোর লাগা চোখের দিকে তাকিয়ে, প্রবল অধিকারবোধে কেয়া বিশ্বাস করেছিলো, পৃথিবীর সব বৃষ্টি আজ থেকে তারই। পরক্ষনেই সে বলেছিলো, কেয়া, তোমার কিছু বৃষ্টি আমাকে দেবে? কেয়া বলেছিলো, কি করবে তুমি আমার বৃষ্টি নিয়ে? সে বলেছিলো, তোমাকে সাথে নিয়ে আমাদের বৃষ্টিতে ভিজব। সেই থেকে মেঘের সাথে সখ্যতা কেয়ার - বৃষ্টির সাথেও। মেঘ তার আপন, বৃষ্টি তার আপনজন, আরো একজন আপন তার, যে তাকে বৃষ্টি দিয়েছে। আকাশে মেঘ দেখলে, বৃষ্টি নামলে কেয়ার তার বৃষ্টিদাতার কথা মনে পড়ে যায়।
জানালার পর্দা সরিয়ে আকাশের দিকে তাকাতেই যেনো কোন এক নিপুণ শিল্পী আকাশের বুক থেকে মেঘগুলো এক ঝটকায় সরু তুলির মাথায় মাখিয়ে নিমিষেই কি সুন্দর করে কেয়ার মনের আকাশে একরাশ মেঘ একে দিলো। অথবা কেয়ার বুকে জমে থাকা মেঘের ভাগীদার হতেই আকাশটা নিজে থেকেই তার বুকেও লেপে নিলো কেয়ার মেঘের রঙ। এই মেঘ কি কেয়ার বুকে জমে থাকা মেঘের সহোদর অথবা সহোদরা, যে তার জলীয় বাষ্পে সযতনে ধারন করে আছে কেয়ার দুঃখ। এই মেঘ কি বৃষ্টি নামাবে? যে মেঘে কেয়ার মনে বৃষ্টি নামত, সেই মেঘ আজ শুধুই মেঘ মনে হচ্ছে। এই মেঘের পাখায় বৃষ্টি নেই। হয়তো আছে, কিন্তু সেই বৃষ্টির ফোটায় ফোটায় মিশে থাকবে দুঃখ, কেয়ার মনের দুঃখ। সাদা-কালো মেঘ কি কেয়ার বুকের দুঃখ বয়ে এনেছে আজ, কেয়ার দুঃখ কি বৃষ্টি হয়ে ঝরবে আজ? নাকি আজকের বৃষ্টিটাও সুখের বৃষ্টি, কেয়া কি ভিজবে সেই বৃষ্টিতে তার বৃষ্টিদাতাকে নিয়ে ?
❤
❤
❤
কেয়ার আজ মহা সুখের দিন। সুখ কি দুঃখ বিবর্জিত হয়? যে মেঘ বৃষ্টি নামায়, বৃষ্টিতে মানুষের খরতপ্ত হৃদয় আর্দ্রতা পায়, সেই বৃষ্টিই কখনো কখনো নিয়ে আসে ঝড়, বজ্র। আর্দ্র হৃদয় হয় রক্তিম। আমরা জানি না, কেয়ার মন আর্দ্র নাকি রক্তিম- হয়ত দুটোই। মানুষের মনের কতটুকুই বা আমরা জানি! কেয়ার মনের সবটুকুই কি আমরা জানি! হয়তো জানিনা। কিন্তু এটুকু জানি কেয়ার আজ খুব আনন্দের দিন হওয়ার কথা। কেয়াও হয়তো জানে আজ তার খুব আনন্দের দিন। কিন্তু গোলাপ বিছানো শয্যায় শুয়েও কেউ কেউ পায় কন্টক যন্ত্রনা।
❤
❤
❤
অথচ কিছুক্ষন আগেও আকাশ ছিলো কবুতরের ডানার মত শুভ্র। যখন কেয়া হাত রাখলো তার বৃষ্টি দাতার হাতে, কায়সারের হাতে, তখনো আকাশ ছিলো শিমুল তুলার মতই শুভ্র। কেয়ার এক সময় ইচ্ছে করতো আকাশে শিমুল তুলো হয়ে ভাসবে। কায়সার থাকবে তার সাথে। পাশাপাশি দুই খন্ড তুলো অথবা দুই খণ্ড মেঘ হয়েই উড়ে বেড়াবে তারা। মিশে যাবে আকাশের বাকি সব মেঘের সাথে। অথবা দুটি শুভ্র কবুতর – শুভ্র আকাশের সীমানায় উড়ে বেড়াবে নিজেদের সাম্রাজ্যে। অথচ এখন মনে হচ্ছে, এই বুঝি মেঘ এলো, মেঘ এলো তার পাখায় বৃষ্টি নিয়ে, যে বৃষ্টিতে ভেসে থাকা শিমুল তুলো হয়তো ভিজে যাবে, ভিজে গেলে তারা আর উড়বে না। অথবা দৈবাৎ যদি বজ্র ডাকে, বিজলীর ঝলকানিতে কবুতর গুলি হয়তো পাক খেতে খেতে হবে ভীত সন্ত্রস্ত। তাদের ডানা হয়তো ঝলসে যেতে পারে। তারা হয়তো উড়বার শক্তি হারিয়ে ফেলবে। ভারী মেঘ যেমন ভারসাম্য হারিয়ে নেমে যায় নিচে, তারাও হয়তো পাক খেতে খেতে কোথায় গিয়ে পড়বে কে জানে? বহুদিনের চিরচেনা অভয়ারণ্য আকাশটা, আর মেঘগুলো সব কেয়ার কাছে আজ বহুদিনের অপরিচিত। আর তাই আজকে এই মহা সুখের দিনেও একটা অদৃশ্য দুঃখ নামক যন্ত্রনা তাকে চারদিক থেকে উপহাস করে যাচ্ছে।
You've got a free upvote from witness fuli.
Peace & Love!